Showing posts with label সুপার ন্যাচারাল. Show all posts
Showing posts with label সুপার ন্যাচারাল. Show all posts

June 20, 2018

একচোখের গল্প

একটা বিষয় জানা উচিত, পাগলা কন্সপাইরেসি থিয়োরিস্ট গ্রুপ এক চোখের একটা সিম্বল দেখিয়ে সেটাকে দাজ্জালের চোখ বলে প্রচার করে।
সেটা মূলত মিশরীয় দেবতা হোরাস (horus) এর চোখ। বিপদ-আপদ থেকে বাঁচতে এই এক চোখের তাবিজ পশ্চিমা দেশগুলোতে বেশ প্রসিদ্ধ। তুরস্কের মুসলমানদের মাঝেও এই কুসংস্কার প্রচলিত আছে।



দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, এখনও বিভিন্ন দেশের যাদুকরেরা মিশরে গিয়ে বিশেষ বিশেষ রিচ্যুয়াল পালন করে, মিশরীয় দেবতাদের নামে বিভিন্ন কিছু উৎসর্গ করে (যার মধ্যে মানুষের প্রাণও উৎসর্গ হয়) এভাবে এই মানুষ শয়তানগুলো জিন শয়তানদের নিকটবর্তী হয়।

তৃতীয় কথা, যাদু বিদ্যার বর্তমানে যতগুলো শাখা প্রচলিত আছে, তারমাঝে বিশেষতঃ লিখিত যাদু (যেমন: তাবিজ), এগুলোর সর্বপ্রথম ব্যপক চর্চা হয়েছে মিশরে। যাদুর সর্বাধিক শাখা প্রশাখা মিশরেই বিস্তৃত হয়েছে। ব্যাবিলনে যাদু চর্চা ছিল, তবে এত প্রকারের না। 

চতুর্থ কথা হচ্ছে, হিন্দুস্থানের যাদু দুনিয়াজুড়ে বিখ্যাত, তবে হিন্দুস্থানিরা নাকি বাংলাদেশি যাদুকে বেশি ভয়াবহ মনে করে!! বাদবাকি আমার মনে হয়েছে, উপমহাদেশি যাদুগুলো কেমন যেন ছোটলোকি টাইপের!! আর এই তন্ত্রমন্ত্রের অনেক কিছুই হিন্দুদের ধর্মের অংশ তো, তাই এতদিন ধরে এখানে টিকে আছে। বাংলাদেশে হিন্দুর সংখ্যা কমে গেছে আগের (বৃটিশ আমলের) চেয়ে, তাই এখানে যাদুর চর্চাও কমে গেছে।
শেষ কথা, বলছিলাম হোরাস এর গল্প, এ মূলতঃ মিশরের একজন রাজা ছিল। কার সাথে সিংহাসনের জন্য যুদ্ধ করছিল, পরে নাকি দেশ শাসন করেছে। কালক্রমে ওরে কেউ নিরাপত্তার দেবতা, কেউ বাতাসের দেবতা, কেউ আয়-উন্নতির দেবতা বানায় ফেলছে -_-

অহ, হোরাসের চোখ (eye of horus) এর মত আরেকটা চোখ প্রসিদ্ধ আছে, মিশরীয়দের সুর্য এবং সৃষ্টির দেবতা 'রা' এর চোখ (eye of ra) এছাড়া তৃতীয় চোখ (জ্ঞানের চক্ষু / অন্তর্দৃষ্টি) বুঝাতেও এক চোখ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লোগোতে ব্যবহার হয়। 

--
যেটাই হোক কেন, এটা যে দাজ্জালের চোখ না, আপনি নিশ্চিত থাকেন
Share:

রুকইয়াহ শারইয়াহ পরিচিতি

[১]
সবচেয়ে বড় এবং প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, রুকইয়াহ কি?
- শাব্দিক অর্থে রুকইয়াহ মানে হল, ঝাড়ফুঁক, মন্ত্র, তাবিজ কবচ ইত্যাদি।
- তবে ব্যবহারিক অর্থে রুকইয়াহ বলতে সাধারণত ঝাড়ফুঁকই বুঝায়।
- রুকইয়ার পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে, কোরআনের আয়াত, আল্লাহর নামের যিকর, হাদিসে রাসূল ﷺ অথবা সালাফে সালেহীন থেকে বর্ণিত দোয়া পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কোন বিপদ থেকে মুক্তি চাওয়া কিংবা রোগ থেকে আরোগ্য কামনা করা।
আর এটাই রুকইয়াহ শারইয়াহ'র উত্তম সংজ্ঞা।

[২]
আচ্ছা! এবার যদি জিজ্ঞেস করা হয়- এই রুকইয়াহ জিনিসটা আসলে কি?
- রুকইয়াহ হল একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, আধুনিক ভাষায় পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলে এটাকে spiritual healing বলা যায়। অর্থাৎ আধ্যাত্মিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা।
.
রুকইয়াহ শারইয়াহ কী নয়?
- এটা মনের আশা পূরণ কিংবা অসাধ্য সাধনের কোন তদবির না, স্বামীকে বশ করার কোন মন্ত্র না, এটা নামাজ-রোজা কিংবা হজ্ব-যাকাতের মতন বিশেষ কোন ইবাদাত না। এটা একটা চিকিৎসা পদ্ধতি।

[৩]
এ ব্যাপারে ইসলাম কি বলে?
- এই চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে শরিয়তের নির্ধারিত গণ্ডি অতিক্রম না করলেই এটা জায়েজ। এব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “রুকইয়াতে যদি শিরক না থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৫৪৪)
- এক্ষেত্রে আলেমদের মত হচ্ছে, এটা তো অবশ্যই শিরক এবং কুফর থেকে মুক্ত হতে হবে, এমনকি এসবের সন্দেহও থাকা যাবে না। এজন্য ওলামায়ে কিরাম কয়েকটি শর্তের ব্যাপারে একমত হয়েছেন, সেসব হচ্ছে:
১. কোন শিরক-কুফর অথবা হারাম বাক্য থাকা যাবে না।
২. যা দ্বারা রুকইয়াহ করা হবে সেটা স্পষ্ট বাক্যে হতে হবে, যার অর্থ ভালোভাবে বোঝা যায়।
৩. দুর্বোধ্য কোন সংকেত বা ভাষায় হওয়া যাবে না, যার অর্থ স্বাভাবিকভাবে মানুষ বুঝে না।
(উদাহরণস্বরূপ আপনি বাংলাদেশে ল্যাটিন ভাষার রুকইয়াহ করতে পারবেন না, কারণ এখানকার মানুষ সেটা বুঝবে না। এজন্যই সালাফের মাঝে কেউ কেউ ঝাড়ফুঁক আরবিতে হওয়াকেও শর্ত বলেছেন। তবে মূলতঃ স্বাভাবিকভাবে বোধগম্য ভাষায় হলে, আরবি হওয়া আবশ্যক না।)
- আর হ্যাঁ! রুকইয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই আক্বিদা রাখতে হবে, রাক্বির* কোন সাধ্য নেই কাউকে সুস্থ করার কিংবা বিপদ দূর করার। সুস্থতা এবং বিপদমুক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে, এখানে রুকইয়াহ কেবল দোয়ার অনুরূপ ভূমিকা পালন করছে। অর্থাৎ রুকইয়াহ আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার একটি পদ্ধতি মাত্র।

* যিনি রুকইয়াহ করেন, তাকে রাক্বী বলা হয়।

[৪]
এবারের প্রশ্ন হচ্ছে, কে রুকইয়াহ করতে পারে?
উত্তর হল- নিজের জন্য বা পরিবারের জন্য যে কেউ রুকইয়াহ করতে পারে! এজন্য বিরাট বুজুর্গ হওয়া শর্ত না। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে এমন যে কোন ব্যক্তি, যদি দেখে-দেখে কিংবা মুখস্থ দোয়া অথবা কোরআনের আয়াত পড়তে পারে, তাহলে সেই সেলফ রুকইয়াহ** করতে পারবে।
তবে হ্যাঁ, আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদে অথবা জনগণের জন্য ব্যাপকভাবে রুকইয়াহ করতে চান, তাহলে অবশ্যই এ বিষয়ে আপনাকে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখতে হবে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "কেউ যদি চিকিৎসার জ্ঞান না রেখেই চিকিৎসা করে, তবে (কিছু ঘটলে) সেই দায়ী হবে।" (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস নং ৪৫৮৬)

** নিজে নিজে রুকইয়াহ করাকে সেলফ রুকইয়াহ বলা হয়।

[৫]
শেষ প্রশ্ন, আমি কিভাবে রুকইয়াহ বিষয়ে জানতে পারি? অথবা আমি কিভাবে রুকইয়াহ করা শিখতে পারি?
উত্তর- এ বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমদের প্রবন্ধ অথবা বই থেকে জানতে পারেন। অথবা তাদের দরস, বায়ান কিংবা লেকচার থেকে জানতে পারেন।
আমার কাছে সহজ কোন রাস্তা যদি জানতে চান, তাহলে বলবো "মুখতাসার রুকইয়াহ শারইয়াহ" নোটটা পড়ে ফেলেন, একসাথে সাতসমুদ্রের পানি পেয়ে যাবেন। এরপর চাইলে এই বিষয়ে আমার অন্যান্য লেখাগুলো পড়তে পারেন, পড়তে পড়তে আরও রাস্তা খুলে যাবে ইনশাআল্লাহ। আর জ্বিন সিরিজে কিছু বইয়ের লিস্ট দিয়েছিলাম, আরবিতে দক্ষতা থাকলে সেগুলোও দেখতে পারেন।
- আমার প্রায় সবগুলো লেখার লিস্ট "রুকইয়াহ ইনডেক্স"-এ গেলে পাবেন। নিচে ইনডেক্সের লিংক দিয়ে দেয়া হল। আর ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে একটি বই আসছে, সেখানে আরও ভালোভাবে অনেক কিছু একসাথে পেয়ে যাবেন।
সে পর্যন্ত আমার জন্য দোয়া করবেন... 

