- প্রশ্নই আসে না!
রুকইয়াহ বিষয়ে অজ্ঞতার কারণে কেউ এটাকে বিদআত বলতে পারে, বাস্তবতা হচ্ছে তাদের এবিষয়ে না যথেষ্ট ধারণা আছে, আর না তারা কমসে কম সহিহাইনের রুকইয়া বিষয়ের হাদিসগুলো বুঝেছে।
প্রথম বিষয় হচ্ছে, এটা নামাজ-রোজা ইত্যাদির মত কোন ইবাদাত না। এটা একটা চিকিৎসা পদ্ধতি, আর অন্যান্য চিকিৎসার মত এক্ষেত্রেও শরিয়তের নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন না হলেই এটা বৈধ।
এব্যাপারে মূলনীতি বর্নিত হয়েছে সহিহ মুসলিমের একটি হাদিসে –
عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيِّ قَالَ كُنَّا نَرْقِي فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تَرَى فِي ذَلِكَ فَقَالَ اعْرِضُوا عَلَيَّ رُقَاكُمْ لَا بَأْسَ بِالرُّقَى مَا لَمْ يَكُنْ فِيهِ شِرْكٌ
আওফ ইবনে মালিক আল-আশজাঈ রা. থেকে বর্নিত, তিনি বলেন – আমরা জালেহিয়্যাতের সময়েও রুকইয়াহ করতাম। তাই এব্যাপারে আমরা রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি এবিষয়টা কিভাবে দেখেন? তখন তিনি বললেন, তোমাদের ঝাড়ফুঁকগুলো আমাকে দেখাও, রুকইয়াতে যদি শিরক না থাকে, তাহলে কোন সমস্যা নেই। (সহিহ মুসলিম, সালাম অধ্যায়, হাদিস নং ৪০৭৯। এছাড়া হাদিসটি আবু দাউদ, বায়হাকি এবং মুজামুল আওসাতে বর্ণিত হয়েছে)
সুতরাং এখানে মূলনীতি হচ্ছে, শিরক না থাকা। শিরক না থাকলে জাহিলি যুগের মন্ত্র দিয়েও রুকইয়ার অনুমতি দিয়েছেন। আর এটাতো কোরআন তিলাওয়াত! সুতরাং রুকইয়াতে কোন সমস্যা নেই, যদি তাতে শিরক না থাকে, এটা অডিও হলেও সমস্যার কিছু নেই।
.
তবে হ্যাঁ! এর পাশাপাশি উলামায়ে কিরাম ঝাড়ফুঁক বৈধ হওয়ার জন্য যে শর্তগুলো বলেছেন, যেগুলোও খেয়াল রাখা আবশ্যক। (যেমনঃ কোন কুফর-শিরক না থাকা। বাক্যগুলো স্পষ্ট হওয়া যার অর্থ বুঝা যায়। এবং এই বিশ্বাস রাখা যে, ঝাড়ফুকের নিজস্ব কোন প্রভাব নেই, আরোগ্য কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। ইমাম সুয়ুতি রহ. ইমাম নববী রহ. এবং ইবনে হাজার রহ. এর মতে এব্যাপারে উম্মতের ইজমা রয়েছে।)
.
দ্বিতীয়তঃ আমরা প্রথম অধ্যায়ে আমরা দীর্ঘ হাদিস উল্লেখ করেছি, যেখানে সাহাবায়ে কিরাম ঝাড়ফুঁক করে এসেছেন, এরপর রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ মুগ্ধ হয়ে বলেছেন, “তুমি কিভাবে জানলে সুরা ফাতিহা একটি রুকইয়াহ?” (সহিহ বুখারি)
এছাড়া এই হাদিসটিও লক্ষণীয়ঃ
عَنْ عَائِشَةَ ، أن رسول اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَيْهَا وَامْرَأَةٌ تُعَالِجُهَا أَوْ تَرْقِيهَا ، فَقَالَ : " عَالِجِيهَا بِكِتَابِ اللَّهِ "
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, একবার রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন এক মহিলার চিকিৎসা বা ঝাড়ফুঁক করা হচ্ছিল। তখন রাসুল সা. বললেন, "কোরআন দ্বারা তার চিকিৎসা করো!" (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ৬২৩২)
এথেকে বুঝা যাচ্ছে, রাসুলুল্লাহ রুকইয়ার জন্য বিশেষ বিশেষ পদ্ধতি বলে দেননি, বরং মূলনীতি বলেছেন, কোরআন দ্বারা রুকইয়া করতে উৎসাহিত করেছেন। আর সাহাবায়ে কিরামও সে অনুযায়ী রুকইয়াহ করেছেন, সন্দেহ লাগলে রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে নিশ্চিত হয়েছেন।
যেহেতু এটা শরিয়তের মূলনীতি লঙ্ঘন করছে না, অতএব এটা বৈধ।
তৃতীয়তঃ কোরআন তিলাওয়াত হচ্ছে, সর্বোত্তম ইবাদাতগুলোর একটি। (শু’আবুল ইমান; বায়হাকী ১৮৬৯) আর যেহেতু আল্লাহ কোরআন মনোযোগ দিয়ে শুনতে নির্দেশ দিয়েছেন, সুতরাং কোরআন শোনাও ইবাদাত। কিন্তু বিজ্ঞ উলামায়ে কিরাম কখনওই বলেননা, ইলেকট্রনিক ডিভাইসে কোরআন শোনা বিদ’আত। এই একই কোরআন যদি রুকইয়াহ হিসেবে শোনা হয়, তাহলে কিভাবে বিদ’আত হয়?
যেখানে রুকইয়ার ব্যাপারে রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতটা প্রশস্ততা রেখেছেন, সেটাকে সংকীর্ণ করার অধিকার আছে কার? ‘আম’ বিষয়কে ‘খাস’ করার অধিকার না ফিকাহ কাউকে দিয়েছে, আর না ইসলামের ভাবধারার সাথে এটা মানানসই।
শেষ কথা হচ্ছে, সৌদি থেকে অনার্স করা কোন আলেম যখন রুকইয়ার অডিওকে বিদ’আত বলেন, তখন তার জ্ঞানের গভীরতার প্রতি আমাদের সত্যিই সন্দিহান হতে হয়।
-
0 comments:
Post a Comment