Showing posts with label রুকইয়াহ শারইয়াহ. Show all posts
Showing posts with label রুকইয়াহ শারইয়াহ. Show all posts

April 16, 2023

আসল রুকইয়াহ গ্রুপ কিভাবে চিনবেন?

 একটা বিষয় জানা দরকার, রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপ - Ruqyah Support BD এর কাছাকাছি নামের কিংবা হুবহু নাম, ব্যানার চুরি করে অনেক ফেইক গ্রুপ তৈরি হয়েছে। আপনি আসল গ্রুপ কিভাবে চিনবেন?

আসলে একটু চোখ-কান খোলা রাখলেই আর ভুল হওয়ার কথা না। তবুও নিচের বিষয়গুলো খেয়াল করতে পারেন -

১। গ্রুপের মেম্বার সংখ্যা। পেজের লাইক সংখ্যা।

২। গ্রুপের এডমিন কারা। গ্রুপের সাথে কোন পেজ লিংক করা আছে। ওয়েবসাইটে কি এই এডমিনদের নাম দেয়া আছে?

৩। পিন পোস্টে কি আছে। কোন আইডি বা পেজ থেকে এডমিনস্ট্রেটিভ পোস্ট করা হচ্ছে।

৪। গ্রুপে কারা পরামর্শ দিচ্ছে। গ্রুপে কি কোনো দোকান-পাট বা কবিরাজির প্রমোশন চলছে? রুকইয়াহ গ্রুপের আইকনিক রুলসগুলো কতটা স্ট্রিক্টলি ফলো করা হচ্ছে? 

৫। আমার প্রোফাইলে কোন গ্রুপের লিংক দেয়া? কোন পেজের লিংক দেয়া? ওই পেজে ঢুকলে কোন গ্রুপের লিংক দেখা যাচ্ছে? 

৬। আমাদের ruqyahbd.org সাইটে, রুকইয়া বইয়ে, ইউটিউব চ্যানেলে, অ্যাপের মধ্যে কোন গ্রুপের লিংক দেয়া আছে।  ruqyahbd.org/fb ঠিকানায় গেলে কি দেখায়? (এড্রেসটা রুকইয়াহবিডি.অর্গ ভালোমতো খেয়াল করেন, ডট.কম না।)

৭। ইত্যাদি ইত্যাদি।

----- ----- ----- 

ভুয়া গ্রুপগুলায় কি হয় জানেন? কিছু উদাহরণ নেন- 

এক.. কেউ কেউ বলে xyzটাকা আর নাম নিয়ে গ্রুপের এডমিন হাজিরা(!) দেখে দিয়েছে। অর্থাৎ কবিরাজের ফাঁদে পড়েছে।

দুই.. কেউ কেউ বলে তাকে সারাদিন আন-নুর পড়তে বলা হইসে। wth, রুকইয়াহ গ্রুপে কেন রুকইয়াহ না দিয়ে পিরদের মত অযিফা দিবে? কমন সেন্স কি বলে?

তিন.. একদিন একজন বলে, তিনি গ্রুপে মেসেজ দিয়েছে(!) তখন তাকে বলা হয়েছে মাজারে ছাগল দিতে। টাকা ছিল না দেখে দিতে পারেনাই!! আল্লাহ বাচাইসে। 

----- ----- 

আপনার জন্য করণীয় হচ্ছে-

১. নিজে সতর্ক থাকুন। অন্যদের সাবধান করুন।

২. ফেইক গ্রুপে থাকলে থেকে বের হয়ে আসুন। আনলাইক/আনফলো করুন।

৩. ভুয়া পেজ/গ্রুপগুলো রিপোর্ট করুন।

৪. রুকইয়াহ বিষয়ে পড়াশোনা করুন। ওয়েবসাইট, বই, দরস ইত্যাদি সুত্র থেকে এবিষয়ে প্রয়োজনীয় ইলম অর্জন করুন। অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর চেষ্টা করুন।

৫. আল্লাহর কাছে নিজের জন্য এবং অন্য ভাইদের জন্য দোয়া করুন। যাতে সবাই ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকে। প্রতারিত না হয়।

৬. এবং সবশেষে আবারও সতর্ক থাকুন। চোখ-কান খোলা রাখুন।

image
Share:

February 25, 2022

একনজরে জিনপুজারি, গণক ও জাদুকর ও তাদের সহযোগী জিনদের কাজকর্ম

জিন পুজারিদের কাছে মানুষ কেন যায়?

১. সুস্থতা লাভের আশায়

২. সন্তানকে বাধ্য করার জন্য

৩. সন্তান লাভের জন্য

৪. চাকুরীর - আয়রোজগারের রাস্তা খোলার জন্য

৫. জাদু করে অন্যকে অসুস্থ/বশ/বিয়েবন্ধ/পাগল করার জন্য

 কিভাবে জিনদের সাহায্য প্রার্থনা করা হয় জানেন কী?

১. শয়তানের নামে কোরবানি করা হয়, আগুন/ধুয়া জালানো হয়

২. নিয়মিত কয়েকমাস কয়েক শতবার শিরকি বাক্য লেখা বা উচ্চারণ করা হয়

৩. জ্যেতিশশাস্ত্রের নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট তারা বা চাঁদ ওঠার দিন নির্দিষ্ট কাজ করতে হয়

৪. অন্ধকারে বা বদ্ধ রুমে অযু-নামাজ-পাকসাফ-হালাল-হারামের পরোয়া না করে ধ্যান করতে হয়

৫. আল্লাহর হালালকৃত খাবার থেকে বিরত থাকতে হয়, হারামকৃত খাবার খেতে হয়, কাজ করতে হয়

.

এসবের পর জিন-শয়তানরা সাহায্য করে। জাদুকরদের সাথে চুক্তিতে আসে। তাদের নিয়মিত সাহায্য পেতে নিয়মিত তাদের কথাবার্তা শুনতে হয়। তাদের নির্দেশগুলো থাকে এমন-

* ওপরে বলা কাজগুলো এবং

১. কোরআন অবমাননা

২. যিনা, সমকা মীতা, অযাচার

৩. নিজের সন্তানকে হ*ত্যা করা

৪. জুনুবি অবস্থায় জামাতের প্রথম কাতারে নামাজ পড়া

৫. শয়তানের নামে খাদ্য, পানিয়, ফল, ইত্যাদি বহুকিছু উৎসর্গ করা এমনকি নরবলি দেয়া 

..

এসব কাজের মাধ্যমে জিন-শয়তানকে খুশি করা হয়। ফলে বড় শয়তান হয়তো নিজে সহযোগিতা করা, নইলে অধিনস্ত ছোট কোনো জিনকে পাঠায় কাজ করার জন্য। কখনও জাদুকরের প্রয়োজনীয় তথ্য এনে দেয়, কখনও জাদুকরের পক্ষ থেকে জাদু করে দেয়। কখনও অন্য দুর্বল জিনদের ধরে এনে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে জাদুকরের কাজ করতে বাধ্য করে।

জাদুকর-কবিরাজ যদি কোনো চুক্তির লঙ্ঘন করে, তখন জিন তার বা তার পরিবারের ক্ষতি করে। এমনকি কখনও কখনও কবিরাজ পটল তোলে।

--

গণক হল যারা জিনদের মাধ্যমে বা তারকা গুনে বা হস্তরেখা দেখে অদৃশ্যের/ভবিষ্যতের/গোপন বিষয়ের সংবাদ দেয়। গণক ও জাদুকরের পার্থক্য হচ্ছে, সাধারণত সব জাদুকরই গণকদের কাজগুলো বুঝে, গণনা করে, তারা দেখে, তবে সব গণকরা জাদুকরদের সব কাজ বুঝে না বা পারে না।

---

অতিরিক্ত সংযুক্তি -

১. সুলাইমান আলাইহিস সালাম জিনদের সাহায্য নিতেন না। জিনরা উনার কথা মানতে বাধ্য ছিল। এটা উনার বিশেষত্ব, যা অন্য নবীদেরও ছিল না। (নবীজি সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জিন বেঁধে রাখার ঘটনা দ্রষ্টব্য) কেউ যদি বলে এসব জাদুকরদের বিষয় আর সুলাইমান আলাইহিস সালামের বিষয় এক, তবে সে ইহুদিদের ভ্রান্ত আকিদাই মুসলিমদের মাঝে প্রচার করছে। যে আকিদার খণ্ডন আল্লাহ তা'আলা সুরা বাকারার ১০২ আয়াতে করেছেন। (তাফসির দ্রষ্টব্য)

২. জিনদের সাহায্য নেয়া, জিনদের দ্বারা উপকৃত হওয়া আর অন্যান্য মাখলুকদের সাহায্য নেয়ার মাঝে বহুত তফাত। আমরা জিন-শয়তানদের উপসনা করার সর্বাধিক উদাহরণের মাঝে (হিন্দুস্তানে) বসবাস করেও যদি এই বিষয় না বুঝি তবে আমাদের চেয়ে হতভাগা আর কে আছে? কোরআনে (সুরা আনআমে) জিনদের অনুসরণ করার দ্বারা যারা উপকৃত হয় তাদের চিরকালে জাহান্নামে থাকার করা এসেছে। অন্যদের বেলায় আসেনি।

৩. জিনদেরকে মানুষ যে স্তরের সাহায্যকারী ভাবে, আর জিনদের যে পরিমাণ উপাসনা করা হয়, অন্য কোনো মাখলুকের করা হয় না। অন্য কোনো মাখলুকের কাছে এই পরিমাণ প্রার্থনা করা হয়না। 

৪. আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদেরকে বারবার সতর্ক করেছেন, শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করার ব্যাপারে। শয়তান একসাথেই বিভ্রান্ত করে না, ধাপে ধাপে করে।

৫. নিজের ইজ্জত রক্ষার চেয়ে উম্মতের ইমান রক্ষা জরুরি। আমার ছাড়মূলক মন্তব্যের জেরে যেন কেউ ঈমানহারা না হয়, জাদুকরের অনুসারী না হয়, অন্য মুসলিমদের জাদু করে জীবন নষ্ট করার সুযোগ না পায়, মানুষের অর্থ-সম্পদ, জীবন ও ইমান যেন নিরাপদ থাকে এটা খেয়াল রাখা জরুরি। 

.....

"আমরা আল্লাহরই ইবাদাত করি, আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাই" দিন-রাতে অসংখ্যবার এই কথা বলা মুসলিমরা যেন জিনদের ইবাদাতে লিপ্ত না হয়, জিনদের সাহায্য না চায়, আজীবন এই দোয়াই করব। আমিন।

আল্লাহ আমাদের বুঝার তাওফিক দিক। মানার তাওফিক দিক।


Share:

December 12, 2021

বিষ খেলে মানুষ মরে?

 "আসলে বিষ খেলে মানুষ মরে না" কই অমুক দেশের তমুক প্রেসিডেন্টকে তো কেউ বিষ খাওয়াইয়া মারতে পারলো না।

"গুলি করে মানুষ মারা অসম্ভব" এভাবে মানুষ মারা গেলে দেশে কেউ বাচতো না।

মানুষ জাদু-টোনা আক্রান্ত হয়, এটা কেউ বললে কিছু গণ্ডমূর্খ দের থেকে এই একই টাইপের লেইম লজিক দেখা যায়। এখন কেউ যদি ফুটপাতে বসে সারাদিন জপতে থাকে- "রকেট বলে বাস্তবে কিছু নাই, থাকলে সবাই আজ চান্দের দেশে থাকতো।" তাহলে কথাটা কেমন লাগবে শুনতে? এই সব যুক্তি শুনলেও একই ধরণের অনুভূতি হয়।

জাদুর জন্য কত মানুষের সংসার ভেঙে যাচ্ছে। কত পরিবারের সব কাজকারবার বন্ধ হয়ে গেছে। কত মেয়ের সারাজীবনেও বিয়ে হচ্ছে না। আর এরা আসছে যুক্তি শোনাইতে।

দ্বিতীয়তঃ "এক গবেষণায় দেখা গেছে, নো-ম্যাজিওসিস নামক এক ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত হইলে জাদুটোনা সবকিছু অস্বীকার করে। এইধরনের রোগীদের বৈশিষ্ট্য হল, তারা সাধারণত কোনো ধর্মই তেমন গুরুত্বের সাথে মানে না। এছাড়া এই ধরনের মানসিক রোগীদের অনেকে ঈশ্বরে অবিশ্বাসী হয়।" — কথাগুলা শুনতে কেমন লাগলো? এরকম আজগুবি গবেষণা আর মনগড়া আলামত সেট করে করে অসংখ্য জিন-জাদুর রোগীদের মানসিক রোগী ট্যাগ দিয়ে আজীবন অসুস্থ বানিয়ে ফেলে রাখা হয়।

একদিন এই অন্ধকারের অবসান হবে ইনশাআল্লাহ

Share:

July 1, 2021

জিন পূজারিদের ভ্রান্ত যুক্তির খণ্ডন

 জিনের সাহায্য নেয়ার পক্ষে দলিল হিসেবে সুলাইমান আলাইহিস সালাম এর ঘটনা উল্লেখ করতে দেয়া যায় অনেককে। এটা ভুল দলিল। 

সুলাইমান আলাইহিস সালাম এর এসব ঘটনা আমাদের জন্য দলিল না। এটা উনার জন্য ইউনিক। আমাদের রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরামের আমল কি ছিল সেটা দেখা জরুরি। উনারা তদবিরের জন্য জিনের সাহায্য চাইতেন কি না।

রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিন আক্রমণ করতে আসলে উনি ধরার পরেও ছেড়ে দিয়েছেন সুলাইমান আলাইহিস সালাম এর কথা মনে করেই। সুলাইমান আলাইহিস সালামকে আল্লাহ যে ফ্যাসিলিটি দিয়েছে, সেটা অন্য কারও জন্য না। উনি দোয়া করেছিলেন -

قَالَ رَبِّ اغْفِرْ لِي وَهَبْ لِي مُلْكًا لَّا يَنبَغِي لِأَحَدٍ مِّن بَعْدِي ۖ إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ [٣٨:٣٥]

সোলায়মান বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে মাফ করুন এবং আমাকে এমন সাম্রাজ্য দান করুন যা আমার পরে আর কেউ পেতে পারবে না। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা।

..

