June 24, 2016

একটি বিকেল, অনেকগুলো ভাবনা...

২৪-জুন-২০১৬ গল্পের শুরু দুপুর থেকে...
কোনো প্রয়োজনে টেকনিক্যালের ওইদিকে গিয়েছিলাম, দৌড়াদৌড়ি করে বেশ ক্লান্ত। মনে হচ্ছিলো ঘরে ফেরত যাওয়া উচিত, আবার ভাবছিলাম গুলিস্তান যাওয়া দরকার। সামনে একটা বাস পেয়ে উঠে পড়লাম। সেটা আসলে গুলিস্তানের বাস ছিলো না, আর (গন্তব্য) মোহাম্মাদপুরেরও না! 😂 ভাবলাম, যাই হোক! বাসেই তো উঠছি, প্লেনে তো আর না। কোনো এক যায়গায় নেমে গেলেই চলবে।

১। ঢাকা মেডিকেলের ২ নাম্বার গেটে নামলাম। মসজিদে ইক্বামাত হচ্ছিলো। দৌড়ে গিয়ে ওজু করে নামাজ ধরলাম। নামজের পর মেডিকেল থেকে বের হলাম ১ নং গেট দিয়ে। ২১-এ ফেব্রুয়ারির স্মৃতি বিজড়িত আমতলার সামনে আসতেই বাজে একটা দৃশ্য চোখে পড়লো।
একটা রিক্সায় ২জন ছেলে, ১টা মেয়ে বসে আছে। ছেলে দুটো নিচে সাধারণ সিটে আর মেয়েটা পিছের উঁচুটাতে একজনের গলা জড়িয়ে ধরে বসে আছে। চোখ সরিয়ে নিলাম। সাথে সাথে মাথায় কয়েকটা ভাবনা খেলে গেলো।
প্রথমে ভাবলাম এরা হয়তো মুসলমানই না। এরপর আরেকটা জিনিস খেয়াল হলো। মাস তিনেক আগে আমার এক কলেজপড়ুয়া আত্মীয়া বলেছিলেন আমাকে- "উনার সহপাঠী অনেক বান্ধবীরা জানেই না যে, নামাজ পড়া আবশ্যক। যদি নামাজ না পড়ে তাহলে মৃত্যুর পর শাস্তি হবে। তারা জানেই না যে নামাযের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।" এখন রিক্সায় বসা এদের ক্ষেত্রেও যদি একই কাহিনী ঘটে তাহলে এর দায় থেকে কিন্তু আমি বা আপনি মুক্ত হতে পারবোনা। তারা যদি বলে অমুক তো আমাদের হোস্টেলে বা মেসেই থাকতো, সে নিজে নামাজ কালাম করতো, অথচ একটা বারও আমাদেরকে পর্দার কথা বলেনি, নামজের বিধান শোনায়নি। আল্লাহ্‌ তুমি তাকে প্রথমে ধরো!

২। এরপর সামান্য আগাতেই দেখলাম একটা হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে, নাম 'শেখ হাসিনা'

৩। পেছন দিকে ব্যাক ঘুরলাম। দোয়েল চত্তরের ওইদিক দিয়ে গুলিস্তান যাব ঠিক করলাম। হাটছিলাম রাস্তার ডান দিক দিয়ে। দূর থেকে ড. শহিদুল্লাহ স্যার এর কবর দেখতে পেলাম (আল্লাহ্‌ উনাকে জান্নাত নসিব করুক) আমি মনে মনে স্যারের জন্য সুরা ফাতিহা, সুরা ইখলাস পরছিলাম। কবরের পাশ দিয়ে যেতেই মেজাজ চরমে উঠে গেল। দেখলাম "এক লোক সেখানে দাঁড়িয়ে বহু কসরত করে, বিভিন্ন ঢঙে ড. শহিদুল্লাহ স্যারের কবরের সাথে সেলফি তুলছে!"

৪। দোয়েল চত্তর থেকে সচিবালয় যেতে যে রাস্তা, সেটা দিয়ে হাটছি। দেখলাম রাস্তার দুইপাশে, মাঝে, উপরে, মোড়ে কিছু ফেস্টুন / মিনি সাইনবোর্ড ঝুলানোর কাজ চলছে। প্রসঙ্গঃ ২৬ তারিখ (আজ) মেট্রোরেল এর কাজ উদ্বোধন হবে। সমস্যা সেটা না, কথা হচ্ছে অনেক ফেস্টুনে বঙ্গবন্ধুর ছবি দেয়া। আমি অনেক্ষণ ধরে ভাবলাম, ট্রেন উদ্বোধনের সাথে বঙ্গবন্ধু কিভাবে রিলেটেড হতে পারে.. নাহ সমাধান পেলাম না।
শেষমেশ মনকে প্রবোধ দিলাম এই বলে- "হয়তো রেলও উনার স্বপ্ন ছিলো.."

৫। বাংলাদেশের সচিবালয়ের পাশ দিয়ে হাটছি.. ১ নং গেটের কাছাকাছি আসতে দেখলাম একজন গার্ড দেয়ালের ধারে বসে আছে, বেশ ক্লান্ত ছিলাম, শুকনো মুখে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সালাম দিয়ে তার দিকে তাকালাম "আসসালামু আলাইকুম!" দেখালাম নেমপ্লেটে লেখা- "জয়নাথ সিং"
কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে দেখলাম আরো দুজন গার্ড, এবার আগেই নাম দেখলাম "একজন মাহবুব আর অপরজন রফিক" মনেমনে বললাম- "যাক, এখনো কিছু মুসলমান আছে.."

৬। ইফতারের সময় বাইতুল মুকাররমে ঢুকলাম, ইচ্ছা আম লোকদের মজলিসে ইফতার করা। ঢুকেই বুঝতে পারলাম 'মিলাদ চলছে'
অদ্ভুত এই দুনিয়া! ইফতারির আগে দুয়া করবে, সেটাও কিনা বিদআত দ্বারা শুরু হচ্ছে!
আসলে বিদআতের ব্যাপারটা এরকমই, মানুষ পাপ করে, অথচ ভাবে; সে সওয়াবের কাজ করছে। এজন্য সে পাপের ওপর আজীবন স্থির থাকে, আর কখনোই তওবা করার প্রয়োজনবোধ করেনা।
.
-----
ফেসবুক পোষ্টের লিংকঃ https://facebook.com/thealmahmud/posts/1024996217589908
Share:

0 comments:

Post a Comment