জাযাকুমুল্লাহু খাইর
রুকইয়াহ শারইয়াহ আপনাদের জন্য বরকতময় হোক!

----------------
রুকইয়াহ বিষয়ে আরও জানতে ভিজিট করুন - রুকইয়াহ ইনডেক্স - https://facebook.com/notes/ruqyah-support-bd/ruqyah-shariyah-index/577087749364269/
Share:

June 9, 2017

সারসংক্ষেপ রুকইয়া শারইয়্যাহ

(সংক্ষেপে বিভিন্ন সমস্যার জন্য ইসলাম সম্মত ঝাড়ফুঁক)

বিষয়সূচি:
  1. রুকইয়াহ পরিচিতি
  2. শারীরিক অসুস্থতা
  3. বদনজর
  4. জিনের আসর
  5. ওয়াসওয়াসা রোগ
  6. কালো যাদু
  7. রকইয়ার আয়াত
  8. মাসনুন আমল

[১] অবতরণিকাঃ

রুকইয়া শারইয়াহ বিষয়ে অনেক লম্বা চওড়া লেখা আছে, ইতোমধ্যে আমাদের রুকইয়াহ শারইয়াহ সিরিজও শেষ। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই এবিষয়ে বই প্রকাশ হবে। আজ আমরা সংক্ষেপে রুকইয়া পরিচিতি এবং বিভিন্ন সমস্যার জন্য রুকইয়া করার পদ্ধতি আলোচনা করবো। বলতে পারেন এই লেখাটি অতীত ও ভবিষ্যতের পুরো রুকইয়াহ সিরিজের সারাংশ।
এর প্রথম সংস্করণ ১৭ জুন প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর কিছু সংশোধন এবং সংযোজন করা হয়েছে। এটি চতুর্থ সংস্করণ। এই লেখায় আরও কিছু যোগ করার পরামর্শ থাকলে জানাবেন, আর কোনো পুস্তক-পত্রিকা অথবা ফেসবুকের বাহিরে অন্য কোথাও প্রকাশ করতে চাইলে অনুগ্রহ পুর্বক অনুমতি নিবেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিফাজত করুন। আমীন!

[২] প্রাথমিক ধারণাঃ

রুকইয়াহ কী? রুকইয়াহ অর্থ ঝাড়ফুঁক করা, মন্ত্র পড়া, তাবিজ-কবচ, মাদুলি ইত্যাদি। আর রুকইয়াহ শারইয়্যাহ (رقيةشرعية) মানে শরিয়াত সম্মত রুকইয়াহ, কোরআনের আয়াত অথবা হাদিসে বর্ণিত দোয়া দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা। তবে স্বাভাবিকভাবে ‘রুকইয়া’ শব্দটি দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা বুঝায়। এই ঝাড়ফুঁক সরাসরি কারো ওপর হতে পারে, অথবা কোনো পানি বা খাদ্যের ওপর করে সেটা খাওয়া অথবা ব্যাবহার করা হতে পারে। এক্ষেত্রে রুকইয়ার পানি, অথবা রুকইয়ার গোসল ইত্যাদি পরিভাষা ব্যবহার হয়। আর সবগুলোই সালাফে সালেহিন থেকে বর্নিত আছে।
 
রুকইয়ার বিধানঃ রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “রুকইয়াতে যদি শিরক না থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৫৪৪)
 
বিশুদ্ধ আক্বিদাঃ উলামায়ে কিরামের মতে রুকইয়া করার পূর্বে এই আক্বিদা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া উচিত ‘রুকইয়া বা ঝাড়ফুঁকের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই, সব ক্ষমতা আল্লাহ তা’আলার, আল্লাহ চাইলে শিফা হবে, নইলে নয়।’
রুকইয়া প্রকারভেদঃ বিভিন্ন ভাবে রুকইয়া করা হয়, যেমনঃ দোয়া বা আয়াত পড়ে ফুঁ দেয়া হয়, মাথায় বা আক্রান্ত স্থানে হাত রেখে দোয়া/আয়াত পড়া হয়। এছাড়া পানি, তেল, খাদ্য বা অন্য কিছুতে দোয়া অথবা আয়াত পড়ে ফুঁদিয়ে খাওয়া ও ব্যাবহার করা হয়।
 
পূর্বশর্তঃ রুকইয়া করে উপকার পেতে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন।
  • নিয়্যাত (কেন রুকইয়া করছেন, সেজন্য নির্দিষ্টভাবে নিয়াত করা)
  • ইয়াক্বিন (এব্যাপারে ইয়াকিন রাখা যে, আল্লাহর কালামে শিফা আছে)
  • মেহনত (অনেক কষ্ট হলেও, সুস্থ হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে রুকইয়া চালিয়ে যাওয়া)।
লক্ষণীয়ঃ রুকইয়ার ফায়দা ঠিকমতো পাওয়ার জন্য দৈনন্দিনের ফরজ অবশ্যই পালন করতে হবে, পাশাপাশি সুন্নাতের প্রতিও যত্নবান হতে হবে। যথাসম্ভব গুনাহ থেকে বাঁচতে হবে। (মেয়েদের জন্য পর্দার বিধানও ফরজ) ঘরে কোনো প্রাণীর ছবি / ভাস্কর্য রাখা যাবেনা। আর সুরক্ষার জন্য সকাল-সন্ধ্যার মাসনুন আমলগুলো অবশ্যই করতে হবে। আর ইতিমধ্যে শারীরিক ক্ষতি হয়ে গেলে, সেটা রিকোভার করার জন্য রুকইয়ার পাশাপাশি ডাক্তারের চিকিৎসাও চালিয়ে যেতে হবে।

[৩] সাধারণ অসুস্থতার জন্য রুকইয়াহ:

বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের জন্য রাসুল স. থেকে অনেক দু’আ-কালাম পাওয়া যায়, সেসব গুরুত্বের সাথে করা। এছাড়া কোরআন থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকটি রুকইয়া হচ্ছে সুরা ফাতিহা, সুরা ফালাক, সুরা নাস এবং ৬টি আয়াতে শিফা (৯/১৪, ১০/৫৭, ১৬/৬৯, ১৭/৮২, ২৬/৮০, ৪১/৪৪)
১. وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ 
২. وَشِفَاء لِّمَا فِي الصُّدُورِ 
৩. يخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاء لِلنَّاسِ 
৪. وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاء وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ 
৫. وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ 
৬. قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاء
 
এছাড়া রুকইয়া হিসেবে রাসুল স. থেকে বর্ণিত অনেক দো’আ আছে, যেমন-
১. اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا 
২. بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، اللَّهُ يَشْفِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ 
৩. بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ 
৪. اَسْأَلُ اللهَ الْعَظِيْم، رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْم، اَنْ يَّشْفِيَكْ 
৫. بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ، مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ
 
এসব আয়াত এবং দোয়াগুলো ৩বার করে পড়ুন, ব্যাথার যায়গায় অথবা রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়ুন, অথবা এসব পড়ার পর রুগীর ওপর ফুঁ দিন। পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করুন, অথবা অলিভ অয়েলে ফুঁ দিয়ে মালিশ করুন। মধু-কালোজিরায় ফু দিয়ে সকাল করে পানিতে গুলিয়ে খান। এসবের পাশাপাশি শাইখ হুজাইফির রুকইয়াহ, এবং সা’দ আল গামিদির আধাঘণ্টার রুকইয়া শোনা যেতে পারে। (ডাউনলোড লিংক http://bit.ly/ruqyahdownload)

[৪] বদনজর আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

বদনজর আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে, এরমাঝে কয়েকটি হচ্ছে-
  1. কোন কাজে মনোযোগ না থাকা। নামায, যিকর, পড়াশোনাতে মন না বসা।
  2. প্রায়শই শরীর দুর্বল থাকা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব লাগা।
  3. বুক ধড়পড় করা, দমবন্ধ অস্বস্তি লাগা। মেজাজ বিগড়ে থাকা।
  4. অতিরিক্ত চুল পড়া। প্রচুর গ্যাস হওয়া। এতে ঔষধ-পথ্যে তেমন ফায়দা না হওয়া।
  5. একেরপর এক অসুখ লেগে থাকা, দীর্ঘ চিকিৎসাতেও রোগ ভালো না হওয়া।
  6. ব্যবসায়-লেনদেনে ঝামেলা লেগেই থাকা। সব কিছুতেই লস হওয়া।
  7. জ্বর থাকলেও কিন্তু থার্মোমিটারে না ওঠা। অন্য রোগও আছে, কিন্তু টেস্টে না ধরা পড়া।

[৫] বদনজরের জন্য রুকইয়াহ:

যদি বুঝা যায় অমুকের জন্য নজর লেগেছে, তাহলে তাকে অযু করতে বলুন, এবংওযুর পানি গুলো আক্রান্তের গায়ে ঢেলে দিন। এরপর চাইলে ভালো পানি দিয়ে গোসল করুন। এতটুকুতেই নজর ভালো হয়ে যাবে ইনশা-আল্লাহ।
আর বদনজরের সেলফ রুকইয়া হচ্ছে, বদনজরের রুকইয়া তিলাওয়াত করবেন, অথবা একাধিকবার তিলাওয়াত শুনতে হবে (ডাউনলোড লিংক http://bit.ly/ruqyahdownload)। এর পাশাপাশি রুকইয়ার গোসল করবেন। আর এভাবে লাগাতার ৩ থেকে ৭ দিন করবেন। সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত করুন। প্রতিদিন কয়েকবার রুকইয়া শুনুন, আর একবার রুকইয়ার গোসল করুন। সমস্যা ভালো হওয়ার পরেও এরকম কয়েকদিন করা উচিত।

