Showing posts with label প্রকাশনা. Show all posts
Showing posts with label প্রকাশনা. Show all posts

September 11, 2024

২০২৩ ও ২০২৪ সনের রুকইয়াহ কোর্স শেষের মন্তব্যগুলো...

 পূর্বের বছরগুলোর মত ২০২৩ এবং ২০২৪ সনেও Islamic Online Madrasha - IOM থেকে রুকইয়াহ শারইয়াহ বিষয়ে একটি কোর্সের আয়োজন করা হয়েছিল, ২০২৩ সালের কোর্সটি মে মাসে শুরু হয় এবং পরবর্তি দুইমাস ক্লাস হয়ে একটি পরীক্ষা ও পুরষ্কার বিতরণীর মাধ্যমে শেষ হয়। কোর্সের একদম শেষদিকে অংশগ্রহণকারীদের কাছে সার্বিক মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। উনারা নিচের মন্তব্যগুলো করেছেন। আপনারা চাইলে একবার দেখতে পারেন, শুকরিয়া!

---


Share:

May 4, 2023

আইওএম এর রুকইয়াহ শারইয়াহ কোর্সে কী থাকে?

 গত কয়েকবছর ধরে Islamic Online Madrasah - IOM (আইওএম) নিয়মিত রুকইয়ার শারইয়াহ কোর্সের আয়োজন করছে আলহামদুলিল্লাহ। এই কোর্সে আমরা রুকইয়াহ শারইয়াহ বিষয়ে একদম প্রাথমিক স্তর থেকে ব্যবহারিক ও তাত্বিক বিষয়গুলো পাঠদান করে থাকি। কোর্সটি প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের জন্যই উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ।

এই কোর্সের মূল উদ্দেশ্য হল, রুকইয়াহ শারইয়াহ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ইলম আমভাবে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া। যাতে প্রত্যেকে নিজের বা নিজের পরিবারের প্রয়োজনে রুকইয়াহ করতে পারে। আর আশেপাশের মানুষদেরও এব্যাপারে সহায়তা করতে পারে।

কোর্সে সাধারণত ১৫-২৫টি দরস থাকে। ক্লাসের ডিউরেশন হয় ১ থেকে ২ ঘন্টা‌। প্রতিটা বিষয়ে সংক্ষিপ্ত/বিস্তারিত ক্লাসনোট দেয়া হয়। আর ক্লাসের রেকর্ডও সংরক্ষিত থাকে। এছাড়া মাঝেমধ্যে অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন হয়। কোর্স চলাকালীন নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থিদের জন্য পৃথক ডিসকাশন গ্রুপ থাকে। সেখানে সবাই ক্লাসের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারে। কোর্স সমাপ্তকারী সবার জন্য থাকে সনদের সফটকপি। কোর্স পরীক্ষার মেধাতালিকায় থাকা ব্যক্তিদের জন্য থাকে উপহার ও সনদের হার্ডকপি। আর ১ম,২য়,৩য় স্থান অধিকারীদের জন্য থাকে বিশেষ পুরস্কার।



আচ্ছা,এবার আমাদের সিলেবাসটা দেখে নেয়া যাক - 

অধ্যায়-১. রুকইয়াহ শারইয়াহ :

  • * রুকইয়াহ পরিচিতি,
  • * রুকইয়াহ বনাম নিষিদ্ধ ঝাড়ফুঁক/জাদু,
  • * রুকইয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত,
  • * সাপ্লিমেন্টের ব্যবহার,
  • * সাইড ইফেক্ট প্রসঙ্গ ও নিয়ন্ত্রণের উপায়,
  • * রুকইয়ার আগে ও পরে করণীয়,
  • * বাচ্চাদের রুকইয়াহ কিভাবে করবেন ,
  • * আমভাবে যেকোনো রোগের রুকইয়ার নিয়ম

অধ্যায়-২. বদনজর: জিন এবং মানুষের নজর,
অধ্যায়-৩. ওয়াসওয়াসা রোগ,
অধ্যায়-৪. জিনের আসর,
অধ্যায়-৫. জাদুটোনা ও তাবিজ-কবচ 
:

  • * এই সমস্যাগুলোর ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি,
  • * এসব বিপদ থেকে নিরাপদ থাকার উপায়,
  • * লক্ষণীয় উপসর্গের বিবরণ, রোগ নির্ণয় পদ্ধতি,
  • * চিকিৎসা : সেলফ রুকইয়াহ এবং অন্যের জন্য রুকইয়ার নিয়ম।

অধ্যায়-৬. শারীরিক ও মানসিক রোগব্যাধির জন্য রুকইয়াহ :

  • * কিছু কমন সমস্যার জন্য রুকইয়ার নিয়ম,
  • * প্যারানরমাল সমস্যা এবং সাধারণ রোগব্যাধির পার্থক্য।

অধ্যায়-৭. পরিশিষ্ট : 

  • * কিছু কমন পরামর্শ ও রুটিন,
  • * জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী কেসগুলোর ক্ষেত্রে করণীয়,
  • * বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও গল্প-আলাপ।
  • মাঝেমধ্যে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে অতিরিক্ত দাওয়াহ, কিরাত বা মাসায়েলের ক্লাস হতে পারে।
  • প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সপ্তাহে একদিন তা'লিম বা ইসলাহি মজলিসের আয়োজন হতে পারে।
----

রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম :

রেজিস্ট্রেশনের দুইটা ধাপ -
১. প্রথমতঃ কোর্স ফি পরিশোধ করা। (বিকাশ, নগদ বা বিভিন্ন ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে পে করা যায়)
২. এরপর রেজিস্ট্রেশন ফরম ফিলাপ করা। (পেমেন্টের তথ্য দিয়ে রেজিঃ ফর্ম পূরণ করতে হয়)
প্রতিটা ব্যাচের ক্ষেত্রে পেমেন্ট লিংক এবং ভর্তি ফরম ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে, এজন্য ব্লগ-পোস্টের মাঝে দিতে পারলাম না। রেজিঃ চলাকালীন আপনি প্রয়োজনীয় লিংক ও পেমেন্টের পদ্ধতি জেনে নিবেন। (কমেন্টে কিছু লিংক থাকবে)
রেজিস্ট্রেশন করা শেষ হলে, আপনার ইমেইলের মাধ্যমে ক্লাসের তথ্য, ডিসকাশন গ্রুপের লিংক, ক্যাম্পাসের ক্রেডেনশিয়াল জানিয়ে দেয়া হবে। তাই কোর্স শেষ হওয়া পর্যন্ত সব নোটিশগুলো ভালোভাবে খেয়াল করবেন।
----

কোর্সের নিয়ে বহুল জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর :

১। সবাই কি কোর্সটি করতে পারবে?
- জ্বি, পারবে৷ এজন্য আলেম হওয়া বা আরবি ভাষা জানা আবশ্যক না। দেশ-বিদেশের সব জায়গা থেকেই করতে পারবেন।

২। মেয়েরাও কি কোর্সে রেজিঃ করতে পারবে?
- জ্বি, পারবে। নারী-পুরুষ সবাই এই কোর্স করতে পারবে। আর আমাদের জানামতে পর্দার ব্যাপারে IOM এর ম্যানেজমেন্ট টিম যথেষ্ট সতর্ক থাকে। তাই আশা করছি সমস্যা হবে না।

৩। কবে থেকে কোর্স শুরু হবে? কতদিন পর্যন্ত?
- সাধারণত ক্লাস সপ্তাহে ২-৩ দিন ক্লাস হয় আর দেড় থেকে দুইমাসে সিলেবাস শেষ হয়। ১৫ থেকে ২০টি ক্লাস হতে পারে। ক্লাসের দৈর্ঘ বেশি হলে দরস সংখ্যা কম হয়।
- প্রতিটা কোর্স শুরুর কয়েক সপ্তাহ আগে রেজিস্ট্রেশনের ঘোষণা দেয়া হয়। এজন্য আইওএমের পেজরুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপ এবং আমার ওয়ালে চোখ রাখুন।

৪। কোর্সের জন্য কি কি প্রয়োজন হবে?
- অনলাইন ক্লাস হেতু ইন্টারনেট কানেকশন এবং ফোন/পিসি লাগবে।
- যেহেতু সহায়ক কিছু স্লাইড/নোট থাকবে, সুতরাং বাংলা পড়তে জানতে হবে।
- রুকইয়াহ করতে যেহেতু কোরআন পড়া লাগে, তাই কমপক্ষে কোরআন পড়তে জানা লাগবে।

৫। কোনো নির্দিষ্ট বই রাখা লাগবে?
- আবশ্যক না। প্রয়োজনীয় নোট এবং অতিরিক্ত মুতালায়ার পিডিএফ দেয়া হবে। তবে"রুকইয়াহ" (রচনা: আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ) বইটা থাকলে আশা করছি ক্লাসে নোট করা বা পিডিএফ থেকে পড়ার কষ্ট অনেকটা কমে যাবে। তাই চাইলে এটা সংগ্রহ করতে পারেন। (বইটা পাওয়া যাবে ওয়াফিলাইফ, রকমারি অথবা অফলাইনে ভালো ইসলামী বইয়ের দোকানে।)

৬। কিভাবে ক্লাস হবে? যদি কোনো ক্লাস মিস করি?
- ক্লাস অনলাইনে হবে, zoom অ্যাপের মাধ্যমে। আর প্রাইভেট গ্রুপে স্ট্রিম করা হবে, সেখানেও দেখতে পারবেন। প্রতিদিনের ক্লাস রেকর্ড করা থাকবে। নেটের সমস্যা অথবা অন্য কোনো কারনে লাইভ ক্লাস মিস হলে পরে সেটা শুনে নিতে পারবেন। তবে লাইভ ক্লাস করলে সবচেয়ে বেশি ফায়দা হয়

৭। কি কি টপিক আলোচনা করা হবে? সম্ভাব্য কোর্স প্ল্যান কী?
- পূর্বে বলা সিলেবাস অনুযায়ী আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।

৮। রুকইয়াহ বই পড়লেই কি এই কোর্সের সব জানা যাবে?

