[ক]
গতবছর সিটিতে গিয়েছিলাম কিছু কাজে, ওয়াইফও ছিল সাথে। ইফতারের অল্প কিছুক্ষণ আগে একভাই দেখতে পেয়ে নিয়ে গেলেন বাসায়, উনার বাসায় পৌঁছানোর মিনিটখানেক দূরে থাকতেই আজান দিয়ে দিয়েছে।
উনি বললেন ভাই! ইফতার করেন - ইফতার করেন!! দেরি করছেন কেন?
-- হ, তাইতো, দুই মিনিট দেরি করলে তো বিরাট সমস্যা,
--- সমস্যা না ভাই, এক মিনিট থামলেই ইহুদি হয়ে যাবেন!! (নাউযুবিল্লাহ)
-- ফেসবুকের ফেকাহ পড়ে এরকমই লাগে।
[খ]
ভাই, বুঝার চেষ্টা করেন। ইহুদী-খ্রিষ্টানরা দুইচার মিনিট দেরি করে ইফতার করে না।
সমস্যা হল, আপনি হাদিস আল্লাহর রাসুল থেকে নিবেন সালাফদের সুত্রে, আর হাদিসের অর্থ নিজে উৎপাদন করবেন, তাহলে ঝামেলা হবেই।
যতদূর জানি ইহুদিদের রোজার পদ্ধতি হল, একদিন সুর্য ডোবা থেকে শুরু করে পরেরদিন সুর্য ডুবে অন্ধকার হয়ে যাওয়া পর্যন্ত সবকিছু থেকে বিরত থাকে। ইবনু তাইমিয়া রহ. এর কোনো লেখাতে সম্ভবত পড়েছিলাম উনি এই কারণে শিয়াদের এক ফিরকাকে ইহুদিদের সাথে তুলনা করছিলেন। তারা অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত বা শুকতারা ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করে।
হালের কুরানিস্টদের কেউ কেউ এরকম করে শুনছি। হতেও পারে, মিশনারিরা যেহেতু এদের মুভমেন্ট পরিচালনা করে...।
[গ]
ইফা. বা আরও কিছু ক্যালেন্ডারে যে ২-৩মিনিট বাড়িয়ে দেয়, এটা সতর্কতা হিসেবে। যাতে সময়ের আগে ইফতার করে রোজা নষ্ট না হয়। এটায় সমস্যা নাই। এরকম ২-৪মিনিট এর জন্য আপনি ইহুদি-খ্রিষ্টান কোনোটাই হবেন না। ওদের সাথে সাদৃশ্যও হবে না।
[ঘ]
আচ্ছা, খেয়াল করেন। রাজশাহী জেলার দুইটা এলাকা, পুঠিয়া এবং গোদাগাড়ী। জিপিএস দিয়ে একদম একুরেট হিসেব করলে পুঠিয়ার চেয়ে গোদাগাড়ীতে সুর্য ডোবে পাক্কা ২মিনিট পরে। একই জেলায় ২মিনিটের ব্যবধান। রাজশাহী সিটির সাথে দুই এলাকারই ১মিনিট কম-বেশ তফাত। সাধারণত লেখা হয় শহরের সময়টা। এখন যদি গোদাগাড়ীর মানুষ ক্যালেন্ডার ধরে একদম ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথেই ইফতার করে, তাহলে সে সুর্য ডোবার ১মিনিট আগেই রোজা ভেঙ্গে দিল, পুঠিয়ার সময় দেখে ইফতার করলে ২মিনিট আগেই রোজা শেষ। আর ভোর বেলা পুঠিয়ার মানুষ যদি একদম সময় পর্যন্ত খেতে থাকে, তাহলে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পরেও ১মিনিট খাবার খেল।
তারমানে বিষয়টা এতটা সিম্পল না, যে আলেমরা ৩মিনিট যোগ করে লিখেছে, আপনি ৩মিনিট আগে খাইলেন আর ১০০% সহিহ আমল হয়ে গেল। বরং উল্টা হতে পারে।
সুতরাং সুর্য ডুবেছে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সতর্কতা হিসেবে এক-দুই মিনিট দেরি করা যায়, আর সাহরিতে সতর্কতা হিসেবে একটু আগে শেষ করা যায়। এতে সমস্যা নাই। আলেমরা এটাকে খারাপ বলেনাই।
[ঙ]
এতকিছুর পরেও অনেকে বুঝতে চায়না, যা বুঝছি বুঝছিই। এরকম ভাব নিয়ে থাকে।
তাদের জন্য প্রশ্ন হল, নবীজি কি ঘড়ি বা ক্যালেন্ডার দেখে ইফতার করেছে? করতে বলেছে? বলেনাই।
আপনি যেটা করবেন, প্রতিদিন সন্ধ্যায় উঁচু গাছ বা টিলা বা এলাকার সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং এর ছাদে উঠে দেখবেন সুর্য ডুবেছে কি না। যদি দেখেন ডুবল, তখন ওই গাছের ওপরে থেকেই ইফতার করে নিবেন। নামতে গিয়ে দেরি হলে যদি আবার ইহুদি হয়ে যান...
২৫-মার্চ-২০২৩, মূল পোস্ট ।
0 comments:
Post a Comment