- উম্মে আব্দুল্লাহ
------
সেদিন বলেছিলাম পর্দা নিয়ে এক বোনের অভিযোগের কথা।
বোনের ভাষ্যমতে পর্দা করলে কেউ দাম দেয়না_____
আসলে দামী জিনিসের কদর সবাই করতে পারেনা। আপনি পর্দা করছেন বলে হয়তো কাপড়ের দোকানে গিয়ে আপুমনি ডাকটা শুনতে পাচ্ছেন না।
কিংবা বাসের হেল্পার আপনাকে হাত ধরে বাসে উঠতে সাহায্য করছেনা।
কিংবা আপনার পাশে বসে থাকা মানুষটি আপনার সাথে খোশগল্প করছেনা।
কিংবা কারো বার্থডে পার্টি কিংবা গেট টুগেদারে আপনাকে ইনভাইট করা হচ্ছে না।
এতে আপনার মনে হতে পারে কেউ আপনার কদর করছেনা। কিন্তু একটু ভেবে দেখুন বোন এতে কিন্তু আপনার কোন ক্ষতি হচ্ছেনা বরং আপনি কতগুলো গুনাহ থেকে বেঁচে যাচ্ছেন। আর সুযোগ সন্ধানী কিছু লোলুপ দৃষ্টির পুরুষের হাত থেকেও রক্ষা পাচ্ছেন...
এতো মাওলার তরফ থেকে আপনার জন্য মুল্যবান উপহারস্বরূপ ।।।
.
পর্দা নিয়ে কিছু বোনের ধারনা এমন যে পর্দা করলে নিজের লাইফটাই শেষ। সাজগোজ, অলংকার, আনন্দ সবকিছুই জীবন থেকে বিদায় নিবে।
আমিও এমনটাই ভাবতাম।
কিন্তু একদিন কোন এক বিয়ের অনুষ্ঠানে হাত মোজা, পা মোজা পরা এক মহিলাকে দেখলাম। দেখেই মনে হলো গ্রামের কোন বয়ষ্ক মহিলা এসেছেন।
এরপর উনি যখন বোরখা খুললেন তখন তো আমি পুরাই অবাক। যা ভেবেছিলাম তার সম্পুর্ন বিপরীত। উনার পোশাক, অলংকারের মত সুন্দর রুচিশীল পোশাক,অলংকার পুরো বিয়ে বাড়িতে খুঁজে পাইনি। আর উনি যেভাবে বউকে সাজিয়েছিলেন, মেহেদী পরিয়েছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। যতটা সময় ছিলাম ততটা সময় আমি শুধু উনাকে নিয়ে ভেবেছি। কিন্তু কোন উত্তর খুঁজে পাইনি।
কিন্তু এখন বুঝি... উনি মুল্যবান ছিলেন বলেই নিজেকে আবৃত রেখেছিলেন।
.
আমার বান্ধবীও আমাকে বলেছিলো তোর সাথে বের হবোনা। তুই তো হুজুরনি হইছিস।।
এরপর আমরা একসাথে ঘুরে আসার পর ও বলেছিলো আমি ভেবেছিলাম পোশাকের সাথে তোর মনও চেঞ্জ হয়ে গেছে। তুইও বোরিং হয়ে গেছিস।। কিন্তু....
.
সেদিন আরেকজন বলছিলো, আমি ভাবছিলাম তুই হাসবিনা!!
আমি তো অবাক!!
পর্দা করলে বুঝি হাসাও ভুলে যায় মানুষ! !
.
আবার অনেকের ধারনা হুজুর+হুজুরনি টাইপের লোকজন শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে।অবশ্য একজন ফেসবুক সেলিব্রিটিও এই নিয়ে পোষ্ট দিয়েছিলেন। কিন্তু আমিতো দেখি উল্টা।
আপুকে প্রথমদিন দেখার পরে ভেবেছিলাম উনি তো কুর'আন শিখান। পড়াশুনা তেমন করেন নাই। (আল্লাহ্ মাফ করুন)
এরপর যখন আপুর কাছে নিয়মিত যাওয়া শুরু করলাম তখন আমার ভুল ভেঙ্গে গেলো।
আপু একজন আলেমা... এছাড়া অন্যান্য বিষয়েও উনার বেশ দখল। অথচ উনি উনার বাড়ি থেকে সামান্য দূরে আমার কলেজটাও চিনেন না।
সেদিন বুঝেছিলাম শিখার জন্য নিজেকে না নিজের মনকে উন্মুক্ত করতে হয়....
.
.
সত্যি বলতে হুজুর/হুজুরনি বলতে আমরা শুধু দুই টাইপের মানুষকেই বুঝি।
হয় ক্ষ্যাত না হয় জঙ্গি ....
আমাদের ধারনাটা এই দুইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ... হয়তো এই বদ্ধমূল ধারনার কারনেই আজ আমাদের এই বেহাল দশা।
.
একবার ক্লাসে স্যার জিজ্ঞেস করেছিলেন, আচ্ছা মেয়েরা হিজাব করে কেন??
তখন একজন উত্তর দিয়েছিলো, "স্যার হয় মেয়েটা খুব সুন্দরী না হয় কোন ত্রুটি আছে তাই ঢেকে রাখে।"___
এই হচ্ছে পর্দা সম্পর্কে আমাদের ধারনা। পর্দার মত এত গুরুত্বপুর্ন বিষয়কে আমরা আমলেই নেইনা।
.
পর্দার মত এমন ফরজ বিধানকে অবহেলা করে কি আমরা গুনাহের ভাগী হচ্ছিনা??
তাই আসুন আমরা পর্দা সম্পর্কে ভালো করে জানি এবং পালন করি।
শুধু বোনদের বলছিনা।
ভাইয়েদেরও উচিত এই ব্যাপারে সচেতন হওয়া।
কারন আজকে যে বোনটি বেপর্দাভাবে বাইরে বের হচ্ছে তা আপনার মত কারোর বোন, কারো মা অথবা কারো স্ত্রী.....
.
এমন অনেককেই দেখেছি বিয়ের আগে পর্দা করতো কিন্তু বিয়ের পরে বর চায় না তাই পর্দা ছেড়ে দিয়েছে। এমনকি এখনো চান কিন্তু পেরে উঠছেন না।
আসলে দ্বীনের ব্যাপারটা এমনি। সহযোগী ছাড়া দ্বীনের পথে চলাটা বেশ কষ্টসাধ্য।
.
.
আল্লাহ্ রব্বুল আ'লামীন আমাদের সবাইকে সহীহ বুঝ দান করুন এবং দ্বীনের পথে চলার তৌফিক দান করুন__ আমিন।
0 comments:
Post a Comment