- না, এই কোর্সে আলোচ্য অনেক বিষয় বইয়ের মধ্যে নাই। আবার বইয়ের কিছু কিছু বিষয়ে কোর্সে বাদ দেয়া হয়। উপরন্তু কোর্স যেহেতু শিক্ষকের তত্বাবধানে হয়, তাই এর ফায়দা বইয়ের চেয়ে ভিন্ন।

৯। আমার জিন-জাদুর সমস্যা আছে, আমি কি উপকৃত হব?
- জ্বি, আপনি কোর্সে বলা নিয়মে নিজের বা পরিবারের জন্য রুকইয়া করতে পারবেন। কখন কী করণীয় বুঝতে পারবেন। নিরাপত্তার বিষয়গুলো জানতে পারবেন। প্রয়োজনে যদি কারও দ্বারা রুকইয়াহ করাতে হয়, সেক্ষেত্রে ভালো-মন্দের পার্থক্য করতে পারবেন। 
- তবে যেহেতু ক্লাসের সময় অল্প, তাই পাঠের বাইরে নির্দিষ্ট কারও সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ থাকেনা। ক্লাসের বাইরে যদি উস্তায বা অন্য সহপাঠীরা সময় দেয় সেটা ভিন্ন বিষয়।
- তবে আপনার সমস্যা বেশি হলে, এবিষয়ে পড়াশোনা করা কষ্টকর হতে পারে। শয়তান বিভিন্নভাবে বাধা দিতে পারে, সেক্ষেত্রে আপনার উচিত এটাকে আরও গুরুত্বের সাথে নেয়া। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

১০। আমি কি এই কোর্স করে রাকি হতে পারবো?
- এটা প্রফেশনাল এক্সোরসিস্ট হওয়ার কোর্স না। তবে এটা সহায়ক হবে। এখানে যেহেতু আমরা শরঈ রুকইয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সবগুলো বিষয়েই আলোচনা করে থাকি, আর ভবিষ্যতে আরও পড়াশোনা করার ব্যাপারেও দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকি, তাই এটা সবার জন্যই উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ।

১১। কোর্স শেষে আমরা কি কি আশা করতে পারি?
- ইনশাআল্লাহ, ভালোভাবে কোর্সটি শেষ করলে এবং কোর্সের দিকনির্দেশনা অনুসরণ করলে -

  • * আপনি নিজের এবং পরিবারের জন্য রুকইয়াহ করতে পারবেন। 
  • * আশেপাশের মানুষদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দিতে পারবেন।
  • * জাদুটোনা আর জিনভুতের ব্যাপারে অহেতুক ভীতি দূর হয়ে যাবে।
  • * এসব বিষয়ে প্রচলিত ভুলত্রুটি ও কুফরি-কালামের ব্যাপারে সতর্ক হবেন।
  • * জিন, জাদু, বদনজর, ঝাড়ফুঁক, হিফাজতের আমল ইত্যাদি বিষয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জানতে পারবেন।
  • * আর এই কোর্স থেকে দিকনির্দেশনা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও পড়াশোনা এবং প্র‍্যাক্টিস করতে পারবেন।
---

হেল্পলাইন:

কোর্স সংক্রান্ত আরও তথ্যের জন্য আইওএমের হেল্পলাইন নাম্বারে অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিয়ে কথা বলা যাবে।

Share:

March 1, 2023

২০২২ সনের রুকইয়াহ কোর্স শেষের মন্তব্যগুলো...

 ২০২২ সনে Islamic Online Madrasha - IOM থেকে রুকইয়াহ শারইয়াহ বিষয়ে দুইটি কোর্সের আয়োজন করা হয়েছিল, ১মটি ফেব্রুয়ারি-মার্চে, আর ২য়টি অক্টোবর-নভেম্বরে। এই কোর্স দুটির শেষে অংশগ্রহণকারীদের কাছে সার্বিক মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। উনারা নিচের মন্তব্যগুলো করেছেন। ফাইলের শুরুতে ১ম পর্বের মন্তব্যগুলো আছে, পরে ২০নং পেজ থেকে আছে ২য় পর্বের মন্তব্যগুলো। শুকরিয়া! ---


Share:

February 23, 2023

রুকইয়াহ বইয়ের ভূমিকা (২য় সংস্করণ)

 

 লেখকের কথা (২য় সংস্করণ)

এক.

আলহামদুলিল্লাহ ! দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে রুকইয়াহ বইটি এখন আপনার হাতে। বইটির প্রথম প্রকাশ হয়েছিল ২০১৮ সনের অক্টোবরে। এটা বইয়ের দ্বিতীয় প্রকাশ।

সত্যি বলতে এটা নিয়ে আমার না বিশেষ কোনো পরিকল্পনা ছিল, আর না তেমন কোনো যোগ্যতা। যখন যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন হয়েছে, আল্লাহ্‌ তাআলাই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সকল প্রশংসার হকদার আমার রব আল্লাহ্‌ !

রুকইয়াহ শারইয়ার গুরুত্ব নিয়ে বইয়ের ভেতর আলোচনা হয়েছে, তাই সে প্রসঙ্গে এখানে আর না বলি।

তবে একটা বিষয় কি, যখন দেখতাম জিন শয়তানেরা মানুষকে নিয়ে যেমন ইচ্ছা খেলছে, মানুষ তাদের ভয়ে ফ্যাঁকাসে মুখ নিয়ে রাত কাটাচ্ছে, জীবন থেকে নিরাশ হয়ে যাচ্ছে;  অপরদিকে মানুষ শয়তান-কবিরাজ-জাদুকরগুলো আল্লাহর জমিনে ইচ্ছেমত শয়তানি করে যাচ্ছে, এদের জন্য কারও ঘ্র ভাঙছে, কেউ বছরের পর বছর ধরে অসুস্থ হয়ে থাকছে, কারও বারবার মিসক্যারেজ হচ্ছে, অথচ প্রচন্ড মেধাবী ছাত্রীর দিনে দিনে সব কিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে; এত কিছুর পরেও কবিরাজদের কেউ কিছুই বলছে না। তাদের কুফরী- শিরকী কর্মকান্ডের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না। সাধারণ মানুষ তো বটেই, সামান্য কিছু হলে মাদরাসাপড়ুয়ারা পর্যন্ত কাফির তান্ত্রিক-কবিরাজের দরজায় ধরণা দিচ্ছে। অবচেতন মনে পুরো সমাজ এই শয়তানগুলোকে বসিয়ে রাখছে রবের আসনে। আল্লাহর পানাহ ! আমি তখন এই বিষয়গুলো মেনে নিতে পারতাম না, হিসাব মিলত না, এমন কেন হবে?

আমার কাছে সবচেয়ে বেশি জঘন্য মনে হতো কাউকে নিজের ইচ্ছার বিপরীতে বাধ্য করার বিষয়টা। যেমন ধরুন, একটা মানুষের ওপর জিন ভর করে তার শরীর ব্যবহার করে কথা বলছে, যা খুশি করছে, অথবা কাউকে বশ করে যা ইচ্ছা করানো হচ্ছে, অথবা দুজনের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানো হচ্ছে। আরও খারাপ লাগত যখন দেখতাম মানুষ সেগুলো চেয়ে চেয়ে দেখতে , কিন্তু কিছুই করতে পারছে না। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস কবিরাজদের দরজায় ঘুরে ঘুরে দুনিয়া-আখিরাত সব নষ্ট করছে। এগুলো আমার কাছে মনুষ্যত্বের অবমাননা মনে হতো। অনুভব করতাম এখানে অন্য কিছু হওয়া উচিত, যা হচ্ছে না।

যা হোক, আল্লাহর শোকর! দেরিতে হলেও আমাদের দেশে রুকইয়াহ শারইয়াহ নিয়ে ব্যাপকভাবে কাজ শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে । এখন অনেকেই রুকইয়াহ বিষয়ে জানছে। ইসলাম সম্মত স্প্রিচ্যুয়াল হিলিং দিনদিন জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য হচ্ছে। তবে এতটুকুতেই সন্তুষ্ট হলে চলবে না, শয়তান বসে নেই, আমাদেরও বসে থাকা যাবে না, সচেতন মানুষের সংখ্যা হাজার থেকে লাখে, লাখে থেকে কোটিতে নিয়ে যেতে হবে। সর্বাত্মকভাবে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর হুকুমকেই চালু করতে হবে। সত্যি বলতে, জিন –জাদুর সমস্যাগুলো সমাজে মহামারির মত ছড়িয়ে আছে অথচ সমাধান মাত্র গুটিকয়েক মানুষের  হাতে বন্দি থাকবে, এমনটা হওয়ার কথা না। যে জিনিসের প্রয়োজন বেশি তার লভ্যতাও সহজ হওয়া উচিত।

এই গ্রস্থে আমরা সেলফ রুকইয়াহ-তথা প্রফেশনাল কারও সহায়তা ছাড়া, নিজেই নিজের জন্য বা পরিবারের জন্য রুকইয়াহ করার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করেছি এবং সেভাবেই পুরো গ্রস্থের অধ্যায়গুলো সাজিয়েছি। আমার জানামতে যা প্রচলিত অন্য কোনো গ্রস্থে করা হয়নি। তবে হ্যাঁ! এর পাশাপাশি প্রফেশনাল রাক্বীদের জন্যও এটা উপকারী গাইডবুকের কাজ করবে ইনশাআল্লাহ।

দুই.