[৬] রুকইয়ার গোসল:

একটা বালতিতে পানি নিবেন। তারপর পানিতে দুইহাত ডুবিয়ে যেকোনো দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস, শেষে আবার কোনো দরুদ শরিফ-সব ৭বার করে পড়বেন। পড়ার পর হাত উঠাবেন এবং এই পানি দিয়ে গোসল করবেন।
(এগুলা পড়ে পানিতে ফু দিবেন না, এমনিই গোসল করবেন। যদি টয়লেট আর গোসলখানা একসাথে থাকে, তাহলে অবশ্যই এসব বাহিরে বালতি এনে পড়বেন। প্রথমে এই পানি দিয়ে গোসল করবেন, তারপর চাইলে অন্য পানি দিয়ে ইচ্ছামত গোসল করতে পারেন। যার সমস্যা সে পড়তে না পারলে অন্যকেউ তার জন্য পড়বে, এবং অসুস্থ ব্যক্তি শুধু গোসল করবে।)

[৭] জিন আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

জিন দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে, এরমাঝে কয়েকটি হচ্ছে-
  1. রাতে ঠিকমত ঘুমাতে না পারা।
  2. প্রায়শই ঘুমের মাঝে বোবা ধরা।
  3. ভয়ংকর স্বপ্ন দেখা। উঁচু থেকে পড়ে যেতে, কোন প্রাণীকে আক্রমণ করতে দেখা।
  4. দীর্ঘ মাথাব্যথা, অথবা অন্য কোন অঙ্গে সবসময় ব্যাথা থাকা।
  5. নামাজ, তিলাওয়াত, যিকির আযকারে আগ্রহ উঠে যাওয়া।
  6. মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা, একটুতেই রেগে যাওয়া।
  7. আযান বা কোরআন তিলাওয়াত সহ্য না হওয়া।

[৮] জ্বিনের আসরের জন্য রুকইয়াহ:

যিনি রুকইয়া করবেন তিনি প্রথমে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে নিজের শরীরে হাত বুলিয়ে নিবেন। এরপর রুকইয়া শুরু করবেন। জ্বিনের রুগীর ক্ষেত্রে সাধারণত কথাবার্তা বলে জ্বিন বিদায় করতে হয়। এক্ষেত্রে যিনি রুকইয়া করবেন তাঁকে উপস্থিতবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে। জ্বিনের কথায় ঘাবড়ানো যাবেনা, তার কথা বিশ্বাসও করা যাবে না। হুমকিধামকি দিলে জিনকেই উল্টা ধমক দিতে হবে। রুগীর মাথায় হাত রেখে অথবা (গাইরে মাহরাম হলে) রুগীর পাশে বসে জোর আওয়াজে রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়তে থাকুন। পড়ার মাঝেমাঝে রুগীর ওপর ফুঁ দিতে পারেন, আর পানিতে ফুঁ দেয়ার পর মুখে এবং হাতে-পায়ে ছিটিয়ে দিতে পারেন।
 
রুকইয়ার অনেক আয়াত আছে সেগুলো শেষে বলা হবে। তবে স্বাভাবিকভাবে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ফালাক, সুরা নাস, সুরা সফফাতের প্রথম ১০ আয়াত, সুরা জিনের প্রথম ৯ আয়াত পড়তে পারেন। জ্বিন ছেড়ে দেয়া পর্যন্ত রুগীর কাছে বসে উঁচু আওয়াজে এই আয়াতগুলো বারবার পড়তে হবে আর ফুঁ দিতে হবে অথবা রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়তে হবে। একদিনে না গেলে পরপর কয়েকদিন কয়েকঘন্টা করে এভাবে রুকইয়া করে যেতে হবে। ইনশাআল্লাহ এক পর্যায়ে জ্বিন পালাতে বাধ্য হবে।

[৯] বাড়িতে জ্বিনের উৎপাত থাকলে:

বাড়িতে জ্বিনের কোনো সমস্যা থাকলে পরপর তিনদিন পূর্ন সুরা বাক্বারা তিলাওয়াত করুন, এরপর আযান দিন। তাহলে ইনশাআল্লাহ সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। তিলাওয়াত না করে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কয়েকবার যদি সুরা বাক্বারা প্লে করা হয় তাহলেও ফায়দা পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে সবচেয়ে ভালো ফল পেলে তিলাওয়াত করা উচিত। এরপর প্রতিমাসে অন্তত এক দুইদিন সুরা বাকারা পড়বেন। আর ঘরে প্রবেশের সময়, বের হবার সময়, দরজা-জানালা বন্ধের সময় বিসমিল্লাহ বলবেন। ঘুমের আগে সুরা বাকারার শেষ ২ আয়াত পড়বেন। তাহলে ইনশাআল্লাহ আর কোন সমস্যা হবে না।

[১০] ওয়াসওয়াসা রোগের জন্য রুকইয়া:

1. এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়া। প্রতি নামাজের আগে-পরে, অন্যন্য ইবাদতের সময়, কোন গুনাহের জন্য ওয়াসওয়াসা অনুভব করলে এটা পড়া -
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ، مِنْ غَضَبِهٖ وَعِقَابِهِ، وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ، وَأَنْ يَّحْضُرُوْنِ
 
2. ওয়াসওয়াসা অনুভব করলে বলা (সুরা হাদীদ, আয়াত নং ৩)
هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ ۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْم
[বিশেষতঃ ঈমান নিয়ে সংশয় উদিত হলে এটা পড়া উচিত। আর সকাল-সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস পড়া]
 
3. আয়াতুল হারক (আযাব এবং জাহান্নাম সংক্রান্ত আয়াত) বেশি বেশি তিলাওয়াত করা। এবং প্রতিদিন ৩-৪বার এসবের তিলাওয়াত শোনা। (ডাউনলোড লিংক http://bit.ly/ruqyahdownload)
4. নাপাক থেকে বেচে থাকা, বিশেষত প্রসাবের ছিটা থেকে বাচা। যথাসম্ভব সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকা।
5. পুরুষ হলে জামাআতের সাথে নামাজ পড়া, মুত্তাকী পরহেজগারদের সাথে উঠাবসা করা।
6. সকাল-সন্ধ্যায় ও ঘুমের আগের আমলগুলো গুরুত্বের সাথে করা। টয়লেটে প্রবেশের দোয়া পড়া।
7. আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকা। যথাসম্ভবত ওয়াসওয়াসা পাত্তা না দেয়া; ইগনোর করা, এমনকি মুখে বিরক্তির ভাবও প্রকাশ না করা।

[১১] যাদু আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

যাদু করতে জ্বিনের সাহায্য নেয়া হয়, তাই যাদুগ্রস্থ রোগীর মাঝে জিন আক্রান্তের কিছু লক্ষণগুলো পাওয়া যায়। তবে এছাড়াও যাদুগ্রস্থ রোগীর মাঝে কিছু বিশেষ লক্ষণ দেখা যেতে পারে। যেমনঃ
1. হঠাৎ কারও প্রতি বা কোন কিছুর প্রতি তীব্র ভালবাসা অথবা ঘৃণা তৈরি হওয়া, যা আগে ছিল না।
2. বিশেষ কোন কারন ছাড়াই জটিল-কঠিন রোগে ভোগা। যার চিকিৎসা করলেও সুস্থ না হওয়া।
3. পরিবারের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি লেগেই থাকা। বিশেষতঃ স্বামীস্ত্রীর মাঝে।
4. দৃষ্টিভঙ্গি বা ব্যক্তিত্বে ব্যপক পরিবর্তন। যাতে নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়, চারপাশের মানুষও কষ্ট পায়।
5. অদ্ভুত আচরণ করা। যেমন, কোন কাজ একদমই করতে না চাওয়া। কিংবা দিন-রাতের নির্দিষ্ট কোন সময়ে ঘরের বাইরে যেতে না চাওয়া।
আর যাদু আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়লে, অথবা অডিও শুনলে অস্বাভাবিক অনুভূতি হয়। যেমন, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, বমি আসা, বুক ধড়ফড় করা, ইত্যাদি।

[১২] যাদু / ব্ল্যাক ম্যাজিক / বান মারার জন্য রুকইয়া:

যাদুর প্রকারভেদ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার রুকইয়া করা হয়। তবে কমন সেলফ রুকইয়া হচ্ছে- প্রথমে সমস্যার জন্য নিয়াত ঠিক করে, ইস্তিগফার দরুদ শরিফ পড়ে শুরু করুন। তারপর কোন রুকইয়া শুনে নিশ্চিত হয়ে নিন আসলেই সমস্যা আছে কি না! শাইখ সুদাইসের অথবা লুহাইদানের রুকইয়া শুনতে পারেন (ডাউনলোড লিংক http://bit.ly/ruqyahdownload)। সবশেষে একটি বোতলে পানি নিন, এরপর- ক. সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২ খ. ইউনুস ৮১-৮২ গ. সুরা ত্বহা ৬৯নং আয়াত পড়ে ফুঁ দিন।
 
وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُوْنَ - فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُونَ - فَغُلِبُوْا هُنَالِكَ وَانقَلَبُوْا صَاغِرِيْنَ - وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِيْنَ -قَالُوْا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ - رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُوْن
 .
فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُۖ إِنَّ اللّٰهَ سَيُبْطِلُهُۖ إِنَّ اللّٰهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِيْنَ - وَيُحِقُّ اللّٰهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْكَرِهَ الْمُجْرِمُونَ - 

