December 23, 2017

নারীর নিরাপত্তা সমাচার...

- উম্মে আব্দুল্লাহ
---------------
[ক]
বাসস্টপেজে দাঁড়িয়ে আছি বাসের অপেক্ষায়, এক আত্মীয় এসে হাজির! আমার আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে বললেন, "তোর মাথা ঠিক আছে?? গরমে কি পরছিস এইসব?"
বললাম, মাথা ঠিক আছে বলেই তো পরছি..
.
সত্যি বলতে পর্দা নিয়ে অধিকাংশের জ্ঞান এখনো শুন্যের কোঠায়। পর্দা আমাদের কাছে যেন ঐচ্ছিক বিষয়! যখন ইচ্ছা পর্দা করলাম, যখন ইচ্ছা করলাম না!!
যাই হোক, কিছুসময় পর বাস আসলো। সিট ফাঁকা ছিলো না। তবুও যেহেতু আমি দাদীর বয়সি(!) তাই আমাকে বসতে দেয়া হলো.. (আলহামদুলিল্লাহ)
অথচ আমার বয়সী অনেককেই দাঁড়িয়ে থাকতে হলো যথেষ্ট আধুনিকা হওয়া স্বত্ত্বেও। আবার পাশে পুরুষ না মহিলা বসবে সে আরেক মহাকাব্য!
এমন ঘটনা নতুন কিছু না, বাইরে গেলে সবাই সম্মানের চোখেই দেখে। বাস্তবতা হচ্ছে, প্রভুর সন্তুষ্টির জন্য কিছু করলে ফলাফল নিয়ে দুচিন্তা করা লাগেনা।
.
[খ]
তো সেদিন ফেরার পথের অভিজ্ঞতাটা কিন্তু মোটেই সুখকর ছিলোনা।
আমি বাসে উঠার পর আগের মতই বয়স্কা মহিলা হিসেবে ট্রিট করছিল। কিন্তু পরের স্টপেজে একজন মহিলা উঠলেন; আমার ছোটফুপুর বয়সি। কিন্তু পোশাকের হালত দেখে মনে হচ্ছিলো আমার থেকেও ছোট হবেন। উনি উঠার পর থেকেই বাসের হেল্পার দু'জনের চোখ আর সরে না। আর কি সব বাজে বাজে সাউন্ড করছিলো। উনি ফোনে কথা বলা নিয়ে মশগুল থাকায় ব্যাপারটা আরো খারাপ দেখাচ্ছিলো।
নরমালি আমি গাড়িতে উঠলে বই পড়ি। কিন্তু আজকে যেহেতু সংরক্ষিত আসনে বসেছিলাম, তাই বই পড়ার সুযোগ পাইনি। আর উনাদের সামনাসামনি হওয়াতে লুচ্চামিগুলো চোখে পড়লো (আল্লাহ্‌ মাফ করুন) আর সেই সাথে নিজের অবস্থা চিন্তা করে কৃতজ্ঞতায় আত্মা ভরে উঠলো।
পর্দার বিধান নাজিলের জন্য আল্লাহ রব্বুল আ'লামীনকে কোটি কোটি শুকরিয়া জ্ঞাপন করলাম। এই বিধানের জন্যই তো মানুষরুপি জানোয়ারদের কামুক দৃষ্টি থেকে বেঁচে গেলাম। আর একরাশ আফসোস রয়ে গেলো তাদের জন্য যারা পর্দার এই সুযোগটা গ্রহন করতে পারলেন না।
.
[গ]
ওই পশুদের এহেন লালসার স্বীকার শুধু অল্পবয়সীরাই হয় তা কিন্তু নয়! বয়ষ্কারাও এমন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সেদিন বাসে উঠতেই মা'র থেকে বেশি বয়সী এক ভদ্রমহিলা ডাকতে শুরু করলেন, "ওই আপা, ওই আপা...
আমার পাশে বসেন তো। ছেলে মানুষ বসলে খুব টেনশন হয়। কিছু কিছু বেয়াদব আছে যারা মেয়ে দেখলে ঠিক থাকতে পারেনা... "
উনি বলেই চলছিলেন। কিন্তু আমি আর বলতে পারলাম না, কেন? প্রিয় পাঠক দয়া করে বুঝে নিবেন..
আর হ্যাঁ বলে রাখা ভালো উনার এক-তৃতীয়াংশ চুলে পাক ধরেছে। চেহারাটা বেশ রোগাপাতলা। চেহারাতেও কোন আকর্ষণ নেই। তবুও তাকে এমন বাজে পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। শুধুমাত্র একটা ফরজ বিধান লংঘন করার জন্য।