 عن أبي هريرة:] إنَّ عِفْرِيتًا مِنَ الجِنِّ تَفَلَّتَ البارِحَةَ لِيَقْطَعَ عَلَيَّ صَلاتِي، فأمْكَنَنِي اللَّهُ منه فأخَذْتُهُ، فأرَدْتُ أَنْ أَرْبُطَهُ على سارِيَةٍ مِن سَوارِي المَسْجِدِ حتّى تَنْظُرُوا إِلَيْهِ كُلُّكُمْ، فَذَكَرْتُ دَعْوَةَ أَخِي سُلَيْمانَ: رَبِّ هَبْ لي مُلْكًا لا يَنْبَغِي لأحَدٍ مِن بَعْدِي، فَرَدَدْتُهُ خاسِئًا.

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবীজি‎ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, একটি অবাধ্য ইফরিত জ্বিন গত রাতে আমার সালাতে বাধা দিতে এসেছিল। আল্লাহ্‌ আমাকে তার উপর ক্ষমতা প্রদান করলেন। আমি তাকে ধরলাম এবং মসজিদের একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখার ইচ্ছে করলাম, যাতে তোমরা সবাই স্বচক্ষে তাকে দেখতে পাও। তখনই আমার ভাই সুলাইমান (‘আঃ)-এর এ দু’আটি আমার মনে পড়লো। হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে এমন রাজ্য দান করুন, যা আমি ছাড়া আর কারও ভাগ্যে না জোটে- (সোয়াদ ৩৫)। অতঃপর আমি জ্বিনটিকে ব্যর্থ এবং লাঞ্ছিত করে ছেড়ে দিলাম। 

- বুখারি ৩৪২৩ 

.

আমরা অন্য হাদিসে দেখেছি জ্বিনদের ক্ষতি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার জন্য রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দোয়া শিখিয়ে দিচ্ছে জিবরীল আলাইহিস সালাম। (أعوذُ بوَجهِ اللهِ الكريمِ، وبكَلِماتِ اللهِ التّامّاتِ التي لا يجاوِزُهنَّ بَرٌّ ولا فاجِرٌ)  আমরা সেই দোয়াটা প্রতিদিন পাঠ করি। 

সুতরাং আমরা এদের থেকে দূরে থাকবো, এদের ক্ষতি থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইবো, বেশি ঝামেলা করতে আসলে মাইর লাগাবো। সাহায্য চাওয়ার প্রশ্নই আসে না।

....

edit: আর মূলতঃ সুলাইমান আলাইহিস সালামও জিনদের সাহায্য নেননি, বরং জিনরা উনার কাজ করতে বাধ্য ছিল। এজন্য সুলাইমান আলাইহিস সালামের ইন্তিকালের পরে তারা অন্য নবী কিংবা বাদশাহদের আনুগত্য করেনি। কোরআনে আছে - পানির শয়তানরাও উনার অনুগত ছিল। এখন এতে পানিতে থাকা শয়তানদের কাছে সাহায্য চাওয়া বৈধ হয়ে যায় না। 

আরেকটা বিষয় হলো, সুলাইমান আলাইহিস সালামের ওপর জাদুচর্চা-জিনসাধনার অপবাদ আজকে নতুন না। পূর্বের কিতাবি কাফেররাও এরকম অপবাদ দিত। এজন্য আল্লাহ কোরআনে আয়াত নাযিল করেছিলেন - "আর সুলাইমানের রাজত্বে শয়তানরা যা আবৃত্তি করত তারা তা অনুসরণ করেছে। আর সুলাইমান কুফরী করেননি, বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারা মানুষকে শিক্ষা দিত জাদু এবং যা বাবিল শহরে হারূত-মারূত ফিরিশতাদ্বয়ের উপর নাযিল হয়েছিল......।" (বাকারা ১০২)

(এই আলোচনা আরও লম্বা করা যেত, কিন্তু আমজনতার বুঝার সহজার্থে সংক্ষেপ করা হল।) 

.....

বাস্তব কথা হল  - 

১. আমভাবে বিশেষ স্বার্থ বা শয়তানি পরিকল্পনা ব্যতীত জিন কাউকে সাহায্য করে না। যদি এক-দুইটা এক্সেপশন থাকে, সেটার হিসেব ভিন্ন। এজন্য আমভাবে সবাইকে অনুমতি দেয়ার সুযোগ নেই, এই বিষয়ে দুর্বলতা দেখানো মোটেই উচিত না। (এখানে 'দ্বরর' এতই বেশি যে, সামান্য নফা'র সুযোগ নিতে গিয়ে ঈমান ঝুঁকিতে ফেলতে পরামর্শ দেয়া কোনো বুদ্ধিমান ফকিহের কাজ হতে পারে না।)

২. যদিও স্বেচ্ছায় কোনো জ্বিন আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য অফার করে, তবুও এথেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত। বলা উচিত ‘তোমরা যা খুশি করো গিয়ে, আমার সাথে তোমাদের সম্পর্ক নেই, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট’। কারণ শয়তানরা এভাবে অনেক মানুষকে শুরুতে "ফ্রি চা" খাইয়ে তাদের ওপর নির্ভরশীল বানিয়ে নিয়েছে,  এখন তারা জিনের সাহায্য নেয়ার জন্য সেই কাজগুলোই করে, যা গতানুগতিক তান্ত্রিকরা করে থাকে। আল্লাহ আমাদেরকে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।

৩. অনেকে নাকি জিনের সাহায্য নেয় না, ফেরেশতার সাহায্য নেয়! এটা মিথ্যা কথা। ফেরেশতারা নিজ ইচ্ছায় কিছু করে না। যতক্ষণ না আল্লাহর হুকুম হয়। কিয়ামতের দ্বীন আল্লাহ ফেরেশতাদের বলবেন “এরা কি তোমাদের উপাসনা করতো?” ফেরেশতারা বলবে “না ইয়া রব! এরা জীনদের পূজা করতো, জিনদের কথাই বিশ্বাস করতো” (সুরা সাবা; ৪১)

قَالُوا سُبْحَانَكَ أَنتَ وَلِيُّنَا مِن دُونِهِم ۖ بَلْ كَانُوا يَعْبُدُونَ الْجِنَّ ۖ أَكْثَرُهُم بِهِم مُّؤْمِنُونَ 

৪. কবিরাজরা ভাবে তারা জিন-শয়তানকে অনুগত বানিয়ে কাজ করাচ্ছে, আসলে কখন সে নিজেই যে শয়তানের অনুগত হয়ে গেছে। অনেকে টেরও পায় না।

৫. আমাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি হল, নবীজি সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কিরাম এবং পুর্বসুরি ইমামদের পদ্ধতি। তারা ঝাড়ফুঁকের জন্য জ্বিনের সাহায্য চাইতেন নাকি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন? 

তারা যে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন, আমরাও তার কাছেই সাহায্য চাইবো।


Share:

