July 23, 2016

নীড ফর স্পিড! প্রসঙ্গ: রাসুলুল্লাহর নামাজ বনাম আমাদের নামাজ


১। হাটহাজারী দারুল উলুমের বড় মসজিদ, মাগরিবের ইকামাত শুরু হলো। আমি তিনতলায় আমার রুম থেকে নিচতলায় নেমে পুকুরপাড়ে গেলাম, একজনের পর ধীরেসুস্থে উযু করলাম। এরপর গিয়ে নামাজ ধরলাম!
আলহামদুলিল্লাহ্ এক রাকাতও মিস হয়নি।
এটা একটা নামাজ. .
.
২। মামা বাড়ি কাছে মসজিদ, মসজিদের ওজুখানায় ঢুকতে শুনলাম মাগরিবের নামাজের ইকামাত চলছে। আমি উযু করে কাতারে গিয়ে দাড়াতে দাড়াতে নামাজ শেষ!
এটাও একটা নামাজ...
.
৩। মুফতি ইজহারুল ইসলাম আল-কাউসারী ভাইয়ের সামনে বসে আছি, পাশের অরেক ভাই জিজ্ঞেস করলো- "এই যে অনেক স্পিডে নামাজ পড়ে, সুরা কিরাত রুকু-সাজদা কিছুই ঠিকঠাক করেনা, সেদিন ইন্দোনেশিয়ার একটা ভিডিও দেখলাম ৭ কি মিনিটে তারাবী শেষ! এসবের ব্যাপারে শরীয়ত কি বলে?" মুফতি ইজহার ভাই জানালেন- "নামাজ হবে না"
.
৪। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাজ কেমন ছিলো?
- এক সাহাবী দেখলেন মুহাম্মাদ স. তাহাজ্জুদ পড়ছেন, উনি পেছনে দাঁড়িয়ে নিয়ত করলেন। রাসুল সুরা বাকারার শুরুর দিকে পড়ছিলেন, সাহাবী ভাবলেন রাসুল সা. হয়তো ১০ রুকু পড়বেন। দেখলেন না! রাসুল পড়েই চলেছেন.. এবার ভাবলেন হয়তো একপারা পড়ে রাসুল সা. রুকুতে যাবেন, কিন্তু নাহ রাসুল পড়েই চলেছেন....... হাদীসটি আক্ষরিকভাবে ইয়াদ নাই, তবে সম্ভবত রাসুল প্রথম রাকাতে তিন পারার অধিক পড়েছিলেন, রুকু সিজদাও অনে-ক দীর্ঘ ছিল এবং দ্বিতীয় রাকাতে পড়তে পড়তে যখন ৬ষ্ট পারার সুরা মায়িদা পড়ছিলেন তখন সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু পেছনে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি, ধৈর্যে কুলায়নি, বাধ্য হয়ে নামাজ ছেড়ে দিয়েছেন!!
রাসুল তখনো তিলাওয়াত করেই চলেছেন....
.
৫। আমাদের আহলে হাদীস ভাইয়েরা এক সময় খুব নর্তন-কুদন করতো ৮ রাকাত তারাবীহ নিয়ে, কিন্তু কালের আবর্তে তারা চরম ফ্লপ খেলো, ২০ রাকাত তারাবীহর বাস্তবতা অকাট্যভাবে প্রমাণ হলো। এবার উনারা নতুন সূর ধরলেন!
- আমরা নাকি ২০ রাকাত পুরন করতে গিয়ে এত এত স্পীডে নামাজ শেষ করি!!
অদ্ভুত ব্যাপার! ভাই আপনি তো মুসলমানদের মসজিদে নামাজই পড়েন না, পড়েন "মসজিদে যিরারে"। আমরা কি পড়ি না পড়ি আপনি কিভাবে জানলেন? আমাদের মসজিদে ঝগড়া বাধাইতে আসছিলেন নাকি?
.
৬। কথা হচ্ছিলো কোনো এক আম জনতা ভাইয়ের সাথে। অভিযোগ হাফেজ সাহেবদের ওপর। "হাফেজ সাহেবরা তাড়াতাড়ি পড়ে, কিছুই বুঝা যায়না"!
আমি বললাম ভাইজান আমিতো শব্দ গুনে দিতে পারবো। আপনি বুঝেন নাই এর কারণ হচ্ছে আপনি হাফেজ না। না বুঝার কারণ যদি হয় স্পিডে পড়া তাহলে আপনি আমার সামনে দাড়ান- আজকের পারা থেকে সিদ্দিক আল মিনশাবীর মত ধীরেসুস্থে আপনাকে ১ পৃষ্ঠা পড়ে শোনাচ্ছি, তারপর আপনি আমাকে বলবেন কি বুঝেছেন। রাজি?
এবার কাণ্ডারি খামোশ!!
.
৭। রমজানে আসরের আগে বসে আছি চকবাজার শাহী মসজিদে, অনলাইনে বেশ পরিচিত মুখ এক ভাইয়ের সাথে কথা হচ্ছে। বললেন- "আসলে আমরা তো হাফেজ না.. এখন হাফেজসাব যদি একটু জোরে পড়ে আমাদের মনে হয় আহ! কত কিছু যে বাদ দিয়ে দিয়ে পড়তাছে আল্লাই জানে!"
.
৮। যদ্দুর জানি নগরীগুলোর বেশিরভাগ মসজিদের তারবীতেই ঠিকঠাকভাবে কিরাত পড়া হয়। অন্তত এরকম দ্রুত পড়ানো হয় না, যেখানে হরফ আর ওয়াকফ ঠিকভাবে আদায় হয়না।
নিজের অভিজ্ঞতা বলি... এবছর (২০১৬) আমরা প্রথম ১০ দিনে খতম করেছি, আমি প্রতিদিন শুরুতে পড়াতাম। কখনো কখনো অমনোযোগী হয়ে গেছি (আল্লাহ মাফ করুক) বাদবাকি বেশিরভাগ সময়ই চেষ্টা করেছি প্রতিটা আয়াত অর্থ বুঝেবুঝে তেলাওয়াত করতে। এর স্বাদই আলাদা। কখনো মনে হয় কবিতার মত কিছু আবৃতি করছি, কখনো মনে হয় কাউকে ফাটাফাটি কোনো উপন্যাস শোনাচ্ছি। কখনো মনে হয়েছে নাহ! এত মজা.... এটা শুধু কোরআনেই সম্ভব... ইশ! যদি আর কয়েক রাকাত পড়াতে দিত!!
.
৯। আমি মানছি অনেক মসজিদে খুব দ্রুত তিলাওয়াত করা হয়, কোরআনের হক্ব আদায় করে পড়া হয়না। তবে এরজন্য তো ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আপনি দায়ী করতে পারেন না, এরসাথে ২০ রাকাতের সম্পর্ক কোথায়?
যারা দ্রুত নামাজ পড়ে তাদের তারাবী, ইশরাক কিবা মাগরিবের ফারাক নেই।
সবসময়ই আপনি একবার ওযু করতে করতে তাদের ৩ রাকাত শেষে হয়ে যায় 😉

---
Share:

0 comments:

Post a Comment