বইটি লিখতে গিয়ে বারবার থেমে গিয়েছি। পারপার্শ্বিক অবস্থা, অলসতা আর শয়তানের কুমন্ত্রণার জন্য অল্প কাজ করতেও অনেক দেরি হয়েছে। মাঝেমাঝে উস্তায মুহাম্মদ তিম হাম্বলকে মেইল করেছি ‘উস্তায, আমি আর পারছি না!’ উনি উৎসাহ দিএছেন, সাহস জুগিয়েছেন, দু’আ করেছেন। মাঝেমাঝে উনি আমাকে সূক্ষ্ম বিষয়ে রিমাইন্ডার দিতেন, যেগুলো চলার পথে শক্তি যোগাত। একদম প্রথম মেইলের রিপ্লাইতে বলেছিলেন (ভাবানুবাদ) ‘বাঙালি কমিউনিটিতে এসব শয়তানির চর্চা সবচেয়ে বেশি, তুমি এমন জায়গায় রুকইয়াহ নিয়ে কাজ করছ, যেখানে শয়তানি জাদুর ছড়াছড়ি অথচ সুন্নাহসম্মত স্মাধান খুবই বিরল। খুব সতর্কতার সাথে কাজ করবে আর নিজের শত্রুর চেয়ে গুনাহের ব্যপারে বেশি বয় করবে। কারণ, তোমার শত্রু তোমাকে ধ্বংস করতে পারবে না, কিন্তু তোমার গুনাহ শত্রুকে সুযোগ করে দিতে পারে তোমার ক্ষতি করার।’

এছাড়া অনেক উস্তায, সহপাঠী এবং বড়ভাই এই কাজের ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন, সহায়তা করেছেন। আল্লাহ্‌ তাদের উত্তম প্রতিদান দিক।

রুকইয়াহ শারইয়ার কাজটি এতদূর আসা এবং এতদিন এই মেহনতে অটল থাকার পেছনে আরেকজনের বড় অবদান রয়েছে। আমার ভাতিজী। তার জন্য দিল থেকে অনেক অনেক দু’আ রইলো। আল্লাহ্‌ দুনিয়া এবং আখিরাতে সর্বদা তাকে রহমতের চাদরে ঢেকে রাখুক।

জানিয়ে রাখা ভালো, এই বইয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর বিরাট একাংশ জেনেছি উস্তায মুহাম্মদ তিমের প্রবন্ধ, দরস এবং ওয়ার্কশপের আলোচনা থেকে। আরেকটি অংশ পেয়েছি শাইখ ওয়াহিদ আব্দুস সালামের কয়েকটি বই থেকে (এসবের নাম গ্রন্থের শেষে বলা হয়েছে)। ব্যক্তিগত অনুসন্ধান এবং অভিজ্ঞতা তো আছেই, এছাড়া আমার দুজন শাইখ মুফতি কেফায়াতুল্লাহ (হাফিযাহুল্লাহ) এবং হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী (রহিমাহুল্লাহ) এর হাদিসের দরস এক্ষেত্রে অনেক উপকারি ভূমিকা পালন করেছে। আল্লাহ্‌ উনাদের ইলম এবং বরকত দ্বারা আমাদের আরও উপকৃত হওয়ার তাওফীক দিক।

তিন.

পেছনের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ, এখানে সেগুলো বলে অহেতুক কালক্ষেপণ না করি। সারাংশ হচ্ছে, ফেসবুকে রুকইয়াহ শারইয়াহ সিরিজ শুরু করার মাসখানের পরেই কিছু ভাই এবং ইস্তায পরামর্শ দিয়েছিলেন সব লেখা একসাথে করে যেন বই বানিয়ে ফেলি। লেখার সংখ্যা প্রায় ৫০ ছাড়িয়ে যাবার পর সেগুলো একত্র করা হয়, এরপর দীর্ঘ সময় নিয়ে সেগুলোকে বইয়ের ধাঁচে নিয়ে আসা হয়। এতে লেখাগুলোর লাইনে লাইনে এসেছে ব্যপক পরিবর্তন। এরপর প্রায় সমপরিমাণ লেখা নতুন করে যোগ হয়। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপের এডমিনরা যথেষ্ট সহায়তা করেছেন, তাদের ছাড়া এই কাজ শেষ করা অনেক কঠিন হত। এরপর প্রকাশনী সংশ্লিষ্ট ভাইয়েরা এবং শ্রদ্ধেয় সম্পাদকদ্বয় প্রচুর ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিকূলতা আর ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও উনারা এত বড় কাজটা হাতে নেয়ার সাহস করেছেন, এরপর যত্নের সাথে সমাপ্তও করেছেন। আল্লাহ্‌ যেন সংশ্লিষ্ট সকলকে দুনিয়া এবং আখিরাতে উত্তম প্রতিদান দেন। ইখলাসের যারা যারা এদেশে রুকইয়াহ শারইয়াহ নিয়ে কাজ করছেন, আগামীতে করবেন সবার ওপর রহমত বাযিল করেন। প্রতিবন্ধকতা দূর করে দেন, সব ধরনের শয়তানি চক্রান্ত আর বিপদ আপদ থেকে হিফাজত করেন, আমীন।

চার.

বইটি কিভাবে পড়বেন?

১. মানুষ শয়তান এবং জিন শয়তানের ভয় আপনার মন থেকে এখনই বের করে ফেলুন। মনে রাখবেন, আমরা আল্লাহর বান্দা এবং আল্লাহ্‌ই আমাদের জন্য যথেষ্ট ।

২. এই সমাজে কুফরি জাদু যেহেতু খুবই সহজলভ্য, তাই আপনার জন্য উচিত হল এখন থেকেই নিজের হিফাজতের জন্য প্রতিদিনের মাসনূন আমল এবং যিকর-আযকার নিয়মিত পালন করা শুরু করে দেয়। আর মাঝে মাঝে রুকইয়ার গোসল করা। যাতে জিন, জাদু, নজর ইত্যাদির ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকতে পারেন, আর সামান্য প্রভাব পড়লেও সেটা বেড়ে ওঠার আগেই যেন ঠিক হয়ে যায়।

৩. এই বইয়ের বেশিরভাগ আলোচনাই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এগিয়ে নেয়া হয়েছে, পরের অধ্যায়গুলোর আলোচনা অনেকাংশেই পূর্বের অধ্যায়ের ওপর নির্ভরশীল। তাই শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে না পড়ে, মাঝ থেকে শুরু করলে অনেকেই অনেক কিছু বুঝবে না। বিষয়টা খেয়াল রাখা উচিত।

৪. আরেকটা বিষয় হল, এই বইয়ে যা পড়বেন, মাঝেমাঝে সেটা নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা করুন। সম্ভব হলে সোশ্যাল মিডিয়া বা রোজনামচার খাতায় সারাংশ লেখার চেষ্টা করুন । আর যদি থিওরিগুলো সরাসরি প্রয়োগ করার সুযোগ থাকে, তাহলে প্রথম থেকেই প্রাকটিস শুরু করে দিন। গতানুগতিক আর দশটা বইয়ের মতো শুধু পড়ে এই বইটি শেষ করে দিলে দিন শেষে খুব  বেশি ফায়দা পাবেন না। সাধারণ পাঠক হলে এটা সাধারণ পরামর্শ আর এ বিষয়ে ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে চাইলে এটাকে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা হিসেবে গ্রহণ করুন।

৫. এই প্যারানরমাল বিষয়গুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকলে অনেকে এক ধরনের ওয়াসওয়াসায় ভোগে, তখন যেকোনো সমস্যার সাথেই জিনভূতের কানেকশন অথবা জাদুর গন্ধ খুঁজে পায়। ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান এই প্রবণতা থেকে বহুক্রোশ দূরে, তাই সতর্ক থাকবেন। প্রয়োজনে এসব থেকে ছুটি নিয়ে কিছুদিন অন্যান্য কাজে সময় দিবেন।

৬. অকারণে ঝুঁকি নিতে যাবেন না, যা বুঝবেন, তা করতে যাবেন না। বিষয়গুলো সহজ ভাষায় উপস্থিতি আপনার জন্য সহজই হবে।

৭. এমন পরিস্থিতিতে যদি পড়েন, কী করতে হবে কিছুই বুঝতে পারছেন না। এই বই উল্লেখিত সব পদ্ধতি অনুসরণ করা শেষ, অথবা এরকম পরিস্থিতে কি করতে হবে সে ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি, তাহলে নফল নামাযে দাঁড়িয়ে যান, আল্লাহর কাছে সাহায্য চান, খুব বেশি বেশি ইস্তিগফার এবং দু’আ করুন। আল্লাহ্‌ আপনার জন্য যথেষ্ট হবেন…

পাঁচ.

 দুটি বিষয়ে বলে রাখা ভালো,

গতবার বই প্রকাশের পর আমার পরিচিত অনেকে যে সমস্যায় পড়েছেন তা হল, অনেক পাঠক আমার সাথে যোগাযোগের ঠিকানা বা ফোন নাম্বারের জন্য পিড়াপীড়ি করেছেন। সত্যি বলতে আমার একার পক্ষে এতজনকে হেল্প করা দুঃসাধ্য ব্যপার, অনেকের তেমন কোনই দরকার নেই, বইয়ের তাঁর চিকিৎসা দেয়া আছে, ‘মনের সান্ত্বনার জন্য’ আমাকে খুঁজে বেড়িয়েছেন ! আগামীতে কেউ এমনটা না করলে ভাল হয়। এই বইয়ে রুকইয়াহ বিষয়ে তথ্য আছে, আল্লাহর ওপর ভরসা সেগুলো অনুসরণ করতে থাকুন। আর একান্তই পরামর্শের দরকার হলে রুকইয়াহ শারইয়াহ নিয়ে আলোচনা এবং একে অপরকে সহায়তার জন্য আমাদের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আছে “রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপ – Ruqyah Support BD” সেখানে আপনার সমস্যা লিখে পোস্ট করতে পারেন।[1]

আর রুকইয়াহ সাপোর্ট বিডির একটি ওয়েবসাইটও রয়েছে, যেখানে রুকইয়াহ বিষয়ক বিভিন্ন প্রবন্ধ, রুকইয়ার অডিও, ভিডিও, পিডিএফ, অ্যাপস ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো পাওয়া যাবে।[2]

ছয়.  

