May 9, 2018

শিরকি ঝাড়ফুঁক কাজ করে কেন? খ্রিষ্টান যাজকরা কিভাবে ঝাড়ফুঁক করে?


আসসালামু আলাইকুম। মুসলিমরা কুর'আনের সাহায্যে জ্বীন, ভূত ছাড়ায় যেটা আল্লাহর কালাম। তাই জ্বীন ভূত ভিক্টিমকে ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু অন্যান্যধর্মের ধর্মগুরুরা কিভাবে বাইবেল, গীতা পড়ে ভূত ছাড়াতে পারে? যেখানে এই বইগুলো নিজেই গভীর শির্কে পরিপূর্ণ সেগুলো কিভাবে শয়তানের বিরুদ্ধে অস্ত্র হতে পারে?








উত্তর:
ওয়ালাইকুমুসসালাম
"...আওফ ইবনু মালিক আশজাঈ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জাহেলী যুগে বিভিন্ন মন্ত্র দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করতাম। তাই আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আরয করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এব্যাপারে আপনার কি অভিমত? তিনি বললেন, তোমাদের মন্ত্রগুলো আমার কাছে পেশ করতে থাকো, যদি তাতে শিরকনা থাকে তাহলে কোনো সমস্যা নেই।
- সহিহ মুসলিম ২২০০ (ইসলামওয়েব) ৫৫৪৪ (ইফা)
উল্লেখিত হাদিস থেকেও প্রমাণ হয়, ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগে বিভিন্ন প্রকারের ঝাড়ফুঁক করা হতো, আর এ থেকে মানুষ উপকৃত হতো। অর্থাৎ সেগুলো কাজ করতো। এখন প্রশ্ন হল কিভাবে?
প্রথমতঃ বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী জ্বিন আছে, বিভিন্ন প্রকারের জ্বিন আছে। কোরআনপড়লে বিভিন্ন প্রকারের জ্বিনদের ওপর বিভিন্ন ইফেক্ট হয়। কেউ দেখে একটা মারাত্মক আলো তাকে আঘাত করছে, কেউ দেখে প্রচণ্ড জোড়ে বজ্রপাত হচ্ছে ইত্যাদি। কারও শরীরর আগুন ধরে যায়, ইত্যাদি। আমরা রুকইয়াহ করার দেখেছি, জ্বিন হতভম্ব হয়ে যায়, যে এরকম জিনিস তো কখনো দেখিনাই!!
সুতরাং, কোরআন এর ইফেক্ট আর অন্যান্য মন্ত্রের ইফেক্ট এ পার্থক্য আছে।
দ্বিতীয়তঃ বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী জ্বিন আছে। উদাহরণস্বরূপ খৃষ্টান জ্বিন আছে তারা অবশ্যই বাইবেলের কথা শোনে। তাদের সামনে যখন বাইবেল থেকে পড়া হয় কিভাবে ঈসা আ.জ্বিন ছাড়িয়েছে তখন তারা বিগলিত হয়, চলে যেতে রাজি হয়।
ইবনু আবিদ দুনইয়া রহ. এবং ইমাম সুয়ুতি রহ. এর বই থেকে হুসাইন বিন আব্দুর রহমান রহ. ঘটনা আমরা বর্ণনা করেছিলাম।
তিনি এক জ্বিনকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন- "তুমি যদি ইহুদি হও তবে মুসা আ. এর দোহাই, যদি খৃষ্টান হও তবে ঈসা আ. এর দোহাই, আর মুসলমান হলে তোমাকে মুহাম্মাদ সা. এর দোহাই দিয়ে বলছি তুমি চলে যাও।" এরপর জিন কথা বলে ওঠে...।
তৃতীয়তঃ এমনিতেই শব্দের প্রভাব আছে। অর্থ বোঝা যায়না, এমন ঢুসঢাস ঝাড়া কিংবা গালিগালাজ দিয়ে গ্রামে ব্যাথা-বিষ এর ঝাড়ফুঁক করতে দেখা যায়।
শামসুল আরেফিন শক্তি ভাইয়ের "কষ্টিপাথর" বইয়ে আমরা দেখেছিলাম, এক জাপানি বিজ্ঞানী পানির ওপর বিভিন্ন শব্দ এবং চিত্রের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করে অনেক তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করেছেন।
(অনলাইনে পড়তে চাইলে এই লিংক অনুসরণ করুন https://m.facebook.com/notes/রুকইয়াহ-সাপোর্ট-গ্রুপ-ruqyah-support-bd/জীবনের-অপর-নাম-পানি-shamsul-arefin-shakti/940243496162970/ )
তাই ঝাড়ফুঁক যেমনই হোক, মন্ত্র/শব্দ হিসেবে এসবের প্রভাব তো অবশ্যই পড়বে। তাই অনেক কিছু দিয়েই জ্বিন ছাড়ানো যায়।
চতুর্থতঃ বিভিন্ন শয়তানি মন্ত্র আছে যার মাধ্যমে শয়তানদের সন্তুষ্ট করে তাদের সহায়তা নেয়া যায়।
এটাও সম্ভব যে, সেই ওঝা কোন জ্বিনের উপাসনা করে, সেই জ্বিন অনেক শক্তিশালী। অতএব, তার সাহায্য নিয়ে ছোট জ্বিনকে তাড়ায়।
পঞ্চমতঃ
এসবে শিরক থাকে, কবিরাজ / পাদ্রিরা শিরক করে আর মানুষরা তাদের কাছে যায়- শুধুমাত্র এই কারনেই শয়তান ধরতে পারে, অর্থাৎ এদের ধরলেই তো শিরকি বিরাজের কাছে যাবে, শিরক করবে। তখন শয়তান ছেড়ে দিবে।
শয়তান তো এটাই চায় মানুষ শিরক করুক। অনেক সময় আরও দাবি করে আমার নামে ছাগল জবাই করা, মুরগি জবাই কর, এই এই জিনিশ দে। এসবগুলোই গাইরুল্লাহর নামে কোরবানির মত শিরক। এসব শিরকে সন্তুষ্ট হলে তারপর শয়তান চলে যায়।
উস্তায তিম হাম্বল মিসরের এক পাদ্রির কথা বর্ণনা বলেছিলেন, তার কাছে মানুষ গেলে জিন ছাড়িয়ে দেয়। শর্ত হল এরপর খ্রিস্টান হয়ে যেতে হবে!!
আপনিই বলেন, কাফির বানানোর এরকম মেশিন পাইলে স্বয়ং শয়তানরা এসে হেল্প করবে না কেন?
----
শেষে আরেকটি হাদিস দেখি-
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর স্ত্রী যাইনাব রা. উনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ মন্ত্রপাঠ, রক্ষাকবচ ও আসক্তির জাদু শির্ক-এর অন্তর্ভুক্ত।
তিনি (যাইনাব) বলেন, আমি বললাম, আপনি এসব কি বলেন? আল্লাহর কসম! আমার চোখ হতে পানি পড়তো, আমি অমুক ইয়াহুদী কর্তৃক ঝাড়ফুঁক করাতাম। সে আমাকে মন্ত্র পড়ে ফুঁক দিলে পানি পড়া বন্ধ হয়ে যেতো।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বললেন, এগুলো শয়তানের কাজ। সে নিজই চোখে যন্ত্রণা দিত, যখন সে ঝাড়ফুঁক দেয় তখন সে বিরত থাকত। এর চেয়ে বরং তোমার জন্য এরূপ বললেই যথেষ্ট হতো, যেরূপ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ
أَذْهِبْ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
“হে মানব জাতির রব! যন্ত্রণা দূর করে দিন, আরোগ্য দান করুন, আপনিই আরোগ্যদাতা, আপনার দেয়া নিরাময়ই যথার্থ নিরাময়, যার পরে আর কোন রোগ বাকী থাকে না”।

- সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৮৮৩ (ইসলাম ওয়েব) ৩৮৪৩ (ইফা)



Share:

0 comments:

Post a Comment