[ক]
সাধারণ পরিবারগুলো থেকে উঠে আসা যারা দ্বীন মানতে চেষ্টা করে, তাদের জন্য পর্দা ও ফ্রিমিক্সিং এর বিষয়টা বেশ সেন্সিটিভ। একেতো তারা জানে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি এবং তাদের উসুল-ফুরু' এর সাথে দেখা সাক্ষাত জায়েজ। অপরদিকে তাদের সামনে থাকে, এই এই মানুষগুলোর সাথে আমি দেখা সাক্ষাত করতাম।
ফলে অভ্যাস ও ইহসানের (তাক্বওয়া) মাঝে সমন্বয় করতে অনেকের একটু বেগ পেতে হয়।
.
আমি বংশ পরম্পরায় দ্বীন পাওয়া ভাইবোনদের কথা বলছি না। আমি ওইসব মানুষদের কথা বলছি, যারা এক পা - দু পা করে আল্লাহর দিকে উঠে এসেছে, অতীতে যাদের চৌদ্দপুরুষের মাঝে সুরা ফাতিহা শুদ্ধ করে পড়ার মানুষ ছিল না। এই মানুষগুলোর জন্য দ্বীন মানে অনেক রক্তঘামে অর্জিত দৌলত।
.
[খ]
এখন এদের ক্ষেত্রে প্রথমে করণীয় হল, শরীয়ার সীমার মধ্যে থেকে সুযোগগুলো গ্রহণ করা, এবং আস্তে আস্তে স্ট্রিক্ট হয়ে যাওয়া।
.
স্বল্প পরিসরে বোঝানো মুশকিল বিধায় অহেতুক কথা বেশি লম্বা করব না, নিজনিজ পরিচিত আলেমের থেকে ভালোভাবে বুঝেব নিবেন। তবে উদাহরণ হিসেবে "একটা কম্বাইন্ড ফ্যামিলিতে দেবর - ভাবির বিষয়টা" ভাবতে পারেন।
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেবরকে মৃত্যু তূল্য বলেছেন কেন? কারণ একদিকে সে মাহরাম নয়; বিধায় তার সাথে পর্দা করতে হচ্ছে। অপরদিকে একই বাড়িতে থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবেই দুজনের ঘনঘন সাক্ষাত এবং কথাবার্তা হচ্ছে, যা দুজন নারী-পুরুষের জন্য অনেক ঝুকিপূর্ণ।
.
এক্ষেত্রে যেমন শরীয়ার দেয়া সুযোগ এবং নিষেধাজ্ঞা উভয়টির দিকে লক্ষ রেখে চলতে হয়। দ্বীন মেনে চলার অভ্যাস করার পর অন্যান্য রিলেটিভদের ক্ষেত্রেও এরকম সাবধানতার সাথে চলতে হয়।
.
এখানে "আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা" এর আবশ্যিকতা স্মরণ রাখার পাশাপাশি মেয়েদের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হল, "আরে অমুকের সাথে তো আমি দেখা করিই" বা "অমুককে তো চিনিই" - এই বিপদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা।
আর ছেলেদের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হল, প্রয়োজন হলে শরিয়ার সীমার প্রতি খেয়াল রেখে তাদের সাথে সাক্ষাত ও কথাবার্তা বলা। আর সাক্ষাতের সময় নজরের হিফাযতের ব্যাপারেও খুব সতর্ক থাকা।
.
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভাষায়, নজর হল শয়তানের একটি বিষাক্ত তীর!
.