وَأَلْقِ مَافِي يَمِيْنِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوْاۖ إِنَّمَا صَنَعُوْا كَيْدُ سَاحِرٍۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتٰى
 
ঘ. এরপর সুরা ফালাক্ব, সুরা নাস সব ৩বার করে পড়ে ফুঁ দিন।
তিন থেকে সাতদিন সকাল-বিকাল এই পানি খেতে হবে, এবং গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করতে হবে। আর মাসখানেক প্রতিদিন দেড়-দুইঘণ্টা রুকইয়া শুনতে হবে। সাধারণ কোন রুকইয়া, আর সুরা ইখলাস, ফালাক, নাসের রুকইয়াহ। এর পাশাপাশি আল্লাহর কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া করতে হবে।
এভাবে একদম সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত রুকইয়া করে যাবেন, সমস্যা বেড়ে গেলেও বাদ দিবেন না। তাহলে ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুতই পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবেন।

[১৩] যাদুর কোন জিনিশ অথবা তাবিজ খুঁজে পেলে:

কি দিয়ে যাদু করেছে যদি পাওয়া যায়, অথবা সন্দেহজনক কোন তাবিজ পেলে উপরে বলা আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিন, এরপর তাবিজ অথবা যাদুর জিনিশগুলো ডুবিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ, তাহলে ইনশাআল্লাহ যাদু নষ্ট হয়ে যাবে। পরে সেগুলো পুড়িয়ে বা নষ্ট করে দিন।

[১৪] যাদু, জ্বিন, বদনজর সম্পর্কিত একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে:

একসাথে একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে প্রথমে বদনজরের জন্য রুকইয়া করতে হবে, এরপর জ্বিনের জন্য এবং যাদুর জন্য রুকইয়া করতে হবে।

[১৫] রুকইয়ার আয়াত:

কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা রুকইয়া করা হয়, তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কিছু আয়াত হচ্ছে-
  1. সুরা ফাতিহা
  2. সুরা বাকারা ১-৫
  3. সুরা বাকারাহ ১০২
  4. সুরা বাকারাহ ১৬৩-১৬৪
  5. সুরা বাকারাহ ২৫৫
  6. সুরা বাকারাহ ২৮৫-২৮৬
  7. সুরা আলে ইমরান ১৮-১৯
  8. সুরা আ'রাফ ৫৪-৫৬
  9. সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২
  10. সুরা ইউনুস ৮১-৮২
  11. সুরা ত্বহা ৬৯
  12. সুরা মু'মিনুন ১১৫-১১৮
  13. সুরা সফফাত ১-১০
  14. সুরা আহকাফ ২৯-৩২
  15. সুরা আর-রাহমান ৩৩-৩৬
  16. সুরা হাশর ২১-২৪
  17. সুরা জিন ১-৯
  18. সুরা ইখলাস
  19. সুরা ফালাক
  20. সুরা নাস
এই আয়াতগুলো একসাথে পিডিএফ করা আছে, ডাউনলোড লিংক- https://goo.gl/XZ9JuC

[১৬] যাদু, জিন, শয়তান ইত্যাদির ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়:

১. বিষ, যাদু এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাঁচতে সকাল-সন্ধ্যায় এই দোয়া তিনবার পড়াঃ
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
আ’উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মা-তি, মিং-শাররি মা-খলাক্ব। (জামে তিরমিযী, ৩৫৫৯)
 
২. সব ধরনের ক্ষতি এবং বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকতে এই দোয়া সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়াঃ
بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ العَلِيْمُ
বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা-ইয়াদ্বুররু মা‘আসমিহী, শাইউং ফিলআরদ্বী ওয়ালা- ফিসসামা-ই, ওয়াহুওয়াস সামি’উল ‘আলীম। (জামে তিরমিযী, ৩৩৩৫)
৩. প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস তিনবার করে পড়া। এবং এটা বিশেষ গুরুত্বের সাথে করা। (সুনানে আবি দাউদ) 
 
৪. ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি পড়া এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া। সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতের তালুতে ফু দিয়ে পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নেয়া। (বুখারী)
 
৫. টয়লেটে ঢোকার পূর্বে দোয়া পড়া- اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা, মিনাল খুবসি ওয়াল খবা-ইছ। (মুসলিম, ৩৭৫)
 
৬. তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। প্রতিদিনের অন্যান্য মাসনুন আমল করতে থাকা। এবং আল্লাহর কাছে সবসময় দোয়া করতে থাকা।
 
------------------------
Share:

January 24, 2017

শয়তান আর খারাপ জ্বিন কখন আপনাকে সহজে আক্রমণ করতে পারে? + (এডিকশনের ৩য় স্তর সম্পর্কে কিছু কথা)

শয়তান আর খারাপ জ্বিন কখন আপনাকে সহজে আক্রমণ করতে পারে? (সাথে এডিকশনের ৩য় স্তর সম্পর্কে কিছু কথা)
------
[ক]
নিজের চিন্তার সাথে বড়দের চিন্তার মিল খুঁজে পেলে খুবই ভালো লাগে। ব্যাপারটা আমি বেশ আগেই চিন্তা করেছিলাম। আমার পর্যবেক্ষণ এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও এমনই সাক্ষ্য দিচ্ছিলো।  এর ওপর আল্লাহর রহমতে সেদিন মিসরের এক আলেমের লেখা পড়ছিলাম, সেখানে দেখলাম উনিও এমনটাই বলেছেন।
তো শুরুতে একটা গল্প বলি। ওই শায়েখই ঘটনা শোনাচ্ছিলেন... উনার কাছে এক মহিলাকে তাঁর স্বামী নিয়ে এসেছে। ওই মহিলাকে জ্বিন সমস্যা করছিলো, উনি কোরআন এর আয়াত তিলাওয়াত করলে দুষ্ট জ্বিনটা ওই মহিলার ওপর আসে। তখন উনি বললেন যে, তুমি এই মহিলাকে আর কষ্ট দিওনা, একে ছেড়ে চলে যাও। জ্বিন বলছে যাবোনা! :/
শায়খ বললেন, তাহলে কোরআনের আয়াত দ্বারা তোকে জ্বালিয়ে দিব!
- আচ্ছা চলে যাবো, তবে আপনার ভেতর ঢুঁকবো!!
-- আচ্ছা পারলে ঢোঁক!
এবার জ্বিন চলে গেলো, একটুপর আবার আসলো, এবার কাঁদতে লাগলো!
শায়েখ বললেন, কী হয়েছে?
- আমি আপনার ভেতর ঢুকতে পারবো না
-- কেন?
- কারণ আপনি সকালে "লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্‌দাহু লা-শারীকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হ্‌ামদ, ওয়াহুওয়া 'আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর" এটা ১০০বার পড়েছেন তাই!
.
শায়খ ঘটনা বর্ণনা করার সময় বলছিলেন, আমার তখন রাসূল সা. এর হাদীস মনে পড়লো। রাসূল সা. সত্যই বলেছেন- যে সকালে 'ওই' দু'আ ১০০বার পড়বে সে ১০টি গোলাম আযাদ করার ফযিলত পাবে, ১০০টি সওয়াব পাবে এবং ১০০টি গুনাহ মাফ হয়ে যাবে! আর সারাদিন সে শয়তান থেকে হিফাযতে থাকবে। আর ওইদিন তাঁর চেয়ে ফযিলতপ্রাপ্ত কেউ হবেনা, তবে কেউ যদি তাঁর চেয়ে বেশি পড়ে সে ব্যতীত!
.
[খ]
তো আমি যে বিষয়ে চিন্তার মিলের কথা বলছিলাম, খারাপ জ্বিন সর্বাবস্থায় আপনার ওপর আক্রমণ করতে পারেনা। শয়তানের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। সবসময় আপনাকে বশ করতে পারেনা। তবে আক্রান্ত হয়ে গেলে হইছে কাম...। আমার কথা বাদ দেই। শায়খ বলছিলেন খবিস জ্বিন ৪ অবস্থায় মানুষের ভেতর ঢুকতে পারে।
১. খুব ভীত অবস্থায় ২. খুব রাগান্বিত অবস্থায় ৩. খুব উদাসীন অবস্থায় ৪. কুপ্রবৃত্তির গোলামী করা অবস্থায় (মানে যখন কোনো খারাপ কাজ করছে)
তো এসব হচ্ছে খারাপ জ্বিন মানুষের ওপর আসর করার অবস্থা। এ অবস্থায় নাকি জ্বিনের অনেক কষ্ট হয়, বিশেষত কেউ যদি দু'আ কালাম পড়ে, আর অপরদিকে জ্বিনকে যদি কোনো যাদুকর জোর করে পাঠায় তাহলে তো বেচারা জ্বিনের জান খারাপ। এদিকেও বিপদ, ওদিকেও বিপদ। যাহোক টপিক ছেড়ে আমরা অনেক দূরে এসেছি।
সারকথা হচ্ছে, এসব থেকে আমরা বুঝতে পারছি হাদিসে বর্ণিত সকালসন্ধ্যার দু'আগুলো পড়ার অভ্যাস করা উচিৎ আর গাফেল না হওয়া উচিৎ... এতে খারাপরা সুযোগ পেয়ে যায়।
.
[গ]
এডিকশনের তৃতীয় স্তরের ব্যাপারে আমাদের কিছু কথা বাকি ছিলো সেদিন। তৃতীয় স্তরটা এরকম, আপনি যখন বিভিন্নভাবে গুনাহকে এভোইড করতে অভ্যস্ত হয়ে যান, তখন শয়তান আপনার দূর্বল সময়ের অপেক্ষায় থাকে।
যেমন, একজন তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলো। বেচারা পর্ণ স্টোরি এডিক্ট। আল্লাহ তাঁকে হিফাজত করুক, হিদায়াত দিক। সে সবসময় চেষ্টা করে বেচে থাকতে। গত পর্বে বলা আমার ওই টিপসগুলোও নাকি ফলো করতে চেষ্টা করে। তো কখনো কখনো তাও হয়না। যেমন, সে ভালো কোনো বই বা লেখা পড়ছে, কখনো মাত্র একটা 'ইয়ের' ইঙ্গিতসূচক শব্দও নাকি তাঁকে আকড়ে ধরে, মাথা থেকে সরাতেই পারেনা। শেষে শয়তানের কাছে হার মেনে কখনো বাজে ছবি দেখতে বসে, কখনো খারাপ গল্প... কখনো নাকি সকালে ঘুম থেকে উঠছে "হালকা ঘুম হালকা জাগ্রত এমন অবস্থায় এসব ধোকা ওর মাথায় আসে", আর তাড়াতে পারেনা। শেষে...
আমি উনাকে তেমন কোনো সল্যুশন দিতে পারিনি, বললাম জানিনা ভাই কি করা উচিৎ :(
.
এসএসসিতে আমার ব্যাচমেট ছিল একটা ছেলে, আমরা একসাথে ফিজিক্স কেমিস্ট্রি প্রাইভেট পরতাম। সে আমার সাথে অনেক কিছু শেয়ার করতো, আল্লাহ তাকেও হিফাজত করুক, হিদায়াতের পথে রাখুক। সে নাকি দিনের বেলায় বিছানায় শুতে পারেনা। বিছানায় শুইলেই আজেবাজে চিন্তা মাথায় আসে। একেও কোনো সল্যুশন দিতে পারিনি। তবুও বলছিলাম, মাথাকে ফাঁকা রাখা যাবেনা। চেষ্টা করতে হবে কিছুনা কিছুতে ব্যস্ত থাকতে।
সত্যি বলতে আমার আসলেই তেমন কোনো সল্যুশন জানা ছিলনা, এখনও নাই। তবে কেউ জিজ্ঞেস করলে হয়তো উপরের ওই হাদিসের ওপর আমল করতে আর দু'আ করতে বলবো। আর কী?
আপনাদের কোনো সমাধান জানা থাকলে শেয়ার করবেন প্লিজ...
Share:

