January 18, 2017

শুদ্ধ ভাষা!

[ক.]
কেউ জোর করে শুদ্ধ বলতে চেষ্টা, কেউ জোর করে আঞ্চলিক বলতে চেষ্টা করে....
.
কারো স্বভাবে যদি শুদ্ধতা না থাকে, সে জোর করে শুদ্ধ বলতে গেলে এমনিতেই টের পাওয়া যায়। আর এসব শুনতে বিচ্ছিরি লাগে...
.
[খ.]
বন্ধু বা ভাইব্রাদারদের মাঝে গল্প করার সময় জোর করে শুদ্ধ বলতে চেষ্টা করা এটা খুবই জঘন্য লাগে আমার কাছে।
সম্ভবত গত রোজার ঘটনা। আমি, Mahfuza Mony আরেকটা কেউ বসে কথা বলছি। তৃতীয়জন জোর করে শুদ্ধ বলা কোম্পানির পাবলিক।
আমি হঠাৎ বললাম, জীব বিজ্ঞানের একটা চ্যাপ্টার আছেনা? "অভিযোজন" মানে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়া.. এটা ভাষার ক্ষেত্রে কিন্তু সবাই ফলো করতে পারেনা। সব যায়গায় কিন্তু সব স্টাইলের কথা ভালো লাগেনা না। সামনের দুজনেই কথায় সমর্থন দিলো। তৃতীয়জন বুঝলইনা যে, উনাকে বাশ দেয়া হয়েছে :/
.
[গ.]
আঞ্চলিক ভাষা আল্লাহর সৃষ্ট একটা সৌন্দর্য। লেকচার, বায়ান, দরস ইত্যাদি ছাড়া অন্যান্য কথাবার্তায় আঞ্চলিকতা মিশ্রিত থাকা মোটেও মন্দ না। শ্রবণকারী কথা বুঝলেই ইনাফ।
তবে বাচ্চাদের শুদ্ধভাষা শেখানোর জন্য যদি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা
নে বিশেষ রুলস থাকে সেটা আওর বাত....
হালকা আঞ্চলিকতা মিশ্রিত সরল শুদ্ধ একটা ভাষার প্রচলন আছে আমাদের বয়সী এবং একটু সিনিয়র ভাইদে-ব্রাদার মাঝে। এটা খুবই ভালো একটা পদ্ধতি বা স্টাইল! নিজের আইডেন্টিটি বুঝা যায়, আবার কথা বুঝতে কারো কোনো কষ্টও হয়না।
.
[ঘ]
কিছু বইয়ের লেখক থাকে যারা এমন মুডে উপদেশ দেয় যেন উনি আইভরি টাওয়ারের বাসিন্দা আর পাঠকরা কুড়ে ঘরে থাকে। এখন উনি উপদেশ দিচ্ছেন!
গতছুটিতে 'লা-তাহযান' বইটার অনেক সুনাম শুনে Mahfuza Mony থেকে ধার নিলাম। ভাবলাম দুই-আড়াইদিনে ক্ষতম করে ফেরত দিয়ে দিব। ধুরু! এক অধ্যায় পড়েই অরুচি ধরে গেছে :( ফালতু...
.
আমার মতে বইয়ের ভাষা এমন হওয়া উচিত যেন লেখক-পাঠক দুজন পাশাপাশি বসে গল্প করছে। উদাহরণস্বরুপ স্যার এডলফ হিটলারের আত্মজীবনী দেখা যেতে পারে। অথবা এমন হওয়া উচিত যেন পাঠক কোনো সফরে বের হয়েছে, আর লেখক সেখানে গাইড। সামনে হাঁটছে আর হাত দিয়ে দেখিয়ে দেখিয়ে সব কিছুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।
লেকচারের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার, অতি মূড নিয়ে বকলে বা কথার ধরণ এক পাক্ষিক হলে সেসব অন্তরে দাগ কাটেনা বেশি।
কখনো ক্যামেরার ফোকাস ফাস্ট পার্সন, কখনো সেকেন্ড; কখনো বা থার্ড পার্সনের দিকে হলে ব্যাপারটা উপভোগ্য হয়।
যেমন, মুহতারাম শরিফ মুহাম্মদ সাহেবের কথাগুলো এত মজাদার লাগে, কথা শুনছিনা বরং যেন ফুচকা বা স্যুপ খাইতে বসছি। :) ২০১৫তে উনাকে দেখে কয়েক মিনিটেই ফ্যান হয়ে গেছি, পরে তো আরো ভালোভাবে জানলাম....
.
[ঙ]
গুরুজী কহেন, রাগান্বিত অবস্থায় যেমন মানুষের আসলে চরিত্র চেনা যায়, তেমন ভাষার আসলে হালতও বুঝা যায়।
অর্থাৎ যদি স্বভাব-চরিত্রে আপনি পরিচ্ছন্ন ভাষার অধিকারী হন, আপনি যতই রাগেন আপনার মুখ থেকে গালিগালাজ বের হবেনা, তুই-তোকারিও হবেনা।
আর কারো তবিয়ত যদি নোংরা হয় তাহলে রেগে যেতে দেরি, ভেতরের আবর্জনা উগলাতে দেরি হয়না।
.
কারোকারো এমনও হয়, স্বাভাবিক কথার সময় যেইসেই ঢাকাইয়া, রাজশাহী ইত্যাদি ইত্যাদি বিভিন্ন টান মেশানো ভাষায় কথা বলে। কিন্তু রেগে গেলে একদম পুরা শুদ্ধ বাংলা বলা শুরু করে। কেউ কেউ রেগে গেলে ইংলিশ মেশানো ভদ্র বাংলা বলা শুরু করে.... 
সারকথা হচ্ছে, এমনে যদি তুমি শুদ্ধ বলো আর রাগলে 'ডিজিটাল' ভাষা বের হয় বুঝতে হবে সেটাই তোমার প্রকৃত ভাষা। আর এমনি যা খুশি বলো, রাগলে যদি তুমি ঠিক থাকো.... then ইউ আর দ্যা গ্রেট...
.
রাসুল সা. এর ভাষায়, প্রকৃত পালোয়ান সেই ব্যাক্তি.. যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
.
আচ্ছা রাগলে আপনার অবস্থা কি হয়? খেয়াল আছে তো?

.
- ১৮ জানুয়ারী ২০১৭
ফেবুতে- https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1200887813334080&id=100002386190185
Share:

0 comments:

Post a Comment