June 21, 2021

রুকইয়ার সময় গাইরে মাহরামকে স্পর্শ করা এবং জ্বিনের রোগীকে মারধোর করা প্রসঙ্গ

[ক]
কিছুদিন আগে আমাদের এক ভাই  রুকইয়ার মাঝে রোগীকে মারধোর করা এবং গাইরে মাহরামকে স্পর্শ করা প্রসঙ্গে এমন কিছু মন্তব্য করেছেন, যা রাক্বিদের ঈমান এবং তাক্বওয়ার ব্যাপারে ঝুঁকিপূর্ণ।
.
লক্ষণীয় বিষয় হল, উনি উনার লেখার নিচে প্রসিদ্ধ ওয়েবসাইট "আল-আলুকাহ" এর একটি প্রবন্ধের ঠিকানা যুক্ত করে দিয়েছিলেন।
 আমরা এপ্রসঙ্গে নিজে থেকে কিছু বলার পূর্বে সেই লেখাটার গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশের অনুবাদ আপনাদের সামনে পেশ করছি। 
সবশেষে অল্প কথায় আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করব ইনশাআল্লাহ।
.
 এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য, আমরা এসব ভুল ভ্রান্তি কাজের বিরোধিতা করছি শুধুমাত্র আল্লাহকে ভয় করে। এখানে আমাদের ব্যক্তিগত কোন বিদ্বেষ বা স্বার্থ নেই। বিভিন্ন সময় আমি বা আমরা বিভিন্ন রাকিদের কাছে রেফার করেছি, সেটাও যেমন আল্লাহর জন্য ছিল,  তেমনি এখন কিছু ভাইদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের বিরোধিতা করছি এটাও নিখাদ আল্লাহর জন্যই।
হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি'মাল ওয়াকিল।
.
[খ]
উদ্ধৃত প্রবন্ধটি লিখেছেন- মিশরের শাইখ মুসতাফা আদাবীর ছাত্র শাইখ আবু হাতিম সাঈদ। উনার আরেকটি পরিচয় হল, তিনি শাইখ ওয়াহীদ আব্দুস সালাম বালী'রও ছাত্র। যদিও তিনি মুসতাফা আদাবী থেকেই দীর্ঘসময় ইস্তিফাদা করেছেন।
.
লেখাটির প্রয়োজনীয় অংশ অনুবাদ করেছেন শ্রদ্ধেয় ভাই আবু খুবাইব।
والذي أرى - والله أعلم - أنَّ الأصل في الرقية الواردة عن نبيِّنا صلى الله عليه وسلم، وعن صحابته رضي الله عنهم، وعن أئمَّة السَّلف رحمهم الله - عدم استخدام الضَّرب، ولو قال قائلٌ بالجواز لِما ورد في حديث عثمان؛ فهذا ليس على إطلاقه، بل لا بد له من ضوابط[15].
ولو ترك الرُّقاةُ الضربَ بالسياط وواظبوا على قراءة كتاب الله تعالى، لكان أضرَّ على الشيطان وأخزى له؛ إذ ليس شيء أوقَعَ على الشيطان وأنكى له مِن كتاب ربنا تبارك وتعالى، وليحذر العباد مِن ضرب المسلمين بغير وجه حقٍّ،
আমি মনে করি - আল্লাহ ভালো জানেন - নবী সা., তাঁর সাহাবিগণ ও সালাফের ইমামগণ হতে বর্ণিত রুকইয়াহ এ প্রহার না করাটাই মূল পদ্ধতি। যদি কেউ উসমান (বিন আবিল আস) রা. হতে বর্ণিত হাদিসটির কারণে প্রহার করাকে জায়েয বলে তাহলে (মনে রাখতে হবে,) তা শর্তহীনভাবে জায়েজ নয়। অবশ্যই এর কিছু শর্ত ও মূলনীতি আছে।
যদি রাকীগণ প্রহার করা থেকে বিরত থেকে আল্লাহ তাআলার কিতাব পাঠ করতে থাকে তাহলে তা অবশ্যই শয়তানের জন্য অধিক ক্ষতিকর ও লাঞ্ছনাকর হবে। কারণ আমাদের রবের কিতাব হতে শয়তানের জন্য অধিক আক্রমণাত্মক কিছু নেই। আল্লাহর বান্দারা যেন কোন হক ছাড়া মুসলিমদেরকে প্রহার করার ব্যাপারে সতর্ক থাকে।
لا يجوز أن يمَسَّ الرجل المرأةَ الأجنبية، إلا الطَّبيب لضرورةٍ شرعية، وأرى كذلك - والله أعلم أنه لا يجوز للرَّاقي بالكتاب والسُّنة أن يباشر ضرب المرأة الأجنبية بنفسه بحالٍ من الأحوال، أما إذا وكَّل أحدًا مِن محارمها بضربها بالشروط المذكورة، فلا بأس، ولا يتوهَّمنَّ موسوسٌ أنه لا بد لخروج الجني من الضرب، فالأمر إلى الله مِن قبلُ ومن بعد، والشِّفاء بيد الله، ولا يدخل جنِّيٌّ ولا يخرج إلا بأمرٍ إلهيٍّ.
পুরুষের জন্য গাইর মাহরাম নারীকে স্পর্শ করা জায়েয নেই। কিন্তু চিকিৎসকের জন্য শরীয়ত সম্মত প্রয়োজনে স্পর্শ করা বৈধ। আমি মনে করি, - আল্লাহ ভালো জানেন - আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাহ দ্বারা রুকইয়াহকারীর জন্য সরাসরি (হাত, পা দ্বারা) গাইর মাহরাম নারীকে প্রহার করা কোন অবস্থায়ই জায়েজ নেই।  যদি উল্লেখকৃত শর্তসাপেক্ষে তার (রোগীনির) কোন মাহরামকে প্রহারের দায়িত্ব দেয়" তাহলে কোন সমস্যা নেই। 
কোন কুমন্ত্রণাদাতা যেন ধারণা না করে, জিন বের হওয়ার জন্য প্রহার করা আবশ্যক। ব্যাপারটি সর্বদাই আল্লাহর হাতে। আরোগ্য আল্লাহর হাতে। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া জিন প্রবেশও করে না বেরও হয় না।
--------- 
(পূর্ণ লেখার লিংক নিচে কমেন্টে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ)
- উল্লেখিত আরবি প্রবন্ধের লিংক- https://www.alukah.net/sharia/0/116398/
- প্রাসঙ্গিক অন্য একটি লেখা-
https://facebook.com/Ruqyahbd.Official/posts/731715417234834/
---------
[গ]
মন্তব্যঃ আমরা শাইখের ছাত্রের এই মতকে সমর্থন করি। আর মনে করি গাইরে মাহরাম রোগীকে স্পর্শ করা / মাথায় হাত রাখা / হাতপা দিয়ে সরাসরি প্রহার করার জায়েজ হবে না। কারণ এর বিশেষ কোন প্রয়োজন নেই।
যেহেতু রোগীর মাথায় হাত রেখে পড়লে অনেকের ক্ষেত্রে একটু বেশি উপকার হয়, তাই কেউ এটা করতেই চাইলে এক্ষেত্রে দুইটা পদ্ধতি সুপারিশ করে থাকি - 
.
প্রথম পদ্ধতিঃ সার্বিক বিবেচনায় এটা সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি, আর "রুকইয়াহ" বইতেও এমনটাই বলা হয়েছে।
 রোগীর সাথে থাকা গাইরে মাহরাম রোগীর মাহরাম পুরুষ (বাবা/ভাই/স্বামী) কিংবা রাক্বির কোন মাহরাম নারী (মা/বোন/স্ত্রী) রোগীর মাথায় হাত রাখবে। আর তার হাতের ওপর রাক্বি হাত রাখবে। 
উদাহরণস্বরূপ, রোগীর মাথার ওপর রোগীর ভাই হাত রাখলো, ভাইয়ের হাতের ওপর আপনি হাত রাখলেন।
বিষয়টি না বুঝলে আরও কয়েকবার পড়ে নিন। 
.
দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ (রুকইয়ার সময় জ্বিনের রোগীর সাথে অবশ্যই কোন মাহরাম পুরুষ থাকা উচিত, যদি সম্ভব না হয় তবে রাক্বির স্ত্রী বা বোন সেখানে থাকা উচিত। এটাও যদি সম্ভব না হয়, তবে শেষ অপশন হল রোগীর মুরব্বি শ্রেণীর (মা-খালা জাতীয়) একাধিক মহিলা সেখানে উপস্থিত থাকবেন।
এরপর যখন মাথায় হাত রাখার হাজত হবে, তখন একটু দুরত্ব বজায় রেখে লম্বা স্কেল বা শক্ত বই জাতীয় কিছু মাথার তালুতে সামান্য স্পর্শ করবে। আর আল্লাহ চাইলে এটুকুই যথেষ্ট। 
.
এখানে যে জিনিসটা ব্যবহার করবেন সেটা এমন না হওয়া চাই, যা ব্যাবহার সত্বেও রোগীর কোমলতা কিংবা তাপ রাক্বির হাতে অনুভুত হচ্ছে। কারন তাহলে এটা প্রায় হাতের মতই হবে। যেমনঃ সার্জিক্যাল গ্লাভস বা সাধারণ কাপড় দিয়ে হাত রাখা আমরা সমর্থন করব না। এটা জীবাণু থেকে বাচাতে পারে, কিন্তু সরাসরি স্পর্শের অনুভূতি দিচ্ছে, ফলে এটা আল্লাহর আযাব থেকে বাচাবে বলে আমাদের কাছে কোন নিশ্চয়তা নাই।
.
আর এমন কোন অস্বাভাবিক বস্তুও না হওয়া চাই, যেটা না ব্যাবহার করলে কোন সমস্যা নাই। যেমনঃ আপনি যেখানে সাধারণ স্কেল বা কাঠি ব্যবহার করতে পারতেন, সেখানে আপনি ম্যাজিকাল ওয়ান্ড নিয়ে চলে আসলেন। কি দরকার ভাই?
.
আর আমি অধমের খেয়াল হল, তাক্বওয়ার বিবেচনায় একান্ত জরুরত না হলে দ্বিতীয় পদ্ধতিও অনুসরণ উচিত না। বরং রোগির সাথে মাহরাম পুরুষ উপস্থিত থাকতে গুরুত্ব দেয়া উচিত।
.
আর আক্বিদা এবং আমলে এই কথার প্রকাশও থাকা উচিত যে, রোগীর মাথায় হাত রাখা ছাড়া আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা শুধু কোরআন তিলাওয়াত থেকেই উপকার দান করতে পারেন।
.
সংযুক্তি: অনেকে ভাবেন ডাক্তাররা রোগীকে টাচ করতে পারে, তাই রাক্বিরাও পারবে।
এখানে খেয়াল করা উচিত, ডাক্তাররা চাইলেই গাইরে মাহরাম নারীকে স্পর্শ করতে পারে না। একান্ত যদি স্পর্শ করা চিকিৎসার জন্য জরুরি হয়, কিন্তু সেখানে ডাক্তারের মহিলা সহকারি না থাকে, কিংবা থাকলেও তারা এই কাজ করতে অপারগ হয়, তখন স্পর্শ করতে পারে। এটা সর্বশেষ স্টেপ। 
.
[ঘ]
রুকইয়াহ বিষয়ে আমি ৭জন উস্তাযের ইলম দ্বারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছি, তার মাঝে একজন হলেন শাইখ আদিল বিন তাহির আল-মুকবিল। আমার জানামতে বর্তমান দুনিয়ায় সহিহ পন্থায় রুকইয়াহ শারইয়াহ প্রচারে যে ২জনের অবদান সবচেয়ে বেশি, তার একজন হলেন শাইখ আদিল, অন্যজন শাইখ ওয়াহিদ বিন আব্দুস সালাম বালি। আল্লাহ উনাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করুন।
এখানে শাইখ আদিলের মতামত উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি। 
.
উনার মতে শুধুমাত্র ৩টা অবস্থায় গাইরে মাহরামকে স্পর্শ বৈধ হতে পারে-
১. যদি হঠাৎ জিনের রোগি রাক্বিকে আক্রমণ করে বসে। এবং বাধা দেয়ার মত অন্য কিছু না থাকে।
২. যদি জ্বিন রোগির নিজেকে আঘাত করে শারিরীক ক্ষতি করতে লাগে, কিন্তু সাথে থাকা মাহরাম যদি একা জিনকে বাধা দিতে না পারে।
৩. যদি রোগি পাশে বসা মাহরামকে খারাপভাবে আঘাত করতে থাকে বা গলা চিপে ধরে আর সে সরাতে না পারে।
-----
এই হল তিনটি সুরত। রাক্বি যদি চেষ্টা করে, তাহলে এধরনের পরিস্থিতিও এড়াতে পারবে ইনশাআল্লাহ। 
যেমনঃ রুকইয়া চলাকালিন রোগির হাত দ্বারা আঘাত করতে চাইলে হাতের ওপর ফুঁ দিলে বা পানি ছিটিতে দিলে অধিকাংশ সময় দুর্বল হয়ে যায়। অথবা কাছে মোটা শক্ত জায়নামাজ থাকলেও এধরণের পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা যায়।
.
আর রোগীকে ধরে রাখা, রুকইয়ার জন্য রোগীকে বসানো এবং পাশে বসার কিছু পদ্ধতি আছে। এগুলো খেয়াল রাখলে যত ভায়োলেন্ট জিনই হোক, বেশি নড়াচড়া করতে পারে না। রাক্বিদের এই জিনিসগুলো সামনাসামনি দেখে হাতেকলমে শিখে নেয়া উচিত। 
আর হ্যা, তিলাওয়াতের পাশাপাশি গামছা বা রুমাল দ্বারা মৃদু প্রহারে আমরা কোন আপত্তি করি না। আর আল্লাহ চানতো রুকইয়ার চলাকালীন এই সামান্য আঘাতই জ্বিনকে অনেক বেশি কষ্ট দিবে।
.
[ঙ]
আর সবশেষে আমরা রাক্বিদেরকে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস স্মরণ করে আল্লাহকে ভয় করার পরামর্শ দিব-
.
عن معقل بن يسار أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: "لأن يطعن في رأس أحدكم بمخيط من حديد خير له من أن يمس امرأة لا تحل له" رواه الطبراني والبيهقي.
(ভাবার্থ) মা'কাল ইবনে ইয়াসার রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে নারী তোমাদের জন্য হালাল নয়, তাকে স্পর্শ করার চেয়ে তোমাদের কারও মাথায় পেরেক ঠুকে দেয়া বেশি ভালো। 
- তাবারানী; মুজামুল কাবির, সিলসিলাতুস সহীহাহ।
.
আল্লাহ আমাদেরকে সুন্নাহ এবং তাক্বওয়ার ওপর থাকার তাওফিক দিন। সেই কাজ করার তাওফিক দিন যার ওপর তিনি সন্তুষ্ট আছেন। আর সেই কাজগুলো, যা এই উম্মাতের জন্য কল্যাণকর। আর এই উম্মাতের সবচেয়ে মুত্তাকী জামায়াতের সাথে আমাদের হাশর করুন। আমিন।
-------
তারিখ - ২১ জুন ২০২১
Share:

May 27, 2021

রুকইয়াহ বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও আলোচনার কিছু উৎস

রুকইয়াহ বিষয়ে অভিজ্ঞতার গল্প...
------------------ 
সেদিন এক ভাই রাক্বি হেল্পলাইন গ্রুপে একটা প্রশ্ন করছিলেন। প্রশ্নটা এরকম -
"ভাই, রুকইয়া বইয়ে সিহরের ক্ষেত্রে যথা- বিয়ে ভাঙার, সম্পর্ক বিচ্ছেদ, বশ, পাগল বানানো, সহবাসে অক্ষম, গর্ভের সন্তান নষ্টের সিহরের জন্য 'সিহর-মাস' বা 'সিহরের রুকইয়ার' অডিও সাজেস্ট করা হয়নি। এটা কেন করা হয়নি? তাহলে এই অডিওর ফায়দাটা কী? জানালে উপকৃত হব।"
.
উনাকে দেয়া উত্তরটি একটু ঘসামাজা করে শেয়ার করছি:
--------- 
বারবার অথবা প্রতিদিন দীর্ঘ সময় শোনার জন্য ভাঙাভাঙা আয়াতের রুকইয়াহ বেশি উপকারী না। এতে তাৎক্ষণিক ইফেক্ট হলেও দীর্ঘমেয়াদে কিছু সমস্যা হয়, "আয়াত কাস্টমাইজেশন এর ধোকা" প্রবন্ধে কয়েকমাস আগে আলোচনা হয়েছে এবিষয়ে। যদিও কেউ কেউ সেটা পছন্দ করেননি, কিন্তু বাস্তবতা অস্বীকার করে তো লাভ নেই।
তবে হ্যা! সরাসরি রুকইয়াহ করার সুযোগ না পেলে, তখন মাঝেমাঝে এগুলো রুকইয়ার নিয়াত করে শোনা যেতে পারে। আল্লাহ চায়তো ফায়দা হবে।
.
পরের কথা হল, জ্বিন ও জাদুর চিকিৎসা পরবর্তী পরামর্শগুলোর ক্ষেত্রে আমি শাইখ ওয়াহিদ বালির উইকায়াতুল ইনসান (জিন বিষয়ক) এবং আসসারিমুল বাত্তার (জাদু বিষয়ক) এর শেষ সংস্করণ অনুসরণ এর চেষ্টা করেছি।
কারণ সার্বিক বিবেচনায় শাইখকে আমি যথেষ্ট মু'তাদিল এবং মধ্যপন্থী হিসেবে পেয়েছি।
  আপনারাও জানেন উনার জাদু বিষয়ক বইটি (যাদুকরের গলায় ধা...) এই যামানায় রুকইয়াহ বিষয়ে সবচেয়ে মাক্ববুল ও মাশহুর গ্রন্থগুলোর অন্যতম। আর উনার বই থেকে মানুষ প্রায় দীর্ঘদিন যাবত উপকৃত হচ্ছে। 
যতদুর মনে পড়ে, এর প্রথম প্রকাশ ১৪১১হিজরি সনে, আর বাংলাসহ বেশিভাগ অনুবাদ ১৪১৭এর দশম সংস্করণ থেকে হয়েছে, আর সম্ভবত ১৪২৯হিজরি সনে সর্বশেষ (২১তম) সংস্করণ প্রকাশ হয়েছে।
প্রথমতঃ শাইখ এই বইটা নিজের ইলম ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে লিখেছেন তো বটেই, এরপর ১৮বছর যাবত এটা রিভিশন এবং সংস্করণের কাজ করে গেছেন। জ্বিন বিষয়ক আরবি বইটির প্রকাশকাল ১৪০৯হিজরি, অর্থাৎ এখন থেকে অন্তত ৩২বছর আগের। তার মানে এই বইগুলোর প্রতিটা আলোচনার পেছনে উনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ইতিহাস আছে। আর আল্লাহ দুনিয়াব্যাপী এই খিদমত ছড়িয়েও দিয়েছে। এসবও উনার প্রতি আস্থার কারন।
  তো আমি শাইখের যত আলোচনা দেখেছি ও শুনেছি, উনার যে বইগুলো সবসময় পড়েছি, এথেকে শিখেছি উনি দীর্ঘমেয়াদে শোনার জন্য 'সলিড তিলাওয়াত' প্রাধান্য দিয়েছেন। 
যেমন: জ্বিনের রোগির চিকিৎসার পর 'সুরা বাকারা, আলে ইমরান, রা'দ, কাহাফ, আহযাব, মুলক, আ'লা...' ইত্যাদি অনেকগুলো সুরা সপ্তাহে কয়েকবার করে শোনাতে বলেছেন। জাদুর চিকিৎসায় যে যাদুগুলোর সাথে সাধারণত জিনের সংশ্লিষ্টতা থাকে, সেগুলোতে সুরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, জ্বিন.. এর তিলাওয়াত শোনার কথা বলেছেন, এছাড়া 'সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস' এবং 'আয়াতুল কুরসি'র কথাও বারবার বলেছেন।
বিভিন্ন রোগীদের তিলাওয়াত করতে যখন বলেছেন, তখন কিছু কিছু পূর্ণ সুরা দিনের বিভিন্ন সময়ে পড়তে বলেছেন।
সারকথা হল, আমি জাদু ও জ্বিন সংক্রান্ত বিষয়গুলোর অধিকাংশ তাত্বিক ক্ষেত্রে শাইখ ওয়াহিদ বিন আব্দুস সালাম বালিকে অনুসরণীয় হিসেবে নিয়েছি। আর এধরণের সাজেশন দেয়া আমি উনার থেকেই শিখেছি।
এর বাহিরে উস্তায মুহাম্মাদ তিম হাম্বলের থেকেও পারিপার্শ্বিক অনেক বিষয় শিখেছি, উনি সবসময়ই মাসনুন রুকইয়ার প্রতি অধিক গুরুত্ব দেন।
শেষ কথা হল, ভাই আমি তো দাঈ! অমুক-তমুক ভাইদের মত আমার নিত্যনতুন রুকইয়ার তরিকা আবিষ্কারের দরকার নেই। কারও সাথে পাল্লা দেয়ারও কোনো প্রয়োজন নেই।। 
আমি জানি সুস্থতা কেবল আল্লাহই দেন, আর দ্বীনের ওপর অবিচল থেকে কোরআন, সুন্নাহ এবং পূর্বসূরিদের কাজগুলো প্রচার করে যেতে পারলেই নিজেকে সফল মনে করব। 
আল্লাহ যেন আমাদের হিদায়াতের ওপর থাকার তাওফিক দেন, ইলম ও আমলে বরকত দেন। আমিন।