December 17, 2016

মাইন্ড হ্যাকিং শেল: অন্যের বিশ্বাসে অ্যাকসেস নিবেন যেভাবে!

(তথ্য অপব্যবহার এর দায় সম্পূর্ণ পাঠকের, লেখক কোনোমতেই এর যিম্মা নিবেনা)
.
[ক.]
(যারা হ্যাকিং এক্টিভিটির সাথে জড়িত তাদের নতুন করে শেল চেনানোর দরকার নাই। হ্যাকাররা [খ] থেকে পড়া শুরু করুন।)
শেল: শেল মানে গোলা।
মনে করুন, একটা গুপ্তধনের খাজানার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আপনি! দরজায় ছোট্ট একটা ফুটা। এখন সেখানে ঢুকতে চাইলে, সেখান থেকে যা খুশি নিতে চাইলে আপনি কি করবেন? সেই ফুঁটায় একটা শেল রাখবেন। সেটা ব্লাস্ট করবেন। এরপর সেখানে ঢুকে আপনি যা খুশি নিতে পারবেন।
তো ওয়েবসাইট বা ওয়েবসার্ভার যখন হ্যাক করা হয় শুরুতে হ্যাকাররা সেখানে একটা "শেল" আপলোড করে, ধরে সেটা নেন ১/২০০কেবি সাইজের একটা প্রোগ্রাম বা স্ক্রিপ্ট। এরপর সেটা রান করলে পুরো ওয়েব সাইটের কর্তৃত্ব হ্যাকারের হাতে চলে আসে! চাইলে সে সাইটের কোনো ফাইল ডিলিট করতে পারে, পরিবর্তন করতে পারে, চাইলে নিজের কোনো কিছু আপলোড করতে পারে। (বিস্তারিত জানতে wiki তে Backdoor Shell লিখে সার্চ দিন)
.
[খ.]
 তো আজ আমরা কথা বলছি মাইন্ড হ্যাকিং শেল নিয়ে। অর্থাৎ কিছু কথা/ মিউজিক ইত্যাদি আছে যা দ্বারা আপনার মাইন্ডের একসেস নেয়া যায়, আপনার বিশ্বাসে প্রবেশ করা যায়। আপনাকে যা খুশি বিশ্বাস করানো যায়।
উদাহরণ স্বরূপ GP Offer থেকে আসা একটা এসএমএস খেয়াল করুনঃ
   "দারুন অফার! এখন ২৫ GP-GP মিনিট পাচ্ছেন মাত্র ৯ টাকায় । অফারটি নিতে ডায়াল করুন...."
.
এখানে shell হচ্ছে "দারুন অফার!" শব্দটি, কেউ যখন আপনার সামনে বলবে 'জিপি দারুন একটা অফার দিছে!' তখন এরপর উনি যে কথাটাই বলবে সেটা গ্রহণ করার জন্য আপনার মস্তিষ্ক উৎসাহী হয়ে থাকবে, এর একটা প্রভাব থেকে যাবে আপনার মনে।
এটা আসলে একটা মাইন্ড হ্যাকিং শেল! বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থা ও অনলাইন শপ এরকম বিভিন্ন শব্দ বা মাইন্ড হ্যাকিং শেল ব্যবহার করে আপনার পছন্দ-অপছন্দ, আগ্রহ কিংবা চাহিদার ওপর প্রভাব বিস্তার করছে। এজন্যই সমবয়সী একজন নিয়মিত টিভি দর্শক আর আপনার চাহিদা কখনওই সমান হবেনা!
.
[গ.]
 এবার প্র‍্যাক্টিকাল উদাহরণ নিন। আপনি একজন দাঈ, মানুষকে বিশুদ্ধ ইসলামের দিকে ডাকেন। এখন একজন বিদআতিকে আপনি দাওয়াত দিতে যাবেন। এখন শুরুতেই যদি বলেন- মিলাদ করা যাবেনা, মাজারে যাওয়া যাবেনা, কবরের কাছে চাওয়া যাবেনা, এগুলা ইসলাম বিরোধী। তাহলে কিন্তু সে আপনার কথা শুনবে না, হয়তো বিশ্বাসই করবে না। কারণ সে বংশপরম্পরায় এসব করতে দেখে আসছে।
আপনি তাহলে কি করবেন? আপনি গিয়ে সালাম দিবেন, ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করবেন, এরপর আসল দাওয়াত দিতে গেলে শুরুতে এভাবে বলবেন- আসলে ভাই আমরা সবাই মানুষ তাইনা? মানুষের দ্বারাই তো ভুলত্রুটি হয়, আমাদের বাপ-চাচারাও মানুষ ছিলেন। উনারা তো ভুলত্রুটির উর্ধ্বে না। কি বলেন ভাই?
- হ্যা হ্যা হ্যা! ঠিকি তো...
-- আসলে দেখেন উনারা তো সেভাবে আলেমদের কাছে যেতে পারেননি, পাড়ার মৌলবি সাহেবের কাছে যা শুনেছেন তাই পালন করেছেন..
- হুম..
.......
এভাবে আস্তে আস্তে আপনার কথার ওপর সে আস্থাশীল হবে, তখন আপনি যেটাই বলবেন সে বিশ্বাস করবে। অন্তত: পরে বিবেচনা করবো বলে বিদায় নিবে।
 তো এই যে কথাগুলো.. "আমাদের বাপদাদারা তো মানুষ, তারাও তো ভুলের উর্ধ্বে না, তাইনা?" এটা একটা মাইন্ড হ্যাকিং শেল। এর দ্বারা আপনি চাইলে তার মনে তার পূর্বপুরুষের ধর্মকর্মের ওপর আস্থার বারোটা বাজিয়ে দিতে পারবেন!
হতে পারে এর দ্বারা আপনি তাকে হানাফি থেকে আহলে হাদিস, অথবা আহলুস সুন্নাহ থেকে বিদআতি বানিয়ে ফেলতে পারবেন! (আল্লাহর কাছে পানাহ চাই) অথবা চাইলে কোনো মুশরিককে ইসলামের দিকে অনুপ্রাণিত করতে পারবেন। (আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিক)
.
[ঘ.]
 হাদীস থেকে উদাহরণ নিন,
"সম্ভবত বিদায় হজ্জের ঘটনা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাতাফে এসেছেন, দেখলেন হাজরে আসওয়াদ (কা'বার গায়ে লাগানো কালো পাথর) চুম্বনের জন্য অনেক মানুষ ভিড় করেছে। ওমরে রা.-ও সেখানে সবার মত ধাক্কাধাক্কি করছেন, কাছে যেতে চেষ্টা করছেন।
রাসূল সা. এটা দেখলেন। এখন তিনি ওমর রা.-কে কীভাবে বারণ করলেন?
রাসূল সা. প্রথমে ডাকলেন, হে খাত্তাবের পুত্র ওমর! তুমি একজন বাহাদুর ও শক্তিশালী পুরুষ। ওমর রা. অনেক খুশি হলেন। এবার বললেন - যদি তুমি লোকদের সাথে ধাক্কাধাক্কি না করতে (তাহলে কত ভালো হতো...)
ওমর রা. রাসূলের মেসেজ বুঝতে পারলেন, এবং সেটা ফলো করলেন..
.
এখানে শুরুতেই রাসূল সা. যে ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহুর প্রশংসা করলেন; সেটা ছিলো একটা মাইন্ড হ্যাকিং শেল!
বুঝতে পারছেন?
.
[অসমাপ্ত....
.
-১৭.১২.২০১৬/রাত ২:১৬
ফেবুতে- https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1173612559394939&id=100002386190185
Share:

December 6, 2016

আত্মিক যোগাযোগ; সম্ভব?

