April 23, 2022

বালিকা মাদ্রাসার সমস্যা এবং ফেমিনিজম ফিতনার ব্যাপারে কিছু কথা

বালিকা মাদ্রাসার ছাত্রীদের নারীবাদ বিষয়ে খাস দরস থাকা উচিত। অন্তত বছরের একটা সেমিস্টার হলেও। নারী-পুরুষের খাস মাসায়েলগুলো, পরিবারের হক্বগুলো সবকের মত আলাদাভাবে শেখানো উচিত।

নইলে বেশ কিছু সমস্যা দেখা যায়-
.
ক।
"দ্রুত সিলেবাস শেষ করা এবং বিজ্ঞ আলেমদের সোহবত না থাকা" এই দুই কারনে অনেকেরই দাওরা হাদিস শেষ করার পরেও নূন্যতম ফিকহি যোগ্যতা হয় না। পরবর্তীতে যখন বেদ্বীন বা হাফদিনিদের সাথে মেশে, তখন এদের দ্বারা প্রভাবিত হয়, এরপর দ্বীনের বিধান নিয়ে আন্দাজে ইজতিহাদ করতে শুরু করে। সেসব লিখে অন্যদেরও মাথা নষ্ট করে।
.
খ।
যেভাবেই শেষ হোক, যেহেতু সে আলেমা হয়েছে। এর ওপর নারী স্বাধীনতার ভুত মাথায় ঢোকার কারনে পরবর্তীতে বিজ্ঞ আলেমদের থেকে নিজের ভুল শুধরানোর কথা চিন্তাও করে না।
.
(এর উদাহরণ হল, এক আলেমা আপাকে কিছুদিন আগে দেখা গেছিল নারীদের ঘরের কাজকে ঐচ্ছিক এবং নন-মেজর হিসেবে প্রচার করতে, উম্মুল মুমিনিনদের ঘটনা উল্লেখ করে দলিলের সম্পূর্ণ উলটা দালালাত করতে। পর্দার সমস্যা ও বিভিন্ন ফিতনার জন্য সেক্যুলার প্রতিষ্ঠানে নারীদের উচ্চশিক্ষার বিষয়ে আলেমরা যে নিরুৎসাহিত করেন, এর বিরুদ্ধে ফেমিনিস্ট লজিক প্রচার করতে।)
.
গ।
মাদ্রাসা পড়ুয়া সিস্টারদের অনেকে ঘরের কাজেও অনেক দূর্বল হয়ে থাকেন। (সবাই না, অনেকেই)। ঘরে মা-বোনের তত্ত্বাবধানে হোক, কিংবা মাদ্রাসায় উস্তাযাদের কাছে হোক, অল্প কিছুদিন সময় এবিষয়ে দুর্বলতা দূর করা উচিত। আশা করি এক-দুইমাসই যথেষ্ট এজন্য। নইলে পরিবার ও পরবর্তী বংশধরদের ওপর এর মন্দ প্রভাব পড়ে।
.
ঘ।
নারীবাদ বিষয়ক ক্লাসের সিলেবাসে কি কি থাকতে পারে সেটা এই নারীবাদ ফিতনা সম্পর্কে, ফিকহ এবং মাকাসিদুশ শরিয়া সম্পর্কে অভিজ্ঞ আলেমরা ঠিক করবেন।
বাকি বর্তমানের হালাত অনুযায়ী কিছু টপিক রাখা জরুরি -
১। ঘরে এবং ঘরের বাইরে পর্দার বিধান, নারী ও পুরুষের জন্য।
২। উত্তরাধিকার সম্পত্তির বিধান।
৩। ঘরের কাজ ও আয় উপার্জনের দায়িত্ব বন্টনের বিষয়ে।
৪। অনলাইন ও অফলাইনে হারাম রিলেশনের বিষয়ে।
৫। নারী হিসেবে বিবাহের পূর্বে কি কি প্রস্তুতি নেয়া উচিত সে বিষয়ে।
৬। বিয়ের পর নিজের বাড়ি ও বাবার বাড়ির সম্পর্ক ম্যানেজ করার বিষয়ে।
৭। সন্তান নেয়ার ব্যাপারে ইসলামী চিন্তাধারা। এবং সন্তান হলে তাদের আদব-আখলাক ঠিক করা ও হোম স্কুলিং বিষয়ে।
৮। সাধারণ বেদ্বীন নারীদের সাথে কিভাবে আর ফেমিনিস্টদের সাথে কিভাবে মেশা উচিত, এবং কিভাবে দাওয়াত দেয়া উচিত সে বিষয়ে।
৯। সেক্যুলার ভার্সিটি বা কলেজগুলোতে পড়া দ্বীনি বোনদের সমস্যাগুলো এবং সমাধান সম্পর্কেও ধারনা দেয়া উচিত। যাতে তাদের সাথে কথা হলে কিছু শেখাতে পারে।
১০। নারি-পুরুষের যেসব মাসায়েল ভিন্ন সে বিষয়ে আলাদাভাবে আলোচনা করা।
..
ঙ।
নারিবাদ ফিতনাটা উম্মতের ভেতর বাহির উভয়দিকেই খেয়ে ফেলে। তাই এটাকে খুবই গুরুত্বের সাথে নেয়া উচিত।
আলেমদের তো হিকমতের সাথে কাজ করা উচিত বটে। এর সাথে পশ্চিমা শিক্ষা ও দ্বীনি শিক্ষা উভয়দিকের ব্যাপারে জানাশোনা ব্যক্তিরা প্রয়োজনে খাসভাবে পড়াশোনা করে নারীদের এবিষয়ে খাস দরস দেয়া উচিত। বোনদের মধ্যে এবিষয়ে দাওয়াতি কাজ করার জন্য প্রচুর বোন দরকার। আল্লাহ চায়তো এটা বেশি উপকারী হবে।
..

ফুটনোটঃ
নারীবাদের বিভিন্ন স্তর আছে। কেউ কম, কেউ বেশি। নারীবাদী মানেই যে সবাই তাসলিমা নাসরিন বা ফারজানা মাহবুবাদের মত হবে এমন না।
সর্দিকাশি বা হাপানির মত এই রোগে কেউ অল্প আক্রান্ত হয়, কেউ বেশি। আর দ্রুত চিকিৎসা করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে এখনকার সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা এমন যে, প্রাইমারী পার হতে হতে সবাই কমবেশি এই ভাইরাসে এফেক্টেড হয়ে যায়।
আসলে যে শিক্ষাব্যবস্থায় বেগম রোকেয়াকে মহৎ হিসেবে পড়ানো হয়, আবার বাড়িতে মিনা-রাজুর কার্টুনে নিয়মিত বাচ্চাদের রোল রিভার্সাল গল্প শেখানো হয়, সেখান থেকে আর কিই বা বের হবে বলেন?

-------
Share:

0 comments:

Post a Comment