[খ] (27-May-2021)
রুকইয়াহ বই, রুকইয়াহ শারইয়াহ সিরিজ এবং অন্যান্য আলোচনার উৎস
---------
আমাদের হেদায়া সানির উস্তায মাওলানা আব্দুল হালিম সাহেব হুজুর এরকম একটা কথা বলেছিলেন। 
"অনেক মানুষের ইলম কবুল না হওয়ার পেছনে কারন হল, কারও কথা কোট করে নাম না বলা, এমন ভাবে বলে যাওয়া যেন নিজেরই কথা এটা। মোটকথা, কার্টেসি দেয়া ইলমের আদব।"
 আলহামদুলিল্লাহ, এই কার্টেসি দেয়ার আদব বজায় রাখি শুরু থেকেই। 
যারা ২০১৬ থেকে আমার লেখাগুলো পড়ছেন তারা জানেন, আমার কোন সিরিজ, কোন প্রবন্ধ কি অনুসরণ করে লেখা, কোনো লেকচারের খোলাসা, কোন দরসের অনুলিপি, কোন প্রবন্ধের পরিমার্জিত রুপ এটা সবসময়ই ক্লিয়ারলি বলে দেই। একদম শুরুতে যখন বাংলা ভাষায় রুকইয়া বিষয়ক কন্টেন্ট খুবই অপ্রতুল ছিল, সেসময় মুফতি জুনায়েদের আলোচনা থেকে শুরু, তখন থেকে। ইভেন ইয়েমেনের শায়খ ইলিয়াস ফয়সালকে এখনও কজন চিনে?  তার মেসেজ অনুবাদ করে পোস্ট করলে সেটাও বলে দিই।
রুকইয়াহ সিরিজের পাশাপাশি বইয়ের ভুমিকাতেও বলে দিয়েছি উৎসগুলো, বইয়ের শেষে শায়খ ওয়াহিদ বালির বইয়ের নাম দিয়ে পড়তে রিকোমেন্ডও করেছি। 
(নিচে দেয়া লিংক ও স্ক্রিনশটগুলো দ্রষ্টব্য)
তাফসিরে ইবনে কাসির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, মিশকাতুল মাসাবিহ, শরহে বেকায়া, শরহে জামি, হেদায়া, জামিউল উলুমি ওয়াল হিকাম- এসব মাস্টারপিস কাজও অতীতের অন্যদের কাজের ওপর বেজ করে করা।
আমি সিনিয়রদের ইত্তিবা করব, তাদের ইলমের ওপর নতুন কাজ করব, এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। আমি যদি সব নিজের উদ্ভাবিত ফর্মূলা আর দু'দিনের অভিজ্ঞতার গল্প লিখে মানুষকে অনুসরণ করতে বলতাম, সেটাই বরং ঝুঁকির কথা ছিল।
 ইনশাআল্লাহ বড়দের কাজের ওপর আগামীতে আরও অনেক ভালো কাজ হবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দিন। আমিন।

Share:

April 2, 2021

রুকইয়াহ (ও ম্যালপ্রাক্টিস) নিয়ে কিছু কথা না বললেই না

রুকইয়াহ নিয়ে কিছু কথা না বললেই না ..

১. কোরআন হাদিসে জিন-জাদু-নজরের কথা আছে, আপনার জন্য জিন বা জাদুর অস্তিত্বে বিশ্বাস করা জরুরি।
কিন্তু এখন আমি যখন বলি, "অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক সমস্যা- নজরের জন্য হয়" "স্বপ্নে হাতি দেখার মানে হল আপনি মুরগির গ্রিল খাবেন" এটা আপনার জন্য বিশ্বাস করা জরুরি নয়। আপনার বিশ্বাস না করার পেছনে অনেক কারণই থাকতে পারে, কিন্তু এজন্য আপনাকে আক্রমণ করার শরঈ অধিকার আমার নাই।
আমার 'মনে হওয়া' বা 'ইউটিউবে শেখা' বিষয়ে দ্বিমত করার কারণে গ্যাং নিয়ে কারও পোষ্টে ঝাঁপিয়ে পড়া নিরেট ছোটলোকি। মুসলিম দুরের কথা, ভদ্র কোনো মানুষ থেকে এমনটা আশা করে না কেউ।  
২. লক্ষনভিত্তিক চিকিৎসাগুলোতে ডায়াগনোসিসে ভুল হওয়াটা অস্বাভাবিক না। আপনি কয়েকজন সিনিয়র হোমিপ্যাথের সাথে আলোচনা করেন, ভুরিভুরি উদাহরণ পাবেন। ইভেন আল্ট্রাসনো - এক্সরে করে আক্রান্ত অঙ্গের ছবি দেখার পরেও ট্র্যাডিশনাল মেডিসিনের ডাক্তারদের ভুল হয়। এটা হতেই পারে। সেখানে জিন-জাদুর মত অদৃশ্য বিষয়ে কবিরাজ-গনকদের মত খুঁটিনাটি মন্তব্য করা, আর অন্য কারও ভিন্ন মন্তব্য পেলে হাটেবাজারে গালাগাল করে বেড়ানো খুবই বাজে ব্যাপার।
এটা কারও ভালো ভবিষ্যতের ইংগিত না।
৩. আমাদের আকিদার উস্তায বলেছিলেন - ধরো! তুমি একটা গাছে নিচে বসে আছো, দূর থেকে দেখতে পেলে একটা গরু তোমার দিকে আসছে, কিছুটা কাছে আসার পর মনে হল না! এটা তো মহিষ, আরও কাছে আসার পর মনে হল- নারে! এটা তো মানুষ, ওই পাড়ার দোকানদার, আরও কাছে আসার পর বুঝা গেল নাহ! এটা তোমাদের এলাকার চৌকিদার সাহেব। তো এই যে চৌকিদারকে দোকানদার ভেবেছো, এটা ক্ষমাযোগ্য তাবিল। এর আগেরগুলা সীমার বাহিরের "তাহরিফ"। 
নবিজি সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগীর বুকে বা পিঠে সামান্য আঘাত করে জিনকে বের হয়ে যেতে বলেছেন - এর দ্বারা আপনি যদি মনে করে আপনি রোগীর ওপর যেমন খুশি পিটানোর অধিকার পেয়ে গেছেন, শরীরের প্রতিটা ইঞ্চি খুঁচিয়ে ঝাঁজরা বানানোর অধিকার পেয়েছেন, তাহলে আপনার কাজকে আমি গবেষণা বলতে পারছি না দুঃখিত। এটা শয়তানি। আপনার তওবা করা উচিত। 
এই মুহুর্ত থেকে কোরআন হাদিসের ব্যাপারে এমন মন্তব্য করা থেকে বিরত হওয়া উচিত, যা আপনার আগে আকাবির-আসালাফের কেউ করেনি।
৪. নিজের ব্যাপারে নিজেই (বা নিজের লোক দিয়ে) দেশ সেরা রাক্বি, দুনিয়ার মাঝে অন্যতম সেরা রাক্বি টাইপের কথাবার্তা প্রচার করা কেমন যেন বিষয়। অরুচিকর।
৫. কিছু ভাই রুকইয়ার সময় এই পরিমাণ টর্চার করেন, মানুষ আতংকিত হয়ে রুকইয়াহ করা ছেড়ে দেয়। আর ভাবতে শুরু করে এই মারধোরই বোধহয় রুকইয়াহ! কেউ কেউ পূর্বে যা করেছে, আবার সেসবেই ফিরে যায়। 
এই বিষয়গুলো আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। এসব বন্ধ না হলে অনেক খারাপ কিছু হতে পারে। আল্লাহ এই ভাইদের হিদায়াত দিক, নইলে এই রাস্তাকে উনাদের থেকে পবিত্র করুন। আমিন।
Share:

May 28, 2020

ফোনে বা অনলাইনে রুকইয়াহ করা

নতুন একটা ট্রেন্ড হচ্ছে, ফোনে বা অনলাইনে রুকইয়াহ করে দেয়া।

প্রথম কথা হল, এভাবে পুরোপুরি রুকইয়ার হক্ব আদায় করা সম্ভব না। এতে অনেক ধরনের সিচুয়েশন তৈরি হতে পারে, যেখানে রোগীর পরিবারের কিছু করার থাকবে না। উপরন্তু যদি এভাবে রুকইয়া করাটাকেই পেশা বানিয়ে নেয়া হয়, তবে বিষয়টা অনেক খারাপের দিকে মোড় নিতে পারে। বিশেষতঃ অনলাইনের প্রতারকরা এথেকে ফায়দা লুটতে পারে। আর ইতিমধ্যে  লুটেছেও...।

দ্বিতীয়তঃ সালাফি আলেমদের মতে এভাবে রুকইয়াহ করা বিদআত। দেশ ও বিদেশের একাধিক আলেমকে আমি এমন ফাতওয়া দিতে শুনেছি। অথচ এখানে সালাফি/আহলে হাদিস রাক্বিরাই অহরহ ফোনে রুকইয়াহ করছে, ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন করছে। ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে হঠাৎ একটু তিলাওয়াত করেছে— এমন না, বরং ফোনে/অনলাইনেই প্রফেশনালি ঝাড়ফুঁক করছে!!
কামাই-রোজগারের জন্য নিজের আদর্শের সাথেই সৎ না থাকলে কিভাবে হবে ভাই?
....

শেষ কথাঃ আমি মোটাদাগে বিদআত না বললেও এমন বলব, এতে স্পষ্টতই বেশ কিছু খারাপি আছে, অনেক ফিতনা আর বিপদের সম্ভাবনাও আছে, তাই এথেকে দূরে থাকতে পারলেই সবচেয়ে ভাল হয়। 

একটা কথা মনে রাখবেন ভাই, আপনি জায়েজের সীমার মধ্যে যতই থাকেন না কেন, রাসূলের সুন্নাহ থেকে যতই দূরে সরবেন, ততই নতুন নতুন সমস্যা বের হবে। আপনি হয়তো ভাববেন এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু না! এটা সুন্নাহ থেকে দূরে সরার নগদ প্রতিক্রিয়া, অথচ আপনি টের পাচ্ছেন না।

* এর নিরাপদ বিকল্প কি হতে পারে?
- রোগীর পরিবারের কেউ রোগীর কাছে বসে কোরআন বা দোয়া পড়বে, অথবা রুকইয়ার রেকর্ড শোনাবে। আর রাক্বি ফোনে বা অনলাইনে থেকে তাকে গাইড করবে।

وما علينا الا البلاغ

-----
Share:

May 27, 2020

জিন-জাদুর সমস্যা হলে হীনমন্যতায় ভুগবেন না

হাদিসটি খেয়াল করুন -

 খালিদ ইবনু ওলীদ রা. রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি ঘুমের মধ্যে ভয় পাই!!
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি এই দু‘আ পাঠ করঃ 
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ
আমি আল্লাহ্‌র ক্রোধ ও আযাব হতে, তার বান্দাগণের উপদ্রব হতে, শয়তানের প্ররোচনা হতে এবং আমার নিকট শয়তানের আগমন হতে আল্লাহ্‌র পূর্ণ কলেমাসমূহের আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (মুয়াত্তা মালিক)

---------
খেয়াল করেন ভাই, খালিদ ইবনু ওয়ালিদ রাযিল্লাহু আনহুর মত একজন বীর পুরুষ, তিনি অভিযোগ করছেন ভয় পাওয়ার ব্যাপারে!! এরপর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচার দোয়া শিখিয়ে দিলেন।
 আমরা কি শিখলাম এথেকে?

১. বাইরের দুনিয়ায় আপনি যেই হোন না যেন, স্প্রিচ্যুয়াল সেফটির জন্য আপনাকে অবশ্যই হিফাজতের আমল ও যিকরের প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত।। 

২. কারও এসব সমস্যা হলেই তাচ্ছিল্য করবেন না খবরদার! পারলে আপনার সাধ্য অনুযায়ী হেল্প করুন। হতে পারে আল্লাহর কাছে আপনার চেয়ে সে অধিক প্রিয়, এই বিপদে তার গুনাহখাতা সাফ হয়ে গেছে, আর আখিরাতে আপনার জন্য সুপারিশ করবে।।

৩. জ্বিন-জাদুর সমস্যা যে কারও হতে পারে, এজন্য হীনমন্যতায় ভোগার কিছু নেই। এব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কেউ যদি আপনাকে হেল্প করতে পারে, তবে তার সাথে আপনার সমস্যা শেয়ার করা উচিত।

----
Share:

May 13, 2020

নিদ্রাহীনতা এবং ঘুম সংক্রান্ত সমস্যায় করণীয়

[ক]
প্রতিদিন ঘুমের সময় কিছু কাজ সবারই করা উচিত। কোন সমস্যা থাকুক অথবা না থাকুক, সবারই...
১. ওযু করে বিছানায় যাওয়া।
২. শোয়ার পূর্বে বিছানা ৩বার ঝেড়ে নেয়া।
৩. ডান কাত হয়ে শোয়া, পরে অন্য দিকে ঘোরা যাবে। গালের নিচে হাত রাখা।
৪. আয়াতুল কুরসি এবং বাকারার শেষ ২ আয়াত পড়া
৫. সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস পড়া এবং হাতে ফুঁ দিয়ে শরীর মুছে নেয়া। এভাবে ৩বার করা।
৬. ঘুমের দোয়া পড়া, বিশেষতঃ বিসমিকা – আল্লাহুম্মা… এবং  বিসমিকা রব্বী… দোয়া দুইটি
৭. সুবহানাল্লাহ ৩৩বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩বার, আল্লাহু আকবার ৩৪বার পড়া। 
.
* সম্ভব হলে এসময়ের আরও অন্যান্য মাসনুন যিকর করা। 
* প্রতি রাতে সুরা মূলক তিলাওয়াত এর চেষ্টা করা। 
(ঘুমের আগের যিকরগুলো একত্রে পাওয়া যাবে হিসনুল মুসলিম বই এবং আমাদের “মাসনুন আমল” অ্যাপে। লিংক কমেন্টে দেয়া হল।)
.
[খ]
যাদের নিদ্রাহীনতার সমস্যা আছে, রাতে ঠিকমত ঘুম আসে না, এপাশ ওপাশ করে রাত কেটে যায়, তাদের জন্য কিছু টিপস এবং রুকইয়াহ –

১. ওপরের কাজ এবং যিকরগুলো করুন।
২. সুরা কাহফ; আয়াত ১১, ত্বহা; আয়াত ১০৮, নাবা; আয়াত ৯ -  সবগুলো তিনবার/সাতবার পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে মাথা থেকে পুরো শরীর (স্বাভাবিকভাবে যতদূর হাত যায়) মাসাহ করুন, পানিতে ফুঁক দিয়ে পান করুন। এভাবে লাগাতার সপ্তাহখানেক করুন। ইনশাআল্লাহ সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে।
৩. চাই প্রতি রাতে যায়দ বিন সাবিত রা. এর দোয়াটা পড়তে পারেন। (আল্লাহুম্মা গারাতিন নুজুম…)

اللهُمَّ غارَتِ النجومُ ، وهَدَأتِ العُيونُ ، وأَنْتَ حَيٌّ قَيُّومٌ ، يا حَيُّ يا قَيُّومُ ! أَنِمْ عَيْنِي ، وأَهْدِئْ لَيْلِي
৪. এরপরেও সমস্যা থাকলে ঘুমের আগে সুরা বাকারা অথবা ৮সুরার রুকইয়াহ শুনুন। প্রতিদিন রুকইয়ার গোসল করুন।
.
(এই অংশটি শাইখ হাসান বিন ইলিয়াসের মেসেজ অবলম্বনে..।)
.
[গ]
অতিরিক্ত ঘুমের ক্ষেত্রে
সারাদিন ঘুমঘুম লাগা নজরের সমস্যার জন্য হতে পারে, আগে সেজন্য কয়েকদিন রুকইয়াহ করা উচিত। 
আর এই দোয়াটা সাহাবা ও তাবীঈদের কেউ কেউ পড়তেন, চাইলে প্রতিদিন দোয়া করার সময় এটা পড়তে পারেন –
اَللَّهُمَّ اشْفِنِيْ مِنَ النَّوْمِ بِالْيَسِيْرٍ ، وَارْزُقْنِيْ سَهرًا فِي طَاعَتِكَ
ভাবার্থ- হে আল্লাহ, অল্প ঘুমের দ্বারাই আমার সুস্থ (তৃপ্ত) করো, আর তোমার ইবাদাত করে রাত্রি জাগরণের তাওফিক দাও।  
(সিয়ারু আলামিন নুবালা এবং হিলয়াতুল আউলিয়ায় একাধিক বর্ণনা আছে এটার ব্যাপারে)

[ঘ]
ঘুমের সময় জ্বিন সেক্সুয়াল হ্যারাশমেন্ট করলে বা ফিজিক্যাল টর্চার করলে “রাত্রিতে জ্বিনের সমস্যা” লেখাটা ফলো করুন। লিংক কমেন্টে দেয়া হবে। 
এক্ষেত্রে সমস্যা বেশি হলে, স্থায়ী আরোগ্যের জন্য গুরুত্বের সাথে সময় নিয়ে রুকইয়াহ করে যেতে হবে।
.
আল্লাহ আমাদের পেরেশানি দূর করে দিক, প্রশান্তির ঘুম এনে দিক।। আমিন।

------------------
ফুটনোট:
*মাসনুন আমল অ্যাপ - https://bit.ly/masnun-app
*ওয়েব ভার্শন - ruqyahbd.org/dua
* রাত্রীতে জ্বিনের (সেক্সুয়াল/ফিজিক্যাল টর্চার) সমস্যা- https://facebook.com/ruqyahbd.official/posts/577466732659704
Share:

April 25, 2020

রোজার দিনে রুকইয়ার ব্যাপারে ১০ টিপস...

রোজার মধ্যে সময় - সুযোগ আর বরকতের জন্য অনেকেই রুকইয়াহ করেন। যেহেতু বড় বড় শয়তান এই সময় বন্দি থাকে, প্রতিদিন দোয়া কবুল হয় - তাই রুকইয়াহ করে উপকারও বেশি হয়। 
এই সময়ে কিছু টিপস খেয়াল রাখলে ইনশাআল্লাহ আমরা বেশি ফায়দা পাব...

১. তিলাওয়াত শোনার চেয়ে নিজে বেশি তিলাওয়াত করার চেষ্টা করুন।
সুন্নাহ হিসেবে নিয়মিত তিলাওয়াত করে কোরআন খতম দেয়ার চেষ্টা তো করবেনই। এর বাইরে রুকইয়ার জন্য নির্দিষ্ট আয়াত বা সুরাগুলোও সময় নিয়ে পড়বেন।

২. রোজার শুরুর দিকে ভারি / কঠিন রুটিনের রুকইয়াহগুলো করার চেষ্টা করুন। যাতে শেষ দশকে দোয়া এবং ইবাদাতে বেশি সময় দিতে পারেন। তখন রুকইয়াহ কমিয়ে অল্প করলেও হয়ে যায়।
সম্ভব হলে শুরুতেই ৭দিনের ডিটক্স রুকইয়াহ করে ফেলুন। ডিটক্সের সাথে সাথে বেশি করে তিলাওয়াত। এরপর সহজ কোন নিয়ম শুরু করলেন।

৩. অন্য সময় রুকইয়ার পানি যেটা সকালে খেতেন, ওইটা সাহরির পরে খাবেন। আর রাতেরটা মাগরিব অথবা এশার পরে। ইনশাআল্লাহ যথেষ্ট হবে। 

৪. অনেক বেশি বেশি দোয়া করুন। অনেক বেশি। প্রয়োজনীয় বিষয়ের জন্য বারবার দোয়া করতে থাকুন। দোয়ার পাশাপাশি এসময়ে দরুদ এবং ইস্তিগফারের পরিমাণ বাড়ানোও জরুরি।
চাইতে থাকুন। কল্যাণ থাকলে অবশ্যই আল্লাহ দিয়ে দিবে।

৫. যাদের জটিল বা পূরানো শারিরীক রোগব্যাধি আছে, বাচ্চা শিশুর সমস্যা আছে। তারাও এই সময়টাকে কাজে লাগাতে পারেন। অন্য যেকোনো সময়ের চাইতে এই মাসে কোরআনের প্রভাব বেশি দেখা যায়।

৬. যারা বিভিন্ন গুনাহের আসক্তিতে পড়েছেন। তাদের জন্য এই মাসে প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা বেশি জরুরী। পর্ণগ্রাফি এডিকশন থেকে মুক্তির জন্য বেশি বেশি সুরা নূর আর বাক্বারা তিলাওয়াত করা এবং শোনা উপকারী। এছাড়া "রুকইয়াহ যিনা" এর আয়াতগুলোও পড়া যায়।
চাইলে এসব তিলাওয়াতের পর পানিতে ফুঁ দিয়ে রাখতে পারেন। সন্ধ্যার পর এবং ভোরে কুপ্রবৃত্তি দমনের নিয়াতে, আসক্তি থেকে মুক্তির নিয়াতে পান করলেন।

৭. ওয়াসওয়াসা সমস্যা থাকলে সেটা তাড়ানোর জন্য প্ল্যান হাতে নিন। সমস্যা কম থাকলে ওয়াসওয়াসা সমস্যার প্রাথমিক পরামর্শগুলো ৭-৭দিন, আর বেশি থাকলে ওগুলোর পাশাপাশি প্রতিদিন সুরা বাকারা পুরাটা শুনবেন / পড়বেন। ইনশাআল্লাহ দুই সপ্তাহ পর বিরাট চেঞ্জ চলে আসবে।

(প্রয়োজনীয় লিংক কমেন্টে দেয়া হল)

৮. নিয়মিত দান-সাদকাহ দিতে চেষ্টা করুন। যাকাতের হিসাব থাকলে পরিশোধ করে ফেলুন। হাদিসে আছে, তোমাদের সম্পদের হিফাজত করো যাকাতের মাধ্যমে, আর রোগের চিকিৎসা করো সাদকার মাধ্যমে।

৯. সাধ্যের অতিরিক্ত চাপ নেবেন না। এমন কিছু করতে যাবেন না, যাতে কদিন পর বাকি সবকিছুর দম ফুরিয়ে যাওয়ার ভয় হয়। যতটুকু ইবাদত সাধ্যে কুলাবে, অল্প হলেও নিয়মিত করতে থাকুন।
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হল স্থায়ী আমলগুলো, যদিও এর পরিমাণ অল্প হয়। (বুখারি)

১০. রুকইয়াহ করতে থাকলে রোজার মাস শেষ হওয়ার সাথে সাথেই বাদ দিয়ে দিবেন না। সুস্থতাকে স্থায়ী করতে দীর্ঘদিন রুকইয়াহ এবং সর্বদা হিফাজতের আমল চালিয়ে যান।

বোনাস টিপস: রাতে বিছানায় শুয়ে সুবহানাল্লাহ ৩৩বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩বার, আল্লাহু আকবার ৩৪বার পড়তে পারেন। তাহলে একেতো অনেকগুলো সওয়াব হবে, এরপর সারাদিনের বাকি কাজকর্ম সহজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। 

আল্লাহ এই রমাযান মাস থেকে আমাদের সর্বোচ্চ উপকৃত হওয়ার তাওফিক দিন। সঠিকভাবে সবগুলো রোজা সমাপ্ত করার তাওফিক দিন। আমিন।
Share:

April 23, 2020

ইউটিউব থেকে ইচ্ছামত রুকইয়াহ শোনার ব্যাপারে সতর্ক হোন

(লেখাটা অনেক পুরনো, খুঁজে পাওয়ার কারণে ঘষামাজা করে আবার শেয়ার করা হল।)
--------
ইউটিউব থেকে ইচ্ছামত যেকোন রুকইয়াহ শুনবেন না। এতে অনেকরকমের সমস্যা হতে পারে।
ইউটিউবে যেমন রুকইয়াহ শারইয়্যাহ আছে, তেমন কুফরি-শিরকি রুকইয়াও আছে। সেগুলো শুনে আপনার উপকারের বদলে আরও ক্ষতি হবে। আপনি কান দিয়ে যা শুনছেন, চোখ দিয়ে যা দেখছেন, এর প্রভাব আপনার ওপর পড়ছে, সুতরাং খারাপ কোন জিনিস স্প্রিচ্যুয়াল ট্রিটমেন্ট ভেবে শোনার কারণে আপনার ঈমান-আমল ওপরেও এর বাজে প্রভাব পড়বে।
এরপর সাউন্ড ইফেক্ট, ইকো, হ্যানত্যান দিয়ে, এডিট করে চকচকে বানানো এমন কিছু রেকর্ড-ও আছে, যেসব আদতে বিশুদ্ধ কোরআন তিলাওয়াতের ব্যাপারে আপনার রুচি নষ্ট করে দিবে। পরে ইফেক্ট ছাড়া তারতীল - তাজবিদের সাথে তিলাওয়াত শুনলে আর ভাল লাগবে না।
কিছু ভিডিওর ওপর গাইরে মাহরামের ছবি দিয়ে ভিউয়ার বাড়ানো হয়েছে, যতক্ষণ সেদিকে তাকাবেন, আপনার গুনাহ হতে থাকবে। অনেকে তো কোরআন তিলাওয়াত এর সাথে হারাম এড দিয়ে ইনকামও করছে।
এগুলো ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত।
আবার কিছু এমন অডিও বা অডিওর কাটপিস আছে, যেগুলো আসলে নরমাল কোরআন তিলাওয়াত, একটা আকর্ষণীয় রুকইয়াহ - আমল রিলেটেড নাম দিয়ে রেখেছে। যাতে মানুষ বেশি দেখে। হয়তো ঘন্টার পর ঘন্টা সেই অডিও না শুনে যদি নিয়মতান্ত্রিকভাবে কিছুক্ষণ রুকইয়াহ করতেন, সেটাই বেশি ফায়দা হত।
.
বেশ আগের একটা ঘটনা, তখনও সম্ভবত আমাদের গ্রুপের ওয়েবসাইট - ইউটিউব চ্যানেল কিছুই হয়নি। অন্য ব্লগ - সাইটের লিংক দেয়া হত। একবার একজন ইনবক্সে জানালো রুকইয়াহ শুনে উপকার পেয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ ভাল কথা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোনটা শুনেছিলেন? দুইটা লিংক দিল। লিংকে (ইউটিউবে) গিয়ে দেখলাম সাদ আল গামিদির রুকইয়াহ। আচ্ছা। একই চ্যানেলের আরেকটা ভিডিও সাজেশনে আসলো। প্লে করলাম..
বিসমিল্লাহ বলে শুরু করলো, এরপর কি কি সব দুয়া বলছে, ব্যকগ্রাউন্ডে ইউটিউব চলছিলো। উচ্চারণ শুনেই কেমন লাগলো। আমি আবার শুরু থেকে প্লে করলাম.. দেখি সর্বনাশ! "আলীর কাছে সাহায্য চাচ্ছে.. ইমামতের ওসিলা দিয়ে! বেলায়েতের ওসিলা দিয়ে!!" কি আর বলব, শিয়াদের শিরকি কাজকারবার।
আমি বেশ অবাক হলাম, শিয়া কাফেরগুলাও রুকইয়া করে?
.
আরেকটা ঘটনা, ২০১৭তে প্রথম রুকইয়াহ সিরিজ চলাবস্থায় এক সিস্টার আমার পোস্টে কমেন্ট করলেন, উনারা স্বামীস্ত্রী একসাথে ইউটিউবে রুকইয়াহ শুনছিলেন.. হঠাৎ কি হলো! দুজন একজন আরেকজনের প্রতি চরম বিরক্তি ফিল করতে লাগলেন। কিছুক্ষণ এই অবস্থা ছিলো। এরপর উনারা কিছুক্ষণ সুরা ফালাক নাস পড়লে আলহামদুলিল্লাহ অবস্থা স্বাভাবিক হয়।
তাই নিজে কি শুনছেন, পরিবারকে কি শোনাচ্ছেন, এব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।
.
শেষে আবারও বলছি, আপনাদের জন্য জোরালো পরামর্শ থাকবে.. আরবি না বুঝলে ইচ্ছামত যেকোনো রুকইয়াহ শুনবেন না। ইউটিউবের শিরোনাম দেখেই মুগ্ধ হয়ে কোন অডিওকে মহৌষধ ভাববেন না। একটু কষ্ট করে বিষয়টা নিয়ে পড়াশোনা করুন, প্রয়োজনে অভিজ্ঞদের কাছে জিজ্ঞেস করুন। আলেমদের দেখিয়ে যাচাই করুন। এরপর আমল করুন।
মনে রাখবেন, বড় সফলতার জন্য সাধারণত কোন শর্টকাট থাকে না। আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন। আমিন।

(প্রাসঙ্গিক কিছু লিংক কমেন্টে দেয়া হল)
-----------------
1. audio bisoye
https://facebook.com/ruqyahbd.official/posts/579365399136504  
2. apottir bepare
https://facebook.com/ruqyahbd.official/posts/578141232592254
3. শোনার চেয়ে পড়া ভালো 
https://facebook.com/ruqyahbd.official/posts/576958812710496
4. রুকইয়াহ গ্রুপের ইউটিউব চ্যানেল -
http://www.youtube.com/ruqyahbd
5. অডিও ডাউনলোড -
ruqyahbd.org/download
Share:

August 12, 2019

চার ধরণের রুকইয়াহ

[ক]
শাইখ খালিদ হিবশি হাফিযাহুল্লাহু বলেছেন, রুকইয়াহ ৪ প্রকার-
১. রুকইয়াহ শারইয়াহ
২. রুকইয়াতুল মুবাহাহ
৩. রুকইয়াতুল মাকরূহা
৪. রুকইয়াতুল মুহাররামা

- মিনাসসাতুয যাদি, রুকইয়াহ শারইয়াহ; আহকাম ওয়া তাওজিহাত কোর্স, অধ্যায় ১, পর্ব ৭
(দরসের ইউটিউব লিংক কমেন্টে)
--------------------

[খ]
সংক্ষিপ্ত পরিচয়-
১. রুকইয়াতুশ শারইয়াহ
- রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা জিবরীল আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত দোয়া ইত্যাদি দ্বারা রুকইয়াহ করা। (রুকইয়াহ বইয়ে আমরা যেটাকে মাসনুন বলেছি)
২. রুকইয়াতুল মুবাহাহ (জায়েজ রুকইয়াহ)
- উলামায়ে কিরামের বর্ণিত সেই ৪ শর্ত অনুযায়ী বৈধ রুকইয়াহ। সিহরের আয়াত, নজরের আয়াত, শিফার আয়াত- এমন বিভিন্ন ক্যাটাগরির আয়াত তিলাওয়াত করে রুকইয়াহ করাও এর মাঝে অন্তর্ভুক্ত।
৩. রুকইয়াতুল মাকরূহাহ (অপছন্দিয় বা মাকরুহ রুকইয়াহ)
- জাদুকর তান্ত্রিকদের সাথে, কিংবা কাফির এক্সোরসিস্টদের ঝাড়ফুঁকের সাথে যেসব ঝাড়ফুঁকের কার্যাবলি সাদৃশ্য রাখে, অথবা যেসব রুকইয়ার মাঝে উদ্ভট কার্যাবলী সম্পৃক্ত থাকে।
৪. রুকইয়াতুল মুহাররামাহ (নিষিদ্ধ বা হারাম রুকইয়াহ)
- অন্যান্য হারাম-কুফর-শিরক মিশ্রিত নিষিদ্ধ রুকইয়াহ।

[গ]
আমাদের করণীয়: আমরা চেষ্টা করব রুকইয়াহ শারইয়াহ অর্থাৎ মাসনুন রুকইয়ার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকতে। অপারগ হলে বা বিশেষ প্রয়োজনে জায়েজ রুকইয়াও অনুসরণ করব। কিন্তু এরচেয়ে নিচে কখনওই নামবো না। যারা অপছন্দনিয় বা নিষিদ্ধ পদ্ধতি অনুসরণ করবে, প্রোমোট করবে, বৈধ এবং অবৈধ রুকইয়ার  মিশ্রণ ঘটাবে। তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখবো। এমন কোন কাজ করব না, যাতে তাদের প্রচার-প্রসার ঘটে।
.
উল্লেখ্য, ইসলাম কিউএর মত মিনাসসাতুয যাদি-ও একটি অসাধারণ ওয়েবসাইট। যেখানে শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহু তা’আলা ওয়া ফাক্কাল্লাহু আসরাহু) প্রধান দিক নির্দেশক ছিলেন। এখানে আরবি ভাষায় দ্বীনি ইলমের বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন শাইখের উন্মুক্ত-অবমুক্ত কোর্স রয়েছে। উপরোক্ত কোর্সের লিংকও কমেন্টে দেয়া হল।

-----------------------------
সংযুক্তি-
১. দরস (১/৭): https://www.youtube.com/watch?v=ctB9TQlGpLg&list=PL57pTpJnA2Q489J2T8wSY7W0RttK7ddwj&index=10
২. কোর্সের লিংক- https://zadi.net/courses/o6txhjXtqCxrJsPBX

Share:

August 6, 2019

মুখতাসার রুকইয়াহ শারইয়্যাহ!


মুখতাসার রুকইয়াহ শারইয়্যাহ!
- আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

. অবতরণিকা-

রুকইয়া শারইয়াহ বিষয়ে অনেক লম্বা চওড়া লেখা আছে, ইতোমধ্যে আমাদের রুকইয়াহ শারইয়াহ সিরিজও শেষ। আল্লাহর অনুগ্রহে “রুকইয়াহ” (আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ) নামে একটি বইও প্রকাশ হয়েছে। এসব যায়গায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আজ আমরা সংক্ষেপে রুকইয়াহ পরিচিতি এবং বিভিন্ন সমস্যার জন্য রুকইয়াহ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো। বলতে পারেন এই লেখাটি অতীত ও ভবিষ্যতের পুরো রুকইয়াহ সিরিজের সারাংশ।
প্রবন্ধটির প্রথম সংস্করণ ১৭ই জুন ২০১৭তে প্রকাশ হয়েছিল। এরপর অনেক কিছু সংশোধন এবং সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। এটি পঞ্চম সংস্করণ। এখানে আরও কিছু যোগ করার পরামর্শ থাকলে জানাবেন, আর কোনো পুস্তক-পত্রিকা অথবা ফেসবুকের বাহিরে অন্য কোথাও প্রকাশ করতে চাইলে অনুগ্রহ করে অনুমতি নিবেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিফাজত করুন। আমীন!

. প্রাথমিক ধারণা-

রুকইয়া, রুকইয়াহ, রুকিয়া, রুকিয়াহ, রুকাইয়া সহ বিভিন্ন উচ্চারণ প্রচলিত রয়েছে, যার মূল হচ্ছে আরবি শব্দ (رقية) আর শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ রুকইয়াহ অথবা রুকইয়া।

রুকইয়াহ কী? - রুকইয়াহ অর্থ ঝাড়ফুঁক করা, মন্ত্র পড়া, তাবিজ-কবচ, মাদুলি ইত্যাদি। আর রুকইয়াহ শারইয়্যাহ () মানে শরিয়াত সম্মত রুকইয়াহ, কোরআনের আয়াত অথবা হাদিসে বর্ণিত দোয়া দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা। তবে স্বাভাবিকভাবে ‘রুকইয়া’ শব্দটি দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা বুঝায়। এই ঝাড়ফুঁক সরাসরি কারো ওপর হতে পারে, অথবা কোনো পানি বা খাদ্যের ওপর করে সেটা খাওয়া অথবা ব্যাবহার করা হতে পারে। এক্ষেত্রে রুকইয়ার পানি, অথবা রুকইয়ার গোসল ইত্যাদি পরিভাষা ব্যবহার হয়। আর সবগুলোই সালাফে সালেহিন থেকে বর্নিত আছে।

রুকইয়ার বিধানঃ রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “রুকইয়াতে যদি শিরক না থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৫৪৪)

বিশুদ্ধ আক্বিদাঃ উলামায়ে কিরামের মতে রুকইয়া করার পূর্বে এই আক্বিদা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া উচিত ‘রুকইয়া বা ঝাড়ফুঁকের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই, সব ক্ষমতা আল্লাহ তা’আলার, আল্লাহ চাইলে শিফা হবে, নইলে নয়।’

ফিক্বহী বিধানঃ ফক্বিহদের মতে রুকইয়াহ বৈধ হওয়ার জন্য৪ শর্ত পূরণ হওয়া আবশ্যক, যথা-

  1. 1.      এতে কোন শিরক বা কুফরির সংমিশ্রণ না থাকা।
  2. 2.      ঝাড়ফুঁকের নিজের কোন সক্ষমতা আছে; এমন কোন বিশ্বাস না রাখা। বরং বিশ্বাস করা, আল্লাহর ইচ্ছাতেই এর প্রভাব হয়, আল্লাহর হুকুমেই এর দ্বারা আরোগ্য হয়।
  3. 3.     এখানে পাঠ করা জিনিসগুলো স্পষ্ট আরবি ভাষায় হওয়া।
  4. 4.       যদি অন্য ভাষায় হয়, তবে এমন হওয়া; যার অর্থ স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে।

রুকইয়া প্রকারভেদঃ বিভিন্ন ভাবে রুকইয়া করা হয়, যেমনঃ দোয়া বা আয়াত পড়ে ফুঁ দেয়া হয়, মাথায় বা আক্রান্ত স্থানে হাত রেখে দোয়া/আয়াত পড়া হয়। এছাড়া পানি, তেল, খাদ্য বা অন্য কিছুতে দোয়া অথবা আয়াত পড়ে ফুঁ দিয়ে খাওয়া এবং ব্যাবহার করা হয়।

পূর্বশর্তঃরুকইয়া করে উপকার পেতে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন।

  1. 1.      নিয়্যাত (কেন রুকইয়া করছেন, সেজন্য নির্দিষ্টভাবে নিয়াত করা)
  2. 2.      ইয়াক্বিন (এব্যাপারে ইয়াকিন রাখা যে, আল্লাহর কালামে শিফা আছে)
  3. 3.     মেহনত (অনেক কষ্ট হলেও, সুস্থ হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে রুকইয়া চালিয়ে যাওয়া)।

লক্ষণীয়ঃরুকইয়ার ফায়দা ঠিকমতো পাওয়ার জন্য দৈনন্দিনের ফরজ অবশ্যই পালন করতে হবে, পাশাপাশি সুন্নাতের প্রতিও যত্নবান হতে হবে। যথাসম্ভব গুনাহ থেকে বাঁচতে হবে। (মেয়েদের জন্য পর্দার বিধানও ফরজ) ঘরে কোনো প্রাণীর ছবি / ভাস্কর্য রাখা যাবেনা। আর সুরক্ষার জন্য সকাল-সন্ধ্যার মাসনুন আমলগুলো অবশ্যই করতে হবে। আর ইতিমধ্যে শারীরিক ক্ষতি হয়ে গেলে, সেই ঘাটতি পোষানোর জন্য রুকইয়ার পাশাপাশি ডাক্তারের চিকিৎসাও চালিয়ে যেতে হবে।

. বদনজর সমস্যা-


আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:
    বদনজর আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে, এরমাঝে কয়েকটি হচ্ছে-
2.      পড়ালেখা বা কোন কিছুতে অনেক ভাল ছিল, হঠাৎ ধ্বস নামা।
3.     কোন কাজে মনোযোগ না থাকা। নামায, যিকর, পড়াশোনাতে মন না বসা।
4.      প্রায়শই শরীর দুর্বল থাকা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব লাগা।
5.      বুক ধড়পড় করা, দমবন্ধ অস্বস্তি লাগা। মেজাজ বিগড়ে থাকা।
6.     অতিরিক্ত চুল পড়া। পেটে প্রচুর গ্যাস হওয়া।
7.      একেরপর এক অসুখ লেগে থাকা, দীর্ঘ চিকিৎসাতেও ভালো না হওয়া।
8.     ব্যবসায়-লেনদেনে ঝামেলা লেগেই থাকা। সব কিছুতেই লস হওয়া।

বদনজরের জন্য রুকইয়াহ:
যদি বুঝা যায় অমুকের জন্য নজর লেগেছে, তাহলে তাকে অযু করতে বলুন, এবংওযুর পানি গুলো আক্রান্তের গায়ে ঢেলে দিন। এরপর চাইলে ভালো পানি দিয়ে গোসল করুন। এতটুকুতেই নজর ভালো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
আর বদনজরের সেলফ রুকইয়া হচ্ছে, বদনজরের রুকইয়া তিলাওয়াত করবেন, অথবা তিলাওয়াত শুনবেন (ডাউনলোড লিংক নিচে)। এর পাশাপাশি ১ম অথবা ২য় নিয়মে রুকইয়ার গোসল করবেন। আর এভাবে লাগাতার ৩ থেকে ৭ দিন করবেন। প্রয়োজনে কয়েকদিন বিরতি দিয়ে আবার শুরু করুন, প্রতিদিন কয়েকবার রুকইয়া শুনুন, আর একবার রুকইয়ার গোসল করুন। এভাবে সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত করতে থাকুন। সমস্যা ভালো হওয়ার পরেও কয়েকদিন রুকইয়াহ করা উচিত।

. রুকইয়ার গোসল-

১ম নিয়ম: একটা বালতিতে পানি নিবেন। তারপর পানিতে দুইহাত ডুবিয়ে যেকোনো দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস, শেষে আবার কোনো দরুদ শরিফ-সব ৭বার করে পড়বেন। পড়ার পর হাত উঠাবেন এবং এই পানি দিয়ে গোসল করবেন।
২য় নিয়ম: একটা বালতিতে পানি নিন। ওপরের দোয়া-কালামগুলো পড়ুন আর মাঝেমাঝে ফুঁ দিন। এরপর ওই পান ইদিয়ে গোসল করুন।
৩য় নিয়ম: (জাদুর সমস্যার জন্য বিশেষভাবে উপকারী বরই পাতার গোসল) ৭টা বরই পাতা বেটে পানিতে গুলিয়ে নিন, এবং সেখানে আয়াতুল কুরসি, সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস- ৩বার করে পড়ে ফুঁ দিন। এরপর এই পানি থেকে তিন ঢোক পান করুন, আর বাকিটা দিয়ে গোসল করুন।
(যদি টয়লেট আর গোসলখানা একসাথে থাকে, তাহলে অবশ্যই বালতি বাহিরে এনে এসব পড়বেন। প্রথমে এই পানি দিয়ে গোসল করে এরপর চাইলে অন্য পানি দিয়ে ইচ্ছামত গোসল করতে পারেন। যার সমস্যা সে পড়তে না পারলে অন্য কেউ তার জন্য পড়বে, এবং অসুস্থ ব্যক্তি শুধু গোসল করবে।)

. জিনের স্পর্শ-

আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:
জিন দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে, এরমাঝে কয়েকটি হচ্ছে-

  • 1.      রাতে ঠিকমত ঘুমাতে না পারা। ঘুমালেও বারবার জেগে ওঠা।
  • 2.      প্রায়শই ঘুমের মাঝে বোবা ধরা।
  • 3.     ভয়ংকর স্বপ্ন দেখা। উঁচু থেকে পড়ে যেতে, কোন প্রাণীকে আক্রমণ করতে দেখা।
  • 4.      দীর্ঘ মাথাব্যথা, অথবা অন্য কোন অঙ্গে সবসময় ব্যাথা থাকা।
  • 5.      নামাজ, তিলাওয়াত, যিকির আযকারে আগ্রহ উঠে যাওয়া।
  • 6.     মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা, একটুতেই রেগে যাওয়া।
  • 7.      আযান বা কোরআন তিলাওয়াত সহ্য না হওয়া।


    জ্বিনের আসরের জন্য রুকইয়াহ:
    যিনি রুকইয়া করবেন তিনি প্রথমে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে নিজের শরীরে হাত বুলিয়ে নিবেন। এরপর রুকইয়া শুরু করবেন। রুগীর পাশে বসে জোর আওয়াজে রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়তে থাকুন। রুকইয়ার অনেক আয়াত আছে সেগুলো শেষে বলা হবে। তবে জ্বিনের রোগীর রুকইয়ার জন্য স্বাভাবিকভাবে-
    • 1.      সুরা ফাতিহা
    • 2.      আয়াতুল কুরসি
    • 3.     বাকারার শেষ ২ আয়াত
    • 4.      সুরা ইখলাস, ফালাক, সুরা নাস। সম্ভব হলে এর সাথে-
    • 5.      সুরা মু’মিনুনের ১১৫-১১৮ নং আয়াত
    • 6.     সুরা সফফাতের প্রথম ১০ আয়াত এবং
    • 7.      সুরা জিনের ১-৯ আয়াত পড়া যেতে পারে।

    জ্বিন ছেড়ে দেয়া পর্যন্ত এগুলো বারবার পড়তে থাকুন, পড়ার মাঝেমাঝে রুগীর ওপর ফুঁ দিতে পারেন, (বৈধ ক্ষেত্রে) মাঝেমাঝে রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়ুন। আর পানিতে ফুঁ দেয়ার পর মুখে এবং হাতে-পায়ে ছিটিয়ে দিন। জিন কথা বলতে শুরু করলে মাঝেমাঝে তাকে চলে যাওয়ার ব্যাপারে নির্দেশ দিতে হবে, এরপর আবার অবিরত তিলাওয়াত চালু রাখতে হবে। জ্বিনের রুগীর ক্ষেত্রে সাধারণত কথাবার্তা বলে জ্বিন বিদায় করতে হয়। এক্ষেত্রে জ্বিনের কথায় ঘাবড়ানো যাবেনা, তার কথা সহজে বিশ্বাসও করা যাবে না। হুমকিধামকি দিলে তাকেই উল্টা ধমক দিতে হবে। মোট কথা, যিনি রুকইয়া করবেন তাঁকে উপস্থিতবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে। একদিনে না গেলে পরপর কয়েকদিন কয়েকঘন্টা করে এভাবে রুকইয়া করে যেতে হবে। ইনশাআল্লাহ এক পর্যায়ে জ্বিন পালাতে বাধ্য হবে।

    . বাড়িতে জ্বিনের উৎপাত থাকলে-

    বাড়িতে জ্বিনের কোনো সমস্যা থাকলে পরপর তিনদিন পূর্ন সুরা বাক্বারা তিলাওয়াত করুন, এরপর আযান দিন। তাহলে ইনশাআল্লাহ সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। তিলাওয়াত না করে প্রতিদিন যদি সুরা বাক্বারা প্লে করা হয় তাহলেও ফায়দা পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে সবচেয়ে ভালো ফল পেলে তিলাওয়াত করা উচিত। এরপর প্রতিমাসে অন্তত এক দুইদিন সুরা বাকারা পড়বেন। অধিক ফায়দার জন্য চাইলে সুরা বাকারা পড়া শেষে পানিতে ফুঁ দেয়ার পর পুরো বাড়িতে ছিটিয়ে দিতে পারেন।
    আর ঘরে প্রবেশের সময়, বের হবার সময়, দরজা-জানালা বন্ধের সময় বিসমিল্লাহ বলবেন। সন্ধ্যা বেলায় জানালা বন্ধ রাখবেন। ঘরে কোন প্রাণী বা মানুষের ছবি অথবা মূর্তি ঝুলিয়ে রাখবেন না। ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই সমস্যা কেটে যাবে।

    . যাদুগ্রস্ত-

    জাদু বা ব্ল্যাক ম্যাজিকে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:
    অনেক সময় যাদু করতে জ্বিনের সাহায্য নেয়া হয়, তাই যাদুগ্রস্ত রোগীর মাঝে জিন আক্রান্তের কিছু লক্ষণও দেখা যেতে পারে। এছাড়াও যাদুগ্রস্ত রোগীর মাঝে কিছু বিশেষ লক্ষণ দেখা যেতে পারে। যেমন:
    • 1.      হঠাৎ কারও প্রতি বা কোন কিছুর প্রতি তীব্র ভালবাসা অথবা ঘৃণা তৈরি হওয়া, যা আগে ছিল না।
    • 2.      বিশেষ কোন কারন ছাড়াই জটিল-কঠিন রোগে ভোগা। যার চিকিৎসা করলেও সুস্থ না হওয়া।
    • 3.     পরিবারের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি লেগেই থাকা। বিশেষতঃ স্বামীস্ত্রীর মাঝে।
    • 4.      দৃষ্টিভঙ্গি বা ব্যক্তিত্বে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যাওয়া। যাতে নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়, চারপাশের মানুষও কষ্ট পায়।
    • 5.      অদ্ভুত আচরণ করা। যেমন, কোন কাজ একদমই করতে না চাওয়া। কিংবা দিন-রাতের নির্দিষ্ট কোন সময়ে ঘরের বাইরে যেতে না চাওয়া।
    • 6.     মেরুদণ্ডের নিচের দিকে ব্যাথা করা।
    • 7.      বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মেজাজ খারাপ, মাথা ব্যথা অথবা অসুস্থ থাকা।

    যাদু আক্রান্ত হলে বুঝার উপায়:
    ওপরের এক বা একাধিক লক্ষণের সাথে মিল পাওয়া যাবে। আর যাদু আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়লে, অথবা অডিও শুনলে অস্বাভাবিক অনুভূতি হবে। যেমন, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, বমি আসা, বুক ধড়ফড় করা, শরীর অবশ হয়ে আসা ইত্যাদি।

    জাদুর সমস্যার জন্য রুকইয়া:
    সমস্যার ধরণ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার রুকইয়াহ করতে পরামর্শ হয়। তবে প্রসিদ্ধ সেলফ রুকইয়া হচ্ছে- প্রথমে সমস্যার জন্য নিয়াত ঠিক করে, ইস্তিগফার দরুদ শরিফ পড়ে শুরু করুন। তারপর রুকইয়ার আয়াতগুলো পাঠ করে অথবা কোন রুকইয়া শুনে নিশ্চিত হয়ে নিন আসলেই সমস্যা আছে কি না! শাইখ সুদাইস অথবা লুহাইদানের রুকইয়া শুনতে পারেন (ডাউনলোড লিংক নিচে)। সবশেষে একটি পাত্রে পানি নিন, এরপর নিচের আয়াতগুলো ৩বার অথবা ৭বার করে পড়ুন, পড়ার মাঝেমাঝে পানিতে ফুঁ দিন-
    ক. সুরা ফাতিহা এবং আয়াতুল কুরসি
    খ. সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২ সুরা ত্বহা ৬৯নং আয়াত
    1.     وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُوْنَ - فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُونَ - فَغُلِبُوْا هُنَالِكَ وَانقَلَبُوْا صَاغِرِيْنَ - وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِيْنَ -قَالُوْا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ - رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُوْنَ -
    2.     فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُۖ إِنَّ اللّٰهَ سَيُبْطِلُهُۖ إِنَّ اللّٰهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِيْنَ - وَيُحِقُّ اللّٰهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْكَرِهَ الْمُجْرِمُونَ -
    3.     وَأَلْقِ مَافِي يَمِيْنِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوْاۖ إِنَّمَا صَنَعُوْا كَيْدُ سَاحِرٍۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتٰى -
    গ. এরপর সুরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস- সব ৩বার করে।
    সমস্যা অনুযায়ী সাতদিন অথবা এরচেয়ে বেশি সময় যাবত প্রতিদিন সকাল-বিকাল এই পানি খেতে হবে, এবং গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করতে হবে। আর জাদুর সমস্যার থেকে সুস্থতা লাভের নিয়াত করে প্রতিদিন রুকইয়ার আয়াতগুলো তিলাওয়াত করতে হবে, অথবা দেড়-দুইঘণ্টা রুকইয়ার অডিও শুনতে হবে। কোন ক্বারির সাধারণ রুকইয়া একবার, আর সুরা ইখলাস, ফালাক, নাসের রুকইয়াহ একাধিকবার (ডাউনলোড লিংক নিচে)। এর পাশাপাশি আল্লাহর কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া করতে হবে।
    এভাবে রুকইয়াহ করার পর সপ্তাহ শেষে আপনার অবস্থা পর্যালোচনা করুন, প্রয়োজনে চিকিৎসার মেয়ার বাড়িয়ে নিন। রুকইয়াহ চলাকালীন সমস্যা বেড়ে গেলেও বাদ দিবেন না, হাল ছাড়বেন না। সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া পর্যন্ত রুকইয়া অবিরত রাখুন।

