- উম্মে আব্দুল্লাহ
----------
গতকাল এক বোনের ব্যাপারে কথা হচ্ছিলো। তাঁর সবই ঠিক আছে শুধু নিকাব করতে পারেনা। এতে নাকি তার দম বন্ধ হয়ে আসে। অনেক কষ্ট হয়।
হিসেব করে দেখলাম এটা কোন সমস্যার মধ্যেই পড়েনা।
পরে জানতে পারলাম নিকাব করলে অনেক জায়গায় অনেক কিছু ছাড় দিতে হয়। অনেকেই পাত্তা দেয়না। আর সে এইটা সহ্য করতে পারেনা। তাই.......
.
এই ঘটনার সূত্র ধরেই মনে পড়লো আরো অনেক ঘটনার কথা। আমার খুব কাছের এক বান্ধবীকে পরিবর্তন হতে দেখেছি। একসময়কার বোরখা পরা হিজাবী মেয়েটা এখন ওড়নার সঠিক ব্যবহারও ভুলে গেছে। শুধু সে না চোখের সামনেই পাল্টে যেতে দেখেছি অনেককেই...
ওদের শ্লোগান ছিলো একটাই।
'জীবনে কিছু করতে চাইলে বোরখা ছাড়তে হবে। বোরখা পরলে কেউ দাম দেয়না।"_______
কথাগুলো কিন্তু একদমই উড়িয়ে দেয়া যায় না। সত্যই এমনটাই ঘটে... বোরখা পরার কি সত্যিই কোন ফায়দা নেই?
.
মনে পড়লো আমার বোরখা পরার কথা..
আমি যখন বোরখা শুরু করেছিলাম
তখন পর্দার ব্যাপারে কিছুই বুঝতাম না।
আমি শুধু বুঝেছিলাম আমি বড় হচ্ছি... স্কুল ড্রেস পরে নিজেকে ঠিকমত ঢাকতে পারিনা। আর অন্যরা এইটার ফায়দা নেয়।
.
ব্যাস!! জিদ ধরলাম বোরখা নিবো। বোরখা ছাড়া বাইরে যাবোনা। প্রথমে অনেক নিষেধ করলেও আমার জিদের কাছে তাদের হার মানতে হলো...
.
এরপর আমার মাথা ব্যাথার সমস্যা বাড়তে লাগলো। এরপর বাবার সাথে গেলাম ডাক্তারের কাছে। উনার কাছে যাবার পরে সে কি ঝাড়ি খেলাম!!
বোরখা পরলে এমনই হবে।
ব্যাস!! এইবার শুরু হলো আরেক সমস্যা।। বাবা বোরখা পরতে দিবেন না।
আমিও নাছোড়বান্দা। বোরখা আমি ছাড়বোনা।
তবে পর্দার জন্য না! কারন ছিলো একটাই আশেপাশের মানুষগুলোর দৃষ্টি ভালো না।
.
আমার কাছে পর্দা মানে ছিলো মাথায় কাপড় দিয়ে থাকা, অশ্লীল পোশাক না পরা আর নিজেকে সংযত রাখা। এইটুকু করেই আমি মনে করতাম আমি বিশ্ব জয় করে ফেলেছি।
ধার্মিক বনে গেছি ...
.
এভাবে কেটে গেলো বেশ কয়েকবছর...
পর্দার ব্যাপারে বেখবর আমি পর্দার সাথে পরিচিত হলাম। আমি বুঝলাম আমি কতটা ভুল ছিলাম।
ভাবলাম এইবার থেকে পর্দা শুরু করবো কিন্তু সবাই কি ভাববে এইটা ভেবেই আর এগুতে পারলাম না সেভাবে।
কিন্তু মনের মধ্যে একটা অস্থিরতা কাজ করতো। কি করবো কার কাছে সাহায্য চাইবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
বুঝলাম একজনই শুধু আমাকে সাহায্য করতে পারেন।
আমি তাঁর দ্বারস্থ হলাম...
কিন্তু কোন সাহায্যের হাত দেখতে পেলাম না। বরং জীবনে অনেক পরিবর্তন আসতে শুরু করলো।
ভালোবাসার মানুষগুলো আমার কাছ থেকে আস্তে আস্তে দুরে সরে যেতে লাগলো। আমি একা হয়ে যাচ্ছিলাম।
কষ্ট পাচ্ছিলাম...
ভয়ংকর কষ্ট .......
তাই আমি আরো বেশি তাঁকে ডাকতে শুরু করলাম।
কিন্তু না...
আমার কষ্ট আর একাকিত্ব বেড়েই চলছিলো..
একসময় খেয়াল করলাম আমি যত একা হচ্ছি, কষ্ট পাচ্ছি ততই তাঁর নিকটবর্তী হচ্ছি। আমি তাঁর দয়া, অনুগ্রহ সব উপলব্ধি করছি...
.
একসময় বুঝলাম আমার আর কোন পিছুটান নেই, কে কি বলবে সে নিয়েও কোন মাথা ব্যাথা নেই...
এখন তাঁর সন্তুষ্টিই আমার কাছে সব।
.
আমাকে পর্দা করতে হবে।
প্রথম যেদিন নিকাব করলাম তখন কি যে কষ্ট হচ্ছিলো। বমি আসছিলো.. বেশ কষ্ট হচ্ছিলো... হতাশ হয়ে গেলাম.. এমন হলে কি করে নিকাব করে বাইরে যাবো..
এরপর রুমেই নিকাব করার practice করতাম। এতে যে আমার কোন কষ্ট হতো না তা না। তবে কষ্ট হবে ভেবে পর্দার মত ফরজ বিধানকে আমি অবহেলা করবো কি করে!!
.
মনে আছে প্রথম যেদিন নিকাব করে বাইরে যাই, সেদিন আমার কি বেহাল দশা হয়েছিলো। আমার মাইগ্রেনের সমস্যা ভয়ংকর রুপ নিয়েছিলো। মাইগ্রেনের সমস্যা প্রবল থাকায় কষ্টটা একটু বেশিই পেতে হয়েছিলো।
কিন্তু এতকিছুর পরেও তাঁর সন্তুষ্টির জন্য আমি এই বিধান পালন করছি এইটা ভাবলেই সব কষ্ট নিমিষেই গায়েব হয়ে যেত।
আর মনটা এমন এক প্রশান্তিতে ভরে উঠতো যা পৃথিবীর কোন কিছুর বিনিময়েই সম্ভব না। আর দিন শেষে একটা কথাই মুখ দিয়ে বের হতো আলহামদুলিল্লাহ ইয়া রব্ব..
.
কী!!! কি ভাবছেন? ?
ভাবছেন গল্পের হ্যাপি এন্ডিং হলো!!
না এতো নিজের সাথে যুদ্ধ জয়ের কাহিনী ... আর পরিবার, সমাজ, লোকজন... কত জনের কত প্রশ্ন! কত কথা! কত উপাধি!
এরমধ্যে সবথেকে কমন যে উপাধি তা হলো ক্ষ্যাত!!
অবশ্য ক্ষ্যাত বললে আমার তেমন খারাপ লাগেনা। বরং ভালোই লাগে। কারন চাইলেই সবাই ক্ষ্যাত হতে পারেনা। এরজন্য আলাদা এক যোগ্যতা লাগে..
.
আর কমন যে প্রশ্ন তা হলো, "কিরে তোর এই অবস্থা ক্যান!! ছ্যাকা ট্যাকা খাইছিস নাকি??"
প্রথমদিকে কষ্ট লাগতো বেশ। পরে মনে হতো এই উছিলায় হয়তো আমার কিছু গুনাহ মাফ হচ্ছে।
.
একদিন এক চাচা বলেই ফেললেন, তুমি বোরখার মুখ বাঁধো ক্যান!! আমি বললাম কেন চাচা কি হইছে?
উনি বললেন, "ভালো মেয়েরা বোরখার মুখ বাঁধেনা। যারা খারাপ কাজ করে তারাই বাঁধে। কিন্তু তুমি তো অমন না। তাই তোমাকে সরাসরিই কথাটা বললাম!!"
আমি শুধু বলেছিলাম, চাচা আমার নিয়্যাত ঠিক আছে আর যিনি বুঝার তিনি বুঝলেই হলো।
.
শুধু এই দুই একটা ঘটনা না। প্রতিদিন এমন অনেক ঘটনা ঘটে যার অনুভুতি মোটেই সুখকর নয়।
মাঝে মাঝেই হতাশ হয়ে পড়ি। মনে হয় আর পারবোনা বোধহয়।
কিন্তু দিন শেষে তাঁর ওয়াদার কথা মনে করে যে শান্তি অনুভব করি, তা আবার আমার আত্মবিশ্বাস রিচার্জ করে দেয়।
0 comments:
Post a Comment