June 21, 2021

শাইখ ওয়াহিদ বালীর সাক্ষাতকার থেকে কয়েকটা অংশের ভাবানুবাদ

প্রশ্ন – দরস তাদরিস ছেড়ে আফ্রিকার অভাবগ্রস্ত অঞ্চলে পড়ে আছেন। মানুষ তো হিদায়াত পাচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ, কিন্তু ব্যক্তিগত বিশেষ অর্জন কি হল ভাবছেন? 

উত্তর= পথে নেমে দাওয়াতি কাজ করে দুইটা লাভ বুঝতে পারছি 

এক. আমিত্ব ধ্বংস হচ্ছে। নিজস্ব বলয়ে থাকলে ছাত্র-অনুসারী সবাই তাযীম করে, খেদমত করে। এসব থেকে শায়খসুলভ যা অহম পয়দা হয়েছিল, আল্লাহ দয়ায় সেসব দূর হচ্ছে। অচেনা অজানা গ্রামে গিয়ে মানুষকে দ্বীনের কথা বলছি, কেউ চিনেনা, জানেনা, কেউ কথা শুনছে, কেউ শুনছে না। এটা আর ছাত্রদের সামনে বা অনুষ্ঠানে বসে বসে আলোচনা করার বেশ পার্থক্য আছে। 

দুই. নববী তরিকায় বাস্তব দাওয়াতের স্বাদ। আহ! এই অপার্থিব স্বাদ যে নিজে অনুভব করেনি, তাকে মুখে বলে বোঝানো সম্ভব না। 

 দরসের চেয়ারে বসে ছাত্রদেরকে ফিকাহ – হাদিস পড়ানোর সাথে এই দুইটা পার্থক্য আমি দেখতে পাচ্ছি। দাওয়াতের স্বাদ আর আমিত্ব শেষ হওয়া। 

(এরপর অমুসলিমদের দাওয়াতের একটি ঘটনা বললেন, এক গ্রামে একজনকে জিজ্ঞেস করেছেন- ইসলামের ব্যাপারে কিছু জানো? সে বলছে- ইসলাম এটা কী? খাওয়ার জিনিস? নাকি কোনো শহর? নাকি কোনো যায়গা? না কি এটা?!!)

---

প্রশ্ন – শাইখ আপনি তো আগে কিছু কিতাব লিখেছিলেন, জিন – জাদু- ইত্যাদি বিষয়ে…।

উত্তর= ত্রিশ বছর পার হয়ে গেছে ভাই!

- তবুও আপনার কথা উঠলেই মানুষের মনে হয় “সিহরের শাইখ” :D মানুষ আসলে এগুলো নিয়ে কথা বলতে মজা পায়। আসসারিমুল বাত্তার বইটা কিভাবে লিখেছিলেন? 

= জামেয়ায় পড়ার শেষ বছরের ঘটনা, পড়াশোনার পাশাপাশি এক মসজিদে জুমা পড়াতাম, একদিন জুমার বয়ানের মধ্যে আলোচনা করলাম, জাদুকর, তান্ত্রিক এসবের শয়তানদের কাছে যাওয়া জায়েজ নাই। নামাজের পর যখন মানুষজন চলে গেল, তখন কাছের এক মাদরসার উস্তায এসে দেখা করলো। বলল- হুজুর! যা বলেছেন মাশাআল্লাহ ভাল বলেছেন, জাদুকরদের কাছে যাওয়া জায়েজ নাই। কিন্তু আমাকে আর আমার ভাইকে তো যাদু করা হয়েছে, দুজনেরই বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া যাওয়া অবস্থা। এর কোনো সমাধান আপনার কাছে আছে? বললাম, আমার এব্যাপারে জানা নাই, বাকি সমাধান নিশ্চয় আছে, একটু খুঁজেন। এরপর থেকে আমি নিজেও খুঁজতে থাকলাম, প্রথম পেয়েছিলাম বরই পাতার গোসলের ব্যাপারে, তাবেঈ ওয়াহাব ইবনুল মুনাব্বিহ রহ. থেকে বর্ণিত ওই বর্ণনাটা…। 

----

প্রশ্ন – এসবের ক্ষতি থেকে হিফাজতের জন্য কি করা উচিত? 

= লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু… দোয়াটা ১০০বার। আউযু বিকালিমাতিল্লাহ… ৩বার। বিসমিল্লাহিল্লাযি… ৩বার। 

- এগুলোতে সত্যিই ফায়দা হয়?

= হ্যাঁ! মনোযোগের সাথে, বুঝে বুঝে পড়লে আল্লাহ চায়তো অবশ্যই ফায়দা হবে। সন্দেহ নেই। অনেক জাদু আক্রান্ত আছে, সকাল-সন্ধার যিকর করেই সুস্থ হয়ে যায়।

-----

প্রশ্ন – আফ্রিকার উপজাতিদের সমাজ তো অন্যরকম, সেখানে কাজ করতে সমস্যা হয় না?

= ওখানে প্রতিটা গোত্র বা গ্রামের আলাদা আলাদা রাজা আছে। একজন রাজা একটা একটা গ্রামের মত এলাকা শাসন করছে। আমরা কোনো এলাকায় কাজ করতে গেলে প্রথমে রাজার সাথে কথা বলতে হয়, তাকে বুঝিয়ে অনুমতি নিয়ে এরপর এলাকার লোকদের কাছে যেতে হয়। তাহলে সমস্যা হয়না কোনো।

.

– সাধারণ মুসলিমদের কাছে কি প্রত্যাশা করেন? 

= অমুসলিম, নওমুসলিম আর দাঈদের জন্য সাধারণ মুসলিমরা যদি তাদের দোয়ার অর্থেকটা আর ধনী মুসলিমরা যদি তাদের যাকাতের অর্ধেকটা বরাদ্দ করতো, তাহলে হয়তো প্রতি সপ্তাহে আমরা নতুন নতুন গ্রাম জয় করতে পারতাম।

.

– খরচাঁদির বিষয়টা কেমন?

= দাওয়াতি কাজ তো করা যায়, কিন্তু তারা ইসলাম কবুল করলে ইসলামের ওপর টিকিয়ে রাখাটা কঠিন। একটা গ্রামের জন্য অন্তত একটা মসজিদ-মক্তব তৈরি করা, বছর খানেক একজন শিক্ষক রেখে তাদেরকে ইসলামের ব্যাপারে শিখানো এগুলোর জন্য প্রতিটা গ্রামে ৮০হাজার থেকে ১লাখ ডলারের মত খরচ হয়ে যায়।

-----

প্রশ্ন – কোনো দাওয়াতি কাজে সফলতার গোপন সুত্র কী? দাঈদের যা অর্জন করা উচিত

= এক্ষেত্রে সফলতার সুত্র ৩টি - 

১. দয়া-মায়া,

২. ইখলাস,

৩. মানুষকে হিদায়াত পৌঁছানোর ব্যকুলতা...।

-------

সাক্ষাতকারের লিংক - https://www.youtube.com/watch?v=typHs3QXKrY

Share:

0 comments:

Post a Comment