[a]
কোন শায়খের অনুসারীরা দিবারাত্রি রাশিয়ার গুণগান গায়, সেটা হয়তো আপনারা জেনে থাকবেন। তবে রাশিয়ার গান গাইতে গাইতে তারা যে পুতিনকে আমিরুল মুমিনিনের চেয়ারে বসানোর যথেষ্ট কসরত করে, এটা কি জানা আছে?
পুতিনের ক্ষেত্রে তারা যে উপমা ব্যবহার করে, তা হচ্ছে "পুতিন যেন এই জামানার নাজ্জাশি!"
তারা বলে থাকে "নাজ্জাশি একজন খ্রিষ্টান ছিল, পুতিনও একজন খ্রিষ্টান! নাজ্জাশির দ্বারা যেমন (মাক্কি যিন্দেগীতে) অনেক মুসলমানকে আল্লাহ হিফাজত করেছেন, তেমন পুতিনের দ্বারা সিরিয়াকে রক্ষা করছেন!!"
.
[b]
প্রথমে আমরা দেখি পুতিনের রাশিয়া এই মাসে সিরিয়ার মুসলমানদের রক্ষার্থে কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে, এরপর নাজাশির দিকে মনযোগী হবো। আমাদের হাতে এখন 'শুধু ইদলিবের' খবর আছে...
.
এই মাসে রাশিয়া বিশেষভাবে চিকিৎসা সেবাকেন্দ্রগুলোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে। (তথ্যসূত্রঃ আল ফুসতাত মিডিয়া টেলিগ্রাম চ্যানেল) শুধু এই এপ্রিলে ইদলিবের যেসব চিকিৎসা কেন্দ্রে হামলা করেছে করেছে-
১। জাতীয় হাসপাতাল, মাইর্ত [maaert] আল নোমান সিটি (২ এপ্রিল)
২। আর-রাহমাহ হাসপাতাল, খান শাইখুন সিটি (৪-১৬ এপ্রিল)
৩। হেশ ভিলেজের ডিসপেনসারিসমুহ (৭-৮ এপ্রিল)
৪। আল-ইখলাস হাসপাতাল, শিনান ভিলেজ (১৭ এপ্রিল)
৫। সেন্ট্রাল হাসপাতাল, আবিদিন ভিলেজ (২২ এপ্রিল)
৬। ওয়াসিম হিসেনো হাসপাতাল, কাফার তাখারেম সিটি (২৫ এপ্রিল)
.
রাশিয়ার এই সবগুলো বিমান হামলা শুধু এই মাসের মধ্যেই হয়েছে। মাসের আরো ৫দিন এখনো বাকি! হাসপাতালগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, চিকিৎসা সেবা বন্ধ, বাশারের বাহিনী প্রতিদিন রাসায়নিক বোমা হামলা করছে, রাশিয়া চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে।
.
তবুও ইমরান নজর হোসেনের মুরিদরা প্রচার করছে "বাশার এই জামানার সালাহুদ্দিন আইয়ুবী! পুতিন এই জামানার নাজাশী!! আর রাশিয়া মুসলমানদের বন্ধু!!!"
হায়... এরকম নিষ্ঠুর কৌতুকে স্বয়ং ইবলিস শয়তানও বোধহয় স্তম্ভিত.!
.
[c]
এবার আসুন বাদশাহ নাজাশি প্রসঙ্গে, ইমরান সাহেবের ভক্তরা রাশিয়ার খ্রিষ্টানদের বহুবিধ ফায়দা বর্ণনা করে থাকে। গতদিন আমরা ইমরান নজর হোসেনের যে ভিডিওটি শেয়ার করেছি (bogus jihad in syria) সেখানে উনি রাশিয়ার প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন- "রাশিয়া রিয়েল ক্রিশ্চিয়ানিটির দিকে ফিরছে..."
এছাড়া আজ শুরুতে আমরা উল্লেখ করেছি উনার ভক্তরা পুতিনকে কিভাবে নাজাশির সাথে তুলনা করে থাকে.. (প্রমাণ দেখুন কমেন্টের স্ক্রিনশটে)
.
এবার আপনি প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারেন, নাজাশী বাদশাহ (রাসুল সা. যার জানাজা পড়েছিলেন) সে কি সত্যিই খ্রিষ্টান ছিল? না ইসলাম কবুল করেছিল?
উত্তর হচ্ছে, নাজাশি অনেক আগেই রাসুল সা. এর চাচাতো ভাই জাফর ইবনে আবি তালেব রা. এর কাছে ইসলাম কবুল করেছে। এজন্যই রাসুল স. তাঁর জানাজা পড়েছেন, কখনওই কোনো কাফিরের জানাজা আমাদের রাসুল স. পড়েননি।
কিন্তু ইমরান সাহেবের মুরিদেরা রাশিয়ার দালালি করার সুবিধার্থে সেটা গোপন করে, একজন মুমিন বাদশাহকে খ্রিস্টান হিসেবে প্রচার করছে।
আমরা এপ্রসঙ্গে muftisays(.)comএর একটি ফাতওয়ার অনুবাদ প্রকাশ করছি.. প্রিয় ভাইয়েরা পড়ে নিবেন। এবং বেশি বেশি প্রচার করবেন।
.
[d]
প্রশ্নঃ সম্মানিত শায়েখ আসসালামু আলাইকুম, এটা কি সত্যি যে হাবশার বাদশাহ নাজ্জাসি রাসূল সা.এর জীবদ্দশায় মুসলিম হয়েছিলেন? যদি সত্যি হয়, দয়া করে আপনি কি আমাকে উদ্ধৃতি দিতে পারেন কোন গ্রন্থে এটা উল্লেখ হয়েছে?
.
উত্তরঃ
বিসমিল্লাহ্, আল্লাহর দেয়ার তাওফিক অনুযায়ী উত্তর।
হ্যা, নাজ্জাসি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জীবদ্দশায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
নিচে, আর রাহীকুল মাখতুম (রাসুল সা. এর একটি নির্ভরযোগ্য এবং প্রসিদ্ধ জীবনী) পৃষ্ঠা ২২১,২২২ এর সারকথা উল্লেখ হলঃ
.
"নাজাশী, আবিসিনিয়ার (ইথিওপিয়া) রাজা। তাঁর নাম ছিল আশামা বিন আল-আবজার, নবী সা.এর বাণী গ্রহণ করেছিলেন। চিঠিটি আমর বিন উমাইয়া আল-দামরি রা.এর মাধ্যমে প্রেরিত হয়েছিল, যা আত-তাবারিতে উল্লেখ হয়েছে, সেটি হিজরতের ছয় বছর পরের কিংবা হিজরতের সাত বছর আগের। চিঠিটির তাহকিকে দেখা যায়, এটি হুদায়বিয়াহ সন্ধির পরে পাঠানো হয়নি। চিঠির কথোপকথন বরং ইঙ্গিত দেয় যে, এটা রাজাকে পাঠানো হয়েছিল যখন জাফর রা. এবং তাঁর সঙ্গিরা মাক্কি যুগে আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন।
কারণ, চিঠির একটি বাক্যে খুজে পাওয়া যায়, "আমি আমার চাচাতো ভাই জাফরের সাথে মুসলিমদের একটি জামাত আপনার কাছে পাঠালাম। তাদের প্রতি উদার হবেন এবং অযথা গর্ব করবেন না।"
(এছাড়া চিঠিতে সিল মোহর নেই, যা মদিনার চিঠিগুলোতে রয়েছে, -অনুবাদক)
ইমাম বাইহাকী, ইবন ইসহাক রহ.এর সুত্রে, নাজাশীর কাছে পাঠানো নবীর চিঠির নিম্নোক্ত বিবরণ দিয়েছেনঃ
.
"চিঠিটি নবী মুহাম্মদের পক্ষ থেকে নাজাশী আল-আশামা, আবিসিনিয়ার (ইথিওপিয়া) রাজার প্রতি প্রেরিত হচ্ছে।
তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক যে হিদায়াতের অনুসরণ করে, এবং আল্লাহর ও তার রাসুলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তাঁর কোনো অংশীদার নেই, তাঁর স্ত্রী বা পুত্র নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। আমি আপনাকে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান করছি; যদি আপনি ইসলাম গ্রহণ করেন, আপনি নিরাপত্তা পাবেন,
"বলুন হে কিতাবীগণ, তোমরা এমন কথার দিকে এসো, যা আমাদের এবং তোমাদের নিকটে সমান। আমরা শুধু আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করিনা, আর তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করিনা এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আমাদের রব হিসাবে গ্রহণ করিনা। এরপর যদি তারা বিমুখ হয় তবে বল, 'তোমরা সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলমান।'" [আলে ইমরান, ৬৪]
যদি আপনি আমার আহ্বান অস্বীকার করেন, তাহলে আপনি আপনার খ্রিষ্টান জনগণের সকল অনিষ্টের কারণ হবেন।"
.
ড. হামিদুল্লাহ (প্যারিস), একজন নির্ভরযোগ্য মুহাক্কিক, উপরের চিঠিটির একটি সংস্করণ কিছুদিন প্রকাশ করেছেন এবং সেটি ইবনুল কাইয়্যিম রহ.এর বর্ণনার অনুরূপ। ড. হামিদুল্লাহ অনেক প্রচেষ্টা করেছিলেন এবং মূল চিঠিটির পাঠোদ্ধারের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির সকল মাধ্যম ব্যবহার করেছিলেন, যা নিন্মরূপে পড়ুনঃ
"আল্লাহর নামে, যিনি সবচেয়ে ক্ষমাশীল, সবচেয়ে দয়ালু। মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল থেকে নাজাশী আবিসিনিয়ার রাজার প্রতি। তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক যে সঠিক দিকনির্দেশনার অনুসরণ করেছে। অভিবাদন জানাই, আমি আল্লাহর প্রশংসা করি, তিনি ছাড়া কোনা উপাস্য নেই, তিনি সার্বভৌম, পবিত্র, শান্তির উত্স, শান্তিদাতা, বিশ্বাসের প্রতিপালক, নিরাপত্তার রক্ষাকর্তা। আমি সাক্ষ দিচ্ছি যে মরিয়ম পুত্র ঈসা আলাইহিস সালাম রুহুল্লাহ। এবং আল্লাহর হুকুম কুমারী, সত্, পবিত্র মরিয়মের মধ্যে সঞ্চালন করেছিলেন। যার কারনে তিনি ঈসা আলাইহিস সালামকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন। আল্লাহ নিজে তাঁর নূর এবং তাঁর রূহের ফুঁক থেকে তাঁকে সৃষ্টি করেছেন, যেমনটি তিনি আদম আ.কে সৃষ্টি করেছিলেন। আমি আল্লাহর একজন রাসূল হিসেবে আপনাকে আল্লাহ এক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই এবং তাঁর আনুগত্যের দিকে এবং আমাকে অনুসরণের দিকে এবং আমার উপর যা অবতীর্ন হয়েছে এসবের দিকে আহ্বান করছি। আমি আপনাকে এবং আপনার জনগণকে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর দিকে আহ্বান করছি। আমি এভাবে সাক্ষ দিচ্ছি যে, আমি আমার বার্তা এবং উপদেশের সাথে যোগাযোগ করেছি। আমি আপনাকে আমার উপদেশ শোনার এবং গ্রহণ করার আহ্বান করছি । তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক যিনি হিদায়াতের অনুসরণ করেছে।" [এই চিঠি সম্বলিত হাদিসটি রয়েছে- যাদুল মা'আদ ৩খ/৬০পৃ]
.
চিঠির মূলঅংশটি নিঃসন্দেহে সহীহ, কিন্তু হুদাইবিয়াহের সন্ধির পরে ইহা লিখিত হয়েছিল বলে সমর্থন করার জন্য এখনও নির্দিষ্ট প্রমাণের অভাব রয়েছে। যখন আমর বিন উমাইয়া আদ-দামরি'র (রাঃ) মাধ্যমে নাজাশীর কাছে চিঠি প্রেরণ হয়েছিল, চিঠিটি একটি চামড়ার উপর লেখা হয়েছিল এবং তাঁর চোখের সামনে মেঝেতে রাখা হয়েছিল, তিনি ইসলাম কবুল করেছিলেন এবং নবী'কে (সাঃ) নিচের প্রত্যুত্তর লিখেছিলেনঃ
.
"আল্লাহর নামে, যিনি সবচেয়ে ক্ষমাশীল, সবচেয়ে দয়ালু। নাজাশী আশামা থেকে মুহাম্মদ, আল্লাহর রাসূলের প্রতি। আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক, হে আল্লাহর রাসূল! পাশাপাশি আল্লাহর কৃপা ও রহমত বর্ষিত হোক যিনি ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই। আমি আপনার চিঠি গ্রহণ করেছিলাম, যেখানে আপনি ঈসা আঃ সম্পর্কে এবং পৃথিবী ও জান্নাতের অধিপতি সম্পর্কে উল্লেখ করেছিলেন, আপনি যা বলেছেন ঈসা (আঃ) তার চেয়ে বেশি কিছু নন। আমরা সম্পূর্নরূপে স্বীকার করি, যা দিয়ে আপনাকে আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। আর আমরা আপনার চাচাতো ভাই ও তাঁর সঙ্গীদের আপ্যায়ন করেছিলাম। আমি সাক্ষ দিচ্ছি যে আপনি আল্লাহর রাসূল, সত্য এবং নিশ্চিত যারা আপনার আগে (নবী হিসবে) বিগত হয়েছেন। আমি আপনার চাচাতো ভাইয়ের মাধ্যমে আপনার কাছে অঙ্গীকার করেছি এবং তাঁর মাধ্যমে পৃথিবীর অধিপতির নিকট নিজেকে সমর্পণ করেছি।"
[যাদুল মা'আদ ৩/৬১]
.
হিজরত পরবর্তী সময়ে নবী সা. নাজাশীকে সংবাদ পাঠিয়ে আবিসিনিয়ায় হিজরতকারী জাফর এবং তার সঙ্গী সাহাবী রা.দের বাড়ি পাঠানোর জন্য বলেছিলেন। তাঁরা ফিরে এসে নবী'র (সাঃ) সাথে খাইবারে দেখা করেন। নীগাস তাবুক যুদ্ধের কিছুদিন পরে হিজরতের ৯ বর্ষে রজব মাসে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। নবী (সাঃ) তাঁর মৃত্যু সংবাদ ঘোষনা করেন এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে জানাযার নামাজ পড়ান।
.
পরবর্তিতে আরেকজন রাজা নাজাশীর অনুসারী হয়ে সিংহাসনে বসেন এবং নবী (সাঃ) তাকে আরেকটি চিঠি প্রেরণ করেন কিন্তু তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন কি করেননি সে ব্যাপারে এখনো তথ্য পাওয়া যায়নি। [সহিহ মুসলিম ২/৯৯]
আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন..
.
উত্তর লিখেছেন-
মাওলানা কামরুজ জামান
লন্ডন, ইউ কে
....
[e]
রাসুলুল্লাহ সা. এর চিঠির স্ক্যান কপি আমাদের সংগ্রহে রয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। আপনাদের জন্য সংযুক্ত করে দেয়া হচ্ছে-
.
লেখা অনেক দীর্ঘ হয়ে গেলো, সর্বোপরি আমরা আল্লাহর কাছে রহমত এবং নুসরতের প্রত্যাশী, ওই ভাইদের জন্য হিদায়াতের প্রত্যাশী। আশা করছি ভবিষ্যতে নাজাশীর নামে আপনারা কখনো বিভ্রান্ত হবেন না।
শায়খ ইমরান নজর হোসেনের অনুসারী ভাইদেরকেও আমি তাওবাহ করার আহ্বান জানাচ্ছি। তাহলে আল্লাহ তা'আলা আমাদের জান্নাতে একসাথে মিলিয়ে দিবেন।
ওয়াসসালাম...
.
-----------
কোন শায়খের অনুসারীরা দিবারাত্রি রাশিয়ার গুণগান গায়, সেটা হয়তো আপনারা জেনে থাকবেন। তবে রাশিয়ার গান গাইতে গাইতে তারা যে পুতিনকে আমিরুল মুমিনিনের চেয়ারে বসানোর যথেষ্ট কসরত করে, এটা কি জানা আছে?
পুতিনের ক্ষেত্রে তারা যে উপমা ব্যবহার করে, তা হচ্ছে "পুতিন যেন এই জামানার নাজ্জাশি!"
তারা বলে থাকে "নাজ্জাশি একজন খ্রিষ্টান ছিল, পুতিনও একজন খ্রিষ্টান! নাজ্জাশির দ্বারা যেমন (মাক্কি যিন্দেগীতে) অনেক মুসলমানকে আল্লাহ হিফাজত করেছেন, তেমন পুতিনের দ্বারা সিরিয়াকে রক্ষা করছেন!!"
.
[b]
প্রথমে আমরা দেখি পুতিনের রাশিয়া এই মাসে সিরিয়ার মুসলমানদের রক্ষার্থে কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে, এরপর নাজাশির দিকে মনযোগী হবো। আমাদের হাতে এখন 'শুধু ইদলিবের' খবর আছে...
.
এই মাসে রাশিয়া বিশেষভাবে চিকিৎসা সেবাকেন্দ্রগুলোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে। (তথ্যসূত্রঃ আল ফুসতাত মিডিয়া টেলিগ্রাম চ্যানেল) শুধু এই এপ্রিলে ইদলিবের যেসব চিকিৎসা কেন্দ্রে হামলা করেছে করেছে-
১। জাতীয় হাসপাতাল, মাইর্ত [maaert] আল নোমান সিটি (২ এপ্রিল)
২। আর-রাহমাহ হাসপাতাল, খান শাইখুন সিটি (৪-১৬ এপ্রিল)
৩। হেশ ভিলেজের ডিসপেনসারিসমুহ (৭-৮ এপ্রিল)
৪। আল-ইখলাস হাসপাতাল, শিনান ভিলেজ (১৭ এপ্রিল)
৫। সেন্ট্রাল হাসপাতাল, আবিদিন ভিলেজ (২২ এপ্রিল)
৬। ওয়াসিম হিসেনো হাসপাতাল, কাফার তাখারেম সিটি (২৫ এপ্রিল)
.
রাশিয়ার এই সবগুলো বিমান হামলা শুধু এই মাসের মধ্যেই হয়েছে। মাসের আরো ৫দিন এখনো বাকি! হাসপাতালগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, চিকিৎসা সেবা বন্ধ, বাশারের বাহিনী প্রতিদিন রাসায়নিক বোমা হামলা করছে, রাশিয়া চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে।
.
তবুও ইমরান নজর হোসেনের মুরিদরা প্রচার করছে "বাশার এই জামানার সালাহুদ্দিন আইয়ুবী! পুতিন এই জামানার নাজাশী!! আর রাশিয়া মুসলমানদের বন্ধু!!!"
হায়... এরকম নিষ্ঠুর কৌতুকে স্বয়ং ইবলিস শয়তানও বোধহয় স্তম্ভিত.!
.
[c]
এবার আসুন বাদশাহ নাজাশি প্রসঙ্গে, ইমরান সাহেবের ভক্তরা রাশিয়ার খ্রিষ্টানদের বহুবিধ ফায়দা বর্ণনা করে থাকে। গতদিন আমরা ইমরান নজর হোসেনের যে ভিডিওটি শেয়ার করেছি (bogus jihad in syria) সেখানে উনি রাশিয়ার প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন- "রাশিয়া রিয়েল ক্রিশ্চিয়ানিটির দিকে ফিরছে..."
এছাড়া আজ শুরুতে আমরা উল্লেখ করেছি উনার ভক্তরা পুতিনকে কিভাবে নাজাশির সাথে তুলনা করে থাকে.. (প্রমাণ দেখুন কমেন্টের স্ক্রিনশটে)
.
এবার আপনি প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারেন, নাজাশী বাদশাহ (রাসুল সা. যার জানাজা পড়েছিলেন) সে কি সত্যিই খ্রিষ্টান ছিল? না ইসলাম কবুল করেছিল?
উত্তর হচ্ছে, নাজাশি অনেক আগেই রাসুল সা. এর চাচাতো ভাই জাফর ইবনে আবি তালেব রা. এর কাছে ইসলাম কবুল করেছে। এজন্যই রাসুল স. তাঁর জানাজা পড়েছেন, কখনওই কোনো কাফিরের জানাজা আমাদের রাসুল স. পড়েননি।
কিন্তু ইমরান সাহেবের মুরিদেরা রাশিয়ার দালালি করার সুবিধার্থে সেটা গোপন করে, একজন মুমিন বাদশাহকে খ্রিস্টান হিসেবে প্রচার করছে।
আমরা এপ্রসঙ্গে muftisays(.)comএর একটি ফাতওয়ার অনুবাদ প্রকাশ করছি.. প্রিয় ভাইয়েরা পড়ে নিবেন। এবং বেশি বেশি প্রচার করবেন।
.
[d]
প্রশ্নঃ সম্মানিত শায়েখ আসসালামু আলাইকুম, এটা কি সত্যি যে হাবশার বাদশাহ নাজ্জাসি রাসূল সা.এর জীবদ্দশায় মুসলিম হয়েছিলেন? যদি সত্যি হয়, দয়া করে আপনি কি আমাকে উদ্ধৃতি দিতে পারেন কোন গ্রন্থে এটা উল্লেখ হয়েছে?
.
উত্তরঃ
বিসমিল্লাহ্, আল্লাহর দেয়ার তাওফিক অনুযায়ী উত্তর।
হ্যা, নাজ্জাসি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জীবদ্দশায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
নিচে, আর রাহীকুল মাখতুম (রাসুল সা. এর একটি নির্ভরযোগ্য এবং প্রসিদ্ধ জীবনী) পৃষ্ঠা ২২১,২২২ এর সারকথা উল্লেখ হলঃ
.
"নাজাশী, আবিসিনিয়ার (ইথিওপিয়া) রাজা। তাঁর নাম ছিল আশামা বিন আল-আবজার, নবী সা.এর বাণী গ্রহণ করেছিলেন। চিঠিটি আমর বিন উমাইয়া আল-দামরি রা.এর মাধ্যমে প্রেরিত হয়েছিল, যা আত-তাবারিতে উল্লেখ হয়েছে, সেটি হিজরতের ছয় বছর পরের কিংবা হিজরতের সাত বছর আগের। চিঠিটির তাহকিকে দেখা যায়, এটি হুদায়বিয়াহ সন্ধির পরে পাঠানো হয়নি। চিঠির কথোপকথন বরং ইঙ্গিত দেয় যে, এটা রাজাকে পাঠানো হয়েছিল যখন জাফর রা. এবং তাঁর সঙ্গিরা মাক্কি যুগে আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন।
কারণ, চিঠির একটি বাক্যে খুজে পাওয়া যায়, "আমি আমার চাচাতো ভাই জাফরের সাথে মুসলিমদের একটি জামাত আপনার কাছে পাঠালাম। তাদের প্রতি উদার হবেন এবং অযথা গর্ব করবেন না।"
(এছাড়া চিঠিতে সিল মোহর নেই, যা মদিনার চিঠিগুলোতে রয়েছে, -অনুবাদক)
ইমাম বাইহাকী, ইবন ইসহাক রহ.এর সুত্রে, নাজাশীর কাছে পাঠানো নবীর চিঠির নিম্নোক্ত বিবরণ দিয়েছেনঃ
.
"চিঠিটি নবী মুহাম্মদের পক্ষ থেকে নাজাশী আল-আশামা, আবিসিনিয়ার (ইথিওপিয়া) রাজার প্রতি প্রেরিত হচ্ছে।
তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক যে হিদায়াতের অনুসরণ করে, এবং আল্লাহর ও তার রাসুলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তাঁর কোনো অংশীদার নেই, তাঁর স্ত্রী বা পুত্র নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। আমি আপনাকে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান করছি; যদি আপনি ইসলাম গ্রহণ করেন, আপনি নিরাপত্তা পাবেন,
"বলুন হে কিতাবীগণ, তোমরা এমন কথার দিকে এসো, যা আমাদের এবং তোমাদের নিকটে সমান। আমরা শুধু আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করিনা, আর তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করিনা এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আমাদের রব হিসাবে গ্রহণ করিনা। এরপর যদি তারা বিমুখ হয় তবে বল, 'তোমরা সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলমান।'" [আলে ইমরান, ৬৪]
যদি আপনি আমার আহ্বান অস্বীকার করেন, তাহলে আপনি আপনার খ্রিষ্টান জনগণের সকল অনিষ্টের কারণ হবেন।"
.
ড. হামিদুল্লাহ (প্যারিস), একজন নির্ভরযোগ্য মুহাক্কিক, উপরের চিঠিটির একটি সংস্করণ কিছুদিন প্রকাশ করেছেন এবং সেটি ইবনুল কাইয়্যিম রহ.এর বর্ণনার অনুরূপ। ড. হামিদুল্লাহ অনেক প্রচেষ্টা করেছিলেন এবং মূল চিঠিটির পাঠোদ্ধারের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির সকল মাধ্যম ব্যবহার করেছিলেন, যা নিন্মরূপে পড়ুনঃ
"আল্লাহর নামে, যিনি সবচেয়ে ক্ষমাশীল, সবচেয়ে দয়ালু। মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল থেকে নাজাশী আবিসিনিয়ার রাজার প্রতি। তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক যে সঠিক দিকনির্দেশনার অনুসরণ করেছে। অভিবাদন জানাই, আমি আল্লাহর প্রশংসা করি, তিনি ছাড়া কোনা উপাস্য নেই, তিনি সার্বভৌম, পবিত্র, শান্তির উত্স, শান্তিদাতা, বিশ্বাসের প্রতিপালক, নিরাপত্তার রক্ষাকর্তা। আমি সাক্ষ দিচ্ছি যে মরিয়ম পুত্র ঈসা আলাইহিস সালাম রুহুল্লাহ। এবং আল্লাহর হুকুম কুমারী, সত্, পবিত্র মরিয়মের মধ্যে সঞ্চালন করেছিলেন। যার কারনে তিনি ঈসা আলাইহিস সালামকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন। আল্লাহ নিজে তাঁর নূর এবং তাঁর রূহের ফুঁক থেকে তাঁকে সৃষ্টি করেছেন, যেমনটি তিনি আদম আ.কে সৃষ্টি করেছিলেন। আমি আল্লাহর একজন রাসূল হিসেবে আপনাকে আল্লাহ এক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই এবং তাঁর আনুগত্যের দিকে এবং আমাকে অনুসরণের দিকে এবং আমার উপর যা অবতীর্ন হয়েছে এসবের দিকে আহ্বান করছি। আমি আপনাকে এবং আপনার জনগণকে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর দিকে আহ্বান করছি। আমি এভাবে সাক্ষ দিচ্ছি যে, আমি আমার বার্তা এবং উপদেশের সাথে যোগাযোগ করেছি। আমি আপনাকে আমার উপদেশ শোনার এবং গ্রহণ করার আহ্বান করছি । তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক যিনি হিদায়াতের অনুসরণ করেছে।" [এই চিঠি সম্বলিত হাদিসটি রয়েছে- যাদুল মা'আদ ৩খ/৬০পৃ]
.
চিঠির মূলঅংশটি নিঃসন্দেহে সহীহ, কিন্তু হুদাইবিয়াহের সন্ধির পরে ইহা লিখিত হয়েছিল বলে সমর্থন করার জন্য এখনও নির্দিষ্ট প্রমাণের অভাব রয়েছে। যখন আমর বিন উমাইয়া আদ-দামরি'র (রাঃ) মাধ্যমে নাজাশীর কাছে চিঠি প্রেরণ হয়েছিল, চিঠিটি একটি চামড়ার উপর লেখা হয়েছিল এবং তাঁর চোখের সামনে মেঝেতে রাখা হয়েছিল, তিনি ইসলাম কবুল করেছিলেন এবং নবী'কে (সাঃ) নিচের প্রত্যুত্তর লিখেছিলেনঃ
.
"আল্লাহর নামে, যিনি সবচেয়ে ক্ষমাশীল, সবচেয়ে দয়ালু। নাজাশী আশামা থেকে মুহাম্মদ, আল্লাহর রাসূলের প্রতি। আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক, হে আল্লাহর রাসূল! পাশাপাশি আল্লাহর কৃপা ও রহমত বর্ষিত হোক যিনি ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই। আমি আপনার চিঠি গ্রহণ করেছিলাম, যেখানে আপনি ঈসা আঃ সম্পর্কে এবং পৃথিবী ও জান্নাতের অধিপতি সম্পর্কে উল্লেখ করেছিলেন, আপনি যা বলেছেন ঈসা (আঃ) তার চেয়ে বেশি কিছু নন। আমরা সম্পূর্নরূপে স্বীকার করি, যা দিয়ে আপনাকে আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। আর আমরা আপনার চাচাতো ভাই ও তাঁর সঙ্গীদের আপ্যায়ন করেছিলাম। আমি সাক্ষ দিচ্ছি যে আপনি আল্লাহর রাসূল, সত্য এবং নিশ্চিত যারা আপনার আগে (নবী হিসবে) বিগত হয়েছেন। আমি আপনার চাচাতো ভাইয়ের মাধ্যমে আপনার কাছে অঙ্গীকার করেছি এবং তাঁর মাধ্যমে পৃথিবীর অধিপতির নিকট নিজেকে সমর্পণ করেছি।"
[যাদুল মা'আদ ৩/৬১]
.
হিজরত পরবর্তী সময়ে নবী সা. নাজাশীকে সংবাদ পাঠিয়ে আবিসিনিয়ায় হিজরতকারী জাফর এবং তার সঙ্গী সাহাবী রা.দের বাড়ি পাঠানোর জন্য বলেছিলেন। তাঁরা ফিরে এসে নবী'র (সাঃ) সাথে খাইবারে দেখা করেন। নীগাস তাবুক যুদ্ধের কিছুদিন পরে হিজরতের ৯ বর্ষে রজব মাসে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। নবী (সাঃ) তাঁর মৃত্যু সংবাদ ঘোষনা করেন এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে জানাযার নামাজ পড়ান।
.
পরবর্তিতে আরেকজন রাজা নাজাশীর অনুসারী হয়ে সিংহাসনে বসেন এবং নবী (সাঃ) তাকে আরেকটি চিঠি প্রেরণ করেন কিন্তু তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন কি করেননি সে ব্যাপারে এখনো তথ্য পাওয়া যায়নি। [সহিহ মুসলিম ২/৯৯]
আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন..
.
উত্তর লিখেছেন-
মাওলানা কামরুজ জামান
লন্ডন, ইউ কে
....
[e]
রাসুলুল্লাহ সা. এর চিঠির স্ক্যান কপি আমাদের সংগ্রহে রয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। আপনাদের জন্য সংযুক্ত করে দেয়া হচ্ছে-
নাজাশির প্রতি রাসূল সা. এর চিঠি, সেখানে সিলমোহর নেই। অর্থাৎ মাক্কি জামানার চিঠি... |
.
লেখা অনেক দীর্ঘ হয়ে গেলো, সর্বোপরি আমরা আল্লাহর কাছে রহমত এবং নুসরতের প্রত্যাশী, ওই ভাইদের জন্য হিদায়াতের প্রত্যাশী। আশা করছি ভবিষ্যতে নাজাশীর নামে আপনারা কখনো বিভ্রান্ত হবেন না।
শায়খ ইমরান নজর হোসেনের অনুসারী ভাইদেরকেও আমি তাওবাহ করার আহ্বান জানাচ্ছি। তাহলে আল্লাহ তা'আলা আমাদের জান্নাতে একসাথে মিলিয়ে দিবেন।
ওয়াসসালাম...
.
-----------
পোস্টের ফেসবুক লিংক
0 comments:
Post a Comment