January 5, 2017

শয়তানের উঁচু স্তরের ধোঁকা; কোনো গোনাহের প্রতি আসক্তি /এডিকশন থেকে বাঁচার উপায় কী?

[ক.]
শয়তানের সব ধোঁকা এক লেভেলের না। হাজারো এটাক স্ট্রাটেজি আছে শয়তানের! সাধারণ ওয়াসওয়াসা তো একবার পাপ করলেন, তাওবাহ ইস্তিগফার করলেন, কাহিনী শেষ। কিন্তু কিছুকিছু ওয়াসওয়াসা এডিকশনের লেভেলে চলে যায়।
এটা এডিকশন সম্পর্কে একটা লেসন বলতে পারেন। আজ এজন্য এবিষয়ে আলোচনা করছি কারণ, এই প্যাঁচে পড়লে খুব কম মানুষই বেরিয়ে আসতে পারে। আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে আসক্ত হই, খেলা খাওয়া ঘোরাফেরা করা ইত্যাদি। আমাদের কেঁউকেঁউ অনেক খারাপ বিষয়ে আসক্ত হয়ে যায়, সেটা ছেড়ে দিতে চায় কিন্তু পারে না। এবিষয়গুলো আসলেই খুব সিরিয়াস, অনেকে বাহিরে বেশ পরহেজগার থাকেন, চেষ্টাও করেন ভালো থাকতে কিন্তু কোনো একটা আসক্তি তাকে কুরেকুরে খায়। না পারেন কারো সাথে পরামর্শ করে সমাধান চাইতে, আর না পারেন এই পাপ ছাড়তে। এজন্য একসময় বলে বসে, আমি জানি বিএফ/জিএফএর সাথে কথা বললে আমার পাপ হবে কিন্তু আমি কথা না বলে থাকতে পারছিনা যে! আমি জানি পর্ণ দেখা, মাস্টারবেশন করা অনেক বড় পাপ, কিন্তু আমি কি করবো? আমিতো আপারগ!! আমি ছাড়তে পারছিনা যে..।
এটা চেইনিং ওয়াসওয়াসার ২য় লেভেল!
.
[খ.]
এই অবস্থায় শয়তান আপনাকে একটা সার্কেলে বন্দি করে ফেলে- কোন একটা কারণে আপনার চিন্তায় পাপের ব্যাপারটা আসে, (হতে পারে সেটা কোন বাজে পিকচার দেখে, অথবা কাউকে তার প্রেমিকার হাত ধরে ঘুরতে দেখে, অথবা কারো লেখা কোনো গল্প পড়ে) ব্যাপারটা মাথায় আসার পর আপনার মনে হয় নাহ এটা করা উচিত হবে না; এটা পাপ, আপনি চেষ্টা করেন এভোইড করতে, নিজের নফসের সাথে ধ্বস্তাধস্তি করেন। এরপর নফসকে সামান্য ছাড় দেয়ার চেষ্টা করেন। (যেমনঃ এবার করার পর তাওবাহ করে নিব, এই একবারই শেষ; আর করবো না, কত পাপই তো করি দৈনিক; এ আর তেমন কি) এই পয়েন্টটাই সবচেয়ে ভয়াবহ, এই স্টেপে বাহিরের শয়তান আর ভেতরের নফসে আম্মারা ঐক্যবধ্য হয়ে আপনার বিরুদ্ধে লাগে। অবশেষে আপনি নিজের প্রবৃত্তির কাছে পরাজিত হয়ে সেই কাজে জড়িয়ে পড়েন। (জিএফ/
বিএফকে ফোন দেন, অথবা পর্ণ দেখতে শুরু করেন কিংবা মাস্টারবেট...) পাপ করার পর আপনার মনে অনুশোচনা জাগে, আর আপনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেন; তাওবাহ-ইস্তিগফার করেন যে, ভবিষ্যতে আর কখনো একাজ করবেন না। এর কয়েকদিনপর আবার কোনো ট্রিগারে চাপ পড়ে... আবার আপনি পাপ করেন, আবার...... ( পিকচারটা দেখুন, ব্যাপারটা সহজে বুঝে আসবে)

এখন এথেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী?
.
[গ.]
প্রশ্নটা দেখতে ছোট হলেও দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নগুলোর মাঝে এটি একটি। সম্ভবত কোনো ইসলাহি মুরব্বি / শাইখ এর সবচেয়ে ভালো সলিউশন দিতে পারবে। তবে আমরা ভাইব্রাদার হিসেবে কিছু ডিসকাস তো করতেই পারি, তাইনা?
.
১. এখানে সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেপ হচ্ছে আপনাকে আল্লাহর কাছে সারেন্ডার করতে হবে, কারণ শয়তান অনে-ক শক্তিশালী, অনেক বুদ্ধিমান এবং অনেক জ্ঞানী। একজন মানুষ হিসেবে আমাদের মাঝে আল্লাহ যতটুকু শক্তি দিয়ে পাঠিয়েছেন এটা শয়তানের সাথে টেক্কা দেয়ার জন্য যথেষ্ট না, শয়তানকে পরাস্ত করার জন্য অবশ্যই আমাদের আল্লাহর সাহায্য দরকার হবে। এজন্য আল্লাহ কোরআন-এ আমাদের বারবার শিখিয়েছেন তাঁর কাছে কিভাবে আত্মসমর্পন করতে হবে, কিভাবে শয়তানের বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইতে হবে। যেমনঃ
>> বলুনঃ হে আমার পালনকর্তা! আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি, হে আমার প্রভু! আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকেও আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি। (সুরা মুমিনুন, আয়াত ৯৭-৯৮)
>> অতএব, যখন আপনি কোরআন পাঠ করেন তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করুন। (সুরা নাহল, ৯৮)
>> যদি শয়তানের পক্ষ থেকে আপনি কিছু কুমন্ত্রণা অনুভব করেন, তবে আল্লাহর শরণাপন্ন হোন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী। (হা-মীম সেজদাহ ৩৬, আল আ'রাফ ২০০)
.
প্রথম আয়াত থেকে দু'আটা মুখস্ত করে নিতে পারেন, মুনাজাতে বলবেন বেশিবেশি। এছাড়াও আপনি যেভাবে আল্লাহর কাছে চান সেভাবে নিজের মত করেই আপনার সমস্যার কথা বলুন, আল্লাহকে বলুন- আমি দূর্বল, ইয়া আল্লাহ! তুমি ছাড়া আমার কেউ সহায় নাই, তুমি ছাড়া আর কারো এই বিপদ থেকে উদ্ধার করার ক্ষমতা নাই, আল্লাহগো! তুমি আমাকে এই পাপ থেকে বাচাও (নির্দিষ্টভাবে পাপের কথা উল্লেখ করে আল্লাহর কাছে সাহায্য চান) তিরমিযী মুস্তাদরাকে হাকেমে বর্ণিত কোরআন হিফযের জন্য রাসুলের শিখিয়ে দেয়া দু'আর প্রথম অংশটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম)
"allahummar'hamnee bitarkil ma'aaswi, abadammaa abqaitanee, war'hamnee an atakallafa maa laa ya'neenee, warjhuqnee husnannan najari feemaa yurdeeka 'annee"
দুয়াটা ফাযায়েলে কোরআন এর পরিশিষ্টেও আছে, আগ্রহীরা অর্থ দেখে নিয়ে মুখস্ত করে ফেলতে পারেন, রাসুলের শিখিয়ে দেয়া দো'আর স্পিরিট-ই অন্যরকম... e-ilm এ ফাযায়েলে কোরআন এর শুধুওই অংশটার পিডিএফ আছে, কমেন্টে লিংক দিয়ে দিলাম।  ( লিংক- http://mediafire.com/?cs66za1zsd562ka )

২. গুনাহ থেকে বাঁচার দ্বিতীয় স্টেপ হচ্ছে ওয়াসওয়াসার ট্রিগার শনাক্ত করা এবং এসব থেকে বেচে থাকা। একটা নোটবুক রাখুন, সাধারণ কাগজের নোটবুক রাখতে পারেন, অথবা আপনার ডায়েরির কিছু পৃষ্ঠা বরাদ্দ দিতে পারেন, প্লেস্টোরে হাজার হাজার নোটবুক অ্যাপ আছে আপনার পছন্দ মত একটা ডাউনলোড করে নিন, ফোনে কোনো নোটবুক থাকলে এজন্য একটা ফোল্ডার বরাদ্দ দিন। যেকোনো একটা দরকার...
এরপর মাইগ্রেন ডায়েরির মত প্রতিটা কেসনোট লিখে রাখুন, যেমনঃ প্রতিদিন কোন সময়টাতে আপনি পাপে জড়িয়ে পড়ছেন, আজ কিভাবে আপনি পাপে জড়ালেন, পাপটা করার আগে কি ঘটনা ঘটেছিল। কোন জিনিসটার সূত্র ধরে আপনি আজ পাপটা করে ফেললেন এসব নোট রাখুন। আমার মাইগ্রেন ডায়েরিতে কয়েকটা পয়েন্ট রাখি- date n time, event summary, starting time, ending time, cause of pain, cause of cure. আপনি আপনার নিজের মত সিন্স ডায়েরী সাজিয়ে নিন, তবে খেয়াল রাখবেন এটা যেন বেহাত না হয়, চাইলে সংকেতিক শবদ ইউজ করতে পারেন, অথবা পাসওয়ার্ড ইউজ করতে পারেন।
.
এবার কিছুদিন গেলে আপনার অনেকগুলো কেস সামনে নিয়ে বসুন, আপনি অনেকগুলো কমন ট্রিগার খুঁজে পাবেন, যেমন বাজে পিকচারের দিকে দৃষ্টি যাওয়া, কোনো গল্প পড়া, কাউকে জিএফ/বিএফ এর সাথে ঘুরতে বা ফোনে কথা বলতে দেখা ইত্যাদি। এখন আপনাকে এই ট্রিগারগুলো থেকে বেচে থাকতে হবে।
এরপর থেকে এই বিষয়গুলোর কোনটা আপনার সামনে চলে আসলে আপনি সতর্ক হয়ে যান। সাথে সাথে ইস্তিগফার দুয়া পড়ুন, পর্ণ দেখতে খুব ইচ্ছা হলে দেরি না করে ওযু করে এসে কোরআন তিলাওয়াত করতে বসে যান, অথবা ওযু করে ফোনেই তিলাওয়াত করুন। কিছু নতুন এবং ভালো শখ/hobby ধরুন, যখনি এসব চিন্তা আসবে সাথে সাথে ইস্তিগফার করে অন্য কাজে মন দিন।
আর দিনের বেলা অহেতুক বসে থাকলে যদি শয়তান কুমন্ত্রণা দেয়, তাহলে দিনে কখনই আপনার অহেতুক বিছানায় শুয়ে বসে থাকা উচিত হবেনা।
৩. আর তৃতীয় টনিক হচ্ছে জিকির বাড়িয়ে দিন, কোনো শাইখের পরামর্শ নিয়ে জিকির করতে পারেন। রাতে নামাজের অভ্যাস না থাকলে ধরতে চেষ্টা করেন, যদি শেষ রাতে জাগনা পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তবে ইশার সুন্নাত ও বিতরের মাঝে কিয়ামুল্লাইল বা তাহাজ্জুদের নিয়াতে কয়েক রাকাত পড়ে নিন আর শেষ রাতে নামাজ পড়ার তাওফিক চেয়ে দুয়া করুন।
নিশ্চয় দু'আ মুমিনের হাতিয়ার!
.
গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য এভাবে নিজে পক্ষ থেকে সর্বপ্রকার চেষ্টা আর আল্লাহর কাছে দু'আ করতে থাকলে ইনশা-আল্লাহ অচিরেই আপনি চেইনিং ওয়াসওয়াসার এই লেভেল থেকে বেচে যেতে পারবেন...।
----------
{আল্লাহ তাওফিক দিলে আগামীতে কখনো ৩য় লেভেল নিয়ে আলোচনা হবে...। আর হ্যাঁ! আমরা আলোচনার সুবিধার্থে এই লেভেলগুলো ভাগ করে নিচ্ছি, বাদবাকি সালাফের কিতাবে এর কোনো উদাহরণ থাকলে তো নুরুন আলা নুর}
...
লেখাটি গুরুত্বপুর্ণ মনে হলে শেয়ার অথবা কপি-পেস্ট করতে ভুলবেন না, আর আমার এবং আমার রিলেটিভদের জন্যও আপনার দু'আয় অংশ রাখবেন, আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে শয়তানের সর্বপ্রকার ধোঁকা থেকে হিফাজত করে
.
- ৫ জানুয়ারি ২০১৭
ফেবুতে- https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1188851274537734&id=100002386190185
Share:

4 comments:

  1. হে প্রিয়! ৩য় লেভেল নিয়ে আলোচনা কোথায়? লিংকটা দিন প্লিজ! আর এটা মোট কত লেভেলে আলোচনা করা হয়েছে? সেগুলো পাবো কেমনে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. http://thealmahmud.blogspot.com/2017/01/blog-post_24.html

      Delete
  2. ৩য় লেভেল নিয়ে আলোচনা!
    .
    লিংক: http://thealmahmud.blogspot.com/2017/01/blog-post_24.html

    ReplyDelete
  3. ১ম দুয়াটি ফাজায়েলে আমলের ২৯৯ পৃষ্ঠা, অথবা ফাজায়েলে কুরআনের ১০৯ পৃষ্ঠায় আছে। জাযাকাল্লাহ। ৩য় লেভেলটা খুঁজতেছি।

    ReplyDelete