October 30, 2016

সমালোচনা...

[[ক.]]
 আমাদের উস্তাযরা কখনো চাইতেন না আমরা বড়দের সমালোচনায় অভ্যস্ত হয়ে উঠি। যেসব মুরব্বিদের সামনে আমরা দেখার মত দেখতে শিখেছি, দুনিয়াকে দুনিয়া, আখিরাতকে আখিরাত হিসেবে চিনতে শিখেছি তারা কখনো আমাদেরকে শিখাননি যে, "ভিন্নমতপোষণকারী বড়দের গালিগালাজ করলে আল্লাহ খুশি হয়!"
.
[[খ.]]
আচ্ছা একটা উদাহরণ দেয়া যাক, আপনি হয়তো জানেন রাজশাহীর পরিবেশ ঢাকার মত না, আইমিন জামাতে সমালোচনার ব্যাপারে ঢাকা চট্টগ্রাম এর উলামাদের যেমন বলতে দেখা যেত রাজশাহীতে তেমনটা ছিলোনা। (এখনকার হিসেব তো পুরোই আলাদা, আল্লাহ আমার ওই ভাইদের হিফাজত করুক গোমরাহি এবং জুলুম থেকে)
তো রাজশাহীর এই বৈরি পরিবেশেও আমার প্রিয় এক উস্তায মাঝেমাঝে জামাতের ভ্রষ্টতার ব্যাপারে দুচার কথা বলতেন, অন্য ক্লাসের খবর জানিনা। কিন্তু সবচে পুরাতন ব্যাচ হিসেবে আমাদের সামনে অনেক কিছুই বলতেন।
তো শাহবাগীয় সভ্যতার যুগে একবার শোনা গেলো সাঈদি সাহেবের চেহারা নাকি চাঁদে দেখা গেছে! আমরা এটা নিয়ে অনেক হাসাহাসি করলাম, একজন আরো একধাপ এগিয়ে কম্পিউটার রুমে চলে গেল!
ইলাস্ট্রেটর দিয়ে চাঁদ ও সাঈদি সাহেবের ছবি মার্জ করে ট্রল বানিয়ে ফেললো!! এই সবকিকিছুই ঘটেছিলো সেদিন সকাল ৭টার আগে..
৭টা থেকে আমাদের ক্লাস, প্রথম ঘন্টা "আল ফিকহুল মুয়াসসার" কিতাবের, উপরে বলা সেই উস্তাযের ঘন্টা.. আমাদের এক সহপাঠী অনাবাসিক থাকতো সেও নাকি দেখেছে!! এটা নিয়ে আমরা ক্লাসে হাসিঠাট্টা করছি.. এমন সময় হুজুর আসলেন..
- এত হাসি কিসের??
-- হুজুর! সাঈদি সাহেবকে নাকি চাঁদে দেখা গেছে... আমরা সবাই হাসতে হাসতে বললাম
- তাই নাকি? আজ রাতের ঘটনা?
-- জ্বি হুজুর! **বায়দা ভাই নাকি দেখেছে!!
- কিরে **বায়দা? কাহিনী কি?
--- হুজুর ফজরের সময় আমার বোন জার্মানি থেকে ফোন করেছিল, ওর কথা শুনে আমি বাহিরে এসে দেখলাম... দেখে ওরকমি মনে হলো..
(আমরা হাসছিলাম, আর ভাবছিলাম হুজুরও হয়তো আমাদের সাথে হাসিতে যোগ দিবে..কিন্তু)
হুজুরকে একদম চুপ দেখলাম... বললেন...
.
- একজন আলেমকে যদি আল্লাহ সম্মানিত করতে চান তাহলে তোমার-আমার কি বলার আছে....
.
.
[[গ.]]
আরেকদিনের ঘটনা, তখন আমাদের নাহবেমির ক্লাস চলছে। মুহতামিম সাহেব হুজুর ক্লাস নিচ্ছেন। কথাপ্রসঙ্গে শিয়াদের কথা উঠলো.. তখন হুজুর সংক্ষেপে একটা ঘটনা শোনালেন...
.
 ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট রাফসানজানী একবার বাংলাদেশে আসবে বলে কথা হচ্ছিলো... তখন কিছু উলামায়ে কিরাম তার ব্যাপারে ফতওয়া লিখে সাক্ষর যোগাড় করছিলেন... সব ঠিকঠাক চলছিলো.. মাঝে বাধ সেধে বসলেন শাইখুল হাদিস আজিজুল হক রহ.
উনি সেই ফতওয়ায় সাইন করবেন না!
আজিব! তাহলে কি উনি শিয়াদের কাফের মনে করেননা? রক্তগরম তরুণ কিছু আলেম গিয়ে হজরতের সামনে হাজির!! হুজুর আপনি ফতওয়ায় সাইন করছেননা কেন?
.
শাইখুল হাদিস সাহেব ব্যাখ্যা করলেন- "দেখো! একটা আক্বিদা কুফরি কি না.. এটা বলা সহজ! তুমি কোরআন হাদিস দেখে সহজে বলতে পারবা এটা কুফরি আক্বিদা এটা ইসলামি আক্বিদা, এই এই আক্বিদা যারা রাখবে তারা কাফির। কিন্তু একজন ব্যাক্তির ওপর যখন তুমি কুফরির ফাতওয়া দিবা (যে প্রেসিডেন্ট রাফসানজানি কাফের) তখন তোমাকে অনেক কিছু খেয়াল রাখতে হবে, সে শিয়া ঠিক আছে মানছি। কিন্তু আমার তো জানা নাই যে, সে ব্যক্তিগতভাবে শিয়া ধর্মের কুফরি আক্বিদাগুলোয় বিশ্বাসী কি না....
সবচে বড় কথা হচ্ছে, রাসুল সা. এর কথা অনুযায়ী তুমি যাকে কাফির বলবা সে আসলেই কাফির না হলে, এই কুফরির ফাতওয়া তোমার ওপরেই ফিরে আসবে! অতএব....."
শাইখুল হাদিস সাহেবের কথাশুনে এবার সবাই খামোশ!!
.
উস্তাযদের অযোগ্য ছাত্র হলেও কাওমি সনদের স্বীকৃতি হুজুগে এসব উপদেশ স্মরণ করেই আমি একদম চুপ ছিলাম, মুখ ফসকে না জানি কি বলতে কি বেরিয়ে যায়...
.
[[ঘ.]]
ব্যক্তিভিত্তিক সমালোচনার আরেকটা কুফল হচ্ছে লেখা/কথার গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়। যেমন, একসময় আমি অনেককে আদর্শ নারী সাজেস্ট করেছি, করতে বলেছি। আদর্শ নারি পড়ে দীনের ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছে এমন নারীর কারগুজারিও শোনা যেত একসময়....
কিন্তু যখন প্রতিমাসে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা জাকিরা নায়েকের সমালোচনা করা হচ্ছিলো তখন আমি হিম্মত হারিয়ে ফেলেছি কাউকে এই পত্রিকা পড়ার কথা বলতে।
.
একবার এক কলেজ পড়ুয়া আত্মীয়া এসে বললো- আমার কাছে অল্প কয়টা টাকা ছিলো, ভাবলাম আদর্শ নারী কিনি। কিন্তু কিনে তো লস গেল… জাকির নায়েকের ভুল ধরে অর্ধেক পত্রিকা ভর্তি। এসব দিয়ে আমি কি করবো?
.
তো ইস লিয়ে ভাই... অন্য ব্যক্তির সমালোচনার চেয়ে কি নিজের আত্মশুদ্ধির বেশি প্রয়োজন না?
.
- ৩০ অক্টোবর ২০১৬
ফেবুতে- https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1125702244185971&id=100002386190185 
Share:

0 comments:

Post a Comment