February 11, 2017

মিসাল / উদাহরণ

[ক.]
আজকে আমরা দুটি সন্দেহ নিয়ে আলোকপাত করবো…
- সাহাবাদের মত ঈমান!
- রাসুলের মত বা উনার চেয়ে বেশি আমল!
.
শুরুতে সন্দেহ দুটি বুঝে নিন ভালোমতো, তারপর সমাধান..
প্রথমতঃ সুরা বাকারায় আল্লাহ্‌ তা'আলা নির্দেশ দিয়েছেন সাহাবায়ে কিরামের মত ঈমান আনতে। কিন্তু যেখানে রাসুলের মজলিস থেকে উঠে ঘরদোরের কাজে গেলে সাহাবাদের ঈমানই কমে যেত, সেখানে দেড় হাজার বছর পর.. এই ফিতনার সময়ে সাহাবাদের মত ঈমান আনা আমাদের পক্ষে কিভাবে সম্ভব?
দ্বিতীয় সন্দেহ হচ্ছে, উসমান রা. ইমাম আবু হানিফা রহ. ইমাম বুখারী রহ. প্রমুখ সালাফে সালেহীনের ব্যাপারে জানা যায় উনাদের কেউ দীর্ঘকাল যাবত লাগাতার রোজা রাখতেন, সারারাত ইবাদাত করতেন। তাহলে উনারা কি রাসূলের চেয়ে বেশি ইবাদতগুজার হয়ে গেলেন না?
.
[খ]
ব্যাপার দুটি বুঝতে হলে প্রথমে মিসাল বা উদাহরণের ব্যাপারটা বুঝতে হবে। মিসাল দুই ধরণের হয়
১. কাইফ (রকম, ধরণ)
২. কাইল (পরিমাণ, পরিমাপ, ওজন)
.
১০০গ্রাম লোহা আর ১০০গ্রাম স্বর্ণ ওজনের দিকে এক হলেও, মূল্যতে কিন্তু আকাশপাতাল তফাৎ
.
[গ]
ইলিয়াস গুম্মান হাফিযাহুল্লাহু সাহাবাদের মত ঈমান প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বলছিলেন-
সাহাবায়ে কিরামের সামনে কোরআন নাযিল হয়েছে, ফেরেশতারা উনাদের সাথে একই ময়দানে যুদ্ধ করেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসাল্লাম এর সাথে এক দস্তখানায় বসে উনারা খানা খেয়েছেন... উনাদের মত দামী ঈমান তো আমাদের আনা সম্ভব না।
তাই সাহাবাদের মত ঈমান আনতে হবে; মানে সাহাবারা যে যে বিষয়ে ঈমান এনেছিলেন সেই সেই বিষয়ে ঈমান আনতে হবে।
অর্থাৎ এখানে "মিসাল মা'আল কাইফ" উদ্দেশ্য।
.
[ঘ]
'উম্মতের আমল রাসূলের চেয়ে বেশি হওয়া সম্ভব কি না' বিষয়টা ইলিয়াস গুম্মান হাফিযাহুল্লাহু সেদিন চমৎকারভাবে বুঝাচ্ছিলেন (কমেন্টে লিংক দিচ্ছি)
.
আচ্ছা খেয়াল করুন, যথাসম্ভব নবুওতের ৫ম বছরের পাঞ্জেগানা নামাজ ফরজ হয়। (২৩-৫=১৮) তাহলে রাসূল সা. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েছেন সর্বমোট ১৮বছর, পক্ষান্তরে উম্মতের এমন অনেকেই আছে যারা ৪০-৫০ বছর ধরে ৫ওয়াক্ত নামাজ পড়েছে/ পড়ছে। কেউ তো ১০০বছরও বাচতে পারে। তাহলে বাহ্যদৃষ্টিতে সে তো রাসূলের চেয়ে বেশি নামাজ পড়লো... তাইনা?
.
হজ্জ তো রাসূল সা. মাত্র একবার করেছেন... অথচ এমন বহুত মানুষ আছে যারা প্রতি বছরেই হজ্জে যায়, বাংলাদেশেরই অসংখ্য মানুষ ৮-১০বার হজ্জ করেছে। সেতো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে বেশিবার হজ্জ করলো..
.
রমজানের রোজা ফরজ হয়েছে ২য় হিজরিতে, অর্থাৎ রাসূল সা. রমজানে রোজা রেখেছেন ৯বছর। অথচ কত মানুষ আছে যারা ৪০-৫০বছর ধরে রমজানে রোজা রাখে। ইমাম বুখারী রহ. এর ব্যাপারে প্রসিদ্ধ আছে, উনি ১৬বছর লাগাতার রোজা রেখে সহিহ বুখারী সংকলন করেছেন।।  (আল্লাহু আকবার...)
.
.
[ঙ]
আসলে এখানেও ওই মিসালের ব্যাপারটা খেয়াল রাখতে হবে।
বাহ্যদৃষ্টিতে উম্মতের কারো কারো আমলের পরিমাণ রাসূলের চেয়ে বেশি হতেই পারে, এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু আমলের মূল্য রাসূল সা. এর চেয়ে বেশি হবেনা।
ওইযে লোহা বনাম স্বর্ণের মত..
.
একটা সহজ ব্যাপার খেয়াল করুণ, একজন বেখেয়ালে মনে মনে বাজারের হিসাব কশতে কশতে, ঢুশঢাশ রুকু সাজদা দিয়ে যেইসেইভাবে ১০রাকাত নামাজ পড়লো।
অপর একজন ধীরেসুস্থে পূর্ণ মনোযোগ ও বিনয়ের সাথে, সব সুন্নাত মেনে ২রাকাত নামাজ পড়লো। আপনিই বলুন তো, কার নামাজের মূল্য বেশি?
.
বাস্তবতা হচ্ছে, একজন কমান্ডারের সাথে সৈনিকের কাজের তুলনা হয়না, বাহ্যদৃষ্টে কমান্ডার যদিও অল্প কাজ করছে... তবে তার কাজের দাম সৈনিকের চেয়ে অনেক বেশি।
.
ইলিয়াস গুম্মান সাহেব বলছিলেন, "আমলের পূর্ণতা হয় মা'রিফাতের দ্বারা, রাসূল সা. এর মা'রিফাত (জানা) যে স্তরের ছিল.. পৃথিবীর কারো জ্ঞান সে স্তরের না। অতএব, আমরা সারাজীবন নামাজ পড়লেও রাসূল সা. এর একটা সাজদার সমতুল্য হবে না।"
.
- আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন
.
.
[লিংক]
১। সাহাবীদের মত ঈমান
https://m.youtube.com/watch?v=jfvphBe3gDE
২। উম্মতের আমল বেশি হওয়া
https://m.youtube.com/watch?v=KCqAJ4Hlu9o
৩। পোস্টের ফেসবুক লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1222570551165806&id=100002386190185

Share:

0 comments:

Post a Comment