অথচ অনেক পর্দানশীন সুন্দরী আপু কোন পেরেশানি ছাড়াই সফর করছেন।
.
[ঘ]
অনেকেরই অভিযোগ, হিজাব করেও, বোরখা পরেও মেয়েরা ছাড় পাচ্ছে না।
সত্যিই কি তাই??
আমি বলি, হিজাব আর পর্দা দুটো সম্পুর্ন আলাদা জিনিস। হিজাব করলেই ঠিকঠাক পর্দা হয়না। বরং হিজাবতো মেয়েদের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করে। আমাদের ডিপার্টমেন্টের অধিকাংশ মেয়েই হিজাবি, কিন্তু পর্দা করে এমন মেয়ে হাতে গুনা দু-চারটার বেশি হবে না। অন্যদিকে আজকালকার বোরখাগুলোর যে হালত, তাতে কে সালোয়ার-কামিজ পরে আছে আর কে বোরখা বোঝা বড় মুশকিল!
আমার এক পরিচিতার কথা কানে বেশ বাজে.. ও বলেছিলো 'হিজাব করি ফ্যাশানের জন্য; পর্দার জন্য নয়!'
যে হিজাব করে Rag Day উদযাপন করা যায়, ফ্যাশন করা যায়, নাচ-গান করা যায় , বর্ষবরণ করা যায়...
সে হিজাবে অন্তত সহীহ পর্দার আশা করা যায়না! আপনি পর্দার উদ্দেশ্যে পরলেও আপনার উদ্দেশ্যটা ঠিকমত বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা, ফায়দা কতটুকু হচ্ছে.. এই হিজাবে আপনি কতটুকু নিরাপদ রয়েছেন, তা আশা করি আপনি নিজেই টের পান!
.
[ঙ]
আজকাল অনেক আপুই কুর'আনের কোথাও মুখ ঢাকার কথা লিখা নেই বলে নিকাব করেন না। আবার এই বিষয়ে প্রমাণও চান।
সত্যি বলতে আমি এই বিষয়টা এড়িয়ে যাই।
আমি কোন আলেমা নই, হাফেযা নই তাই যখন তখন হাদীস কুর'আনের আয়াত উদ্ধৃত করতে পারি না।
জাকির নায়েক বা আরিফ আজাদ হলেও হয়তো যুক্তি তর্ক দিয়ে বুঝাতে পারতাম। সে ক্ষমতাও আমার নেই।
কিন্তু অনেক ইসলামিক স্কলার আছেন যারা এই বিষয়ে অনেক চমৎকার রেফারেন্স সহ আলোচনা করেছেন। দুই একটা বই কিনে পড়লে আশা করি কোন সন্দেহ থাকবেনা। (উদাহরণস্বরূপ শাইখ আরিফীর লেখা 'ইউনিভার্সিটির ক্যান্টিনে' বইটি উল্লেখযোগ্য)
তবে হ্যা! কেউ যদি জেগে জেগে ঘুমায়.. তাহলে তো তাকে আর জাগানো সম্ভব নয়।
.
[চ]
সবশেষে একটা কথা বলি, যারা গরম, মাথা ব্যাথাসহ বিভিন্ন কারনে পর্দা করছেন না.. তারা তো জানেনই জান্নাতে কিন্তু এগুলো কষ্টের কিছুই থাকবেনা। ক্ষনস্থায়ী জীবনের একটু কষ্ট যদি আখিরাতের চিরস্থায়ী জীবনের শান্তির কারন হয় তাহলে একটু সবর তো করাই যায়.. তাইনা?
তারপরেও যারা ভয় পাচ্ছেন তাদের বলি, আমার মাইগ্রেইন, শ্বাসকষ্ট সব নিয়েও আমি কিন্তু বেশ ভালভাবেই পর্দা করে যাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ।
.
শুধু একটাবার প্রভুর ওপর ভরসা করে পর্দাটা ঠিকভাবে শুরু করেই দেখুন, সব কিছু এত সহজ হয়ে যাবে, কল্পনাও করতে পারবেন না।
সত্যি বলছি.. ঘর থেকে বের হলে নিরাপত্তা নিয়ে আর কোনো দুশ্চিন্তা করা লাগবে না...
Share:

0 comments:

Post a Comment