[গ]
"অমুকের সাথে তো দেখা করিই" — এই ফিতনার একটা চুড়ান্ত ভয়াবহ রূপ হল "তিন তালাকের হয়ে যাওয়া পর স্বামী-স্ত্রী পুনরায় একত্রে থাকা।"
যার সাথে তালাক হয়ে গেছে, তার এবং গাইর মাহরামের মাঝে পার্থক্য কী? সে তো বরং আরও দূরের লোক।
আল্লাহর তা'আলার ভাষায়-
[Baqarah 2:230]
فَاِنْ طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهٗ مِنْۢ بَعْدُ حَتّٰي تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهٗ ؕ
এরপর স্বামী যদি স্ত্রীকে (তৃতীয় বারের মত) তালাক দেয় তাহলে স্ত্রী আর এই স্বামীর জন্য বৈধ হবে না, যতক্ষণ না সে অন্য এক স্বামীকে বিয়ে করে। (বাকারা, আয়াত ২৩০)
.
একজন সাধারণ গাইরে মাহরামের ক্ষেত্রে কিন্তু এই বাধাটা নেই। সুতরাং পূর্বের স্বামী তার জন্য সাধারণ গাইরে মাহরামের চেয়েও ভয়ংকর।
.
[ঘ]
সমস্যা যেটা হচ্ছে, আল্লাহর বিধানের তোয়াক্কা না করে তিন তালাকে মুগালাজা হওয়ার পরেও স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিচ্ছে।
যেটা "স্পষ্ট যিনা!" অন্য কিছু না। ১০০% যিনা। এরপর কোনো সন্তান যদি হয়, সেটা ওয়ালাদুয যিনা তথা অবৈধ সন্তান হবে।
কিন্তু যেহেতু এক সময় তারা স্বামীস্ত্রী ছিল, তাই পরবর্তী হারাম জীবনযাপনের ব্যাপারে তাদের বিশেষ কোনো অনুভূতিই হয় না। (নাউযুবিল্লাহ)
এটা বিদআতি কাজগুলোর অনুরূপ, কিন্তু আরও অনেক ভয়ংকর।
.
সমাধান কী? শুধুমাত্র একটাই পথ আছে, একই আয়াতে আল্লাহ বলেছেন—
فَاِنْ طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهٗ مِنْۢ بَعْدُ حَتّٰي تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهٗ ؕ فَاِنْ طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَاۤ اَنْ يَّتَرَاجَعَاۤ اِنْ ظَنَّاۤ اَنْ يُّقِيْمَا حُدُوْدَ اللّٰهِ ؕ وَتِلْكَ حُدُوْدُ اللّٰهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ
"এরপর স্বামী যদি স্ত্রীকে (তৃতীয় বারের মত) তালাক দেয়, তাহলে স্ত্রী আর এই স্বামীর জন্য বৈধ হবে না, যতক্ষণ না সে অন্য এক স্বামীকে বিয়ে করে। তারপর সেই (দ্বিতীয়) স্বামী যদি তাকে তালাক দেয় তাহলে তারা পুনরায় (বিবাহের মাধ্যমে) পরস্পরের কাছে ফিরে গেলে তাদের কোন পাপ হবে না, যদি তারা মনে করে যে, তারা আল্লাহর বিধান ঠিক রাখতে পারবে। এগুলো আল্লাহর বিধান, যা তিনি জ্ঞানী লোকদের জন্য স্পষ্ট করে দিচ্ছেন।" (বাকারা, আয়াত ২৩০)
.
[ঙ]
এখানে একটা ফাঁকফোকর আছে। তা হল, "যদি মৌখিক তালাকের সময় কোনো সংখ্যা না বলে, কিংবা তালাক দেয়ার কথাটা তিনবার না বলে, ডিভোর্স লেটারেও আমভাবে শুধু তালাকের কথা থাকে, তিন তালাকে কথা না থাকে" - তাহলে কিন্তু হিসেবে শুধু এক তালাকই হচ্ছে। আরও দুইটা সুযোগ থাকছে। বাকি অবস্থাভেদে তালাকে বায়েন না রজঈ হয়েছে - এর ওপর নির্ভর করবে ফিরিয়ে নেয়ার পদ্ধতি কি হবে। তাই সরাসরি অভিজ্ঞ মুফতি সাহেবের সাথে পরামর্শ করে এব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।
.
সমস্যা হল, আমাদের মুর্খ নিকাহ রেজিস্ট্রারার কাজীগুলো। পরিবার ভাঙনের এই ফিতনার সময়ে কাজির দায়িত্বে থাকা লোকগুলোর ইসলাহ করা গেলে অনেক ফায়দা হত। কিন্তু এদের ওপরের লোকরা যেভাবে শিখিয়ে দেয়, তাই করে। কেমন যেন আল্লাহর দ্বীন মানছে না, অন্য কোনো দ্বীন মানছে।
বিয়ে কিংবা ডিভোর্সের ফর্ম এদেরকে পুরন করতে দেয়া মানেই একটা না একটা আকাম ঘটায়া ফেলে। কেউ না বললেও এরা ঠাস করে ৩ তালাকের কথা লিখে দেয়। আর লোকেরাও মনে করেন হুজুগে সিগনেচার করে দেয়। ফলে নিজেই নিজের সর্বনাশ লিখে নেয়।
এরা জানেও না যে, একসাথে সবগুলো তালাক দিয়ে কতবড় কবিরা গুনাহ আর কত ভয়ানক অভিশাপের কাজ করে ফেলল। এটা বন্দুকের এমন গুলি, যা আর কখনও ফেরত আসে না।
.
আরেকটা বিষয়ে সাফ কথা বলে দিই ভাই, তালাকের প্রসঙ্গে আহলে হাদিস আলেমদের ফাতওয়া নিয়েন না। অনেক বড় ভুল করবেন। এটা এমন ভুল, ইহজনমে হয়তো টের পাবেন না। কিন্তু আখিরাতে আল্লাহর কাছে চরমভাবে ধরা খেতে হবে।
.
[চ]
শেষ করব দুটি ঘটনা বলে,
আমাদের সমাজের দু'পেয়ে প্রাণীগুলো দিনদিন সব পশু হয়ে যাচ্ছে। না, বরং পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। সদ্য কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করা এক মজলুম বোনের ঘটনা। উনার বড় বোনের ডিভোর্স হয়েছিল, ডিভোর্সের পর ওই শশুরবাড়ির লোকেরা আবার ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছিল। আমাদের মজলুম বোনটি বাধা দিয়েছিল।
এরপর কি হয়েছে জানেন? সেই বাড়ির কয়েকটা শয়তান উনাকে গণধর্ষণ করেছে, এরপর ফাসিতে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার নাম দিয়ে দিয়েছে...।
কোনো মানুষ এত নিচে নামতে পারে? ছিহ!
.
[জ]
আরেকটা ঘটনা বলি, রাজশাহীর এক বোনের ঘটনা এটা।
দুই বছরের মত আগে উনার ডাইনি শাশুড়ী জাদু করে উনাদের ডিভোর্স করায়। এরপর আরেকজনের সাথে তার ছেলের বিয়ে দেয়, কদিন যেতে না যে সেই মেয়েকেও পছন্দ না হওয়ায় তার সাথেও ডিভোর্স করায়। এরপর?
এরপর শুনেছিলাম আবার পূর্বের ওই বোনকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছে। আমি শুনে বললাম, এটা কিভাবে সম্ভব! ছেলেখেলা পাইছে নাকি? আমি ইসলামের বিধান জানিয়ে দিলাম।
পরে কি হয়েছে জানেন?
বছরখানেক পর একদিন দেখি ওই আপার মেসেজ। সেই ডাইনি মহিলা আবার জাদু করেছে! আমি শুনে বললাম, "মানে!! আপনাদের না ডিভোর্স হয়ে গেছিল?"
বলল, "আবার ফিরিয়ে এনেছে?" মানে যিনা করার জন্য আবার নিয়ে এসেছে আর কি!
আমি আসলে বলার মত কিছু খুজে পাচ্ছিলাম না। বললাম, আমি আপনাকে কোনো হেল্প করতে পারব না, মাফ করে দিয়েন...।
---
অক্টোবর ৪, ২০২১
0 comments:
Post a Comment