[ক.]
আচ্ছা শুরুটা আবুল হাসান আলী নদভী রহ. এর একটা লেকচারের অংশ দিয়ে করা যায়-
  "লেখনির মাধ্যমে লেখকের ভাব-অনুভূতি এমনি হৃদয়ের স্পন্দনও পাঠকের মধ্যে সংক্রমিত হয়। ..এব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে, সালাফে সালেহীনের কিতাব এখনো মওজুদ আছে। আপনি অধ্যয়ন করে দেখুন, আপনার সালাতের গতিপ্রকৃতি বদলে যাবে! হয়তো সেখানে আলোচ্য বিষয়ের সাথে সালাতের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু তিনি যখন লিখেছিলেন, তখন তার তাওয়াজ্জুহ বা মনোযোগ সেদিকে ছিলো।"
(পুরোটা লেখলে অনেক বড় হয়ে যাবে, বইয়ের পৃষ্ঠার ছবি কমেন্টে দিলাম পড়ে নিয়েন)
.
গুরুদত্ব সিং এর লেখা তোমাকে ভালোবাসি হে নবী বইয়ে এক অমুসলিম মনিষীর কথার উদ্ধৃতি ছিল, সে বলছিল- 'মোহাম্মাদের প্রচারিত বইটার আশ্চর্য এক সম্মোহনী ক্ষমতা আছে, কেউ যদি আরবী না বুঝে তবুও সেটার তেলাওয়াত শুনলে অন্তরের ভেতর অন্যরকম একটা অনুভূতি সৃষ্টি হয়!' (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম)
  এক ভাই বলছিল, কোরআন এর ঠিক বিপরীত প্রভাব পড়ে গান/বাজনা তথা মিউজিক শুনলে, এজন্য ইহুদী ও শয়তান পূজারিরা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিগুলোর পেছনে অনুদান দেয়। maher zain, mesut kurtis এদের স্টুডিও Awaking Records এর লোগোটা যে আস্ত পিরামিড তা তো আপনাদের খেয়াল করা উচিত!
.
[খ.]
এবার আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলি, ক'বছর আগে মুফতি তাকী উসমানী সাহেবের একটা বই পড়ছিলাম। 'ভোট ব্যাবস্থা ও ইসলাম' নামটা এরকম টাইপের। কোনো বই পছন্দ হলে আমার স্বভাব হচ্ছে সেটার মধ্যে একপ্রকার ডুব দেই, বাকি দুনিয়ার খবর থাকেনা। তো বইটায় কামাল আতাতুর্কের খিলাফত বিলুপ্ত করা ও ফ্রিম্যাসনরা শেষ খলিফা আব্দুল মজিদকে কি কি প্রস্তাব দিয়েছিলো এসব নিয়ে একটা অধ্যায় আছে, এটা আমি পড়ছিলাম। হঠাৎ আমার অনুভব হতে লাগলো আজ পুরো দুনিয়ায় মুসলমানদের যে দুর্দশা, এর পেছনে জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র দায়ী!!
সেখানে কিন্তু এসব একটা বাক্যও ছিলনা। কিন্তু বইটা পড়ার পর আমার মনে এসব কথা খুব দৃঢ় ভাবে গেঁথে গেছে, আল্লাহর ইচ্ছায় এখনো সেটা বিদায় হয়নি!!
এখন বুঝি, বইটা লেখার সময় তাকি উসমানী সাহেবের তাওয়াজ্জুহতে হয়তো এটাই ছিলো...
.
[গ.]
এক সময়ে খতিব সাহেবরা খুতবায় কাফেরদের জন্য বদদোয়া করতেন।
"..আল্লাহুম্মা শাত্তিত শামলাহুম, আল্লাহুম্মা মাঝঝিগ জাম'আহুম, ওয়া দাম্মির দিয়া-রাহুম, ওয়া ঝালঝিল আক্বদা-মাহুম! " ইত্যাদি ইত্যাদি..
এখন আর এসব শোনা যায়না। আ'ম মানুষ যদিও ওই দোয়াগুলো বুঝতো না, তবুও আমার বিশ্বাস ইমাম সাহেব যদি এসব দোয়া অন্তর থেকে করে তাহলে অবশ্যই মুসল্লিদের অন্তরে এর প্রভাব পড়বে।
এখন তো বলে-
"আসসুলত্বানু যিল্লুল্লাহি ফিল আরদ্ব!! মান আহা-না..." হায় আফসোস! সুলতান এর সাথে আদেল বিশেষণ যোগ করার প্রয়োজনবোধও অনেকে করেনা! সব শাষকরাই দুনিয়া আল্লাহর ছায়ার মত নাকি?
মুহতারাম আতিক উল্লাহ আতিক সাহেবের বই আমাদের ইন্তিফাদাতেও আছে, এছাড়া অনেককে বলতে শুনবেন 'হুজুররা খুতবায় জঙ্গিবাদী কথা বলে!! আরবি বলে তো.. তাই বুঝা যায়না!!'
.
ফিকির কি বাত হ্যায় ভাই! যে সেক্যুলার এই ধরনের কথা বলে সেও তো ভালোভাবেই জানে যে, সাধারণ লোক হুজুরের আরবী খুতবা বুঝেনা, তবুও ওদের চুলকানি কিসের?
- আসলে ওরা চায়না হুজুরের অন্তর থেকে আশিদ্দা-উ আ'লাল কুফফার এর জযবা সাধারণ লোকের ভেতরে সংক্রমিত হোক...
.
আচ্ছা! আবার কি প্রতি মসজিদে মসজিদে সেই বদদু'আগুলো করা যায়না?
.
[ঘ.]
আচ্ছা আরেকটা বিষয় বলা যায়, কেমনভাবে নিবেন আমি জানিনা! আমাকে একজন এটা বলেছে.. এব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নাই!
 'যখন প্রেম করে তখন নাকি একজনের কিছু হলে অন্যজনও ফিল করে, একজনের অসুখ হলে অন্যজনেরও নাকি আনইজি লাগে, খারাপ লাগে।
তো আমি যার কাছে শুনেছি সে বলছিল, এসব প্যারানরমাল এক্টিভিটি দেখে নাকি অনেকে ভাবে "তাদের (হারাম) রিলেশনের ওপর ঈশ্বরের বিশেষ সুনজর আছে!"
.
আরে ভাই শয়তানের নজরও তো থাকতে পারে তাইনা?!!
যাহোক! এটা শুনে আমি এই আত্মিক যোগাযোগ এর ব্যাপারটা থাকতে পারে বলেছিলাম, এটা তাদের অনিচ্ছাকৃত ভাবেই হয়ে যায়। আত্মা অনেক শক্তিশালী জিনিশ না?
.
এছাড়া অন্যান্য সম্পর্কগুলোতেও এমন অনেক দেখা যায়, যেমন আমি একজনের ব্যাপারে জানি.. সে বলছিল "আমরা তাবলীগে গিয়েছিলাম, একদিন রাতে আমার এক ফ্রেন্ড বাজারে যাবে, আমি ওকে মানা করলাম। আমার মনে হচ্ছিলো এখন ওর বাজারে যাওয়া উচিত হবেনা। আমি মানা করলাম, তবুও সে বাজারে গেল এবং এক্সিডেন্ট করলো!"
.
brothers: a tale of two sons গেম এর শেষে যখন বড় ভাইটা মারা যেতে লাগে তখন ওদের বাবা হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে যায়, উনার খুব খারাপ ফিল হতে লাগে...
আসলে বাস্তবেও এমন অনেক হয়
.
[ঙ]
পাকিস্তানের একজন আলেম, উনাকে আমি আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। তো প্রায় বছরখানেক আগে একবার হঠাৎ উনার কথা খুব মনে হতে লাগলো, আমি ফেসবুকে অনেক খুজলাম পাকিস্তান ভাওয়ালপুরের কাউকে পাওয়া যায় কিনা, উনার সাথে কথা বলা যায় কিনা। পাইনি.. কোনো কারণ ছাড়াই উনাকে খুব মনে পড়ছিলো...
দু সপ্তাহ পর বিবিসি নিউজে জানতে পারলাম, কিছুদিন আগে উনি কাশ্মীরের কোন এক হামলার মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন!!
সুবহানআল্লাহ..
.
[চ.]
শেষ প্যাঁচাল হচ্ছে, ইদানীং আমার একটা ধারণা হয়- অনেকসময় কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের যে মন খারাপ থাকে। এটা সম্ভবত একদমই অকারণে হয়না, বরং একদম ছোট থেকে আমরা কতজনের সাথে পরিচিত হয়েছি তাইনা? সময়ে সময়ে কতজনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল,
এদের সবার সাথে তো এখন যোগাযোগ নেই.. সম্ভবত এদের মাঝে কারো যখন কিছু হয়, তখন আমাদের খারাপ লাগে! এদিকে আমরা কারণ খুজে পাইনা...
দুপুর থেকে কেন আমার ভাল্লাগতেছেনা!
.
আল্লাহ মালুম..
.
- ৬ ডিসেম্বর ২০১৬
-------------
সংযুক্তিঃ এই লেখাটা লেখার কয়েকমাস পরে জানতে পেরেছিলাম টেলিপ্যাথি নামে সিমিলার একটা জিনিশ নিয়ে আলোচনা হয় বিভিন্ন রিসার্চার গ্রুপে।

-----------
ফেসবুকে লেখাটাঃ https://facebook.com/thealmahmud/posts/1163827423706786
Share:

November 3, 2016

অমরত্ব চান? এই লেখা আপনার জন্যই!!