    দ্বিতীয়ত:শুরুতে বর্ণনা করা রুকইয়ার গোসলগুলোর মাঝে ৩য় পদ্ধতিটি জাদুর চিকিৎসায় খুব উপকারী। সমস্যা বেশি হলে প্রথমে কয়েকদিন উল্লেখিত নিয়মে বরই পাতার গোসল করে এরপর সেলফ রুকইয়াহ শুরু করা যেতে পারে। ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুতই জাদুর সমস্যা থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন।

    যাদুর কোন জিনিশ অথবা তাবিজ খুঁজে পেলে:
    সন্দেহজনক কোন তাবিজ পেলে অথবা কি দিয়ে যাদু করেছে যদি পাওয়া যায়, তাহলে সেসব বের করে আলাদা আলাদা করে ফেলুন, কোন গিরা বা বাধন থাকলে কেটে ফেলুন, শক্ত কিছু দিয়ে বাধা থাকলে ভেঙ্গে ফেলুন। এরপর একটা পাত্রে পানি নিয়ে ওপরে বলা জাদুর রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিন, এরপর তাবিজ অথবা যাদুর জিনিশগুলো ডুবিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ, তাহলে ইনশাআল্লাহ যাদু নষ্ট হয়ে যাবে। পরে সেগুলো পুড়িয়ে বা নষ্ট করে ফেলুন

    . একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে:

    একসাথে যাদু, জ্বিন কিংবা বদনজর সম্পর্কিত একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে প্রথমে কিছুদিন বদনজরের জন্য রুকইয়া করতে হবে, এরপর জ্বিনের জন্য এবং যাদুর জন্য রুকইয়া করতে হবে। এর মাঝেমাঝে শারীরিক রোগব্যাধির জন্য চিকিৎসা নেয়া বা ডাক্তারের ঔষধ সেবন করতেও কোন সমস্যা নেই। কিন্তু রুকইয়াহ করার কারণে ব্যাথা শুরু হলে এজন্য ঔষধ খাবেন না। বরং রুকইয়ার গোসল করলে অনেকটা স্বস্তি পাবেন ইনশাআল্লাহ।

    . ওয়াসওয়াসা রোগ-

    আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:
    1.      অকারণে সর্বদা চিন্তিত থাকা। মাথায় বিক্ষিপ্ত চিন্তা ঘোরাঘুরি করার কারণে কোন কিছুতে মন দিতে না পারা।
    2.      ওযু-গোসল অথবা নামাজের বিশুদ্ধতা নিয়ে অতিরিক্ত দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকা।
    3.     পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা। টয়লেট বা গোসলখানায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা। এক অঙ্গ বারবার ধোয়া, এরপরেও তৃপ্ত হতে না পারা।
    4.      বারবার মনে হওয়া ওযু ভেঙ্গে যাচ্ছে, অথবা প্রসাবের ফোঁটা পড়ছে, অথবা বায়ু বের হয়ে যাচ্ছে। বিশেষতঃ নামাজের সময় এমন হওয়া।
    5.      আল্লাহ তা’আলা, রাসুল অথবা ইসলামের ব্যাপারে বারবার মাথায় অবমাননাকর চিন্তা আসা।
    6.     বারবার নামাজের রাকাত ভুলে যাওয়া, কিরাত, রুকু-সাজদা ইত্যাদির ব্যাপারে সন্দেহে ভোগা।
    7.      সমস্যা বেশিদিন পুরনো হয়ে গেলে এসব থেকে আরও শারীরিক-মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর জিন সংক্রান্ত কোন সমস্যা (জিনের বদনজর বা জিনের আসর) থাকলেও ওয়াসওয়াসার সমস্যা প্রকট হতে পারে।

    ওয়াসওয়াসার প্রতিকার-
    ১. এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়া। প্রতি নামাজের আগে-পরে, অন্যান্য ইবাদতের সময়, কোন গুনাহের জন্য ওয়াসওয়াসা অনুভব করলে এটা পড়া -
    أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ، مِنْ غَضَبِهٖ وَعِقَابِهِ، وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ، وَأَنْ يَّحْضُرُوْنِ
    ঈমান নিয়ে সংশয় উদিত হলে পড়া (সুরা হাদীদ, আয়াত নং ৩)
    هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ ۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْم
    [এছাড়া "আমানতু বিল্লাহ বলা" এবং "সুরা ইখলাস পড়ার" কথাও বর্ণিত হয়েছে] এবং এরপর ওয়াসওয়াসা পাত্তা না দিয়ে অন্য কিছুতে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া।
    ২. পুরুষ হলে জামাআতের সাথে নামাজ পড়া, মুত্তাকী পরহেজগারদের সাথে উঠাবসা করা।
    ৩. নামাজে ওয়াসওয়াসা হলে বামে হালকা করে ৩বার থুতু ফালানো। আর রাকাত ভুলে গেলে- মনে থাকা কম সংখ্যাটা ধরে, এরপর প্রতি রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়া, আর নামাজের শেষে সাহু সাজদা দেয়া।
    ৫. সকাল-সন্ধ্যায় ও ঘুমের আগের আমলগুলো গুরুত্বের সাথে করা। টয়লেটে প্রবেশের দোয়া পড়া।
    ৬. আয়াতুল হারক (আযাব এবং জাহান্নাম সংক্রান্ত আয়াত) বেশি বেশি তিলাওয়াত করা। এবং প্রতিদিন এসবের তিলাওয়াত শোনা। (ডাউনলোড লিংক নিচে)
    ৭. সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস - ৩বার করে। এরপর শুধু সুরা নাস অনেক বার (৭বার/৩৩বার/আরও বেশি) পড়ে পানি আর অলিভ অয়েলে ফুঁ দেয়া। এরপর সুস্থতার নিয়াতে প্রতিদিন ২-৩ বেলা এই পানি পান করা। মাথায় এবং বুকে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা।
    ৮. বদনজর বা জিনের সমস্যা থাকলে সে অনুযায়ী রুকইয়াহ করা। যথাসম্ভবত ওয়াসওয়াসা পাত্তা না দেয়া; ইগনোর করা, এমনকি মুখে বিরক্তির ভাবও প্রকাশ না করা। আর আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকা।

    ১০. সাধারণ অসুস্থতার জন্য রুকইয়াহ:

    বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের রুকইয়ার জন্য রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কিরাম রা. এবং বিভিন্ন যুগের সালাফদের থেকে অনেক দু’আ-কালাম পাওয়া যায়, সুস্থতা লাভের নিয়াতে সেসব গুরুত্বের সাথে পড়া।
    যেমন, কোরআন থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকটি রুকইয়া হচ্ছে- সুরা ফাতিহা, ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস এবং ৬টি আয়াতে শিফা- (সূরা তাওবাহ/১৪, ইউনূস/৫৭, নাহল/৬৯, বানী ইসরাইল/৮২, শু’আরা/৮০, ফুসসিলাত/৪৪)
    1.    وَيَشْفِ صُدُوْرَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِيْنَ
    2.    وَشِفَاءٌ لِّمَا فِي الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ
    3.    يخْرُجُ مِنْ بُطُوْنِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيْهِ شِفَاءٌ لِّلنَّاسِ
    4.    وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ 
    5.    وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِيْنِ
    6.    قُلْ هُوَ لِلَّذِيْنَ آمَنُوْا هُدًى وَّشِفَاء
    এছাড়া রাসুল স. থেকে বর্ণিত রুকইয়ার উপযোগী অনেক দো’আ আছে, যেমন-
    ·       اللَّهمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ الْبَاسَ اِشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِيْ لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
    ·       بِسْمِ اللّٰه أَرْقِيكَ،  مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيْكَ،  مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ،  اَللَّه يَشْفِيكَ بِسْمِ اللّٰهِ أَرْقِيْكَ
    ·       بِاسْمِ اللّٰهِ يُبْرِيْكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيْكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِيْ عَيْنٍ
    ·       بِسْمِ اللَّهِ(৩বার) ، أَعُوذُ بِاللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ (৭বার)
    ·       أَسْأَلُ اللَّهَ الْعَظِيْمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ، أَنْ يَّشْفِيَكَ (৭বার)
    এসব আয়াত এবং দোয়াগুলো ৩বার অথবা ৭বার পড়ুন, ব্যাথার যায়গায় অথবা রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়ুন, অথবা এসব পড়ার পর রুগীর ওপর ফুঁ দিন। পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করুন, গোসল করুন অথবা অলিভ অয়েলে ফুঁ দিয়ে মালিশ করুন। মধু-কালোজিরায় ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন পানিতে গুলিয়ে খান। এসবের পাশাপাশি শাইখ লুহাইদান অথবা সা’দ আল গামিদির রুকইয়াহ শোনা যেতে পারে। (ডাউনলোড লিংক নিচে)

    ১১. শিশুদের জন্য রুকইয়ার নিয়ম:

    শুরুতে মনে মনে নিয়াত করে নিন কোন সমস্যার জন্য রুকইয়াহ করবেন, এরপর শিশুর মাথায় হাত রেখে কয়েকবার এই দুয়াটি পড়ুন, আর মাঝেমাঝে দিন। চাইলে সাথে ওপরের দোয়াগুলোও পড়া যেতে পারে।
    أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَّهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَّامَّةٍ
    এরপর সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি এবং সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস - ৩ বার করে পড়া।
    সমস্যার মাত্রা বেশি হলে উল্লেখিত পদ্ধতিতে রুকইয়া করা শেষে আরেকবার এগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করান এবং গোসল করান। সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন রুকইয়াহ এবং এই কাজগুলো করতে থাকুন। এছাড়া কোন অঙ্গে বিশেষ রোগব্যাধি থাকলে এসব দোয়া-কালাম পড়ে অলিভ অয়েল বা কালোজিরার তেলে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন মালিশ করা।
    ছোটদের পাশাপাশি বড়দের মাঝে কেউ নিজে নিজে রুকইয়াহ করতে অক্ষম হলে তার ওপরেও একই নিয়মে রুকইয়াহ করা যায়।

    ১২. রুকইয়ার আয়াত:

    কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা রুকইয়া করা হয়, তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কিছু আয়াত হচ্ছে-
    1.      সুরা ফাতিহা
    2.      সুরা বাকারা ১-৫
    3.     সুরা বাকারাহ ১০২
    4.      সুরা বাকারাহ ১৬৩-১৬৪
    5.      সুরা বাকারাহ ২৫৫
    6.     সুরা বাকারাহ ২৮৫-২৮৬
    7.      সুরা আলে ইমরান ১৮-১৯
    8.     সুরা আ'রাফ ৫৪-৫৬
    9.      সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২
    10. সুরা ইউনুস ৮১-৮২
    11.   সুরা ত্বহা ৬৯
    12.   সুরা মু'মিনুন ১১৫-১১৮
    13. সুরা সফফাত ১-১০
    14.  সুরা আহকাফ ২৯-৩২
    15.  সুরা আর-রাহমান ৩৩-৩৬
    16.  সুরা হাশর ২১-২৪
    17.   সুরা জিন ১-৯
    18. সুরা ইখলাস
    19.  সুরা ফালাক
    20. সুরা নাস
    এই আয়াতগুলো একসাথে পিডিএফ করা অবস্থায় নিচে লিংক দেয়া ওয়েবসাইটে পাবেন।

    . যাদু, জিন, শয়তান ইত্যাদির ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়:

    ১. প্রতিটি কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা। যেমন, খাবার পূর্বে, ঘরে ঢুকতে - বের হতে, দরজা-জানালা বন্ধ করতে ইত্যাদি।

    ২. বিষ, যাদু এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাঁচতে সকাল-সন্ধ্যায় এই দোয়া তিনবার পড়াঃ
    أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
    আ’উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মা-তি, মিং-শাররি মা-খলাক্ব। (জামে তিরমিযী, ৩৫৫৯)

    ৩. সব ধরনের ক্ষতি এবং বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকতে এই দোয়া সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়াঃ
    بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ العَلِيْمُ
    বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা-ইয়াদ্বুররু মা‘আসমিহী, শাইউং ফিলআরদ্বী ওয়ালা- ফিসসামা-ই, ওয়াহুওয়াস সামি’উল ‘আলীম। (জামে তিরমিযী, ৩৩৩৫)

    ৪. প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস তিনবার করে পড়া। এবং এটা বিশেষ গুরুত্বের সাথে করা। (সুনানে আবি দাউদ)

    ৫. ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া। সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতের তালুতে ফু দিয়ে পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নেয়া। (বুখারী)

    ৬. টয়লেটে ঢোকার পূর্বে দোয়া পড়া-
    اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
    আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা, মিনাল খুবসি ওয়াল খবা-ইছ। (মুসলিম, ৩৭৫)
    ৭. তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। প্রতিদিনের অন্যান্য মাসনুন আমল করতে থাকা। এবং আল্লাহর কাছে সবসময় দোয়া করতে থাকা।

     ------------------------------------
    মুখতাসার রুকইয়াহ শারইয়্যাহ(সংক্ষেপে বিভিন্ন সমস্যার জন্য ইসলাম সম্মত ঝাড়ফুঁক)
    রচনায়: আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ
    প্রথম প্রকাশ: ১৭ – জুন – ২০১৭
    সর্বশেষ আপডেট: (৫.০) পঞ্চম সংস্করণ, ০৭ – আগস্ট – ২০১৯
    রুকইয়াহ অডিও ডাউনলোড: https://ruqyahbd.org/download
    রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপ: https://facebook.com/groups/ruqyahbd
    রুকইয়াহ বিষয়ক অন্যান্য তথ্যের জন্য: www.ruqyahbd.org
    Share: