শুরুর কথা
আজ আমরা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। এটাকে বলা যায় “কমন রুকইয়াহ রুটিন।”
আরেকটু বিস্তারিত বললে, এটি একটি সার্বজনীন রুকইয়াহ গাইড, যা যাদু - জিন - বদনজর অথবা অন্যান্য যেসব রোগের জন্য রুকইয়াহ রিকমেন্ড হয়, সবগুলোতে আক্রান্তরা আমভাবে এটা অনুসরণ করতে পারেন। তাই যাদের সমস্যা অনেক বেশি এবং অনেক প্রকারের, তারা চাইলে প্রতিটা সমস্যার জন্য বিশেষ বিশেষ রুকইয়ার নিয়ম না ফলো করে, একভাবে এই রুটিন অনুসরণ করে দেখুন, ইনশাআল্লাহ যথেষ্ট উপকার হবে।
উল্লেখ্য, আজকে আলোচ্য সাজেশনগুলো উস্তায তিম হাম্বল সচরাচর দিয়ে থাকেন। আমি উনার পদ্ধতি হুবহু ভাষান্তর না করে, প্রয়োজন মাফিক কিছু করা যোগ-বিয়োগ করব। এবং নিজের ভাষায় বর্ণনা করবো।
চলুন, আমরা এবার আলোচনা শুরু করি।
যিনি রুকইয়াহ করবেন
১. আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার ওপর তাকে পূর্ণ ভরসা রাখতে হবে।
২. অবশ্যই প্রতিদিনের ফরজ ইবাদাতগুলো করতে হবে, আর যথাসম্ভব রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের প্রতি যত্নবান হতে হবে।
৩. প্রতিদিনের মাসনুন আমলগুলো গুরুত্বের সাথে করতে হবে, এবং এগুলোকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। (এবিষয়ে আলাদা লেখা আছে)
৪. রুগীর সাথে কোন তাবিজ রাখা যাবে না। আগে ব্যবহার করেছে এরকম কোন তাবিজ থাকলে, পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
৫. বাড়ীর পরিবেশ যতদূর সম্ভব পবিত্র রাখতে হবে। কোন প্রাণীর ছবি, ভাস্কর্য, কুকুর বা এমন কিছু রাখা যাবে না, যা রহমতের ফেরেশতা প্রবেশে বাঁধা হয়, আর শয়তান প্রবেশের কারণ হয়।
৬. সমস্যা একদম দূর হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর ওপর ভরসা করে, সবরের সাথে রুকইয়া চালিয়ে যেতে হবে।
৭. যথাসম্ভব গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে, আর সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে।
প্রতিদিন যা করবেন
১. প্রতিদিন সকাল–সন্ধ্যা এবং ঘুমের আগের মাসনুন আমল সঠিকভাবে করা। (মেয়েদের অনেকে পিরিয়ডের সময় এসব দোয়া পড়ে না। এটা বড় ধরনের ভুল কাজ। সেসময় আরও গুরুত্ব দিয়ে আমল করা উচিত। পিরিয়ডের সময় দোয়া পড়তে কোন মানা নেই।)
২. [রুকইয়া করার নিয়াতে] প্রতিদিন কমপক্ষে পৌনে একঘণ্টা কোরআন তিলাওয়াত করা। একবারে এতক্ষণ না পড়তে পারলে দুই-তিন বারে পড়া। সম্ভব হলে আরও বেশি পড়া। সম্ভব হলে সুরা বাকারা পুরাটা পড়ুন, কিংবা বিভিন্ন রুকইয়ার আয়াত রাখুন আপনার তিলাওয়াত লিস্টে, অথবা কোরআনের যেখান থেকে ইচ্ছা পড়ুন।
আর সুযোগ কম পেলে “সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস” এগুলো বারবার পড়ে উল্লেখিত সময় পূরণ করবেন। নিজে তিলাওয়াত করতে না পারলে অন্য কেউ রুগীর ওপর রুকইয়া হিসেবে পড়বে। একান্ত অপারগ হলে অডিও শুনবে, এক্ষেত্রে দিগুণ সময় শোনা উচিত। চাইলে কিছুক্ষণ নিজে পড়ে, কিছুক্ষণ অডিও শোনা যেতে পারে।
৩. বেশি বেশি ইস্তেগফার করা। প্রতিদিন কমপক্ষে ৭০ থেকে ১০০বার ইস্তেগফার করা উচিত।
৪. সুস্থতার জন্য প্রতিদিনই দোয়া করা। এক্ষেত্রে আয়াতে শিফা পড়ে দুয়া করা যেতে পারে, সুস্থতার কিংবা রুকইয়ার জন্য রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত দোয়াগুলো পড়া যেতে পারে।
প্রতি সপ্তাহে যা করবেন
আক্রান্ত ব্যক্তি অথবা অন্য কেউ প্রতি সপ্তাহে বাড়িতে সুরা বাকারা তিলাওয়াত করবে। উত্তম হচ্ছে, প্রতি তিনদিনে কমপক্ষে একবার পড়া। যদি প্রতিদিন তিলাওয়াতে সুরা বাকারা শেষ করে, তাহলে সবচেয়ে ভালো।
যদি পূর্ণ সুরা পড়ার মত কাউকে না পাওয়া যায়, তাহলে অপারগতা হেতু অডিও প্লে করা যেতে পারে। কিন্তু পড়ার মত কেউ থাকলে অবশ্যই তিলাওয়াত করা উচিত।
প্রতি মাসে যা করবেন
রোগীকে প্রতিমাসে কমপক্ষে ১ বার “সুস্থতার পথে ৭দিন; ডিটক্স প্রোগ্রাম” করতে হবে। আরও ভালো ভালো হয় যদি দুইবার করতে পারে। এক্ষেত্রে সুবিধা মত এক সপ্তাহ করার পর কিছুদিন ব্রেক দিয়ে আবার শুরু করতে পারে, অথবা লাগাতার দুই সপ্তাহ করতে পারে।
যে কাজ মাঝে-মধ্যেই করা উচিত
১. হিজামা করা - খুবই উপকারী চিকিৎসা, রুকইয়াহ করে করে যেসব যায়গায় ব্যথা থাকবে, যেসব অঙ্গে রুকইয়ার বেশি ইফেক্ট হবে, সেগুলোতে হিজামা করানো উচিত। রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের বলেছিলেন, “তোমরা যেসব চিকিৎসা করো এর মধ্যে হিজামা সবচেয়ে সেরা।” রাসুলুল্লাহ বিভিন্ন রোগের জন্য হিজামা করিয়েছেন। এক্ষেত্রে হিজামা বা কাপিং থেরাপিতে অভিজ্ঞ কারও সহায়তা নিতে পারেন।
২. আমাদেরকে আপডেট জানানো! - যারা এটা শুরু করবেন, তাদের উচিত হবে একটি ডায়েরি বা নোটবুক হাতের কাছে রাখা, এবং যিনি আপনাকে রুকইয়ার ব্যাপারে গাইড করবেন তাকে অথবা রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপে মাঝেমাঝে আপনার অবস্থার আপডেট জানানো।
আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে হিফাজত করেন এবং সুস্থতা দান করেন। আমিন!
[…] কারও পরামর্শ নিয়ে লাগাতার কয়েকমাস “সর্বজনীন পূর্ণ রুকইয়াহ প্রোগ্রাম” অনুসরণ করা। ৫. আপনার উচিত হবে এই […]
ReplyDelete