(আত্মা বিক্রয়/আত্মবিক্রয়; ২য় কিস্তি)
 শয়তান হতে আল্লাহর কাছে পানাহ চেয়ে আমাদের আলোচনা শুরু করছি...
....
[[ক.]]
আজ থেকে ঠিক একমাস আগে আমরা একটা বিষয়ে আলাপ করেছিলাম.. তা হচ্ছে 'আত্মবিক্রয়' যারা মিস করেছেন তাঁরা আগে সেটা পড়ে নিন, নয়তো মিস করবেন  :P
....
 আজ আমরা যে বিষয়টা আলোচনা করতে চাচ্ছি, সেটা হচ্ছে 'অমরত্ব...!!'
.
বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতায় বিশেষত: মিশরীয় সভ্যতায় মানুষের অমর হওয়ার চেষ্টা লক্ষণীয়... কয়েক লাইনে পিরামিডের মূল দর্শন বলতে চাইলে এভাবে বলা যায়..
"ফারাওরা বিশ্বাস করতো তারা পুনরায় পৃথিবীতে ফেরত আসবে, এজন্য রাজা মরে গেলে অনেক সোনাদানা সহ তাকে পিরামিডে রেখে আসা হতো। সাথে অনেক গোলাম-বাদীকেও মমি করে রেখে আসা হতো।"
.
এতটুকু হচ্ছে প্রচলিত ইতিহাস, আমি সাথে আরো কিছু যোগ করতে চাই। যেমনটা অনেকদিন আগে পোল্যান্ডের সিটিজেন এক আপুর লেখায় পড়েছিলাম।
"তারা সাধারণ হিন্দুদের মত পুনর্জন্মবাদে বিশ্বাসী না, বরং তারা ব্ল্যাক ম্যাজিকের রিচুয়্যাল পালন করতো, যেমন: একটা লোহার বালায় কিছু মন্ত্র পড়ে সেটা গরম করা হতো, অত:পর কিছু গোলামদের পিঠে সেটা দ্বারা ছ্যাঁকা দেয়া হতো। আর রাজা মৃত্যুর সময় সেই বালাটা পরে থাকতেন আর সেই বালা সহ তার লাশ পিরামিডে রেখে আসা হতো। সাথে ওই ছ্যাক দেয়া গোলাম-বাঁদীদেরও। ধারণা করা হতো ওই বালার কারণে গোলামদের আত্মা রাজার সাথেই থাকবে, এবং পুনরায় রাজা যখন জীবিত হবে তখনো এই গোলামদের পাবে।"
তো এটা ফারাওদের একটা ভুয়া বিশ্বাস ছিলো, আর এই যাদুটাও ভোগাস ছিলো।
.
দ্বিতীয় উদাহরণটা এই জামানা থেকে দেই? যাদু সংক্রান্ত বিখ্যাত হ্যারি পটার সিরিজে দেখা যায় "লর্ড ভল্ডেমোর্ট হরক্রাক্স যাদু দ্বারা তার আত্মাকে ৭ টুকরা করে বিভিন্ন বস্তুতে ঢুকিয়ে রাখে, যেন কোনো এক অংশ ধ্বংস হয়ে গেলেও সে না মরে..."
এভাবে সে চেয়েছিলো অমর হতে।
.
[[খ.]]
এবার আত্মা বিষয়ে কিছু কন্সেপ্ট ক্লিয়ার হওয়া যাক।
আল্লাহ বলছেন,
   ""তারা আপনাকে আত্মা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলুনঃ আত্মা/রূহ আমার পালনকর্তার আদেশ থেকে... (the spirit is by the command of my Lord) এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে!"
.
 আমাদের ইমাম গাজ্জালী রহ. সহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী বহু দার্শনিকদের মতেও আত্মার ধ্বংস নেই। আর এটাই যৌক্তিক দর্শন। ফিজিক্সও এটা সাপোর্ট করবে।
.
সেই হিসেবে হ্যারি পটারের "হরক্রাক্স" থিওরিতে একটা ছোট্ট লজিক্যাল মিস্টেক হয়ে গেছে, কারণ লর্ড ভোল্ডেমোর্ট এর আত্মার টুকরোগুলো হ্যারি, রন, হারমিওন, নেভিয়েল, প্রফেসর ডাম্বলডোর এবং সিরিয়াস ব্লাক ধবংস করে... অথচ আত্মা তো ধ্বংস হয়না...
.
[[গ.]]
আবার আগের কথায় ফেরত যাই, অমরত্ব!! শয়তান যুগেযুগে তার অনুসারীদের ধোকা দিয়ে এসেছে; অমরত্বের লোভ দেখিয়ে। এজন্য সর্বযুগেই যাদুকররা চেষ্টা করেছে অমর হতে।
আর হ্যা! শয়তানপূজারী না হলে কিন্তু কেউ ভালো মানের যাদুকর হতে পারেনা!!
.
গত পর্বে শয়তানের কাছে আত্মা বিক্রয়ের বিপরীতে আমরা আল্লাহর জন্য আত্মা উৎসর্গ তথা ক্বিতাল ফি সাবিলিল্লাহের আয়াত উদ্ধৃত করেছিলাম, আজকেও আমরা তাই করবো...
সর্বোপরি আমার স্পষ্ট দর্শন হচ্ছে, তুমি যত বড় সুইপার থুক্কু সুপার পাওয়ার হওনা কেন.. অথবা স্বয়ং ইবলিশ বা দাজ্জাল... চা দিয়ে রুটি ভিজিয়ে খাওয়া গুরাবাদের সামনে তুমি কিছুই না :D
.
 চলুন আখেরি কম্পেয়ার হয়ে যাক......!
.
[[ঘ.]]
প্রথমত: শয়তানপুজারী যাদুকররা চেয়েছিলো বা এখনো চায় অমর হতে। তারা যেন না মরে.. বা মরে গেলেও যেন আবার জীবিত হয়!!
দুঃখজনকভাবে হাজার হাজার বছর চলে গেছে, কেউই সফল হয়নি...
.
পক্ষান্তরে আল্লাহর জন্য প্রাণ উৎসর্গকারীদের ব্যাপারে তিনি কি বলছেন দেখুন...
.
১। আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না। (Baqara:154)
.
২। আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত। (Ale Imran:169)
.
.
-----
অমরত্ব চান?!
তাহলে এখন সিদ্ধান্ত নিন.. আপনি কাকে বিশ্বাস করবেন আর কোন পক্ষে যাবেন?..
 ধোঁকাবাজ শয়তানের পক্ষে? নাকি আল্লাহর পক্ষে...

- ৩ নভেম্বর ২০১৬
ফেবুতে-  https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1130842817005247&id=100002386190185 
Share:

October 3, 2016

আত্মা বিক্রয়! কার কাছে করবেন?

জীবনে সফলতার শর্টকাট কি জানেন?
সফলতার শর্টকাট হচ্ছে “আত্মা বিক্রয় করা!!”
ভয় পেলেন? আচ্ছা ব্যাখ্যা করা যাক, সহজেই বুঝে আসবে ইনশা-আল্লাহ । কোরআনে সম্ভবত দুইবার আত্মা কেনাবেচার কথা এসেছে।
প্রথমে এসেছে শয়তানের কাছে আত্মা বিক্রির কথা, সুরা বাকারা আয়াত ১০২।
 এখানে আল্লাহ বলেছেন "...তারা ভালভাবেই জানে যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা তাদের আত্মা বিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ! যদি তারা জানত..।"(২:১০২)
এরপর আত্মা বিক্রির কথা এসেছে আল্লাহর কাছে, সুরা তাওবাহ আয়াত ১১১।
আল্লাহ বলছেন- "আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত" (৯:১১১)
--
পুরো ব্যাপারটা সহজে বুঝানোর জন্য আমি Christopher Marlowe এর লেখা Doctor Faustus বইয়ের গল্পটি এক লাইনে বলতে পারি।
গল্পে ডক্টর ফস্টাস শয়তানের কাছে আত্মা বিক্রি করে বিনিময়ে সে জীবনে যা ইচ্ছে করবে, সেটাই পাবে!! কিন্তু শর্ত হচ্ছে, মৃত্যুর সময় তাঁর আত্মা শয়তান নরকে নিয়ে যাবে। অর্থাৎ আমাদের ভাষায় সে পরকালে জাহান্নামী হবে। বইটি বাংলাতেও অনূদিত হয়েছে।
মজার ব্যাপার কি জানেন? কথিত আছে ১৫৮৮ সালে লেখা এই গল্প(মূলত নাটক) স্টেজে পারফর্ম করার সময় একবার সত্যি সত্যিই শয়তান এসে হাজির হয়েছিল!!
(wiki says, The powerful effect of early productions of the play is indicated by the legends that quickly accrued around them—that actual devils once appeared on the stage during a performance.)
তাহলে এখান থেকে আমরা যে বিষয়টা বুঝতে পারি তা হচ্ছে...
  1. শয়তানের কাছে যদি কেউ আত্মা বিক্রি করে, অর্থাৎ শয়তানের পূজা করে (বেহেমিয়ান সোসাইটি, ইলুমিনাতির মত) তাহলে পার্থিব জীবনে অনেক কিছু পাবে, কিন্তু পরকালে তাঁর জন্য কোনো অংশ নাই!! 
  2. আর হ্যা, তারা আখিরাতে বিশ্বাস করেনা তা কিন্তু না! তাঁরা এটা জেনেশুনেই করছে... উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহ্‌ তেমনি বলেছেন।  
  3. আর আমরা আরেকটা বিষয় আমরা খেয়াল করবো, সুরা বাকারায় কাফেরদের আত্মা বিক্রির ক্ষেত্রে শুধু আত্মার কথাই বলা হয়েছে, কিন্তু সুরা তাওবার আয়াতে মুমিনদের "আত্মা এবং সম্পদ" কিনে নেয়ার ব্যাপারে বলা হয়েছে। অর্থাৎ মুমিনদের জান-মাল উভয়টাই আল্লাহ কিনে নেন। 
  4. এরপর আবার এই আয়াতে কিতালের ব্যাপারেও বলা হয়ছে, কিতালের কথা সম্ভবতঃ এজন্য বলা হয়েছে, এটা সবচে কঠিন ইবাদাত। কেউ যদি আল্লাহর জন্য কিতাল করতে পারে তাঁর কাছে কোনো ইবাদতই কঠিন না। সে সব ইবাদতই করতে পারবে।  
-
এপর্যায়ে আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, আল্লাহ কেন বেশি নিলেন? জান-মাল দুটোই নিলেন, শুধু জান নিতেন। কাফেরদের মত আমরাও দুনিয়ায় সম্পদশালী হতাম!!
তাহলে আপনার জানা উচিত, আমাদের আল্লাহ দেনও বেশি। আমাদের দুনিয়ায় কিছুই দেননা এমন তো না... কত নিয়ামতে ডুবে আছি একটু চিন্তা করেন। তবুও আমাদের মানতে হবে, দুনিয়ায় আল্লাহ যা দিচ্ছেন এর পুরোটাই ফাও! কারণ, আপনার একার সম্পদ কেন? পুরো দুনিয়া দিয়েও তো জান্নাতের চাবি খরিদ করা সম্ভব না।
-
তাহলে রিভিউ দেয়া যাক-
প্রথমতঃ স্যটানিস্ট বা শয়তান পুজারীরা ছেড়ে দিচ্ছেঃ আত্মা এবং পরকালের সব নিয়ামত
বিনিময়ে পাচ্ছেঃ দুনিয়ায় যা খুশি তাই করার সুবিধা (তবে শয়তান কথা তো? ভোগাস দিবেনা তার গ্যারান্টি নাই) :P
দ্বিতীয়ত, আল্লাহর মুমিন বান্দারা দিচ্ছেঃ আত্মা এবং সম্পদ
বিনিময়ে পাচ্ছেঃ আখিরাতে অনন্তকালের ভোগবিলাসী জীবন, পৃথিবীতে মনের প্রশান্তি নিয়ে বেচে থাকার সুযোগ। গ্যারান্টি চাই?
.
""...আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেনদেনের উপর, যা তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ হল মহান সাফল্য।"" (সুরা তাওবাহ: আয়াত ১১১)
এবার সবচেয়ে সিদ্ধান্তটি নিন, আপনি কার কাছে আপনার আত্মা বিক্রি করবেন?
আল্লাহর কাছে? নাকি শয়তানের কাছে?

- ০৩ অক্টোবর ২০১৬

ফেবুতে- https://mobile.facebook.com/story.php?story_fbid=1099143023508560&id=100002386190185
Share:

August 11, 2016

আমাদের নামাজ, বডি মেমোরি এবং কিছু কথা..

বডি মেমোরি কী?
এর উত্তর অনেক রকম হতে পারে। আমি এটা বুঝেছি খুব বাজে একটা উদাহরণ এর মাধ্যমে।
আপনি সহজভাবে বুঝুন... আপনার ঘরের দরজা, ডান পার্শে সুইচবোর্ড। প্রতিদিন দরজা খুলে ডান দিকে হাত বাড়িয়ে লাইট জালান। ধরুন আজ আপনি ঘরে ঢুকলেন, লাইট জালানোই আছে। তবুও আপনার হাত চলে গেলো সুইচবোর্ড এ!
cause of body memory
শাস্ত্রীয় স্টাইলে বলতে চাইলে এভাবে বলা যায়, ব্রেইন থেকে শরীরের কোনো অঙ্গে একটা কমান্ড বারবার প্রেরণের ফলে এক সময় আর কমান্ড পাঠানোর প্রয়োজন হয়না, বডিতেই স্ট্র‍্যাটেজী সেভ হয়ে যায়, সামান্য ক্লু পেলেই শরীর ওই কাজটা আগেরবারের হুবহু পুনরাবৃত্তি করে।
----
তো এবার আসল কথায় আসা যাক, আল্লাহ আমাদের মাফ করুক। আমাদের অনেকের অবস্থা এমন যে, আমরা শুধু নামাজ শুরু করি, বাকি নামাজ সমগ্র দুনিয়ার ফিকিরে ব্যাস্ত থাকি। অভ্যাস অনুযায়ী হাত-পা উঠছে বসছে, মুখ দুয়া সুরা পড়ছে, একসময় মাথা সালাম ফিরালো। এরপর হুশ আসলো, অহ!! আমি তো নামাজে ছিলাম, তাইনা?
 অথচ পুরো নামাজে আমাদের মনযোগ একটুও নামাজে স্থির হয়নি।
ওই যে! আমরা শুধু তাকবীর বলে ট্রিগার প্রেস করেছি বাদবাকি কাজ ব্রেইন থেকে হয়নি বরং বডি মেমোরি থেকে সম্পাদন হয়েছে।
-
এসব নামাজের ব্যাপারে শরীয়তের সিদ্ধান্ত কি? উলামায়ে কিরাম বলেন- বেখেয়ালে নামাজ পড়লে নামাজের ফরজ আদায় হয়ে যাবে বটে, কিন্তু সওয়াব পাবেনা। দলিল স্বরূপ আবু দাউদ শরিফ থেকে দুটি হাদীস বলা যায়-
.
১। “বান্দা নামাজ আদায় করে, সেই নামাজের এক-দশমাংশ বা এক-নবমাংশ বা এক-অষ্টমাংশ বা এক-ষষ্ঠাংশ বা এক-পঞ্চমাংশ বা এক-চতুর্থাংশ বা এক-তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধেক সওয়াব পেতে পারে|”
২। “বান্দা তার নামাজের শুধু মাত্র সেই অংশের সওয়াব পায়, যে টুকু অংশ সে সজ্ঞানে(বুঝে শুনে) করে|” [দুটি হাদীসই আবু দাউদ এর]
.
এখন এই হচ্ছে আমাদের অবস্থা! আমরা মন দিয়ে নামাজ পড়িনা, বরং বডি মেমোরি দ্বারা পড়ি। যার কারণে নামাজ দ্বারা আমার আত্মার উন্নতি হচ্ছে না।
তো নামাজের কোনো উপকার যেনো মিস না যায় এজন্য আমরা কি করতে পারি?
প্রথমতঃ আমাদের মনযোগ দিয়ে নামাজ পড়তে হবে। এরপর সব সুরা ক্বিরাত দুয়া দরুদ ঠিকমত পড়তে হবে।
-
--
কিভাবে নামাজে মনযোগী হতে পারি? এটা আপনাদের কাছে অধমের প্রশ্ন, সমাধান জানলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
কেউ বলে- "একটা কাজ করতে পারো তা হচ্ছে নামাজে সুরা দুয়া এসব পড়ার সময় অর্থ বুঝে পড়ার চেষ্টা করো, সব অর্থ না বুঝলেও যে রিডিং পড়ছো অন্তত সেসব খেয়াল করে পড়ো। " এটা তেমন কার্যকরী মনে হয়নি। :/
.
আমার তাফসীরে জালালাইন এর উস্তায এরকম বলেছিলেন, "তুমি দুইটা কাজ করে দেখতে পারো। এক. তাহাজ্জুদ পড়ার চেষ্টা করো, দুই রাকাত চার রাকাত যা পারো। তাহাজ্জুদ এর কারণে নামাজের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। তাহাজ্জুদের পর আল্লাহর কাছে দুয়া করো মনযোগের জন্য, স্থির অন্তরের জন্য।
(রাতে জাগা না পেলে এশার পরেই তাহাজ্জুদ পড়ে ঘুমানো যেতে পারে)
আর আরেকটা বিষয় নামাজের যে অবস্থায় যেখানে তাকানো উচিৎ সেদিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখো। যেমনঃ দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার যায়গায়, রুকুতে দুইপায়ের মাঝে (ঠ্যাং না কিন্তু... ) আর আত্তাহিয়াতুর সময় উরুর ওপর। আমরা আসলে নামাজের সময় এসব যায়গায় তাকাইনা, একটা ভাসাভাসা দৃষ্টি থাকে.. আসলে কোথায় তাকায়া থাকি আমরা নিজেও জানিনা।"
তো আমার উস্তাযের দেয়া টিপস মাঝেমাঝে ফলো করার চেষ্টা করি, তবুও কিভাবে যেন টিপ্স-চিপ্স সব ভুলে যাই। মহান রবের সামনে দাঁড়িয়ে কি কি সব আলতুফালতু চিন্তায় ডুবে যাই। আস্তাগফিরুল্লাহ..
--
এবার আসা যাক সুরা কিরাত প্রসঙ্গে, বেখেয়ালে নামাজ পড়লে সাধারণত এক দুইটা সুরাই ঘুরেফিরে মুখে আসে, কখনো দুই রাকাতে একই সুরা পড়া হয়ে যায়।
 এভাবে নামাজ হবে তবে, মাকরুহ হবে, কখনো বেখেয়ালে সুরা কিরাতে এমন ভুলও হয়ে যায়, যার কারণে নামাজ ভেঙ্গে যায়।
--
আল্লাহ যেন আমাদের মনযোগ দিয়ে খুশু-খুযুর সাথে নামাজ আদায়ের তাওফিক দেন, আমীন


- ১১ আগস্ট ২০১৬
ফেবুতে- https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1054415504647979&id=100002386190185
Share: