একটা গল্প দিয়ে শুরু করা যাক....
অনেক অনেকদিন আগের কথা! সেই শাহবাগীয় সভ্যতার যুগে.. ফেসবুক তখন হরেক রকম ইসলামিস্টদের পদচারণায় মুখরিত। বড়ই অদ্ভুত সেই সময়টা। তখন এক বোন ছিল নাম ফারিয়া জাহান ঊর্মি.. উনার একটা লেখা নিয়ে বেশ তোলপাড় হয়েছিল যার সারমর্ম এরকম ছিলো-
উনি ফেসবুক ব্যাবহারকারী ইসলামিস্ট ভাইদেরকে অনুরোধ করেছিলেন যেন তারা যেন তাদের ছবি না আপলোড করে। কারন ছেলেদের জন্য যেমন মেয়েরা ফিৎনা, তেমন মেয়েদের জন্যও ছেলেরা ফিৎনা।
উনার লেখার হাত ভালো থাকায় বেশ চমৎকারভাবে ব্যাপারটা উপস্থাপন করেছিলেন, উদাহরণস্বরূপ বলেছিলেন "যখন কোনো ইসলামিক টপিকের প্রদর্শনী বা সেমিনারে কয়েকজন মিলে যাই তখন অনেক সময় পাশের বান্ধবী বলে ওঠে 'ওওই ভাইয়াটাকে দেখ! কত সুন্দর না!!'...."
(নোটঃ এখানে আমার বান্ধবীর কথা বলা হয়নি, বরং ফারিয়া আপুর বান্ধবীর কথা বলা হচ্ছে)
যাই হোক, লেখাটার একটা বিষয় মনে পড়ে "প্রত্যেক মেয়েই নাকি তার ক্যাটাগরির ছেলেকে ভালো দেখতে পায়! যেমন- কোনো দ্বীনদার মেয়ের চোখে মুখভর্তি দাড়ি আর ভদ্র পাঞ্জাবী-পাজামাওয়ালা ছেলে যতটা এট্রাক্টিভ, একজন সুটেড-বুটেড ক্লিন শেইভড বেনামাজি তাঁর কাছে ততটাই কুৎসিত!"
বেশ ইন্টারেস্টিং ছিল লেখাটা.. অন্তত নারীকুল সম্বন্ধে আমার মত অজ্ঞদের জন্য তো বটেই। কিন্তু বাঙগালার পাবলিক তো ভালো জিনিস খায়না, এজন্য ফারিয়া আপুর লেখা গিলতে না পেরে অনেকে সেসময় গলাবাজি করেছে। আসলে বিড়ালকে মরিচ খাওয়ানোর গল্প সবারই জানা..!
তো মেয়েরা পর্দা করবে, ছেলেরা নিজ দৃষ্টি হিফাজত করবে এসব তো বাজারী বক্তারাও মাহফিলে বলে। আমরা আজ আলোচনা করতে যাচ্ছি দৃষ্টির হিফাজত কি শুধুই ছেলেরা করবে? মেয়েদের এক্ষেত্রে কি কোনোই বিধিনিষেধ নাই??
চলুন পবিত্র কোরআনের পাতা উল্টাই-
আল্লাহ তা'আলা সুরা নূর এর ৩০নং আয়াতে পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছেন-
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে।(সুরা নূরঃ৩০)
ঠিক তার পরের আয়াতেই বলেছেন-
وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ
মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে।(সুরা নূরঃ৩১)
একই সুরার পরপর দুইটি আয়াতে একই শব্দে আল্লাহ নারী ও পুরুষ উভয়কেই দৃষ্টির হিফাযত করতে বলছেন।
এরপর হাদীসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বলা যাক-
"উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, আমি একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম, উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা রা.-ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রা. উপস্থিত হলেন। এটি ছিল পর্দা বিধানের পরের ঘটনা। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার থেকে পর্দা করো। আমরা বললাম, তিনি তো অন্ধ, আমাদেরকে দেখছেন না! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখছ না"
-আবু দাউদ ৪/৩৬১, তিরমিযী ৫/১০২, মুসনাদে আহমাদ ৬/২৯৬
আমরা দুটি আয়াত এবং চমৎকার একটি হাদীস জানলাম, আর আলোচনার শেষে একটি প্রবাদ জানবো- 🙂
-
"পাঞ্জাবী-জুব্বাওয়ালা ছেলেদের কাছে শয়তান আসে হিজাবী মেয়ের বেশে, আর পরহেজগার মেয়েদের কাছে আসে দ্বীনি ভাইয়ের বেশে!"
-
0 comments:
Post a Comment