গ্রস্থের এই সংস্করণে কিছু পরিবর্তন এসেছে, জাদু সংক্রান্ত আলোচনায় বেশ কিছু অংশের পুনরাবৃত্তি হয়েছিল, সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছি। ওয়াসওয়াসার আলোচনাটা ঢেলে সাজিয়েছি, সেখানে কিছু অংশ বাদ দিতে হয়েছে। বিভিন্ন অধ্যায়ে উদাহরণ হিসেবে দেয়া পূর্বের ঘটনাগুলোর কিছু বাদ দিয়েছি, আর কিছু নতুন যুক্ত করেছি। কিছু রেফারেন্স বাদ পড়েছিল, সেগুলো যুক্ত করে দেয়া হয়েছে আর মুদ্রণপ্রমাদ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে। আর মাঝেমাঝে ছোটখাটো সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। আল্লাহ্‌ যতদিন হায়াতে রেখেছেন, ইনশাআল্লাহ  এই সংশোধনের ধারা চলতে থাকবে।

সাত.

চেষ্টা করেছি আমাদের সাধ্যের সর্বোচ্চটা উপস্থাপন করতে। তবুও মানুষের রচিত গ্রস্থ হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই কিছু ভুল থেকে যাবে। যদি এমন কিছু আপনার দৃষ্টিগোচর হয়। তাহলে অবশ্যই  আমাকে জানাবেন।[3] ৩ 

আর যে ভাই অথবা বোন এই বইটি পড়বেন, অনুগ্রহ করে আমার জন্য একটু আল্লাহর কাছে দু’আ করবেন। বেঁচে থাকলে যেন হিদায়াতের ওপর থাকি, আর মরে গেলে যেন আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত হই।

আল্লাহ্‌ আমাদের চিরকাল তাঁর সন্তুষ্টির ওপর থাকার তাওফীক দিন, আমীন !

 

আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 



[1] গ্রুপের লিংক- facebook.com/groups/ruqyahbd

[2] ওয়েবসাইটের ঠিকানা- www.ruqyahbd.org

[3] ফেসবুক প্রোফাইল - facebook.com/thealmahmud 

Share:

April 17, 2022

২০২১ সনের রুকইয়াহ কোর্স শেষে মন্তব্যগুলো...

 ২০২১সনে Islamic Online Madrasha - IOM থেকে রুকইয়াহ শারইয়াহ বিষয়ে একটা কোর্সের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই কোর্স শেষে অংশগ্রহণকারীদের সার্বিক মতামত জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। উনারা নিচের মন্তব্যগুলো করেছেন ---


Share:

April 16, 2022

২০২০ সনের রুকইয়াহ কোর্স শেষের মন্তব্যগুলো...

 ২০২০সনে Islamic Online Madrasha - IOM থেকে রুকইয়াহ শারইয়াহ বিষয়ে একটা কোর্সের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই কোর্স শেষে অংশগ্রহণকারীদের সার্বিক মতামত জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। উনারা নিচের মন্তব্যগুলো করেছেন ---


Share:

December 31, 2019

রুকইয়াহ শারইয়্যাহ ইনডেক্স

সর্বশেষ আপডেট: ০৮ আগস্ট, ২০১৯ 📛
*- চিহ্নিত লেখাগুলোর কাজ বাকি আছে অথবা লেখাগুলো খুজে পাওয়া যায়নি
[লক্ষণীয়ঃ কোনো লেখা ফেসবুকের বাহিরে প্রকাশ করতে অথবা প্রিন্ট করতে চাইলে অনুমতি নেয়া আবশ্যক। ফেসবুকে কপি করলে লেখকের নাম উল্লেখ করুন। একাধিক লেখা একত্র করা অথবা পিডিএফ বানানো থেকে বিরত থাকুন।]
এখানকার প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ লেখা "রুকইয়াহ" বইয়ে একত্রে পাবেন। প্রাপ্তিস্থান: [এখানে দেখুন] 
সাহায্য এবং পরামর্শের জন্য রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপ - Ruqyah Support BD গ্রুপে যোগ দিন।

অধ্যায়-১: রুকইয়াহ বিষয়ে..

  1. রুকইয়াহ শারইয়াহ; প্রাথমিক পরিচিতি
  2. সারসংক্ষেপ রুকইয়াহ শারইয়্যাহ
  3. রুকইয়াহ শারইয়্যার গুরুত্ব এবং ফযিলত!
  4. রুকইয়াহ কী? এর শরঈ বিধান কী? | [old v]*-
  5. কোরআন হল সর্বোত্তম শিফা ও আমাদের জন্য রহমত
  6. তিন স্তরের রুকইয়াহ
  7. চার প্রকারের রুকইয়াহ
  8. আয়াতে রুকইয়াহ লিস্ট এবং পিডিএফ*-
  9. রুকইয়া বিষয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা | [old v]*-
  10. যেকোন সমস্যায় অনুসরনযোগ্য প্রাথমিক পরামর্শ
  11. রুকইয়ার করার পর সাইড ইফেক্ট সামলানো

অধ্যায়-২: বদনজর বিষয়ক

  1. পর্ব -১ (বদনজর বিষয়ে ইসলামী আক্বিদা)
  2. পর্ব -২ (সালাফের মুল্যায়ন, নজর লাগার লক্ষণ)
  3. পর্ব -৩ (বদনজর থেকে বাঁচার উপায়, কিছু ঘটনা)
  4. পর্ব-৪ (বদনজরের চিকিৎসা, বিধিবিধান)
  5. কোরবানির গরু এবং বদনজর

অধ্যায়-৩: জিনের আসর বিষয়ক

  1. পর্ব-১ (জ্বিনের আসর বিষয়ে ইসলামী আক্বিদা)
  2. পর্ব-২ (কেন জিন ক্ষতি করে, সালাফে সালেহীনের কিছু ঘটনা)
  3. পর্ব-৩ (আসরের প্রকারভেদ, কখন আক্রান্ত হয়)
  4. পর্ব-৪ (আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ, বাঁচার কিছু টিপস)
  5. পর্ব-৫ (বাড়ি থেকে জ্বিন তাড়ানো, রাক্বীর গুণাবলী, বই)
  6. পর্ব-৬ (জ্বিন আসরের চিকিৎসা)
  7. পর্ব-৭ (রাক্বির জরুরী জ্ঞাতব্য বিষয়, যাদুর সাধারণ চিকিৎসা)
  8. পর্ব-৮ (কিছু প্রায়োগিক বাস্তব ঘটনা)
  9. রাত্রীতে জ্বিনের সমস্যা...
  10. লাভার জিন বা আসক্ত জিন সংক্রান্ত সমস্যা

অধ্যায়-৪: কালো যাদু বিষয়ক

  1. পর্ব-১ (যাদু বিষয়ে ইসলামী আক্বিদা)
  2. পর্ব-২ (সালাফের মন্তব্য, কিভাবে যাদু করে, সতর্কতা)
  3. পর্ব-৩ (পূর্ব কথা, রুকইয়ার আয়াত, পিডিএফ)
  4. পর্ব-৪ (বিয়ে ভাঙার বা আটকে রাখার যাদু)
  5. পর্ব-৫ (সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটানোর যাদু)
  6. পর্ব-৬ (আসক্ত, অনুগত বা বশ করার যাদু)
  7. পর্ব-৭ (শারীরিকভাবে অসুস্থ বানানোর যাদু)
  8. পর্ব-৮ (পাগল করা এবং পড়ালেখা নষ্টের যাদু)
  9. পর্ব-৯ (দুই প্রকার সেক্সুয়াল ডিজিজের জন্য যাদু)
  10. পর্ব-১০ (গর্ভের সন্তান নষ্ট করার যাদু)
  11. পর্ব-১১ (যাদুর চিকিৎসা প্রসঙ্গে কিছু ঘটনা)
  12. পর্ব-১২ (যাদু এবং অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়)
  13. সিহরের কমন রুকইয়াহ
  14. বরই পাতার গোসল

অধ্যায়-৫: ওয়াসওয়াসা রোগ

  1. ওয়াসওয়াসা রোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ
  2. ওয়াসওয়াসা রোগের জন্য রুকইয়াহ
  3. পাপের প্রতি আসক্তি থেকে বাঁচার উপায় [ext]
  4. ওয়াসওয়াসা রোগ থেকে মুক্তির উপায় [video]
  5. অনাহূত ভাবনা ও তার প্রতিকার [ext]
  6. পর্ণ অথবা মাস্টারবেশন আসক্তদের জন্য পরামর্শ

অধ্যায়-৬: অন্যান্য অসুস্থতা

  1. শারীরিক এবং মানসিক অসুস্থতার জন্য রুকইয়াহ
  2. ব্যাথার জন্য রুকইয়াহ
  3. মনভুলা রোগের জন্য রুকইয়াহ
  4. ঠাণ্ডার (শ্বাসকষ্ট, এলার্জি বিবিধ) জন্য রুকইয়াহ
  5. অলসতা, ক্লান্তি, দুর্বলতা ইত্যাদির সমাধান
  6. হাড়ক্ষয় রোগের জন্য রুকইয়াহ
  7. চোখের সমস্যার জন্য রুকইয়াহ
  8. তোতলামির সমস্যা এবং করণীয়
  9. বাচ্চাদের কথা শিখতে দেরি হলে করণীয়
  10. ডেংগু, চিকুনগুনিয়া এবং এমন সমস্যায় করনীয়

অধ্যায়-৭: সাপ্লিমেন্টারী

  1. সুন্নাহসম্মত যত রুকইয়াহ | রুকইয়াহ সাপ্লিমেন্টারী
  2. রুকইয়াহ এবং কার্স (অভিশাপ)
  3. কার্স ফর কবিরাজ!
  4. রুকইয়াহ এবং দোয়া
  5. রুকইয়াহ অডিও
  6. রুকইয়ার গোসল
  7. পানিপড়া এবং রুকইয়াহ
  8. বৃষ্টির পানি এবং রুকইয়াহ*_
  9. বাথ সল্ট এবং রুকইয়ার গোসল
  10. রুকইয়াহ যিনা!
  11. শীতকালে রুকইয়াহর গোসল প্রসঙ্গে

অধ্যায়-৮: ভুল ধারণা - প্রশ্নোত্তর

  1. রুকইয়াহ এবং রেফারেন্স
  2. রুকইয়াহ করলে কি জান্নাতে যাওয়া যাবে না?
  3. রুকইয়া সংক্রান্ত কিছু হাদিস, সংশয় ও পর্যালোচনা
  4. রুকইয়ার অডিও শোনা কি বিদ’আত?
  5. রুকইয়া করতে বুজুর্গ হওয়া লাগে?
  6. রুকইয়া শুনলে ঘুম আসছে বা সমস্যা হচ্ছে?
  7. মেয়েরাও কি রুকইয়া করতে পারে?
  8. অমুসলিমদের জন্য রুকইয়া করা যায় না?
  9. কুফরি কাটাতে কুফরি করা লাগবে?
  10. জিনদের সাহায্য নেয়া যাবে কি?
  11. যাদুর জিনিশ ধ্বংস না করে সুস্থ হওয়া যায়না?
  12. ঝাড়ফুঁক জায়েজ তাই তাবিজও জায়েজ?
  13. প্রতিদিনের আমল করলেও কি সমস্যা হতে পারে?*_
  14. রুকইয়াহ এবং ঔষধ সেবন করা
  15. রুকইয়াহ শোনার চেয়ে পড়া ভালো
  16. ওমরাহ করলে জিন-যাদুর সমস্যা চলে যায়?
  17. সেলিব্রেটিদের নজর লাগেনা কেন?
  18. একজনের জন্য অন্যজন রুকইয়াহ করা
  19. কয়েকজনের জন্য একসাথে রুকইয়াহ করা
  20. আয়াত কাস্টমাইজেশনের ধোকায় পড়া

অধ্যায়-৯: পরিশিষ্ট

  1. ৭দিনের ডিটক্স রুকইয়াহ প্রোগ্রাম | (detox app)
  2. সর্বজনীন পূর্ণ রুকইয়াহ প্রোগ্রাম
  3. শিশুদের জন্য যেভাবে রুকইয়াহ করবেন
  4. বাচ্চাদের রুকইয়ার সময় লক্ষণীয়
  5. হিফাজতের আরও কিছু আমল*-
  6. ফেরেশতা হাজির করার আমল নাকি শয়তান পুঁজা?
  7. রুকইয়াহ শিরকিয়্যাহ
  8. যেসব মুত্তাকী ব্যক্তি বাতিল কবিরাজি করেন...
  9. শিরকি ঝাড়ফুঁক থেকে কেন বা কিভাবে উপকার হয়?
  10. সুস্থ হতে আমার এত দেরি লাগছে কেন?
  11. কিছু হারিয়ে গেলে অথবা বিপদের সময় করণীয়
  12. স্বপ্নে জ্বিন বা যাদুর কিছু দেখলে...*-
  13. মাসিক চলাকালীন সময়ে রুকইয়াহ প্রসঙ্গে

অধ্যায়-১০: উম্মে আব্দুল্লাহর লেখা

  1. রুকইয়াহ বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা
  2. রুকইয়া বিষয়ে কিছু অভিজ্ঞতার বর্ণনা*-
  3. ইয়াক্বিনের সাথে দোয়া এবং রুকইয়াহ...
  4. রুকইয়াহ নিয়ে যত কথা - তিন
  5. বিভিন্ন পরিস্থিতির জন্য‌ কমন সাজেশন
  6. ভয়...
  7. রুকইয়াহ দ্বারা সমস্যার সমাধান বিষয়ে
  8. বদনজর লাগা প্রসঙ্গে...
  9. বদনজর এবং প্রচলিত কুসংস্কার
  10. কে আমাকে যাদু করেছে?
  11. ওয়াসওয়াসাকে জয় করুন...
  12. বিয়ে নিয়ে যত কথা
  13. প্রেম-ভালোবাসা প্রসঙ্গ এবং রুকইয়াহ
  14. পিরিয়ড বিষয়ক সমস্যা
  15. সাদাস্রাব সমস্যা প্রসঙ্গে...
  16. বাচ্চা না হওয়া প্রসঙ্গে
  17. গর্ভকালীন সমস্যা ও রুকইয়াহ
  18. রুকইয়াহ এবং কিছু অপ্রিয় সত্য
  19. সমস্যা যখন চুল পড়া!
  20. বাচ্চাদের শীতকালীন যত্ন এবং রুকইয়াহ
  21. রুকইয়াহ ও রমাযান

অন্যান্য: অডিও-ভিডিও, অ্যাপ

  1. দি মুসলিম গ্লাস পডকাস্ট (জিন, যাদু, রুকইয়াহ)
  2. অল্প কথায় রুকইয়ার A-Z (lecture)
  3. মাসনুন আমল (app) | web version
______
এই নোটের শর্টলিংক- http://bit.ly/ruqyah-index
রুকইয়াহ সাপোর্ট বিডি ওয়েবসাইট- https://ruqyahbd.org
ইউটিউব চ্যানেল- http://www.youtube.com/ruqyahbd
অনুমোদন সীমাঃ Creative Commons BY-NC-ND 4.0. (লেখকের নাম সঠিকভাবে উল্লেখ করে, কোনরূপ পরিবর্তন ছাড়া, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যবিহীন ব্যবহার করার জন্য)
Share:

August 6, 2019

মুখতাসার রুকইয়াহ শারইয়্যাহ!


মুখতাসার রুকইয়াহ শারইয়্যাহ!
- আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

. অবতরণিকা-

রুকইয়া শারইয়াহ বিষয়ে অনেক লম্বা চওড়া লেখা আছে, ইতোমধ্যে আমাদের রুকইয়াহ শারইয়াহ সিরিজও শেষ। আল্লাহর অনুগ্রহে “রুকইয়াহ” (আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ) নামে একটি বইও প্রকাশ হয়েছে। এসব যায়গায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আজ আমরা সংক্ষেপে রুকইয়াহ পরিচিতি এবং বিভিন্ন সমস্যার জন্য রুকইয়াহ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো। বলতে পারেন এই লেখাটি অতীত ও ভবিষ্যতের পুরো রুকইয়াহ সিরিজের সারাংশ।
প্রবন্ধটির প্রথম সংস্করণ ১৭ই জুন ২০১৭তে প্রকাশ হয়েছিল। এরপর অনেক কিছু সংশোধন এবং সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। এটি পঞ্চম সংস্করণ। এখানে আরও কিছু যোগ করার পরামর্শ থাকলে জানাবেন, আর কোনো পুস্তক-পত্রিকা অথবা ফেসবুকের বাহিরে অন্য কোথাও প্রকাশ করতে চাইলে অনুগ্রহ করে অনুমতি নিবেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিফাজত করুন। আমীন!

. প্রাথমিক ধারণা-

রুকইয়া, রুকইয়াহ, রুকিয়া, রুকিয়াহ, রুকাইয়া সহ বিভিন্ন উচ্চারণ প্রচলিত রয়েছে, যার মূল হচ্ছে আরবি শব্দ (رقية) আর শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ রুকইয়াহ অথবা রুকইয়া।

রুকইয়াহ কী? - রুকইয়াহ অর্থ ঝাড়ফুঁক করা, মন্ত্র পড়া, তাবিজ-কবচ, মাদুলি ইত্যাদি। আর রুকইয়াহ শারইয়্যাহ () মানে শরিয়াত সম্মত রুকইয়াহ, কোরআনের আয়াত অথবা হাদিসে বর্ণিত দোয়া দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা। তবে স্বাভাবিকভাবে ‘রুকইয়া’ শব্দটি দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা বুঝায়। এই ঝাড়ফুঁক সরাসরি কারো ওপর হতে পারে, অথবা কোনো পানি বা খাদ্যের ওপর করে সেটা খাওয়া অথবা ব্যাবহার করা হতে পারে। এক্ষেত্রে রুকইয়ার পানি, অথবা রুকইয়ার গোসল ইত্যাদি পরিভাষা ব্যবহার হয়। আর সবগুলোই সালাফে সালেহিন থেকে বর্নিত আছে।

রুকইয়ার বিধানঃ রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “রুকইয়াতে যদি শিরক না থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৫৪৪)

বিশুদ্ধ আক্বিদাঃ উলামায়ে কিরামের মতে রুকইয়া করার পূর্বে এই আক্বিদা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া উচিত ‘রুকইয়া বা ঝাড়ফুঁকের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই, সব ক্ষমতা আল্লাহ তা’আলার, আল্লাহ চাইলে শিফা হবে, নইলে নয়।’

ফিক্বহী বিধানঃ ফক্বিহদের মতে রুকইয়াহ বৈধ হওয়ার জন্য৪ শর্ত পূরণ হওয়া আবশ্যক, যথা-

  1. 1.      এতে কোন শিরক বা কুফরির সংমিশ্রণ না থাকা।
  2. 2.      ঝাড়ফুঁকের নিজের কোন সক্ষমতা আছে; এমন কোন বিশ্বাস না রাখা। বরং বিশ্বাস করা, আল্লাহর ইচ্ছাতেই এর প্রভাব হয়, আল্লাহর হুকুমেই এর দ্বারা আরোগ্য হয়।
  3. 3.     এখানে পাঠ করা জিনিসগুলো স্পষ্ট আরবি ভাষায় হওয়া।
  4. 4.       যদি অন্য ভাষায় হয়, তবে এমন হওয়া; যার অর্থ স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে।

রুকইয়া প্রকারভেদঃ বিভিন্ন ভাবে রুকইয়া করা হয়, যেমনঃ দোয়া বা আয়াত পড়ে ফুঁ দেয়া হয়, মাথায় বা আক্রান্ত স্থানে হাত রেখে দোয়া/আয়াত পড়া হয়। এছাড়া পানি, তেল, খাদ্য বা অন্য কিছুতে দোয়া অথবা আয়াত পড়ে ফুঁ দিয়ে খাওয়া এবং ব্যাবহার করা হয়।

পূর্বশর্তঃরুকইয়া করে উপকার পেতে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন।

  1. 1.      নিয়্যাত (কেন রুকইয়া করছেন, সেজন্য নির্দিষ্টভাবে নিয়াত করা)
  2. 2.      ইয়াক্বিন (এব্যাপারে ইয়াকিন রাখা যে, আল্লাহর কালামে শিফা আছে)
  3. 3.     মেহনত (অনেক কষ্ট হলেও, সুস্থ হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে রুকইয়া চালিয়ে যাওয়া)।

লক্ষণীয়ঃরুকইয়ার ফায়দা ঠিকমতো পাওয়ার জন্য দৈনন্দিনের ফরজ অবশ্যই পালন করতে হবে, পাশাপাশি সুন্নাতের প্রতিও যত্নবান হতে হবে। যথাসম্ভব গুনাহ থেকে বাঁচতে হবে। (মেয়েদের জন্য পর্দার বিধানও ফরজ) ঘরে কোনো প্রাণীর ছবি / ভাস্কর্য রাখা যাবেনা। আর সুরক্ষার জন্য সকাল-সন্ধ্যার মাসনুন আমলগুলো অবশ্যই করতে হবে। আর ইতিমধ্যে শারীরিক ক্ষতি হয়ে গেলে, সেই ঘাটতি পোষানোর জন্য রুকইয়ার পাশাপাশি ডাক্তারের চিকিৎসাও চালিয়ে যেতে হবে।

. বদনজর সমস্যা-


আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:
    বদনজর আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে, এরমাঝে কয়েকটি হচ্ছে-
2.      পড়ালেখা বা কোন কিছুতে অনেক ভাল ছিল, হঠাৎ ধ্বস নামা।
3.     কোন কাজে মনোযোগ না থাকা। নামায, যিকর, পড়াশোনাতে মন না বসা।
4.      প্রায়শই শরীর দুর্বল থাকা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব লাগা।
5.      বুক ধড়পড় করা, দমবন্ধ অস্বস্তি লাগা। মেজাজ বিগড়ে থাকা।
6.     অতিরিক্ত চুল পড়া। পেটে প্রচুর গ্যাস হওয়া।
7.      একেরপর এক অসুখ লেগে থাকা, দীর্ঘ চিকিৎসাতেও ভালো না হওয়া।
8.     ব্যবসায়-লেনদেনে ঝামেলা লেগেই থাকা। সব কিছুতেই লস হওয়া।

বদনজরের জন্য রুকইয়াহ:
যদি বুঝা যায় অমুকের জন্য নজর লেগেছে, তাহলে তাকে অযু করতে বলুন, এবংওযুর পানি গুলো আক্রান্তের গায়ে ঢেলে দিন। এরপর চাইলে ভালো পানি দিয়ে গোসল করুন। এতটুকুতেই নজর ভালো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
আর বদনজরের সেলফ রুকইয়া হচ্ছে, বদনজরের রুকইয়া তিলাওয়াত করবেন, অথবা তিলাওয়াত শুনবেন (ডাউনলোড লিংক নিচে)। এর পাশাপাশি ১ম অথবা ২য় নিয়মে রুকইয়ার গোসল করবেন। আর এভাবে লাগাতার ৩ থেকে ৭ দিন করবেন। প্রয়োজনে কয়েকদিন বিরতি দিয়ে আবার শুরু করুন, প্রতিদিন কয়েকবার রুকইয়া শুনুন, আর একবার রুকইয়ার গোসল করুন। এভাবে সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত করতে থাকুন। সমস্যা ভালো হওয়ার পরেও কয়েকদিন রুকইয়াহ করা উচিত।

. রুকইয়ার গোসল-

১ম নিয়ম: একটা বালতিতে পানি নিবেন। তারপর পানিতে দুইহাত ডুবিয়ে যেকোনো দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস, শেষে আবার কোনো দরুদ শরিফ-সব ৭বার করে পড়বেন। পড়ার পর হাত উঠাবেন এবং এই পানি দিয়ে গোসল করবেন।
২য় নিয়ম: একটা বালতিতে পানি নিন। ওপরের দোয়া-কালামগুলো পড়ুন আর মাঝেমাঝে ফুঁ দিন। এরপর ওই পান ইদিয়ে গোসল করুন।
৩য় নিয়ম: (জাদুর সমস্যার জন্য বিশেষভাবে উপকারী বরই পাতার গোসল) ৭টা বরই পাতা বেটে পানিতে গুলিয়ে নিন, এবং সেখানে আয়াতুল কুরসি, সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস- ৩বার করে পড়ে ফুঁ দিন। এরপর এই পানি থেকে তিন ঢোক পান করুন, আর বাকিটা দিয়ে গোসল করুন।
(যদি টয়লেট আর গোসলখানা একসাথে থাকে, তাহলে অবশ্যই বালতি বাহিরে এনে এসব পড়বেন। প্রথমে এই পানি দিয়ে গোসল করে এরপর চাইলে অন্য পানি দিয়ে ইচ্ছামত গোসল করতে পারেন। যার সমস্যা সে পড়তে না পারলে অন্য কেউ তার জন্য পড়বে, এবং অসুস্থ ব্যক্তি শুধু গোসল করবে।)

. জিনের স্পর্শ-

আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:
জিন দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে, এরমাঝে কয়েকটি হচ্ছে-

  • 1.      রাতে ঠিকমত ঘুমাতে না পারা। ঘুমালেও বারবার জেগে ওঠা।
  • 2.      প্রায়শই ঘুমের মাঝে বোবা ধরা।
  • 3.     ভয়ংকর স্বপ্ন দেখা। উঁচু থেকে পড়ে যেতে, কোন প্রাণীকে আক্রমণ করতে দেখা।
  • 4.      দীর্ঘ মাথাব্যথা, অথবা অন্য কোন অঙ্গে সবসময় ব্যাথা থাকা।
  • 5.      নামাজ, তিলাওয়াত, যিকির আযকারে আগ্রহ উঠে যাওয়া।
  • 6.     মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা, একটুতেই রেগে যাওয়া।
  • 7.      আযান বা কোরআন তিলাওয়াত সহ্য না হওয়া।


    জ্বিনের আসরের জন্য রুকইয়াহ:
    যিনি রুকইয়া করবেন তিনি প্রথমে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে নিজের শরীরে হাত বুলিয়ে নিবেন। এরপর রুকইয়া শুরু করবেন। রুগীর পাশে বসে জোর আওয়াজে রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়তে থাকুন। রুকইয়ার অনেক আয়াত আছে সেগুলো শেষে বলা হবে। তবে জ্বিনের রোগীর রুকইয়ার জন্য স্বাভাবিকভাবে-
    • 1.      সুরা ফাতিহা
    • 2.      আয়াতুল কুরসি
    • 3.     বাকারার শেষ ২ আয়াত
    • 4.      সুরা ইখলাস, ফালাক, সুরা নাস। সম্ভব হলে এর সাথে-
    • 5.      সুরা মু’মিনুনের ১১৫-১১৮ নং আয়াত
    • 6.     সুরা সফফাতের প্রথম ১০ আয়াত এবং
    • 7.      সুরা জিনের ১-৯ আয়াত পড়া যেতে পারে।

    জ্বিন ছেড়ে দেয়া পর্যন্ত এগুলো বারবার পড়তে থাকুন, পড়ার মাঝেমাঝে রুগীর ওপর ফুঁ দিতে পারেন, (বৈধ ক্ষেত্রে) মাঝেমাঝে রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়ুন। আর পানিতে ফুঁ দেয়ার পর মুখে এবং হাতে-পায়ে ছিটিয়ে দিন। জিন কথা বলতে শুরু করলে মাঝেমাঝে তাকে চলে যাওয়ার ব্যাপারে নির্দেশ দিতে হবে, এরপর আবার অবিরত তিলাওয়াত চালু রাখতে হবে। জ্বিনের রুগীর ক্ষেত্রে সাধারণত কথাবার্তা বলে জ্বিন বিদায় করতে হয়। এক্ষেত্রে জ্বিনের কথায় ঘাবড়ানো যাবেনা, তার কথা সহজে বিশ্বাসও করা যাবে না। হুমকিধামকি দিলে তাকেই উল্টা ধমক দিতে হবে। মোট কথা, যিনি রুকইয়া করবেন তাঁকে উপস্থিতবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে। একদিনে না গেলে পরপর কয়েকদিন কয়েকঘন্টা করে এভাবে রুকইয়া করে যেতে হবে। ইনশাআল্লাহ এক পর্যায়ে জ্বিন পালাতে বাধ্য হবে।

    . বাড়িতে জ্বিনের উৎপাত থাকলে-

    বাড়িতে জ্বিনের কোনো সমস্যা থাকলে পরপর তিনদিন পূর্ন সুরা বাক্বারা তিলাওয়াত করুন, এরপর আযান দিন। তাহলে ইনশাআল্লাহ সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। তিলাওয়াত না করে প্রতিদিন যদি সুরা বাক্বারা প্লে করা হয় তাহলেও ফায়দা পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে সবচেয়ে ভালো ফল পেলে তিলাওয়াত করা উচিত। এরপর প্রতিমাসে অন্তত এক দুইদিন সুরা বাকারা পড়বেন। অধিক ফায়দার জন্য চাইলে সুরা বাকারা পড়া শেষে পানিতে ফুঁ দেয়ার পর পুরো বাড়িতে ছিটিয়ে দিতে পারেন।
    আর ঘরে প্রবেশের সময়, বের হবার সময়, দরজা-জানালা বন্ধের সময় বিসমিল্লাহ বলবেন। সন্ধ্যা বেলায় জানালা বন্ধ রাখবেন। ঘরে কোন প্রাণী বা মানুষের ছবি অথবা মূর্তি ঝুলিয়ে রাখবেন না। ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই সমস্যা কেটে যাবে।

    . যাদুগ্রস্ত-

    জাদু বা ব্ল্যাক ম্যাজিকে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:
    অনেক সময় যাদু করতে জ্বিনের সাহায্য নেয়া হয়, তাই যাদুগ্রস্ত রোগীর মাঝে জিন আক্রান্তের কিছু লক্ষণও দেখা যেতে পারে। এছাড়াও যাদুগ্রস্ত রোগীর মাঝে কিছু বিশেষ লক্ষণ দেখা যেতে পারে। যেমন:
    • 1.      হঠাৎ কারও প্রতি বা কোন কিছুর প্রতি তীব্র ভালবাসা অথবা ঘৃণা তৈরি হওয়া, যা আগে ছিল না।
    • 2.      বিশেষ কোন কারন ছাড়াই জটিল-কঠিন রোগে ভোগা। যার চিকিৎসা করলেও সুস্থ না হওয়া।
    • 3.     পরিবারের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি লেগেই থাকা। বিশেষতঃ স্বামীস্ত্রীর মাঝে।
    • 4.      দৃষ্টিভঙ্গি বা ব্যক্তিত্বে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যাওয়া। যাতে নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়, চারপাশের মানুষও কষ্ট পায়।
    • 5.      অদ্ভুত আচরণ করা। যেমন, কোন কাজ একদমই করতে না চাওয়া। কিংবা দিন-রাতের নির্দিষ্ট কোন সময়ে ঘরের বাইরে যেতে না চাওয়া।
    • 6.     মেরুদণ্ডের নিচের দিকে ব্যাথা করা।
    • 7.      বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মেজাজ খারাপ, মাথা ব্যথা অথবা অসুস্থ থাকা।

    যাদু আক্রান্ত হলে বুঝার উপায়:
    ওপরের এক বা একাধিক লক্ষণের সাথে মিল পাওয়া যাবে। আর যাদু আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়লে, অথবা অডিও শুনলে অস্বাভাবিক অনুভূতি হবে। যেমন, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, বমি আসা, বুক ধড়ফড় করা, শরীর অবশ হয়ে আসা ইত্যাদি।

    জাদুর সমস্যার জন্য রুকইয়া:
    সমস্যার ধরণ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার রুকইয়াহ করতে পরামর্শ হয়। তবে প্রসিদ্ধ সেলফ রুকইয়া হচ্ছে- প্রথমে সমস্যার জন্য নিয়াত ঠিক করে, ইস্তিগফার দরুদ শরিফ পড়ে শুরু করুন। তারপর রুকইয়ার আয়াতগুলো পাঠ করে অথবা কোন রুকইয়া শুনে নিশ্চিত হয়ে নিন আসলেই সমস্যা আছে কি না! শাইখ সুদাইস অথবা লুহাইদানের রুকইয়া শুনতে পারেন (ডাউনলোড লিংক নিচে)। সবশেষে একটি পাত্রে পানি নিন, এরপর নিচের আয়াতগুলো ৩বার অথবা ৭বার করে পড়ুন, পড়ার মাঝেমাঝে পানিতে ফুঁ দিন-
    ক. সুরা ফাতিহা এবং আয়াতুল কুরসি
    খ. সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২ সুরা ত্বহা ৬৯নং আয়াত
    1.     وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُوْنَ - فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُونَ - فَغُلِبُوْا هُنَالِكَ وَانقَلَبُوْا صَاغِرِيْنَ - وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِيْنَ -قَالُوْا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ - رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُوْنَ -
    2.     فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُۖ إِنَّ اللّٰهَ سَيُبْطِلُهُۖ إِنَّ اللّٰهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِيْنَ - وَيُحِقُّ اللّٰهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْكَرِهَ الْمُجْرِمُونَ -
    3.     وَأَلْقِ مَافِي يَمِيْنِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوْاۖ إِنَّمَا صَنَعُوْا كَيْدُ سَاحِرٍۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتٰى -
    গ. এরপর সুরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস- সব ৩বার করে।
    সমস্যা অনুযায়ী সাতদিন অথবা এরচেয়ে বেশি সময় যাবত প্রতিদিন সকাল-বিকাল এই পানি খেতে হবে, এবং গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করতে হবে। আর জাদুর সমস্যার থেকে সুস্থতা লাভের নিয়াত করে প্রতিদিন রুকইয়ার আয়াতগুলো তিলাওয়াত করতে হবে, অথবা দেড়-দুইঘণ্টা রুকইয়ার অডিও শুনতে হবে। কোন ক্বারির সাধারণ রুকইয়া একবার, আর সুরা ইখলাস, ফালাক, নাসের রুকইয়াহ একাধিকবার (ডাউনলোড লিংক নিচে)। এর পাশাপাশি আল্লাহর কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া করতে হবে।
    এভাবে রুকইয়াহ করার পর সপ্তাহ শেষে আপনার অবস্থা পর্যালোচনা করুন, প্রয়োজনে চিকিৎসার মেয়ার বাড়িয়ে নিন। রুকইয়াহ চলাকালীন সমস্যা বেড়ে গেলেও বাদ দিবেন না, হাল ছাড়বেন না। সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া পর্যন্ত রুকইয়া অবিরত রাখুন।

    দ্বিতীয়ত:শুরুতে বর্ণনা করা রুকইয়ার গোসলগুলোর মাঝে ৩য় পদ্ধতিটি জাদুর চিকিৎসায় খুব উপকারী। সমস্যা বেশি হলে প্রথমে কয়েকদিন উল্লেখিত নিয়মে বরই পাতার গোসল করে এরপর সেলফ রুকইয়াহ শুরু করা যেতে পারে। ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুতই জাদুর সমস্যা থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন।

    যাদুর কোন জিনিশ অথবা তাবিজ খুঁজে পেলে:
    সন্দেহজনক কোন তাবিজ পেলে অথবা কি দিয়ে যাদু করেছে যদি পাওয়া যায়, তাহলে সেসব বের করে আলাদা আলাদা করে ফেলুন, কোন গিরা বা বাধন থাকলে কেটে ফেলুন, শক্ত কিছু দিয়ে বাধা থাকলে ভেঙ্গে ফেলুন। এরপর একটা পাত্রে পানি নিয়ে ওপরে বলা জাদুর রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিন, এরপর তাবিজ অথবা যাদুর জিনিশগুলো ডুবিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ, তাহলে ইনশাআল্লাহ যাদু নষ্ট হয়ে যাবে। পরে সেগুলো পুড়িয়ে বা নষ্ট করে ফেলুন

    . একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে:

    একসাথে যাদু, জ্বিন কিংবা বদনজর সম্পর্কিত একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে প্রথমে কিছুদিন বদনজরের জন্য রুকইয়া করতে হবে, এরপর জ্বিনের জন্য এবং যাদুর জন্য রুকইয়া করতে হবে। এর মাঝেমাঝে শারীরিক রোগব্যাধির জন্য চিকিৎসা নেয়া বা ডাক্তারের ঔষধ সেবন করতেও কোন সমস্যা নেই। কিন্তু রুকইয়াহ করার কারণে ব্যাথা শুরু হলে এজন্য ঔষধ খাবেন না। বরং রুকইয়ার গোসল করলে অনেকটা স্বস্তি পাবেন ইনশাআল্লাহ।

    . ওয়াসওয়াসা রোগ-

    আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:
    1.      অকারণে সর্বদা চিন্তিত থাকা। মাথায় বিক্ষিপ্ত চিন্তা ঘোরাঘুরি করার কারণে কোন কিছুতে মন দিতে না পারা।
    2.      ওযু-গোসল অথবা নামাজের বিশুদ্ধতা নিয়ে অতিরিক্ত দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকা।
    3.     পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা। টয়লেট বা গোসলখানায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা। এক অঙ্গ বারবার ধোয়া, এরপরেও তৃপ্ত হতে না পারা।
    4.      বারবার মনে হওয়া ওযু ভেঙ্গে যাচ্ছে, অথবা প্রসাবের ফোঁটা পড়ছে, অথবা বায়ু বের হয়ে যাচ্ছে। বিশেষতঃ নামাজের সময় এমন হওয়া।
    5.      আল্লাহ তা’আলা, রাসুল অথবা ইসলামের ব্যাপারে বারবার মাথায় অবমাননাকর চিন্তা আসা।
    6.     বারবার নামাজের রাকাত ভুলে যাওয়া, কিরাত, রুকু-সাজদা ইত্যাদির ব্যাপারে সন্দেহে ভোগা।
    7.      সমস্যা বেশিদিন পুরনো হয়ে গেলে এসব থেকে আরও শারীরিক-মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর জিন সংক্রান্ত কোন সমস্যা (জিনের বদনজর বা জিনের আসর) থাকলেও ওয়াসওয়াসার সমস্যা প্রকট হতে পারে।

    ওয়াসওয়াসার প্রতিকার-
    ১. এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়া। প্রতি নামাজের আগে-পরে, অন্যান্য ইবাদতের সময়, কোন গুনাহের জন্য ওয়াসওয়াসা অনুভব করলে এটা পড়া -
    أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ، مِنْ غَضَبِهٖ وَعِقَابِهِ، وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ، وَأَنْ يَّحْضُرُوْنِ
    ঈমান নিয়ে সংশয় উদিত হলে পড়া (সুরা হাদীদ, আয়াত নং ৩)
    هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ ۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْم
    [এছাড়া "আমানতু বিল্লাহ বলা" এবং "সুরা ইখলাস পড়ার" কথাও বর্ণিত হয়েছে] এবং এরপর ওয়াসওয়াসা পাত্তা না দিয়ে অন্য কিছুতে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া।
    ২. পুরুষ হলে জামাআতের সাথে নামাজ পড়া, মুত্তাকী পরহেজগারদের সাথে উঠাবসা করা।
    ৩. নামাজে ওয়াসওয়াসা হলে বামে হালকা করে ৩বার থুতু ফালানো। আর রাকাত ভুলে গেলে- মনে থাকা কম সংখ্যাটা ধরে, এরপর প্রতি রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়া, আর নামাজের শেষে সাহু সাজদা দেয়া।
    ৫. সকাল-সন্ধ্যায় ও ঘুমের আগের আমলগুলো গুরুত্বের সাথে করা। টয়লেটে প্রবেশের দোয়া পড়া।
    ৬. আয়াতুল হারক (আযাব এবং জাহান্নাম সংক্রান্ত আয়াত) বেশি বেশি তিলাওয়াত করা। এবং প্রতিদিন এসবের তিলাওয়াত শোনা। (ডাউনলোড লিংক নিচে)
    ৭. সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস - ৩বার করে। এরপর শুধু সুরা নাস অনেক বার (৭বার/৩৩বার/আরও বেশি) পড়ে পানি আর অলিভ অয়েলে ফুঁ দেয়া। এরপর সুস্থতার নিয়াতে প্রতিদিন ২-৩ বেলা এই পানি পান করা। মাথায় এবং বুকে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা।
    ৮. বদনজর বা জিনের সমস্যা থাকলে সে অনুযায়ী রুকইয়াহ করা। যথাসম্ভবত ওয়াসওয়াসা পাত্তা না দেয়া; ইগনোর করা, এমনকি মুখে বিরক্তির ভাবও প্রকাশ না করা। আর আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকা।

    ১০. সাধারণ অসুস্থতার জন্য রুকইয়াহ:

    বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের রুকইয়ার জন্য রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কিরাম রা. এবং বিভিন্ন যুগের সালাফদের থেকে অনেক দু’আ-কালাম পাওয়া যায়, সুস্থতা লাভের নিয়াতে সেসব গুরুত্বের সাথে পড়া।
    যেমন, কোরআন থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকটি রুকইয়া হচ্ছে- সুরা ফাতিহা, ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস এবং ৬টি আয়াতে শিফা- (সূরা তাওবাহ/১৪, ইউনূস/৫৭, নাহল/৬৯, বানী ইসরাইল/৮২, শু’আরা/৮০, ফুসসিলাত/৪৪)
    1.    وَيَشْفِ صُدُوْرَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِيْنَ
    2.    وَشِفَاءٌ لِّمَا فِي الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ
    3.    يخْرُجُ مِنْ بُطُوْنِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيْهِ شِفَاءٌ لِّلنَّاسِ
    4.    وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ 
    5.    وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِيْنِ
    6.    قُلْ هُوَ لِلَّذِيْنَ آمَنُوْا هُدًى وَّشِفَاء
    এছাড়া রাসুল স. থেকে বর্ণিত রুকইয়ার উপযোগী অনেক দো’আ আছে, যেমন-
    ·       اللَّهمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ الْبَاسَ اِشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِيْ لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
    ·       بِسْمِ اللّٰه أَرْقِيكَ،  مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيْكَ،  مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ،  اَللَّه يَشْفِيكَ بِسْمِ اللّٰهِ أَرْقِيْكَ
    ·       بِاسْمِ اللّٰهِ يُبْرِيْكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيْكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِيْ عَيْنٍ
    ·       بِسْمِ اللَّهِ(৩বার) ، أَعُوذُ بِاللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ (৭বার)
    ·       أَسْأَلُ اللَّهَ الْعَظِيْمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ، أَنْ يَّشْفِيَكَ (৭বার)
    এসব আয়াত এবং দোয়াগুলো ৩বার অথবা ৭বার পড়ুন, ব্যাথার যায়গায় অথবা রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়ুন, অথবা এসব পড়ার পর রুগীর ওপর ফুঁ দিন। পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করুন, গোসল করুন অথবা অলিভ অয়েলে ফুঁ দিয়ে মালিশ করুন। মধু-কালোজিরায় ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন পানিতে গুলিয়ে খান। এসবের পাশাপাশি শাইখ লুহাইদান অথবা সা’দ আল গামিদির রুকইয়াহ শোনা যেতে পারে। (ডাউনলোড লিংক নিচে)

    ১১. শিশুদের জন্য রুকইয়ার নিয়ম:

    শুরুতে মনে মনে নিয়াত করে নিন কোন সমস্যার জন্য রুকইয়াহ করবেন, এরপর শিশুর মাথায় হাত রেখে কয়েকবার এই দুয়াটি পড়ুন, আর মাঝেমাঝে দিন। চাইলে সাথে ওপরের দোয়াগুলোও পড়া যেতে পারে।
    أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَّهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَّامَّةٍ
    এরপর সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি এবং সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস - ৩ বার করে পড়া।
    সমস্যার মাত্রা বেশি হলে উল্লেখিত পদ্ধতিতে রুকইয়া করা শেষে আরেকবার এগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করান এবং গোসল করান। সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন রুকইয়াহ এবং এই কাজগুলো করতে থাকুন। এছাড়া কোন অঙ্গে বিশেষ রোগব্যাধি থাকলে এসব দোয়া-কালাম পড়ে অলিভ অয়েল বা কালোজিরার তেলে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন মালিশ করা।
    ছোটদের পাশাপাশি বড়দের মাঝে কেউ নিজে নিজে রুকইয়াহ করতে অক্ষম হলে তার ওপরেও একই নিয়মে রুকইয়াহ করা যায়।

    ১২. রুকইয়ার আয়াত:

    কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা রুকইয়া করা হয়, তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কিছু আয়াত হচ্ছে-
    1.      সুরা ফাতিহা
    2.      সুরা বাকারা ১-৫
    3.     সুরা বাকারাহ ১০২
    4.      সুরা বাকারাহ ১৬৩-১৬৪
    5.      সুরা বাকারাহ ২৫৫
    6.     সুরা বাকারাহ ২৮৫-২৮৬
    7.      সুরা আলে ইমরান ১৮-১৯
    8.     সুরা আ'রাফ ৫৪-৫৬
    9.      সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২
    10. সুরা ইউনুস ৮১-৮২
    11.   সুরা ত্বহা ৬৯
    12.   সুরা মু'মিনুন ১১৫-১১৮
    13. সুরা সফফাত ১-১০
    14.  সুরা আহকাফ ২৯-৩২
    15.  সুরা আর-রাহমান ৩৩-৩৬
    16.  সুরা হাশর ২১-২৪
    17.   সুরা জিন ১-৯
    18. সুরা ইখলাস
    19.  সুরা ফালাক
    20. সুরা নাস
    এই আয়াতগুলো একসাথে পিডিএফ করা অবস্থায় নিচে লিংক দেয়া ওয়েবসাইটে পাবেন।

    . যাদু, জিন, শয়তান ইত্যাদির ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়:

    ১. প্রতিটি কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা। যেমন, খাবার পূর্বে, ঘরে ঢুকতে - বের হতে, দরজা-জানালা বন্ধ করতে ইত্যাদি।

    ২. বিষ, যাদু এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাঁচতে সকাল-সন্ধ্যায় এই দোয়া তিনবার পড়াঃ
    أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
    আ’উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মা-তি, মিং-শাররি মা-খলাক্ব। (জামে তিরমিযী, ৩৫৫৯)

    ৩. সব ধরনের ক্ষতি এবং বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকতে এই দোয়া সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়াঃ
    بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ العَلِيْمُ
    বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা-ইয়াদ্বুররু মা‘আসমিহী, শাইউং ফিলআরদ্বী ওয়ালা- ফিসসামা-ই, ওয়াহুওয়াস সামি’উল ‘আলীম। (জামে তিরমিযী, ৩৩৩৫)

    ৪. প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস তিনবার করে পড়া। এবং এটা বিশেষ গুরুত্বের সাথে করা। (সুনানে আবি দাউদ)

    ৫. ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া। সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতের তালুতে ফু দিয়ে পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নেয়া। (বুখারী)

    ৬. টয়লেটে ঢোকার পূর্বে দোয়া পড়া-
    اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
    আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা, মিনাল খুবসি ওয়াল খবা-ইছ। (মুসলিম, ৩৭৫)
    ৭. তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। প্রতিদিনের অন্যান্য মাসনুন আমল করতে থাকা। এবং আল্লাহর কাছে সবসময় দোয়া করতে থাকা।

     ------------------------------------
    মুখতাসার রুকইয়াহ শারইয়্যাহ(সংক্ষেপে বিভিন্ন সমস্যার জন্য ইসলাম সম্মত ঝাড়ফুঁক)
    রচনায়: আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ
    প্রথম প্রকাশ: ১৭ – জুন – ২০১৭
    সর্বশেষ আপডেট: (৫.০) পঞ্চম সংস্করণ, ০৭ – আগস্ট – ২০১৯
    রুকইয়াহ অডিও ডাউনলোড: https://ruqyahbd.org/download
    রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপ: https://facebook.com/groups/ruqyahbd
    রুকইয়াহ বিষয়ক অন্যান্য তথ্যের জন্য: www.ruqyahbd.org
    Share: