May 25, 2020

সব লেখা সবার জন্য নয়

প্রতিটা বইয়ের পাঠক শ্রেণী একই হয় না। ক্লাস ৯ এর পাঠ্যবই ক্লাস থ্রির একটা ছেলে বুঝবে না, এই না বোঝাটাই স্বাভাবিক। এটা কোন দোষ না। বরং সিস্টেমটাই এরকম।
শুধু ক্লাসের বই না, গল্প, ইতিহাস, জীবনি সবক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট অডিয়েন্স  এর জন্য প্রকাশ করা হয়। 

এখন অনলাইনে যেটা সমস্যা হচ্ছে, প্রতিটা লেখাকে জোর করে আমরা নিজের মাথায় ঢোকাতে চাই। এটা নেয়ার এবিলিটি আমার থাকুক বা না থাকুক, এটা আমাকে পড়তেই হবে, আর একটা অপিনিয়ন রাখতেই হবে। ফলে দেখা যায়, আমাদের মাথা গেছে আউলায়া। আর দোষ হয় লেখকের।

ভাইরে ভাই, ইলমের মহাসাগরে আপনি জরুরি মাসায়েল আর বেসিক ঈমানের চ্যাপ্টারই শেষ করেননি। আপনি ইলমের দরজায় মাধ্যমিক স্তরই পার করেননি। এই অবস্থায় যদি আলেমদের এডভান্স ফিকহ অথবা আক্বিদার মাসায়েলের ইখতিলাফে ঢুকেন, তাহলে আপনি পরিবেশ নষ্ট করা ছাড়া আর কী করতে পারবেন? 
নিজের লিমিটেশন বুঝতে শেখেন ভাই।

উদাহরণ নেনঃ মিরাজের বিষয়টা আমরা আক্বিদা হিসেবে বিশ্বাস করি। কিন্তু এই আক্বিদার অনেক স্তর আছে।
১. মিরাজের রাতে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে হারাম থেকে বাইতুল মাকদিস পর্যন্ত গিয়েছেন - এটা কোরআনের বর্ণনা। ঈমান রাখতেই হবে। এতে কোন মুসলমানের ইখতিলাফ নাই, অস্বীকার করলে কাফির।
২. এরপর বাইতুল মাকদিস থেকে রওনা করে স্বশরীরে সাত আসমান পাড়ি দিয়েছেন - এটা বিশুদ্ধ হাদিসে এসেছে। আহলুস সুন্নাহর সবাই এব্যাপারে একমত। চরমভাবে গোমরাহ কিছু ফিরকা বাদে এটা কেউ অস্বীকার করেনি।
৩. আচ্ছা, হারাম থেকে মাকদিস, সেখান থেকে আরশে আজীম গিয়েছেন বুঝলাম। কিন্তু - সেখানে  যাওয়ার পরে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার দীদার পেয়েছেন কি না - এব্যাপারে আহলুস সুন্নাতের মাঝেই ইখতিলাফ আছে। সাহাবাদের যুগ থেকেই আছে।
সবগুলোই আক্বিদার বিষয়, কিন্তু একেকটা অস্বীকার করার বিধান ভিন্ন ভিন্ন, আলোচনার জটিলতার স্তরও ভিন্ন ভিন্ন।

খেয়াল করার বিষয় হচ্ছে, এখানে একজন সাধারণ মুসলমানের জন্য কী এই সবগুলো বিষয় জানা আবশ্যক? মোটেই না!
- রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিরাজ হয়েছিল, তিনি প্রথমে বাইতুল মাকদিস, এরপর ৭টি আসমানে সফর করেছেন, সেখানে উনি অনেক কিছু দেখেছেন - জেনেছেন, এরপর আবার পূর্বের যায়গায় ফিরে এসেছেন। - ব্যস। একজন সাধারণ মুসলিমের প্রাথমিক ঈমান আক্বিদা হিসেবে যথেষ্ট। 

আরও সহজ উদাহরণ দেই, কেবল বাংলা রিডিং পড়তে শিখেছে এমন শিশুকে আপনি নিশ্চয় "আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া" কিংবা "তারিখে তাবারী" পড়তে বলবেন না, তার জন্য উপযোগী হল ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভীর গল্পের বই অথবা আদিব হুজুরের শিশু সিরাত বা আক্বিদা সিরিজ।

বাইরের দুনিয়ায় এই বিষয়গুলো ঠিকই বুঝি আমরা, কিন্তু অনলাইনে ঢুকলে আর দ্বীনের ব্যাপার হলে.. কেন যেন সবাই নিজেদের লিমিটেশন ভুলে সবজান্তার লিবাস পরতে যাই। 
শুধু নিজের সাধ্যের বাইরের লেখা পড়েই ক্ষ্যান্ত  হই না, বরং সেটা নিজের জ্ঞান দিয়ে বিচারও করে ফেলি।
ফলে দুনিয়া - আখিরাত সবকিছুরই ক্ষতি করি, নিজেও টের পাই না।

আল্লাহ আমাদের হিদায়াত দিক, সাধ্যের বাইরের বোঝা নিজের ওপর চাপিয়ে নেয়া থেকে বাচিয়ে রাখুক, আর হিদায়াতের ওপরেই আমাদের ওপর অবিচল রাখুক। আমিন।
----
Share:

0 comments:

Post a Comment