July 11, 2015

প্রসঙ্গঃ মতবিরোধ! ইখতিলাফ নাকি খিলাফ?


উপমা: তাফহীমুল কুরআন এবং হিদায়াহ শরীফ
(জামায়াতে ইসলামীর ভাইদের লেখাটি অবশ্যই পড়া উচিত)
--
 ""দ্বিতীয় ধরনের মতপার্থক্য করা হবে দীনের মৌলিক বিষয়গুলোর ব্যাপারে। অথবা যে বিষয়টিকে আল্লাহ ও তাঁর রসুল দীনের মৌলিক বিষয় বলে গণ্য করেননি এমন কোনো বিষয়ে কোনো আলেম, সুফী, মুফতী, নীতিশাস্ত্রবিদ বা নেতা নিজে একটি মত অবলম্বন করবেন এবং অযথা টেনে-হেঁচড়ে তাকে দীনে মৌলিক বিষয়ে পরিণত করে দেবেন, তারপর তার অবলম্বিত মতের বিরোধী মত পোষণকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকেই দীন ও মিল্লাত বহির্ভুত গণ্য করবেন। একই সাথে নিজের একটি সমর্থক দল বানিয়ে এমর্মে প্রচারণা চালাতে থাকবেন যে, আসল উম্মতে মুসলিমা তো এ একটি দলই মাত্র, বাদবাকি সবাই জাহান্নামের ভাগীদার। উচ্চ কণ্ঠে তারা বলে যেতে থাকবে, মুসলিম হও যদি এই দলে এসে যাও, অন্যথায় তুমি মুসলিমই নও।"" (তাফহীমুল কুরআন, ভুমিকা, ১ম খন্ড, ৩৫ পৃষ্ঠা)
.

১। আমার কোন এক উস্তাদ বলেছিলেনঃ "প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক হচ্ছে আত্মমর্যাদাবোধ থাকা, নতুবা সে গোমরাহ হয়ে যাবে!"
আজ খুব দুঃখজনক ভাবে আমরা লক্ষ্য করছি এদেশে জামায়াতে ইসলামী সমর্থকদের বিরাট অংশ লা-মাযহাব তথা আহলে হাদীস মতবাদে ইফেক্টেড। আর এদেশে লা-মাযহাবী ভাইদের বড় একাংশ জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক। এর কারন কি তা আমার জানা নেই, কিংবা আপাতত জানার প্রয়োজনবোধ করছি না।
তবে সত্য অনুসন্ধানী ভাইদের আহ্বান করবো কারো কথায় প্রভাবিত হওয়ার পুর্বে নিজ মাযহাবের দলিল সম্পর্কে পরিপুর্ণ অবগত হয়ে নিন... আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুক..
.
২। শুরুতে উল্লেখিত অংশটুকু আধুনিক প্রকাশনীর ২০১২ সনে প্রকাশিত তাফহীমুল কুরআন থেকে হুবহু উদ্ধৃত হয়েছে।
বাংলা তাফহীমের ভূমিকার শেষে 'বৈধ মতবিরোধ' শিরোনামে সাইয়েদ মওদুদী সাহেব বেশ চমত্‍কার ভাবে প্রসঙ্গটি আলোচনা করেছেন। জামায়াতে ইসলামী সমর্থক কিংবা শিবিরের ভাইদের অনুরোধ করছি পড়ে বর্তমান সময়ের সাথে মিলিয়ে নিতে।
.
৩। বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ গ্রন্থ হিদায়াহ গ্রন্থকার এই বিষয়টি তার গ্রন্থের ২য় খন্ডে খুব সংক্ষেপে মাত্র কয়েক লাইনে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, সাইয়েদ মৌদুদী সাহেব কর্তৃক প্রথমে উল্লেখিত বৈধ মতবিরোধ; সেটিকে হিদায়াহ গ্রন্থকার বলেছেন "ইখতিলাফ" শব্দে, এবং অবৈধ উল্লেখিত দ্বিতীয় মতবিরোধ; সেটিকে উল্লেখ করেছেন "খিলাফ" শব্দে।
.
৪। আপনি হেদায়াহ পড়লে দেখবেন সমগ্র হেদায়ায় ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালেক, আবু ইউসুফ, মুহাম্মাদ বিন হাসান, যুফার সহ বিভিন্ন ফুকাহাদের অসংখ্য ইখতিলাফের আলোচনা করা হয়েছে এবং অন্য ইখতিলাফের জবাব দেয়া হয়েছে। অথচ যখনই প্রসংগ এসেছে শিয়া, খারেজি, জাহমিয়াদের তখন বলা হয়েছে "এটা ইখতিলাফ নয় বরং খেলাফ" তথা "মতপার্থক্য নয় বরং বিরোধীতা"। ব্যস এর খণ্ডনে সময় নষ্ট করা হয়নি।
.
৫। আজ বাংলাদেশের পথে ঘাটে, রাস্তায় রাস্তায় খিলাফ এবং ইখতিলাফের ডংকা বাজছে। হাজার বছরের মীমাংসিত বিষয় নিয়ে আবার ঝামেলা মাথাচাঁড়া দিয়ে উঠছে। যদিওবা মক্কার হাম্বলীরা হিন্দুস্তানীদের বলছেনা যে তোমাদের নামাজ ভুল, আফ্রিকার শাফেয়ীরা পাকিস্তানীদের বলছেনা যে তোমাদের নামাজ ভুল, নাইজেরিয়ার মালেকীরা বাংলাদেশীদের বলছেনা যে তোমাদের নামাজ ভুল, আর আমরাও কখনো বলিনি যে বাকি ৩ মাযহাবী কোনো লোকের নামাজ হচ্ছেনা, কিন্তু ওই তিন মাযহাবেরই কোনো না কোনো মাসায়িল টেনে এনে কেউ যখন বলে "বিশ্বের বেশিরভাগ মুসলমান যে ফিক্বহ অনুসরণে নামাজ পড়ে তথা হানাফীদের নামাজ রাসুলের নামাজের মত নয়" তখন আমরা সত্যিই চিন্তিত হয়ে যাই যে, 'এটা কি ইখতিলাফ নাকি খিলাফ?' এতবছর পর উদ্ভাবিত এই অদ্ভুত আপত্তির পেছনে রহস্য কি?
জাতি জানতে চায়!
 
-------
Share:

0 comments:

Post a Comment