[ক] (07-August-2020)
রুকইয়াহ বিষয়ে অভিজ্ঞতার গল্প...
------------------
সেদিন এক ভাই রাক্বি হেল্পলাইন গ্রুপে একটা প্রশ্ন করছিলেন। প্রশ্নটা এরকম -
"ভাই, রুকইয়া বইয়ে সিহরের ক্ষেত্রে যথা- বিয়ে ভাঙার, সম্পর্ক বিচ্ছেদ, বশ, পাগল বানানো, সহবাসে অক্ষম, গর্ভের সন্তান নষ্টের সিহরের জন্য 'সিহর-মাস' বা 'সিহরের রুকইয়ার' অডিও সাজেস্ট করা হয়নি। এটা কেন করা হয়নি? তাহলে এই অডিওর ফায়দাটা কী? জানালে উপকৃত হব।"
.
উনাকে দেয়া উত্তরটি একটু ঘসামাজা করে শেয়ার করছি:
---------
বারবার অথবা প্রতিদিন দীর্ঘ সময় শোনার জন্য ভাঙাভাঙা আয়াতের রুকইয়াহ বেশি উপকারী না। এতে তাৎক্ষণিক ইফেক্ট হলেও দীর্ঘমেয়াদে কিছু সমস্যা হয়, "আয়াত কাস্টমাইজেশন এর ধোকা" প্রবন্ধে কয়েকমাস আগে আলোচনা হয়েছে এবিষয়ে। যদিও কেউ কেউ সেটা পছন্দ করেননি, কিন্তু বাস্তবতা অস্বীকার করে তো লাভ নেই।
তবে হ্যা! সরাসরি রুকইয়াহ করার সুযোগ না পেলে, তখন মাঝেমাঝে এগুলো রুকইয়ার নিয়াত করে শোনা যেতে পারে। আল্লাহ চায়তো ফায়দা হবে।
.
পরের কথা হল, জ্বিন ও জাদুর চিকিৎসা পরবর্তী পরামর্শগুলোর ক্ষেত্রে আমি শাইখ ওয়াহিদ বালির উইকায়াতুল ইনসান (জিন বিষয়ক) এবং আসসারিমুল বাত্তার (জাদু বিষয়ক) এর শেষ সংস্করণ অনুসরণ এর চেষ্টা করেছি।
কারণ সার্বিক বিবেচনায় শাইখকে আমি যথেষ্ট মু'তাদিল এবং মধ্যপন্থী হিসেবে পেয়েছি।
আপনারাও জানেন উনার জাদু বিষয়ক বইটি (যাদুকরের গলায় ধা...) এই যামানায় রুকইয়াহ বিষয়ে সবচেয়ে মাক্ববুল ও মাশহুর গ্রন্থগুলোর অন্যতম। আর উনার বই থেকে মানুষ প্রায় দীর্ঘদিন যাবত উপকৃত হচ্ছে।
যতদুর মনে পড়ে, এর প্রথম প্রকাশ ১৪১১হিজরি সনে, আর বাংলাসহ বেশিভাগ অনুবাদ ১৪১৭এর দশম সংস্করণ থেকে হয়েছে, আর সম্ভবত ১৪২৯হিজরি সনে সর্বশেষ (২১তম) সংস্করণ প্রকাশ হয়েছে।
প্রথমতঃ শাইখ এই বইটা নিজের ইলম ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে লিখেছেন তো বটেই, এরপর ১৮বছর যাবত এটা রিভিশন এবং সংস্করণের কাজ করে গেছেন। জ্বিন বিষয়ক আরবি বইটির প্রকাশকাল ১৪০৯হিজরি, অর্থাৎ এখন থেকে অন্তত ৩২বছর আগের। তার মানে এই বইগুলোর প্রতিটা আলোচনার পেছনে উনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ইতিহাস আছে। আর আল্লাহ দুনিয়াব্যাপী এই খিদমত ছড়িয়েও দিয়েছে। এসবও উনার প্রতি আস্থার কারন।
তো আমি শাইখের যত আলোচনা দেখেছি ও শুনেছি, উনার যে বইগুলো সবসময় পড়েছি, এথেকে শিখেছি উনি দীর্ঘমেয়াদে শোনার জন্য 'সলিড তিলাওয়াত' প্রাধান্য দিয়েছেন।
যেমন: জ্বিনের রোগির চিকিৎসার পর 'সুরা বাকারা, আলে ইমরান, রা'দ, কাহাফ, আহযাব, মুলক, আ'লা...' ইত্যাদি অনেকগুলো সুরা সপ্তাহে কয়েকবার করে শোনাতে বলেছেন। জাদুর চিকিৎসায় যে যাদুগুলোর সাথে সাধারণত জিনের সংশ্লিষ্টতা থাকে, সেগুলোতে সুরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, জ্বিন.. এর তিলাওয়াত শোনার কথা বলেছেন, এছাড়া 'সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস' এবং 'আয়াতুল কুরসি'র কথাও বারবার বলেছেন।
বিভিন্ন রোগীদের তিলাওয়াত করতে যখন বলেছেন, তখন কিছু কিছু পূর্ণ সুরা দিনের বিভিন্ন সময়ে পড়তে বলেছেন।
সারকথা হল, আমি জাদু ও জ্বিন সংক্রান্ত বিষয়গুলোর অধিকাংশ তাত্বিক ক্ষেত্রে শাইখ ওয়াহিদ বিন আব্দুস সালাম বালিকে অনুসরণীয় হিসেবে নিয়েছি। আর এধরণের সাজেশন দেয়া আমি উনার থেকেই শিখেছি।
এর বাহিরে উস্তায মুহাম্মাদ তিম হাম্বলের থেকেও পারিপার্শ্বিক অনেক বিষয় শিখেছি, উনি সবসময়ই মাসনুন রুকইয়ার প্রতি অধিক গুরুত্ব দেন।
শেষ কথা হল, ভাই আমি তো দাঈ! অমুক-তমুক ভাইদের মত আমার নিত্যনতুন রুকইয়ার তরিকা আবিষ্কারের দরকার নেই। কারও সাথে পাল্লা দেয়ারও কোনো প্রয়োজন নেই।।
আমি জানি সুস্থতা কেবল আল্লাহই দেন, আর দ্বীনের ওপর অবিচল থেকে কোরআন, সুন্নাহ এবং পূর্বসূরিদের কাজগুলো প্রচার করে যেতে পারলেই নিজেকে সফল মনে করব।
আল্লাহ যেন আমাদের হিদায়াতের ওপর থাকার তাওফিক দেন, ইলম ও আমলে বরকত দেন। আমিন।
[খ] (27-May-2021)
রুকইয়াহ বই, রুকইয়াহ শারইয়াহ সিরিজ এবং অন্যান্য আলোচনার উৎস
---------
আমাদের হেদায়া সানির উস্তায মাওলানা আব্দুল হালিম সাহেব হুজুর এরকম একটা কথা বলেছিলেন।
"অনেক মানুষের ইলম কবুল না হওয়ার পেছনে কারন হল, কারও কথা কোট করে নাম না বলা, এমন ভাবে বলে যাওয়া যেন নিজেরই কথা এটা। মোটকথা, কার্টেসি দেয়া ইলমের আদব।"
আলহামদুলিল্লাহ, এই কার্টেসি দেয়ার আদব বজায় রাখি শুরু থেকেই।
যারা ২০১৬ থেকে আমার লেখাগুলো পড়ছেন তারা জানেন, আমার কোন সিরিজ, কোন প্রবন্ধ কি অনুসরণ করে লেখা, কোনো লেকচারের খোলাসা, কোন দরসের অনুলিপি, কোন প্রবন্ধের পরিমার্জিত রুপ এটা সবসময়ই ক্লিয়ারলি বলে দেই। একদম শুরুতে যখন বাংলা ভাষায় রুকইয়া বিষয়ক কন্টেন্ট খুবই অপ্রতুল ছিল, সেসময় মুফতি জুনায়েদের আলোচনা থেকে শুরু, তখন থেকে। ইভেন ইয়েমেনের শায়খ ইলিয়াস ফয়সালকে এখনও কজন চিনে? তার মেসেজ অনুবাদ করে পোস্ট করলে সেটাও বলে দিই।
রুকইয়াহ সিরিজের পাশাপাশি বইয়ের ভুমিকাতেও বলে দিয়েছি উৎসগুলো, বইয়ের শেষে শায়খ ওয়াহিদ বালির বইয়ের নাম দিয়ে পড়তে রিকোমেন্ডও করেছি।
(নিচে দেয়া লিংক ও স্ক্রিনশটগুলো দ্রষ্টব্য)
তাফসিরে ইবনে কাসির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, মিশকাতুল মাসাবিহ, শরহে বেকায়া, শরহে জামি, হেদায়া, জামিউল উলুমি ওয়াল হিকাম- এসব মাস্টারপিস কাজও অতীতের অন্যদের কাজের ওপর বেজ করে করা।
আমি সিনিয়রদের ইত্তিবা করব, তাদের ইলমের ওপর নতুন কাজ করব, এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। আমি যদি সব নিজের উদ্ভাবিত ফর্মূলা আর দু'দিনের অভিজ্ঞতার গল্প লিখে মানুষকে অনুসরণ করতে বলতাম, সেটাই বরং ঝুঁকির কথা ছিল।
ইনশাআল্লাহ বড়দের কাজের ওপর আগামীতে আরও অনেক ভালো কাজ হবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দিন। আমিন।
footnote :
1. ২০১৭ সালে জিন সিরিজের লেখা (একদম শেষের কয়েক প্যারা দ্রষ্টব্য) https://ruqyahbd.org/.../jinn-repulse-and-important-for-raqi
2. একটা লেখা এবং কিছু কথা - https://m.facebook.com/groups/ruqyahbd/permalink/1216119825242001/
3. screenshot - https://imgur.com/MCG4kVp and https://imgur.com/ByhOTmi
0 comments:
Post a Comment