Showing posts with label কোরআন-হাদীস. Show all posts
Showing posts with label কোরআন-হাদীস. Show all posts

April 16, 2023

দোয়া কবুলের দোয়া

 বিভিন্ন হাদিস থেকে আমরা কয়েকটি দোয়ার সংকলন করেছি, এগুলো পাঠ করে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়।

স্বাভাবিকভাবে দোয়ার আদব হল, আল্লাহর প্রশংসাসূচক বাক্য (হামদ-সানা) পড়া, দরুদ পড়া, এরপর দোয়া করা। শেষে দরুদ ও হামদ দিয়ে শেষ করা। (এক হাদিসে 'সুবহানা রব্বিকা...' পড়ে শেষ করার কথা আছে, এর মধ্যেও এগুলোই আছে)।
যাহোক, নিচের দোয়াগুলো আপনারা দোয়ার শুরুতে বা শেষে পড়ে সাথে অন্যান্য আদব মেনে দোয়া করুন। ইনশাআল্লাহ দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বাড়বে। সম্ভবত এগুলো দোয়ার শুরুতে পড়লেই বেশি ভালো।
প্রত্যেকটা দোয়া আলাদা আলাদা হাদিসের। তাই আপনি চাইলে একটা বা একাধিক দোয়াও পড়তে পারেন। চাইলে কয়েকবার করে পড়তে পারেন।
আর দোয়া কবুলের কিছু স্থান ও সময়ের ব্যাপারে একটা লেখা ছিল, সেটার লিংক নিচে দিচ্ছি।
-------
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَك َ الْحَمْدَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْمَنَّانُ بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ
‏اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ ‏ ‏كُفُوًا ‏ ‏أَحَدٌ
etar short version -
اللَّهُمَّ إنِّي أَسْأَلُك بِأَنَّك أَنْتَ اللَّهُ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ ،
لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
নামাজ শেষে - সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার (প্রতিটা ১০বার করে) - পড়ার পর দোয়া করা।
ঘুম থেকে উঠে এই দোয়া পড়া এরপর দোয়া করা -
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ
.
দোয়াগুলো ভালো ফন্টে পড়তে চাইলে কমেন্টের লিংকে (https://ruqyahbd.org/blog/4531/when-dua-is-accepted-bangla) গিয়ে লেখার শেষদিকে দেখুন। আর দোয়া কবুলের কিছু স্থান ও সময়ের ব্যাপারেও এখানে আছে।
---
তথ্যসূত্র: ইবনে মাজাহ ৩৮৫৮, ইবনে মাজাহ ৩৮৫৭, তিরমিযি ৩৫০৫, নাসাঈ ১২৯৯,
Share:

May 7, 2022

শাওয়াল মাসের বিয়ে

 নবীজির শাওয়াল মাসে বিয়ের বিষয়টা ছিল ওই সময়ের কুসংস্কার, অপসংস্কৃতি, কিংবা ভ্রান্ত ধারণা দূর করার জন্য। মুহাদ্দিসদের আলোচনা থেকে এটাই পাওয়া যায় যে, জাহেলি যুগ থেকে মানুষ ভাবতো শাওয়াল মাসে বিয়ে করা খারাপ বা অশুভ। 

এখন বিষয় হল, এখন আমাদের অঞ্চলে বিয়ে নিয়ে কি কি কুসংস্কার, ভ্রান্ত ধারণা আর অপসংস্কৃতি প্রচলিত আছে? আর এগুলো দূর করার জন্য আমরা কি করছি? 

১. এখানে কনের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান না করলে খারাপ ভাবা হয়। 

২. কনের বাড়ি থেকে বিশেষ কিছু না নিলে খারাপ ভাবা হয়। কনের পরিবারই অপমানজনক ভাবে।

৩. বিয়ের আগে একদল নারী-পুরুষ যায় পাত্রী দেখতে, বিয়ের পর এলাকার সব মানুষ দল বেঁধে মেয়েকে দেখতে আসে। অনেক সময় অবস্থা এমন হয় যে, জামাইয়ের জন্য দেখা হালাল, অথচ সে বাদে বাকি সবাই দেখে ফেলেছে। গাইরতহীন জামাই মিন-মিন করে আর অন্যদের ফরমায়েশি করে। 

৪. এখানে এখানে বিয়ের মধ্যে হাজারটা শয়তানি রিচুয়াল ঢুকে গেছে। (আগের রাতে 'কুমারী পূজা'র মত মিষ্টি খাওয়া আর চান্দা তোলা থেকে শুরু করে, এরপর গাইর মাহরাম মহিলারা গোসল দেয়ানো, বিয়েতে মালা বদল করা, গেট বেঁধে চাঁদাবাজি, বিদায়ের সময় সপে দাড় করিয়ে সপে দেয়া, অশ্লীল গানবাজনা - নাচগান, গাইরতহীনের মত ওয়েডিং ফটোগ্রাফি, মোহর দেয়ার ইচ্ছা না রেখে সাধ্যের সীমার বাইরে অংক ধার্য্য করা ইত্যাদি।) 

শুধুমাত্র ইজাব-কবুল আর নগদ কিছু মোহর দেয়া- এই দুইটা বাদে ইসলামের কোনো বিধানের তোয়াক্কাই এখনকার বিয়ের মধ্যে করেনা। 

আপনারা শাওয়াল মাসে বিয়ে করে লাভ কি তাহলে?

Share:

May 2, 2022

ঈদের আনন্দ এবং কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য

[এক]

কেউ কেউ বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন যায়গায় মুসলিমরা কষ্টে আছে, মাযলুম হচ্ছে, তাই ঈদে করা যাবে না। এটা আসলে ভালো কথা না। এরকম বলা উচিত না।

এখানে কয়েকটা বিষয় বুঝতে হবে ভাই,

১। এই ঈদ আমাদের জন্য নিছক দুনিয়াবি উৎসব না। ঈদের দিন আল্লাহ তার বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। এটা দ্বীনি বিবেচনাতেও আনন্দের।

২। ঈদের দিনে আনন্দ করার বিষয়টা আমাদের জন্য আল্লাহর দান। যেরকম সফরের মাঝে নামাজ সংক্ষেপ করা। আগে মুসলিমরা ভালো ছিল, তাই ঈদ করেছে। এখন কষ্টে আছে, তাই করা যাবে না। এটা বাতিল যুক্তি। এই যুক্তি মানলে মানুষের জন্য মুসাফিরের বিধান থাকবে না, কারন সফরে আগের যুগের দশভাগে একভাগ কষ্ট তো আর নাই। আমরা ২ঘন্টায় ৩দিনের দুরত্ব সফর করতে পারি।

৩। ঈদ ইসলামের নিদর্শন। নবিজি অমুসলিমদের উৎসব করতে দেখেও আমাদের দুই ঈদের কথা বলেছেন। ঈদের মত আল্লাহর বিশেষ দান গ্রহণ না করা দ্বীনের শিয়ার অগ্রাহ্য করার মত।
পাশাপাশি যেকোনো সম্প্রদায়ের যখন উৎসব - আয়োজন হয়, তখন অন্যরা তাদের প্রতি মনযোগী হয়। এই বিবেচনাতেও গুরুত্বপূর্ণ।

৪। মুসলমানদের দুরাবস্থা আজকে নতুন না। নবীজির যুগেও মুসলিমরা কষ্ট করেছে। এজন্য ঈদ বাতিল করতে হলে তো নবিজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোটা দুনিয়ায় দ্বীন কায়েম পর্যন্ত ঈদ ই করতেন না সেভাবে। তাইনা?

৫। ধরে নিচ্ছি যায়েদ আরাকান বা সিরিয়ার বাসিন্দা। রিফিউজি ক্যাম্পে দাঁড়িয়ে আছে। তো?
আপনি কি বলতে চান তাকে বছরের অন্য সবদিনের মত ঈদের দিনও একইভাবে পার করতে হবে?

ভাই! আর কত বলব?
কিছু লেখার আগে একটু বাস্তবতা ভাবতে পারেন না? ঠিক না ভুল লেখছেন একটু জেনে নিতে পারেন না?

[খ]
কেউ কেউ বলছে ঈদে নতুন কাপড় নেয়া, উপহার দেয়া, ভালোমন্দ খাবার বাজার করা বিদয়াত বা নাজায়েজ। যারা এরকম বলে, এদের না ইসলামের বুঝ আছে, আর না মুসলিমদের সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা আছে। এদেরকে শরিয়ার বিধান নিয়ে মতামত দেয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ বিবেচনা করবেন না।
ঈদের বিশেষ কাপড় পরা, বিশেষ খাবার খাওয়া, প্রয়োজনে বিশেষ কেনাকাটা করা ইসলামের শুরু থেকেই মুসলিমরা করে আসছে।
সাহাবা তাবেয়িদের সময়ে বিভিন্ন যাহেদ (পরহেজগার) ব্যক্তিদের ঘটনা দেখা যায় যে উনারা ঈদে নতুন কিছু কিনেননি। এর থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে সবাই কিনতো, উনারা বুজুর্গ মানুষ দেখে এসব থেকে বেচে থাকতেন। নইলে আলাদাভাবে এসব উল্লেখ করার কিছু ছিল না।
বিজ্ঞ আলেমরা এসব ঘটনা বর্ণনা করেন আমাদেরকে অতিরিক্ত খরচ আর অপচয় থেকে বাচার উপদেশ দিতে। হারাম বা বেদয়াতের দলিল হিসেবে না।

আহা! প্রতি বছরই মনে হয় মানুষ ফেসবুকে নতুন নতুন ফিতনা উৎপাদন করছে। ভালো লাগে না আর।

শেষকথাঃ ঈদ আমাদের বড় উৎসব। ঈদে আনন্দ করুন। উপহার দিন। মানুষদের দাওয়াত করে খাওয়ান। গরিবদের দান করুন। অপচয় না করে, সাধ্যের মধ্যে ভালো বাজার করুন। এটা মুসলিমদের উৎসব। হালালভাবে উদযাপন করুন।
Share:

April 12, 2020

ইসলামকিউএ ফ্যাক্টস এবং তাখরিজ প্রসঙ্গ...

#ফ্যাক্ট_১: 

ইসলামকিউএ.ইনফো আর ইসলামকিউএ.অর্গ ভিন্ন দুটি ওয়েবসাইট। 
একটায় ভিন্ন ভিন্ন মাযহাবের বিভিন্ন দারুল ইফতার ফাতওয়া ইংরেজি ভাষায় সংকলন করা হয়েছে। 
অপর ওয়েবসাইটের নিজেদের প্রশ্নোত্তর বিভাগ আছে, সেখানে নতুন-পুরাতন প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়। সেসব প্রশ্ন বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এছাড়া সৌদি আরবের বাছাইকৃত কিছু আলেমের প্রবন্ধ প্রকাশ/অনুবাদও করা হয়।

#ফ্যাক্ট_২:

ইসলামকিউএর ফাতওয়া মানেই শাইখ সালিহ আল-মুনাজ্জিদের ফাতওয়া না। ইসলামকিউএতে প্রকাশিত সব ফাতওয়া উনি রিভিউ করেও দেননি।
আর শাইখ তো এখন জালিমের কারাগারে বন্দি, এখন কি ইসলামকিউএ চলছে না? মিনাসসাতুয যাদি চলছে না? শাইখ তো সেখান থেকে এসবের সম্পাদনা করেন না।
আরেকটা বিষয় হল, ইসলামকিউএতে শাইখ বিন বায, জিবরীন, উসাইমিন রহিমাহুমুল্লাহদের অনেকের প্রবন্ধই আছে। আর শাইখ মুনাজ্জিদ সালাফি আলেম হওয়া সত্ত্বেও উনাদের সাথে অনেক বিষয়েই শাইখের ইখতিলাফ আছে।

সুতরাং, ইসলামকিউএ তে কিছু লেখা আছে মানেই সেটা শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদের উক্তি না।

#ফ্যাক্ট_৩:

ইসলামকিউএ ডট ইনফো'র মন্তব্য বা ফাতওয়াতে কিছু আছে মানেই সেটার ওপর উম্মতের ইজমা— এমন নয়। ইসলামকিউএর বক্তব্য কুরআন হাদীসের নস-ও নয় যে, এটাই ইসলামী ইলমের মূল উৎস কিংবা এর ওপর ঈমান 'রাখতেই' হবে।

এই পোর্টালের প্রতিটা উত্তরদাতা - প্রবন্ধকার যেহেতু নির্দিষ্ট একটি ইসলামী ভাবধারার অনুসারী, অতএব ফাতওয়া দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের প্রত্যেকে নিজ-নিজ মানহাজ এবং মাজহাবকেই প্রধান্য দিয়ে থাকেন।

এখন আপনি যদি বলেন ইসলামকিউএ-তে উত্তরদাতা কোরআন হাদিস ইজমা কিয়াসের আলোকে উত্তর দিচ্ছে। তবে আপনার জানা উচিত, আকাবির-আসলাফের মাঝে ইসলামকিউএ'র বিপরীত কোন মত প্রচলিত থাকলে সেটাও কোরআন - হাদীস... এর আলোকেই ছিল।

----
#এপেন্ডিক্স:

শরিয়ার সকল উসুল বিবেচনা না করে যাকে-তাকে তাকফির করা যেমন খুরুজ (খারিজিদের প্রবণতা), তেমনি সালাফের সকল মানহাজ বিবেচনা না করে যাকে-তাকে আহলুস সুন্নাহ থেকে বের করে দেয়া (তাখরিজ করা), কিংবা শুধুমাত্র নিজের মতকেই আহলুস সুন্নাহর মত বলে দাবি করা- এসবও এক ধরনের খুরুজ।

আল্লাহ যেন চিরকাল আমাদেরকে ঈমান ও হিদায়াতের ওপর অবিচল রাখেন।
Share:

February 27, 2020

শত্রুর দৃষ্টি থেকে গোপন থাকার আমল


নোটঃ কিছুদিন পূর্বে তাফসির গ্রন্থ থেকে এই অংশটুকু The Greatest Nation নামের একটি পেজে পোস্ট করা হয়, তখন বিষয়টা অনেকের নজরে আসে। অবস্থার প্রেক্ষিতে পিডিএফ সহ পূণরায় আপনাদের জন্য শেয়ার করা হচ্ছে। এটা রুকইয়াহ না, তবে সালাফদের মাঝে প্রচলিত জায়েজ কোরআনী আমল।
নিয়মিত মাসনুন আমল তো অবশ্যই করবেন, পাশাপাশি এই আয়াতগুলো নিজে মুখস্ত করুন, ইয়াক্বিনের সাথে আমল করুন, অন্যদের সাথেও শেয়ার করুন। 
আর দোয়া করুন, আল্লাহ যেন আমাদের হিদায়াত ও নিরাপত্তার মাঝে রাখে, আমিন।
.
সাধারণ পিডিএফ ডাউনলোড:
মোবাইল ভার্শন ডাউনলোড:
প্রিভিউ:
.
---------------------------
মূল আর্টিকেল:
.
হজরত কা’ব বলেনঃ রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মুশ্রিকদের দৃষ্টি থেকে আত্মগোপন করতে চাইতেন, তখন কুরআনের তিনটি আয়াত তিলাওয়াত করতেন; এর প্রভাবে শত্রুরা তাকে (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) দেখতে পেতো না। আয়াত তিনটি হলঃ সূরা কাহাফের (৫৭ নাম্বার) আয়াত,
.
إِنَّا جَعَلْنَا عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ أَكِنَّةً أَن يَفْقَهُوهُ وَفِي آذَانِهِمْ وَقْرًا
.
সূরা নাহলের (১০৮ নাম্বার) আয়াত,
.
أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ طَبَعَ اللَّـهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ وَسَمْعِهِمْ وَأَبْصَارِهِمْ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ
.
সূরা জাসিয়া’র (২৩ নাম্বার) আয়াত,
.
أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَـٰهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللَّـهُ عَلَىٰ عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَىٰ سَمْعِهِ وَقَلْبِهِ وَجَعَلَ عَلَىٰ بَصَرِهِ غِشَاوَةً
.
হজরত কা’ব বলেনঃ রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এই ব্যাপারটি আমি সিরিয়ার এক ব্যক্তির কাছে বর্ণনা করি। তিনি কোন প্রয়োজনে রোমে গমন করেন। বেশ কিছুদিন সেখানে অবস্থান করার পর তিনি রোমীয় কাফিরদের নির্যাতনের শিকার হয়ে পড়লে প্রাণের ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। শত্রুরা তার পিছু নেয়, এমন সংকটময় মুহূর্তে হঠাৎ হাদিসটি তার মনে পড়ে। তিনি দেরী না করে আয়াত তিনটি তিলাওয়াত করতেই শত্রুদের দৃষ্টির সামনে পর্দা পড়ে যায়। তিনি যে রাস্তায় চলছিলেন, শত্রুরাও সেই রাস্তাতেই চলাফেরা করছিলো, কিন্তু তারা তাকে দেখতে পাচ্ছিলো না।
.
ইমাম সা’লাবি বলেনঃ হযরত কা’ব থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েতটি আমি ‘রাই’ অঞ্চলের এক ব্যক্তির কাছে বর্ণনা করেছিলাম। ঘটনাক্রমে সায়লামের কাফিররা তাকে গ্রেপ্তার করে। তিনি কিছুদিন কয়েদে থাকার পর সুযোগ পেয়ে পালিয়ে যান। শত্রুরা তাকে পেছনে ধাওয়া করে। তিনি আয়াত তিনটি তিলাওয়াত করলে আল্লাহ তাদের চোখের উপর পর্দা ফেলে দেন। ফলে তাদের দৃষ্টি থেকে তিনি অদৃশ্য হয়ে যান, অথচ তারা পাশাপাশি চলছিল আর তাদের কাপড় তার কাপড় স্পর্শ করছিলো।
.
ইমাম কুরতুবি বলেনঃ এই আয়াত তিনটির সাথে সূরা ইয়াসিনের সেই আয়াতগুলোও মিলানো উচিত, যেগুলো রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) হিজরতের সময় তিলাওয়াত করেছিলেন। তখন মক্কার মুশ্রিকেরা তার (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বাসা ঘেরাও করে রেখেছিলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়াতগুলো তিলাওয়াত করে তাদের মাঝখান দিয়ে চলে যান, বরং তাদের মাথায় ধুলো নিক্ষেপ করতে করতে যান, কিন্তু তাদের কেউ টেরও পায়নি। সূরা ইয়াসিনের আয়াতগুলো (১-৯ নং আয়াত) হলঃ
.
يس ﴿١﴾ وَالْقُرْآنِ الْحَكِيمِ ﴿٢﴾ إِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ ﴿٣﴾ عَلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ ﴿٤﴾ تَنزِيلَ الْعَزِيزِ الرَّحِيمِ ﴿٥﴾ لِتُنذِرَ قَوْمًا مَّا أُنذِرَ آبَاؤُهُمْ فَهُمْ غَافِلُونَ ﴿٦﴾ لَقَدْ حَقَّ الْقَوْلُ عَلَىٰ أَكْثَرِهِمْ فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ ﴿٧﴾ إِنَّا جَعَلْنَا فِي أَعْنَاقِهِمْ أَغْلَالًا فَهِيَ إِلَى الْأَذْقَانِ فَهُم مُّقْمَحُونَ ﴿٨﴾ وَجَعَلْنَا مِن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ سَدًّا وَمِنْ خَلْفِهِمْ سَدًّا فَأَغْشَيْنَاهُمْ فَهُمْ لَا يُبْصِرُونَ
.
ইমাম কুরতুবি বলেনঃ আমি স্বদেশ আন্দালুসে করডোভার নিকটবর্তী মনসুর দুর্গে নিজেই এ ধরণের ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলাম। অবশেষে নিরুপায় অবস্থায় আমি শত্রুদের সামনে দিয়ে দৌড়ে এক জায়গায় বসে গেলাম। শত্রুরা দুই জন অশ্বারোহীকে আমার পিছে ধাওয়া করার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করে। আমি সম্পূর্ণ খোলা মাঠেই ছিলাম, নিজেকে আড়াল করার মত কোন বস্তুই ছিল না। আমি তখন বসে বসে সূরা ইয়াসিনের আয়াতগুলো তিলাওয়াত করছিলাম। অশ্বারোহী ব্যক্তি দুই জন আমার সম্মুখ দিয়ে ‘লোকটি কোন শয়তান হবে’ বলতে বলতে যেখান থেকে এসেছিল সেখানেই ফিরে গেলো। তারা আমাকে অবশ্যই দেখেনি, আল্লাহ তাদেরকে আমার দিক থেকে অন্ধ করে দিয়েছিলেন।
.
উৎসঃ তাফসীরে মা’রিফুল কুরআনে সূরা বানী ইসরাইলের তাফসীরের অংশে তাফসীরে কুরতুবির রেফারেন্সে এর উল্লেখ আছে।

Share:

April 21, 2019

জয়ীফ হাদিস এবং সম্ভাবনা

সম্ভাবনা
-----

যয়িফ হাদিসের ব্যাপারে কিছু ভাই বলে থাকেন "এটা সত্যও হতে পারে, মিথ্যাও হতে পারে, সম্ভাবনা ৫০—৫০"
দুঃখিত, এটা হয়তো ভাইদের ভুল ধারণা অথবা অজ্ঞতা অথবা "অন্য কিছু..."

বাস্তবতা হল, যয়িফ হাদিসের বহুত স্তর আর বহুত কিসিম আছে। সব যয়িফ হাদিসের ওপর যেমন ভরসা করা যায় না, তেমনি সব হাদিস একদম ফেলেও দেয়া যায় না। কোন হাদিসের সনদ সহিহ, শুধু কথাটা এভাবেই বলেছে কি না- এতে সন্দেহ আছে, এরকমও হতে পারে।

কোন কোন হাদীসের ক্ষেত্রে সম্ভাবনার ৫০-৫০ হতে পারে, কোন কোন হাদীসের ক্ষেত্রে ৭০-৩০ হতে পারে, কোন ক্ষেত্রে সম্ভাবনা ৩০-৭০ কিংবা ৯০-১০ হতে পারে।

--
এখন যদি সহিহ যয়িফের বিস্তারিত কাহিনি বর্ণনা করা শুরু করি, তাহলে আপনি যেমন বিরক্ত হবেন, সেরকম আমারও সময় নষ্ট হবে। অতেব আপাতত বিশ্রাম নেন, আর সব সংশোধনী মূলক লেখার সবকিছু বিশ্বাস কইরেন না। পোস্ট শেয়ারকারী সেলিব্রিটি যতই বলুক "ইহা আমার দেখা সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ পোস্ট"
Share:

June 20, 2018

তাফসিরে মা'রিফুল কোরআন; এই সময়ের সেরা তাফসির!

তাফসিরে মা'রিফুল কোরআন; হাল জামানার জন্য, আমার দেখা সেরা তাফসির।
এখানে রয়েছে কোরআন থেকে আলোচনা, হাদিস থেকে আলোচনা, সালাফের উদ্ধৃতি, বর্তমান সময়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য ইত্যাদি।
হাঁ! এরেচেয়ে তথ্যবহুল তাফসির আছে, তাফসিরে রাযি (তাফসিরে কাবির নামেও পরিচিত) তাফসিরে কুরতুবি - এগুলোতে অনেক অনেক কিছু আছে, কিন্তু এই সংক্ষিপ্ত কলেবরে মাত্র ৮খন্ডে এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কোথাও নাই।

----
১. ইবনে কাসির কেন নয়? কেউ প্রশ্ন করতে পারেন।
উত্তর হচ্ছে, মারিফুল কোরআন পড়লে ইবনে কাসিরের তেমন কিছু বাদ থাকবে না আপনার, ক্ষেত্র বিশেষে ইবনে কাসিরের চেয়ে এখানে আরও বেশি পাবেন। উপরন্তু ভাষা সাবলীল এবং এই জামানার লেখা বিধায় বুঝতেও সহজ হবে।
স্রেফ হাদিসের জন্য বিশুদ্ধতার বিবেচনা করলে ইবনে কাসিরের চেয়ে তাফসিরে মাযহারিই এগিয়ে যাবে, মা'রিফুল কোরআন তো আরো উপরে। তবে হ্যাঁ.! আপনি ইবনে কাসির পড়তে পারেন, কোন সমস্যা নাই। আমি নিজেও দুইটাই দেখি।
-
২. আরেকটু বিস্তারিত বলেন -
: মারিফুল কোরআন মূলতঃ মুফতি শফি রহ. পাবলিক রেডিওতে ধারাবাহিক তাফসির আলোচনা করেছিলেন, সেটার লিখিত রূপ। তাই এটা মোটামুটি এ টু জেড জনসাধারণের উপযোগী।
আমার জানামতে, ইবনে কাসির হচ্ছে, তাফসিরে কুরতুবির সংক্ষিপ্ত রূপ, এর সাথে ইবনে কাসির রহ. অল্পকিছু কথা যোগ করেছেন। এখানে অনেক কিছুই সাধারণ মানুষের জন্য অপ্রয়োজনীয়, অনেক কিছুই দুর্বোধ্য। (একভাই জানালেন, তাফসিরে তাবারিরর সংক্ষিপ্ত রূপ, আর ইফার অনুবাদের ভূমিকায় লিখেছে তাবারির এবং কুরতুবি দুইটার.. আল্লাহু আ'লাম, আমার ভুল হতে পারে)
যেমনঃ অনেক আয়াতের ক্ষেত্রে শুধু ব্যকরণ আর শব্দের আলোচনা করে ছেড়ে দিয়েছে, এবিষয়ে সালাফের কোন মন্তব্য বা হাদিস আনা হয়নি। এগুলা মাথার উপর দিয়ে যাবে, নইলে হুদাই মনে হবে। আর এটার মেইন ভার্শন, অর্থাৎ তাফসিরে কুরতুবি পড়তে গেলে প্রথম পারার তাফসির পড়ে শেষ করতে করতে বেশিরভাগ পাবলিকের ধৈর্য শেষ হয়ে যাবে।
তাফসিরে কাবির আরও বড় এবং তথ্যবহুল, তবে কিতাব নিয়ে সারাদিন বসে থাকলেও ক্লান্ত হবে না - এরকম জ্ঞানপাগল মানুষ ছাড়া এটা বেশিদূর পড়ার ধৈর্য হবে না। এজন্য এই জামানার মানুষদের জন্য সংক্ষিপ্ত এবং মাঝারি আকারের তাফসির পড়তে বলাই উত্তম। যেমন ময়দানের আলেমরাও এখন বলেন, মানুষের ধৈর্য কম, তাই অনলাইনের লেকচারগুলো শর্ট করতে।
-
৩. মারেফুল কুরআন সবখন্ড একত্রে একটা আছে (এটাই প্রসিদ্ধ) আরেকটি আছে ৮ খন্ডে। দুটি একই?
: না তবে সংক্ষিপ্ত টাতেও অনেক কিছুই চলে এসেছে। মাওলানা আব্দুল মালেক (হাফিযাহুল্লাহু) হুজুর ৮খন্ডটার ব্যাপারেই পরামর্শ দিয়েছেন। আমারও মনে হয়েছে সম্পূর্ণ ফায়দা পেতে ফুল ভার্শন পড়া উচিত।
তবে আপাতত হিসেবে সংক্ষিপ্তটা দেখতে সমস্যা নাই, বড়টা রিভিউ দিয়েই যেহেতু সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে, তাই কিছু যায়গায় সংক্ষিপ্ত অনুবাদটা আরও উন্নত হয়েছে।
-
৪. অনেকে তো বিরোধিতা করে..
: এদের সবার অবস্থা মোটামুটি নিম্নরূপ -
১. "যেহেতু এটা আমাদের ফিরকার কারও সংকলিত না। সুতরাং এটা যত ভালোই হোক এটা বাদ। এটার ব্যাপারে মানুষের সামনে সত্য-মিথ্যা যা ইচ্ছা বলা যাবে.."
(এটা হচ্ছে শায়খ বা আলেম টাইপের কিছু লোকের মানসিকতা)
২. "এটা ওহাবিদের কিতাব, এরা মিলাদ করে না। মাজারে যায় না। সুতরাং এদের বই পড়া যাবে না.."
৩. "যদিও বা আমি জানিনা এখানে কি আছে, তবে যেহেতু আমার শায়খ অথবা পীর বা এটার বিরোধিতা করেছেন। সুতরাং এটার নামে সত্য-মিথ্যা যা খুশি বলা যাবে.."
(এটা শায়খ বা পীরদের অন্ধ অনুসারী বা পাগল ভক্তদের মানসিকতা)
৪. "ভাই! কথাগুলা ফেসবুকে পাইসি, তাই কপি মারলাম। এর বেশি কিছু জানিনা.."
(এরাই লিজেন্ড!)
.
বাদবাকি আপনার অন্তর আর আকল যদি মরে না যায়, তবে আপনাকে মারিফুল কোরআন পড়তে স্বাগতম। ইনশাআল্লাহ নিরাশ হবেন না...
হা! আওয়ামদের জন্য মুফতি শফি রহ. এর মারিফুল কোরআন। আর আলেমরা তো জানেনই... আপনাদের জন্য এটার সাথে ইদরিস কান্ধলভী রহ. এর মারিফুল কোরআনটাও দরকারি।
.
(পিডিএফ লিংক দেয়া হল, তবে কাগুজে বইয়ের মজা পিডিএফ-এ নাই, তা আর বলা লাগে?)
পিডিএফ ডাউনলোডঃ http://almodina.com/site_906.xhtml

------
Share:

June 9, 2017

সারসংক্ষেপ রুকইয়া শারইয়্যাহ

(সংক্ষেপে বিভিন্ন সমস্যার জন্য ইসলাম সম্মত ঝাড়ফুঁক)

বিষয়সূচি:
  1. রুকইয়াহ পরিচিতি
  2. শারীরিক অসুস্থতা
  3. বদনজর
  4. জিনের আসর
  5. ওয়াসওয়াসা রোগ
  6. কালো যাদু
  7. রকইয়ার আয়াত
  8. মাসনুন আমল

[১] অবতরণিকাঃ

রুকইয়া শারইয়াহ বিষয়ে অনেক লম্বা চওড়া লেখা আছে, ইতোমধ্যে আমাদের রুকইয়াহ শারইয়াহ সিরিজও শেষ। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই এবিষয়ে বই প্রকাশ হবে। আজ আমরা সংক্ষেপে রুকইয়া পরিচিতি এবং বিভিন্ন সমস্যার জন্য রুকইয়া করার পদ্ধতি আলোচনা করবো। বলতে পারেন এই লেখাটি অতীত ও ভবিষ্যতের পুরো রুকইয়াহ সিরিজের সারাংশ।
এর প্রথম সংস্করণ ১৭ জুন প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর কিছু সংশোধন এবং সংযোজন করা হয়েছে। এটি চতুর্থ সংস্করণ। এই লেখায় আরও কিছু যোগ করার পরামর্শ থাকলে জানাবেন, আর কোনো পুস্তক-পত্রিকা অথবা ফেসবুকের বাহিরে অন্য কোথাও প্রকাশ করতে চাইলে অনুগ্রহ পুর্বক অনুমতি নিবেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিফাজত করুন। আমীন!

[২] প্রাথমিক ধারণাঃ

রুকইয়াহ কী? রুকইয়াহ অর্থ ঝাড়ফুঁক করা, মন্ত্র পড়া, তাবিজ-কবচ, মাদুলি ইত্যাদি। আর রুকইয়াহ শারইয়্যাহ (رقيةشرعية) মানে শরিয়াত সম্মত রুকইয়াহ, কোরআনের আয়াত অথবা হাদিসে বর্ণিত দোয়া দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা। তবে স্বাভাবিকভাবে ‘রুকইয়া’ শব্দটি দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা বুঝায়। এই ঝাড়ফুঁক সরাসরি কারো ওপর হতে পারে, অথবা কোনো পানি বা খাদ্যের ওপর করে সেটা খাওয়া অথবা ব্যাবহার করা হতে পারে। এক্ষেত্রে রুকইয়ার পানি, অথবা রুকইয়ার গোসল ইত্যাদি পরিভাষা ব্যবহার হয়। আর সবগুলোই সালাফে সালেহিন থেকে বর্নিত আছে।
 
রুকইয়ার বিধানঃ রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “রুকইয়াতে যদি শিরক না থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৫৪৪)
 
বিশুদ্ধ আক্বিদাঃ উলামায়ে কিরামের মতে রুকইয়া করার পূর্বে এই আক্বিদা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া উচিত ‘রুকইয়া বা ঝাড়ফুঁকের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই, সব ক্ষমতা আল্লাহ তা’আলার, আল্লাহ চাইলে শিফা হবে, নইলে নয়।’
রুকইয়া প্রকারভেদঃ বিভিন্ন ভাবে রুকইয়া করা হয়, যেমনঃ দোয়া বা আয়াত পড়ে ফুঁ দেয়া হয়, মাথায় বা আক্রান্ত স্থানে হাত রেখে দোয়া/আয়াত পড়া হয়। এছাড়া পানি, তেল, খাদ্য বা অন্য কিছুতে দোয়া অথবা আয়াত পড়ে ফুঁদিয়ে খাওয়া ও ব্যাবহার করা হয়।
 
পূর্বশর্তঃ রুকইয়া করে উপকার পেতে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন।
  • নিয়্যাত (কেন রুকইয়া করছেন, সেজন্য নির্দিষ্টভাবে নিয়াত করা)
  • ইয়াক্বিন (এব্যাপারে ইয়াকিন রাখা যে, আল্লাহর কালামে শিফা আছে)
  • মেহনত (অনেক কষ্ট হলেও, সুস্থ হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে রুকইয়া চালিয়ে যাওয়া)।
লক্ষণীয়ঃ রুকইয়ার ফায়দা ঠিকমতো পাওয়ার জন্য দৈনন্দিনের ফরজ অবশ্যই পালন করতে হবে, পাশাপাশি সুন্নাতের প্রতিও যত্নবান হতে হবে। যথাসম্ভব গুনাহ থেকে বাঁচতে হবে। (মেয়েদের জন্য পর্দার বিধানও ফরজ) ঘরে কোনো প্রাণীর ছবি / ভাস্কর্য রাখা যাবেনা। আর সুরক্ষার জন্য সকাল-সন্ধ্যার মাসনুন আমলগুলো অবশ্যই করতে হবে। আর ইতিমধ্যে শারীরিক ক্ষতি হয়ে গেলে, সেটা রিকোভার করার জন্য রুকইয়ার পাশাপাশি ডাক্তারের চিকিৎসাও চালিয়ে যেতে হবে।

[৩] সাধারণ অসুস্থতার জন্য রুকইয়াহ:

বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের জন্য রাসুল স. থেকে অনেক দু’আ-কালাম পাওয়া যায়, সেসব গুরুত্বের সাথে করা। এছাড়া কোরআন থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকটি রুকইয়া হচ্ছে সুরা ফাতিহা, সুরা ফালাক, সুরা নাস এবং ৬টি আয়াতে শিফা (৯/১৪, ১০/৫৭, ১৬/৬৯, ১৭/৮২, ২৬/৮০, ৪১/৪৪)
১. وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ 
২. وَشِفَاء لِّمَا فِي الصُّدُورِ 
৩. يخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاء لِلنَّاسِ 
৪. وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاء وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ 
৫. وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ 
৬. قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاء
 
এছাড়া রুকইয়া হিসেবে রাসুল স. থেকে বর্ণিত অনেক দো’আ আছে, যেমন-
১. اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا 
২. بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، اللَّهُ يَشْفِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ 
৩. بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ 
৪. اَسْأَلُ اللهَ الْعَظِيْم، رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْم، اَنْ يَّشْفِيَكْ 
৫. بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ، مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ
 
এসব আয়াত এবং দোয়াগুলো ৩বার করে পড়ুন, ব্যাথার যায়গায় অথবা রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়ুন, অথবা এসব পড়ার পর রুগীর ওপর ফুঁ দিন। পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করুন, অথবা অলিভ অয়েলে ফুঁ দিয়ে মালিশ করুন। মধু-কালোজিরায় ফু দিয়ে সকাল করে পানিতে গুলিয়ে খান। এসবের পাশাপাশি শাইখ হুজাইফির রুকইয়াহ, এবং সা’দ আল গামিদির আধাঘণ্টার রুকইয়া শোনা যেতে পারে। (ডাউনলোড লিংক http://bit.ly/ruqyahdownload)

[৪] বদনজর আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

বদনজর আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে, এরমাঝে কয়েকটি হচ্ছে-
  1. কোন কাজে মনোযোগ না থাকা। নামায, যিকর, পড়াশোনাতে মন না বসা।
  2. প্রায়শই শরীর দুর্বল থাকা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব লাগা।
  3. বুক ধড়পড় করা, দমবন্ধ অস্বস্তি লাগা। মেজাজ বিগড়ে থাকা।
  4. অতিরিক্ত চুল পড়া। প্রচুর গ্যাস হওয়া। এতে ঔষধ-পথ্যে তেমন ফায়দা না হওয়া।
  5. একেরপর এক অসুখ লেগে থাকা, দীর্ঘ চিকিৎসাতেও রোগ ভালো না হওয়া।
  6. ব্যবসায়-লেনদেনে ঝামেলা লেগেই থাকা। সব কিছুতেই লস হওয়া।
  7. জ্বর থাকলেও কিন্তু থার্মোমিটারে না ওঠা। অন্য রোগও আছে, কিন্তু টেস্টে না ধরা পড়া।

[৫] বদনজরের জন্য রুকইয়াহ:

যদি বুঝা যায় অমুকের জন্য নজর লেগেছে, তাহলে তাকে অযু করতে বলুন, এবংওযুর পানি গুলো আক্রান্তের গায়ে ঢেলে দিন। এরপর চাইলে ভালো পানি দিয়ে গোসল করুন। এতটুকুতেই নজর ভালো হয়ে যাবে ইনশা-আল্লাহ।
আর বদনজরের সেলফ রুকইয়া হচ্ছে, বদনজরের রুকইয়া তিলাওয়াত করবেন, অথবা একাধিকবার তিলাওয়াত শুনতে হবে (ডাউনলোড লিংক http://bit.ly/ruqyahdownload)। এর পাশাপাশি রুকইয়ার গোসল করবেন। আর এভাবে লাগাতার ৩ থেকে ৭ দিন করবেন। সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত করুন। প্রতিদিন কয়েকবার রুকইয়া শুনুন, আর একবার রুকইয়ার গোসল করুন। সমস্যা ভালো হওয়ার পরেও এরকম কয়েকদিন করা উচিত।

[৬] রুকইয়ার গোসল:

একটা বালতিতে পানি নিবেন। তারপর পানিতে দুইহাত ডুবিয়ে যেকোনো দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস, শেষে আবার কোনো দরুদ শরিফ-সব ৭বার করে পড়বেন। পড়ার পর হাত উঠাবেন এবং এই পানি দিয়ে গোসল করবেন।
(এগুলা পড়ে পানিতে ফু দিবেন না, এমনিই গোসল করবেন। যদি টয়লেট আর গোসলখানা একসাথে থাকে, তাহলে অবশ্যই এসব বাহিরে বালতি এনে পড়বেন। প্রথমে এই পানি দিয়ে গোসল করবেন, তারপর চাইলে অন্য পানি দিয়ে ইচ্ছামত গোসল করতে পারেন। যার সমস্যা সে পড়তে না পারলে অন্যকেউ তার জন্য পড়বে, এবং অসুস্থ ব্যক্তি শুধু গোসল করবে।)

[৭] জিন আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

জিন দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে, এরমাঝে কয়েকটি হচ্ছে-
  1. রাতে ঠিকমত ঘুমাতে না পারা।
  2. প্রায়শই ঘুমের মাঝে বোবা ধরা।
  3. ভয়ংকর স্বপ্ন দেখা। উঁচু থেকে পড়ে যেতে, কোন প্রাণীকে আক্রমণ করতে দেখা।
  4. দীর্ঘ মাথাব্যথা, অথবা অন্য কোন অঙ্গে সবসময় ব্যাথা থাকা।
  5. নামাজ, তিলাওয়াত, যিকির আযকারে আগ্রহ উঠে যাওয়া।
  6. মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা, একটুতেই রেগে যাওয়া।
  7. আযান বা কোরআন তিলাওয়াত সহ্য না হওয়া।

[৮] জ্বিনের আসরের জন্য রুকইয়াহ:

যিনি রুকইয়া করবেন তিনি প্রথমে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে নিজের শরীরে হাত বুলিয়ে নিবেন। এরপর রুকইয়া শুরু করবেন। জ্বিনের রুগীর ক্ষেত্রে সাধারণত কথাবার্তা বলে জ্বিন বিদায় করতে হয়। এক্ষেত্রে যিনি রুকইয়া করবেন তাঁকে উপস্থিতবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে। জ্বিনের কথায় ঘাবড়ানো যাবেনা, তার কথা বিশ্বাসও করা যাবে না। হুমকিধামকি দিলে জিনকেই উল্টা ধমক দিতে হবে। রুগীর মাথায় হাত রেখে অথবা (গাইরে মাহরাম হলে) রুগীর পাশে বসে জোর আওয়াজে রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়তে থাকুন। পড়ার মাঝেমাঝে রুগীর ওপর ফুঁ দিতে পারেন, আর পানিতে ফুঁ দেয়ার পর মুখে এবং হাতে-পায়ে ছিটিয়ে দিতে পারেন।
 
রুকইয়ার অনেক আয়াত আছে সেগুলো শেষে বলা হবে। তবে স্বাভাবিকভাবে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ফালাক, সুরা নাস, সুরা সফফাতের প্রথম ১০ আয়াত, সুরা জিনের প্রথম ৯ আয়াত পড়তে পারেন। জ্বিন ছেড়ে দেয়া পর্যন্ত রুগীর কাছে বসে উঁচু আওয়াজে এই আয়াতগুলো বারবার পড়তে হবে আর ফুঁ দিতে হবে অথবা রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়তে হবে। একদিনে না গেলে পরপর কয়েকদিন কয়েকঘন্টা করে এভাবে রুকইয়া করে যেতে হবে। ইনশাআল্লাহ এক পর্যায়ে জ্বিন পালাতে বাধ্য হবে।

[৯] বাড়িতে জ্বিনের উৎপাত থাকলে:

বাড়িতে জ্বিনের কোনো সমস্যা থাকলে পরপর তিনদিন পূর্ন সুরা বাক্বারা তিলাওয়াত করুন, এরপর আযান দিন। তাহলে ইনশাআল্লাহ সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। তিলাওয়াত না করে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কয়েকবার যদি সুরা বাক্বারা প্লে করা হয় তাহলেও ফায়দা পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে সবচেয়ে ভালো ফল পেলে তিলাওয়াত করা উচিত। এরপর প্রতিমাসে অন্তত এক দুইদিন সুরা বাকারা পড়বেন। আর ঘরে প্রবেশের সময়, বের হবার সময়, দরজা-জানালা বন্ধের সময় বিসমিল্লাহ বলবেন। ঘুমের আগে সুরা বাকারার শেষ ২ আয়াত পড়বেন। তাহলে ইনশাআল্লাহ আর কোন সমস্যা হবে না।

[১০] ওয়াসওয়াসা রোগের জন্য রুকইয়া:

1. এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়া। প্রতি নামাজের আগে-পরে, অন্যন্য ইবাদতের সময়, কোন গুনাহের জন্য ওয়াসওয়াসা অনুভব করলে এটা পড়া -
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ، مِنْ غَضَبِهٖ وَعِقَابِهِ، وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ، وَأَنْ يَّحْضُرُوْنِ
 
2. ওয়াসওয়াসা অনুভব করলে বলা (সুরা হাদীদ, আয়াত নং ৩)
هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ ۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْم
[বিশেষতঃ ঈমান নিয়ে সংশয় উদিত হলে এটা পড়া উচিত। আর সকাল-সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস পড়া]
 
3. আয়াতুল হারক (আযাব এবং জাহান্নাম সংক্রান্ত আয়াত) বেশি বেশি তিলাওয়াত করা। এবং প্রতিদিন ৩-৪বার এসবের তিলাওয়াত শোনা। (ডাউনলোড লিংক http://bit.ly/ruqyahdownload)
4. নাপাক থেকে বেচে থাকা, বিশেষত প্রসাবের ছিটা থেকে বাচা। যথাসম্ভব সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকা।
5. পুরুষ হলে জামাআতের সাথে নামাজ পড়া, মুত্তাকী পরহেজগারদের সাথে উঠাবসা করা।
6. সকাল-সন্ধ্যায় ও ঘুমের আগের আমলগুলো গুরুত্বের সাথে করা। টয়লেটে প্রবেশের দোয়া পড়া।
7. আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকা। যথাসম্ভবত ওয়াসওয়াসা পাত্তা না দেয়া; ইগনোর করা, এমনকি মুখে বিরক্তির ভাবও প্রকাশ না করা।

[১১] যাদু আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

যাদু করতে জ্বিনের সাহায্য নেয়া হয়, তাই যাদুগ্রস্থ রোগীর মাঝে জিন আক্রান্তের কিছু লক্ষণগুলো পাওয়া যায়। তবে এছাড়াও যাদুগ্রস্থ রোগীর মাঝে কিছু বিশেষ লক্ষণ দেখা যেতে পারে। যেমনঃ
1. হঠাৎ কারও প্রতি বা কোন কিছুর প্রতি তীব্র ভালবাসা অথবা ঘৃণা তৈরি হওয়া, যা আগে ছিল না।
2. বিশেষ কোন কারন ছাড়াই জটিল-কঠিন রোগে ভোগা। যার চিকিৎসা করলেও সুস্থ না হওয়া।
3. পরিবারের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি লেগেই থাকা। বিশেষতঃ স্বামীস্ত্রীর মাঝে।
4. দৃষ্টিভঙ্গি বা ব্যক্তিত্বে ব্যপক পরিবর্তন। যাতে নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়, চারপাশের মানুষও কষ্ট পায়।
5. অদ্ভুত আচরণ করা। যেমন, কোন কাজ একদমই করতে না চাওয়া। কিংবা দিন-রাতের নির্দিষ্ট কোন সময়ে ঘরের বাইরে যেতে না চাওয়া।
আর যাদু আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়লে, অথবা অডিও শুনলে অস্বাভাবিক অনুভূতি হয়। যেমন, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, বমি আসা, বুক ধড়ফড় করা, ইত্যাদি।

[১২] যাদু / ব্ল্যাক ম্যাজিক / বান মারার জন্য রুকইয়া:

যাদুর প্রকারভেদ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার রুকইয়া করা হয়। তবে কমন সেলফ রুকইয়া হচ্ছে- প্রথমে সমস্যার জন্য নিয়াত ঠিক করে, ইস্তিগফার দরুদ শরিফ পড়ে শুরু করুন। তারপর কোন রুকইয়া শুনে নিশ্চিত হয়ে নিন আসলেই সমস্যা আছে কি না! শাইখ সুদাইসের অথবা লুহাইদানের রুকইয়া শুনতে পারেন (ডাউনলোড লিংক http://bit.ly/ruqyahdownload)। সবশেষে একটি বোতলে পানি নিন, এরপর- ক. সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২ খ. ইউনুস ৮১-৮২ গ. সুরা ত্বহা ৬৯নং আয়াত পড়ে ফুঁ দিন।
 
وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُوْنَ - فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُونَ - فَغُلِبُوْا هُنَالِكَ وَانقَلَبُوْا صَاغِرِيْنَ - وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِيْنَ -قَالُوْا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ - رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُوْن
 .
فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُۖ إِنَّ اللّٰهَ سَيُبْطِلُهُۖ إِنَّ اللّٰهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِيْنَ - وَيُحِقُّ اللّٰهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْكَرِهَ الْمُجْرِمُونَ - 

وَأَلْقِ مَافِي يَمِيْنِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوْاۖ إِنَّمَا صَنَعُوْا كَيْدُ سَاحِرٍۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتٰى
 
ঘ. এরপর সুরা ফালাক্ব, সুরা নাস সব ৩বার করে পড়ে ফুঁ দিন।
তিন থেকে সাতদিন সকাল-বিকাল এই পানি খেতে হবে, এবং গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করতে হবে। আর মাসখানেক প্রতিদিন দেড়-দুইঘণ্টা রুকইয়া শুনতে হবে। সাধারণ কোন রুকইয়া, আর সুরা ইখলাস, ফালাক, নাসের রুকইয়াহ। এর পাশাপাশি আল্লাহর কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া করতে হবে।
এভাবে একদম সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত রুকইয়া করে যাবেন, সমস্যা বেড়ে গেলেও বাদ দিবেন না। তাহলে ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুতই পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবেন।

[১৩] যাদুর কোন জিনিশ অথবা তাবিজ খুঁজে পেলে:

কি দিয়ে যাদু করেছে যদি পাওয়া যায়, অথবা সন্দেহজনক কোন তাবিজ পেলে উপরে বলা আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিন, এরপর তাবিজ অথবা যাদুর জিনিশগুলো ডুবিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ, তাহলে ইনশাআল্লাহ যাদু নষ্ট হয়ে যাবে। পরে সেগুলো পুড়িয়ে বা নষ্ট করে দিন।

[১৪] যাদু, জ্বিন, বদনজর সম্পর্কিত একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে:

একসাথে একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে প্রথমে বদনজরের জন্য রুকইয়া করতে হবে, এরপর জ্বিনের জন্য এবং যাদুর জন্য রুকইয়া করতে হবে।

[১৫] রুকইয়ার আয়াত:

কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা রুকইয়া করা হয়, তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কিছু আয়াত হচ্ছে-
  1. সুরা ফাতিহা
  2. সুরা বাকারা ১-৫
  3. সুরা বাকারাহ ১০২
  4. সুরা বাকারাহ ১৬৩-১৬৪
  5. সুরা বাকারাহ ২৫৫
  6. সুরা বাকারাহ ২৮৫-২৮৬
  7. সুরা আলে ইমরান ১৮-১৯
  8. সুরা আ'রাফ ৫৪-৫৬
  9. সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২
  10. সুরা ইউনুস ৮১-৮২
  11. সুরা ত্বহা ৬৯
  12. সুরা মু'মিনুন ১১৫-১১৮
  13. সুরা সফফাত ১-১০
  14. সুরা আহকাফ ২৯-৩২
  15. সুরা আর-রাহমান ৩৩-৩৬
  16. সুরা হাশর ২১-২৪
  17. সুরা জিন ১-৯
  18. সুরা ইখলাস
  19. সুরা ফালাক
  20. সুরা নাস
এই আয়াতগুলো একসাথে পিডিএফ করা আছে, ডাউনলোড লিংক- https://goo.gl/XZ9JuC

[১৬] যাদু, জিন, শয়তান ইত্যাদির ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়:

১. বিষ, যাদু এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাঁচতে সকাল-সন্ধ্যায় এই দোয়া তিনবার পড়াঃ
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
আ’উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মা-তি, মিং-শাররি মা-খলাক্ব। (জামে তিরমিযী, ৩৫৫৯)
 
২. সব ধরনের ক্ষতি এবং বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকতে এই দোয়া সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়াঃ
بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ العَلِيْمُ
বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা-ইয়াদ্বুররু মা‘আসমিহী, শাইউং ফিলআরদ্বী ওয়ালা- ফিসসামা-ই, ওয়াহুওয়াস সামি’উল ‘আলীম। (জামে তিরমিযী, ৩৩৩৫)
৩. প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস তিনবার করে পড়া। এবং এটা বিশেষ গুরুত্বের সাথে করা। (সুনানে আবি দাউদ) 
 
৪. ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি পড়া এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া। সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতের তালুতে ফু দিয়ে পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নেয়া। (বুখারী)
 
৫. টয়লেটে ঢোকার পূর্বে দোয়া পড়া- اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা, মিনাল খুবসি ওয়াল খবা-ইছ। (মুসলিম, ৩৭৫)
 
৬. তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। প্রতিদিনের অন্যান্য মাসনুন আমল করতে থাকা। এবং আল্লাহর কাছে সবসময় দোয়া করতে থাকা।
 
------------------------
Share:

March 9, 2017

খারাপ নারীরা খারাপ পুরুষদের জন্য, ভাল নারীরা ভাল পুরুষদের জন্য! তাই নাকি??

দুশ্চরিত্রা নারীরা দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য, সচ্চরিত্রা নারীরা সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য!! সত্যিই কি তাই??

[ক]
বিখ্যাত একটি আয়াত.. এটা নিয়ে অনেক রসালো গল্প রচিত হতে দেখা যায়। অবিয়াইত্তা পোলাদের কেউ এজন্য তৃপ্তির ঢেকুর তুলে, আর কেউ কপাল থাপড়ায়.. যাহোক! নারী দিবস উপলক্ষে এই আয়াতের দিকে আমরা কিছুক্ষণ মনযোগী হতে চাচ্ছি..
.
এই আয়াতের ওপর একটা ইশকাল বা আপত্তি উত্থাপন করে কেউকেউ। যার সারকথা হচ্ছে, "অনেক সময় দেখা যায় স্ত্রী খুব দ্বীনদার অথচ স্বামী বেদ্বীন। স্ত্রী অনেক নম্রভদ্র অথচ স্বামীটা বজ্জাত, কিংবা এর বিপরীতও দেখা যায়.. স্বামী বেচারা ভালো মানুষ, কিন্তু স্ত্রীটা জান ত্যানা ত্যানা করে দিচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে উল্লেখিত আয়াতের যথার্থতা কি? এটা কি ইউনিভারসাল ট্রুথ? অর সামথিং এল্স.."
.
প্রশ্নটা কোনো এক ভাই কয়েকদিন আগে করেছিলো, পরে উত্তর দিব বলে ব্যাপারটা একদমই ভুলে গিয়েছিলাম, আজ ইয়াদ হওয়ায় কিছু মুতালা'আ করে উনাকে সংক্ষেপে বললাম। আর মনে হলো বিস্তারিত পোস্ট লিখলে মন্দ হয় না..
.
ইসলাম ওয়েবে একটি প্রশ্ন ছিলো উপরেরটার মতই, তবে সাথে উদাহরণ হিসেবে লুত আ. এর স্ত্রীর কথা ছিলো..

যে লুত আ. তো নিখাদ ভালো মানুষ, অথচ উনার স্ত্রী কাফির! ইত্যাদি ইত্যাদি.. তো আমরা সংক্ষেপে আয়াতটার দিকে খেয়াল করি..
.
[খ]
সুরা নূর, ২৬নং আয়াতের শব্দগুলো দেখুন-

الْخَبِيثَاتُ لِلْخَبِيثِينَ وَالْخَبِيثُونَ لِلْخَبِيثَاتِ وَالطَّيِّبَاتُ لِلطَّيِّبِينَ وَالطَّيِّبُونَ لِلطَّيِّبَاتِ

এখানে الْخَبِيثَاتُ এবং َالْخَبِيثُونَ এর বেশ কয়েকটি অর্থ হতে পারে, এর অর্থ যেমন দুশ্চরিত্রের নারী - পুরুষ হতে পারে, তেমনি খবিসাত দ্বারা যেকোনো খারাপ কথা বা কাজও বুঝায়, নাপাকিও বুঝায়। মোটকথা, খারাপ কথা, কাজ, বস্তু, ব্যক্তি, জ্বিন সবকিছুর ক্ষেত্রেই খবীস শব্দ ব্যাবহার হয়।
অনুরূপভাবে, الطَّيِّبَاتُ দ্বারা ভালো বা পবিত্র কথা কাজ ব্যক্তি ইত্যাদি বুঝানো হয়।
.
তো আমাদের বাংলা উর্দুর প্রসিদ্ধ অনুবাদগুলোতে সম্ভবত খবিসাত তায়্যিবাত দ্বারা ব্যক্তি ধরে নিয়ে অনুবাদ করা হয়েছে, এজন্য আমাদের মাঝে "দুশ্চরিত্রা নারীরা দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য.. সচ্চরিত্রা নারীরা সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য" এটা প্রসিদ্ধ।
আমি বলছিনা যে, সালাফের মাঝে এর নজির নাই বরং আমি বলতে চাচ্ছি আমাদের অনুবাদপ্রিয়তা এবং ভাষার সীমাবদ্ধতার দরুন এটা প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। যার কারণে উপরিউক্ত আপত্তি উত্থাপনের সুযোগ হচ্ছে- "কতশত ভালো মহিলা আছে যার স্বামী বজ্জাত!"
পক্ষান্তরে আপনি ইংলিশ অনুবাদ Saheeh International টা যদি দেখেন.. সেখানে কিন্তু আমাদের মত অনুবাদ নাই!
সেখানে আপনি পাবেন: "Evil words are for evil men, and evil men are [subjected] to evil words. And good words are for good men, and good men are [an object] of good words. Those [good people] are declared innocent of what the slanderers say. For them is forgiveness and noble provision."
দেখুন- https://quran.com/24/26
.
[গ]
এই প্রশ্নটা উত্থাপনই হতো না, যদি আমাদের অধিকাংশ মুফাসসিরিনে কিরামের মতামতটা জানা থাকতো। আচ্ছা, প্রথমে প্রচলিত অর্থের ব্যাপারে আলাপ করি, এর নিকটবর্তী মন্তব্য পাওয়া যায় ইমাম কুরতুবী রহ. এর। যা মুফতি শফি রহ. এর মারিফুল কোরআন মন্তব্যের অনুরূপ।
উনারা খবিসাত - তায়্যিবাত এর ক্ষেত্রে ব্যক্তি অর্থ নিয়ে ব্যাপারটা এভাবে ব্যখ্যা করেছেন-
"স্বাভাবিকভাবে খারাপ লোকদের আকর্ষণ খারাপ মেয়েদের প্রতি থাকে, আর পরহেজগার লোকদের আকর্ষণ দ্বীনদার পরহেজগার মেয়েদের প্রতি থাকে। আর জীবনসঙ্গী হিসেবে এরকমই মানানসই! মানে দ্বীনদারদের উচিত দ্বীনদার সঙ্গি বেছে নেয়া.." (মানে মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা বর্ণিত হয়েছে এখানে..) এই আর কি...!
.
খুবই চমৎকার এবং সাধাসিধা ব্যাখ্যা, এটা মেনে নিলেও কোনো আপত্তির অবকাশ থাকে না।
.
[ঘ]
তবে মুফাসসিরিনে কিরামের মাঝে আরেকধরণের ব্যাখ্যা প্রচলিত আছে, যা আয়াতের শানে নুযুলের সাথে অধিক মানানসই।
জমহুর (অধিকাংশ) মুফাসসির এটার যা ব্যাখ্যা দেন তার সারকথা হচ্ছে-
"এখানে খবিসাত বা তায়্যিবাত দ্বারা ব্যাক্তি নয় বরং কথা বা কাজ উদ্দেশ্য! অর্থাৎ ভালো কথা ভালো লোকেরাই বলে, খারাপ কথা খারাপ লোকেরা বলে এটা তাদের জন্য মানানসই..."
মুলতঃ আয়েশা রা. এর ওপর অপবাদ দেয়ার ঘটনায় যেসব আয়াতটা নাযিল হয়েছিল, তার মাঝে এটা একটা.. আয়াতের বাকি অংশও খেয়াল করুন-
أُوْلَئِكَ مُبَرَّؤُونَ مِمَّا يَقُولُونَ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ

.
অধিকাংশ সালাফের মত বিবেচনায় নিলে পুরো আয়াতের অর্থ এরকম দাড়াচ্ছে-
"নোংরা কথা বা কাজ নোংরা লোক বা নারীদের জন্য, পবিত্র কাজ পবিত্র লোক বা নারীদের জন্য। তাদের সম্পর্কে লোকেরা যা বলে, তার সাথে তারা সম্পর্কহীন। তাদের জন্যে আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।"
.
তাহলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আয়াতের ভাবার্থ এরকম,
"আয়েশা রা. এর নামে যারা অপবাদ ছড়িয়েছে, ওরা খারাপ লোক.. খারাপ কাজ খারাপ লোকদেরকেই মানায়, ওসব খারাপ কাজের সাথে আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা-র কোনো সম্পর্ক নাই। উনি এসব থেকে পবিত্র, বরং উনার জন্য দুনিয়া আখিরাতের উত্তম প্রতিদান রয়েছে।"
.
এই ব্যাখ্যাটা যারা করেছেন তারা হচ্ছে- "আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, সাঈদ ইবনে যুবায়ের, মুজাহিদ রা. পরবর্তি আলেমদের মাঝে ইবনে কাসির রহ. এবং ইবনে তাইমিয়া রহ.-ও এরকমই অর্থ করেছেন।"
.
এই আয়াতের আলোচনায় আর বাকি থাকে লুত আ.এর স্ত্রীর কথা, ইবনে কাসিরওয়ালা উত্তরে বলেছেন- কাফির হওয়া আর চরিত্র খারাপ হওয়া আলাদা বিষয়, লুত আ. স্ত্রী কাফের ছিলেন কিন্তু তবুও উনি কখনো ব্যভিচার করেননি।
আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন...
.
[চ]
বিস্তারিত জানতে তাফসিরে কুরতুবী, ইবনে কাসীর, মারিফুল কোরআন, রুহুল মা'আনীতে সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফসীর দেখা যেতে পারে। এছাড়াও ইসলাম ওয়েবের সুওয়াল জাওয়াবের লিংক দিয়ে দিচ্ছি, আগ্রহীরা চাইলে দেখে নিতে পারেন।
১. http://fatwa.islamweb.net/fatwa/index.php?page=showfatwa&Option=FatwaId&Id=198413
২. http://fatwa.islamweb.net/fatwa/index.php?page=showfatwa&Option=FatwaId&Id=53577
৩. http://fatwa.islamweb.net/fatwa/index.php?page=showfatwa&Option=FatwaId&Id=33972
.
যাহোক, সব মিলিয়ে আশা করছি আপনাদের কাছে বিষয়টা এখন পরিষ্কার।
নারী দিবস শেষে আপাতত আপাতত এটাই ছিল আমার নারী দিবসের স্ট্যাটাস... :) :)
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ!
.
---
লেখাটি ফেসবুকে- https://facebook.com/thealmahmud/posts/1247195052036689
Share:

November 17, 2016

ঘুম না আসলে কী করবেন?

অনেকক্ষণ ধরে শুয়ে আছেন, ঘুমের কোনো দেখা নেই... ভুক্তভোগীই কেবল জানে এর কত কষ্ট.. এপাশ-ওপাশ করতে করতে অনেকের সারারাত পার হয়ে যায় কিন্তু ঘুম আসেনা..। অথবা হাতে অল্প কিছু সময় আছে, চাইছেন হালকা ঘুমিয়ে নিতে, কিন্তু ইনস্ট্যান্ট কফির মত ইনস্ট্যান্ট ঘুম কই পাওয়া যাবে?
-
নিচের দোয়াটি পড়ে ডান কাত হয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকুন, অথবা অন্যান্য তাসবিহ-তাহলিল পড়ুন, ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুত ঘুম চলে আসবে।
...........
بِاسْمِكَ رَبِّي وَضَعْتُ جَنْبِي، وَبِكَ أَرْفَعُهُ، فَإِن أَمْسَكْتَ نَفْسِي فارْحَمْهَا، وَإِنْ أَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا، بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ
............
অর্থঃ আমার রব! আপনার নামে আমি আমার পার্শ্বদেশ রেখেছি (শুয়েছি) এবং আপনারই নাম নিয়ে আমি তা উঠাবো। যদি আপনি (ঘুমন্ত অবস্থায়) আমার প্রাণ আটকে রাখেন, তবে আপনি তাকে দয়া করুন। আর যদি আপনি তা ফেরত পাঠিয়ে দেন, তাহলে আপনি তার হেফাযত করুন যেভাবে আপনি আপনার সৎকর্মশীল বান্দাগণকে হেফাযত করে থাকেন।
{এই দোয়াটি সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৫০৫০, এছাড়াও এটা বুখারী, মুসলিম এবং নাসাঈ শরীফে আছে...}
...
সতর্কীকরনঃ
ঘুমের আগের অন্য গুরুত্বপূর্ণ দোয়া বা কোরআনের আয়াত (যেমন সুরা ইখলাস ফালাক নাস, আয়াতুল কুরসি) পড়ার পরে এইটা পড়বেন। নইলে এমন অনেকবার হয়েছে, এই দোয়া পড়ার আর তিনকুল পড়ে শেষ করতে পারিনি, আগেই ঘুমায় গেছি। তখন তো আরেক সমস্যা...

রাইট ক্লিক করে সেভ করে নিন
------------
- ১৭ নভেম্বর ২০১৬
ফেবুতে- https://m.facebook.com/photo.php?fbid=1146747935414735&id=100002386190185
Share:

September 30, 2016

শুকরিয়া আদায় করলে নিয়ামাত বৃদ্ধি পায়?

সুরা ইবরাহীমের একটা আয়াত অনেক উলামা হযরতদের মুখে শোনা যায়, আয়াতটি হচ্ছে-
.
 وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ  
যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও বাড়িয়ে দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর। (১৪: ৭) 
.
আমি তাফসিরে জালালাইন পড়েছি ৪জন উস্তাযের কাছে, তাদের মাঝে কে যেন আয়াতটার চমৎকার ব্যখ্যা করেছিলেন, ঠিক খেয়াল নাই :(
ক্লাসে ছাত্ররা কত রকম প্রশ্নই তো করে তাইনা? এই আয়াত প্রসঙ্গে আমরাও বললাম, হুজুর আয়াতটা যদি একটু ক্লিয়ার করতেন..
হুজুর বললেন- যেমন?
বললাম- অনেক কাফের বা নাস্তিক আছে যারা অনেক ধনী! এবং তাদের সম্পদ আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে... তাদের কোনো শাস্তি হতেও দেখা যাচ্ছেনা। :/
তিনি বলছিলেন- এখানে আল্লাহ বলছেন "যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও বাড়িয়ে দেব" তারমানে আখিরাতে আরো বাড়িয়ে দেব, 'la azidannakum' ai 'la azidannakum fil akhirati' এরপর আল্লাহ বলছেন "এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর" এটাও আখিরাতে।
.
অর্থাৎ কেউ যদি দুনিয়ার নিয়ামাতের শুকরিয়া আদায় করে, তাহলে তাকে আখিরাতে আরো অনেক বেশি দেয়া হবে, আর যদি কেউ শুকরিয়া জ্ঞাপন না করে, কুফরি করে তাহলে তার কঠোর শাস্তি হবে, সেটাও আখিরাতে।
আর কৃতজ্ঞতার জন্য যদি দুনিয়ায় কাউকে বাড়িয়ে দেয়, তাহলে সেটা এক্সট্রা বোনাস! আসল প্রতিদান পরকালে অপেক্ষা করছে...
আমরা যদি আয়াতের ব্যখ্যাটা এভাবে করি তাহলে সম্ভবত: উত্তম হবে!

-৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ফেবুতে- https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1096552610434268&id=100002386190185
Share:

February 25, 2016

মডার্ন মুফাসসির; যাহাদের ছাগু বলা বৈধ মনে করি...

যাইনুল আবেদিন সাহেব হুজুরের অনূদিত একটা বই পড়েছিলাম, নামটা এই মুহূর্তে খেয়াল নেই। শুরুতে উৎসর্গ পাতায় লেখা এরকম ছিল-
.
"যারা কোরআন কে বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ করতে এর মনগড়া ব্যাখ্যা করা পুণ্যের কাজ ভাবেন তাদের হিদায়াত কামনায়...."
.
তখন কথাগুলো ততটা বুঝিনি, তবে আমার নীতি হচ্ছে 'বুঝি না বুঝি পড়ে যাই! পরে কোনোদিন বুঝে আসলে আসতেও পারে'
এজন্য গলধকরণ করেছিলাম, আজ হযরতের কথাগুলো ভাবি..
একবার এক ছাগলের লেখা বই পড়লাম, ছাগলটা কোনো এক কলেজে অধ্যাপনা করে। সে জানপ্রাণ দিয়ে এটা প্রমাথ করতে চেষ্টা করেছে যে, "বিবর্তনবাদ কোরআন সমর্থিত, আর এব্যাপারে বহু আগেই কোরআনে বলা হয়েছে। অতএব কোরআন বিজ্ঞানসম্মত বই!!" উনি কোত্থেকে কোত্থেকে আয়াত এনে আজগুবি ব্যাখ্যা করলেন- "আসলে মানুষ ব্যতীত বাকি সব প্রাণী বিবর্তনের মাধ্যমেই পৃথিবীতে বিস্তারলাভ করেছে!!" হেঁহেঁ.. মানে ইসলামিক বিবর্তনবাদ আর কি! :/
.
আরেক ভাইয়ের পোস্টে দেখলাম বেচারা এলিয়েনের কথা কোরআনে আছে এটা প্রমাণের জন্য বেশ পরিশ্রম করছেন। অথচ সার্বিক বিবেচনায় দেখা যায়, জ্বিনের অস্তিত্ব অস্বীকার করার জন্য বেজ্ঞানীদের একটা বাহানা হচ্ছে এলিয়েন। (এছাড়া তাদের আরও অনেক কিচ্ছা শক্তিশালী করতে এসব এলিয়েন তত্ব কাজে দেয়। পরে কোনোদিন শুধু এবিষয়ে হবে ইনশাআল্লাহ)
--
এই মডার্ন মুফাসসিরদের খাতা বেশ দীর্ঘ,
সুরা নাযিয়াত ৩০ আয়াতে আল্লাহ যে বলেছেন- "wal arda ba'da zaalika dahaahaa.." পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন ..(৭৯:৩০)

একবার এক ডাক্তার সাহেব বললেন এই দাহাহা মানে নাকি ডিম, খালি ডিম বলেই তিনি ক্ষ্যামা দিলেন না। তিনি বললেন- আসলে দাহাহা শব্দ দ্বারা উটপাখির ডিম বুঝায়। অর্থাৎ ১৪০০ বছর আগে আল্লাহ কোরআনে বলেছেন পৃথিবীর আকৃতি উটপাখির ডিমের মত!! আল্লাহই জানে উনি এই অর্থ কই পাইছেন।
উনি উনার বক্তব্য দিয়ে দায়মুক্ত হয়ে গেলেন, অথচ এরপর দীর্ঘদিন যাবত মুক্তমনা, ইস্টিশন, সামু আর নাগরিকব্লগে এটা নিয়ে হাসি তামাশা চললো। যদি উনাকে বা কোনো আম মানুষ নিয়ে নাস্তিকদের তামাশা সীমাবদ্ধ থাকতো তবে হয়তো হজম করা যেত কিন্তু এটা যখন কোরআন পর্যন্ত পৌছুলো তখন সেটা সহ্য করা আমাদের পক্ষে অনেক কষ্টকর ব্যাপার ছিল। অথচ আমাদের কিছু বলারও ছিলো না...
কারণ এখানে অপরাধ তো আমারই কোনো এক ঈমানদার ভাইয়ের, এখন কাকে কী বলব?
এরপরেও কি আপনাদের ঘুম ভাঙ্গবে না? এই হীন মানসিকতা পরিত্যাগ করবেন না?


স্থলে ও জলে বিপর্যয় ছড়ায় মানুষের কৃতকর্মের দরুন... (সুরা রুম, ৪১)


-----
ফেবু লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=949536688469195&id=100002386190185
Share: